১. কবিতা: ক্যানভাস
সুতনু হালদার
কিছুটা আদর যত্নের পর প্রতিসরাঙ্ক মেপে নেওয়াটা ওর চিরকালীন স্বভাব। আজও তার ব্যতিক্রম হ'ল না বলেই ধরা পড়ে গেলাম! কুয়াশা চিবোতে গেলেও আদর করে চিবানোর দরকার, কারণ আদরের মধ্যে আগুনের চুম্বক থাকে
ভোরের প্রতিটা মুহূর্ত যাঁতাকলে শিশিরের পায়ের শব্দ শোনে, হে শ্মশান বন্ধু, হে নৈঃশব্দ
বারোয়ারি বিভাজনের প্রতিশব্দ লিপস্টিকের মতো এঁটে থাকে ঠোঁটে, প্রতিটা চুমুতে; এসো, ঠোঁট ফাঁক করি বিভাজন খাই, কয়েক পশলা বৃষ্টি আটকিয়ে থাকে খাদ্যনালি তে ভালোবাসার মতো মমত্ব মিশিয়ে...
এতসবের পরেও আদরের প্রতিসরাঙ্কে চাপ চাপ রক্ত, নিঃশ্বাসের গরম বাতাসে বিকেলের গর্জন মাঝরাতের বিছানাকে আঙুল তোলে! পরশ্রীকাতরতা খামচে ধরে তোমার মেয়েলি সত্তায়; আমার পুরুষালি মুদ্রাদোষ অভয়ারণ্যের মতো দামাল অথচ স্তব্ধতার লিঙ্গভেদ করে পরজীবী চাঁদের গ্রহণে
এর পরের ইতিহাসটুকুই নরম আর গরমে দীর্ঘ পথ একসঙ্গে হেঁটে যাবে--পরিচ্ছন্ন স্বপ্নের দীর্ঘশ্বাস যুবতির ব্যাকরণ আঁকতে আঁকতে নিজেই ক্যানভাস হয়ে যায়!
২. কবিতা: সেলফি
সুতনু হালদার
সেলফি তুলতে গিয়ে বারবার মেঝের চটাগুলো মেয়েটির মুখে লেগে যাচ্ছিল! মেঝের ওই চটাগুলোকে ঢাকতে বিন্দু বিন্দু রিরংসা; ফটাফট খান কতক ছবির জন্য তৎপর হাত...
নিটোল ছবি! কোন দাগ নেই মেঝেই, দাগহীন মুখাবয়বে ঘুমন্ত অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ। শুকনো পাংশুটে ঠোঁটেও কি দারুণ জেল্লা! কার সঙ্গে যেন শুয়েছিল বিবর্তন! প্রায় সেই মুহূর্তেই ফেসবুকে পোষ্ট, আর ঠিক তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেড়হাজার লাইক আর প্রচুর কমেন্টের ভিড়!
নিখুঁত শব্দবন্ধ আসলে খিদের পূর্বাভাষ। বাক্যের শেষে আশ্বিনের শিউলিতলা ভরে থাকে সাদা সাদা শিউলি ফুল। নিঃশ্বাসের গুমোট রঙ সুখ্যাতিতে রোদের মতো আলিঙ্গন করে; চটা ওঠা মেঝেটা অসহায় হয়ে বোবাকান্না কাঁদতে কাঁদতে যেন ঘুমিয়েই পড়ল!
চুমুর চিকণ স্পর্শে জেগে থাকা রাত মাছির মতো ভনভনিয়ে দেওয়ালে গড়ে তোলে নির্ভেজাল রতিচিহ্ন; যখন ভোর হ'ল তখন থেকে মেয়েটি আর সেলফি তুলতে পারলো না...
৩. কবিতা: পুতুলখেলা
সুতনু হালদার
তারপর সেই মিথোজীবীয় সন্ধ্যাগুলোর সন্ধিবিচ্ছেদ করতে গিয়ে মোবাইলের মেমোরি ফুল লোড! তুমি তখন আমার পাশে শব্দজব্দে মেতে ছিলে; কয়েকটা অক্ষরের সন্ধান আজও কেমন নস্টালজিক...
দুটো প্রাণ শুধু অক্ষরের ব্যস্ততায় পাশাপাশি হেঁটে চলে, রথের দড়ি টানের হিংস্র সমবায়ে দধীচির মতো আত্মত্যাগে কখনো শীতল শিরশিরানির ছোবল! দিনগুলোর ক্ষমাসুন্দর চাহনিতে নকশি কাঁথার মতো দীঘল চোখের সূর্য আড়চোখে দ্যাখে পরাগমিলনের খুনসুটি...
রাস্তার এপার থেকে ওপার পর্যন্ত ঘামের বিন্দু, ওই বিন্দুগুলোর সামন্তরালে আমাদের প্রেম ঘনীভূত হয়েছিল, রক্তের মতো দামাল তরল যোগ কলা বারবার মনে করিয়ে দ্যায় একেরপর এক নিছক ঘুমন্ত দিনগুলোর সজীবতা, চোখের সামনে না বলা কথারা যেন বাঙ্ময় হয়ে ওঠে! কথারা চিরকাল বড্ড বেশি কথা ভাঙে...
আমাদের রক্ত দামাল হতে হতে সমান্তরাল এগিয়েছিল! ফ্লাজেলীয় চলনে সরলরেখার শেষবিন্দুতে জ্যামিতিক মাপ অবাধ্য হয়ে ওঠেনি কখনো...
অনেকদিন আগের ব্যাপন ক্রিয়ায় ঝাউবনে ঢাকা ছোটোখাটো পুতুলের খেলাঘরের নৈব্যক্তিক আচ্ছাদন খুব প্রিয় ছিল, পুতুলগুলোর ভাগ্যিস কোন মন থাকে না...
৪. কবিতা: সংসার
সুতনু হালদার
আজ শুধু শূন্যকথা,শূন্যতায় অনন্ত প্রহর
অক্ষরের শব্দঋণে ঘুম ভাঙা পাঁজরের হাড়
লেখা থাকে অন্তরের হিমশৈল্যে, বারুদের শহর
কন্ঠস্বর চিনে রাখে বিষন্ন প্রেমিক-প্রেমিকার
দুর্নিবার অন্ধ স্রোত, শূন্যতায় অনন্ত সাঁতার
সমস্ত মিথ্যা শ্লোকের ছাইভস্ম মাখে মনুসংহিতা
সূর্যাস্তের কিয়দংশে মিশে থাকে গাঢ় অন্ধকার
গ্রীষ্মের প্রখরতাপে তেতে ওঠে শ্মশানের চিতা
অন্তর্লীন স্তব্ধতায় যাবতীয় কবিতার খাতা
ভরে ওঠে, ইতিউতি ভেসে আসা মেঘের মতন
গাজনের উপাসনা, ধুতরার ফুল, আকন্দ পাতা-
ফকিরের ছদ্মবেশে রাঙিয়ে তোলে সব দেহ-মন
শিব তো নিমিত্ত মাত্র, আসলে শূন্যতায় তান্ডব
নীল কন্ঠে রোজ রোজ মান আর হুঁশ নিয়ে ক্ষোভ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন