শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

## কবিতা: হয়েছে সময় ## দীপঙ্কর


কবিতা: ◆হয়েছে সময়◆

       দীপঙ্কর


এই ক্ষণে হয়েছে সময় ।

মস্তক মুন্ডন করে, কবিতা চিবিয়ে খেয়ে
ঘুমে-জাগরণে নেচে চন্ডাল নাচ.....
চলে যাবো মাড়িয়ে সব মায়া । অনেক খেলেছি খেলা , দেয়া-নেয়া হয়েছে সারা সবাকার।
চলে যাবো এই বেলা-  ভাসিয়ে বুকের ক্ষত হাত ধরে বুড়ো অশ্বত্থের পাতার ।


ভোরের সূর্য গিলেছি সেই কবে কাঙালের মতো ,
তুলতুলে মেখেছি শিশির ফাটা ঠোঁটে , ধরেছি নাঙল- সোনা ভরেছি গোলায় ।
দুই ডানা মেলে রুধেছি ঝড়- ঘর যাতে না টলকায়।
এনেছি প্রিয়ার বাজু- বাজি রেখে ক্ষমতা অসহায় ।


কেটেছি দু'কান নিজ হাতে , ঘষেছি নাক অপরের অপরাধে , সয়েছি স্নেহের যত অন্যায়।
বিকিয়েছি মাথা ভারি বুটে , সুখ এনেছি খুঁটে খুঁটে ,
ঋণ মিটিয়েছি শোণিতের বিনিময়।

আর নয় , আর নয় দেরি । এইবার ঘরে ফিরি।
আঁচল বিছিয়ে  বসে থাকে বোধিসত্ত্ব -আকুল অপেক্ষায়.....

সব মিছা, সব বৃথা- সব স্বার্থের কাদা মাখা।
দিন গেল-- চেয়ে দেখি  রত্নাকর একা কেঁদে ভাসায়.....

এই ক্ষণে হয়েছে সময়....

ছিন্ন করে সব সুতো হেঁটে যাবো কমন্ডুল হাতে কেতু সনে তারায় তারায়।

ঐ.... ডাকে তথাগত।
আয়....  আয়.....



##অণুগল্প: ভাতের গন্ধ##ভারতী দাস


অণুগল্প: ভাতের_গন্ধ

কলমে : ভারতী দাস



সাত সকালে রিফুইজী ক্যাম্পে চাল ফোটার গন্ধে সুরভিত চারপাশ।
            ছন্নছাড়া উদ্বাস্তু লোকগুলো তীর্থের কাকের মতো চেয়ে আছে জ্বলন্ত উনুন টার দিকে।
               চুলের থেকে শেষ বিন্দু তেল উবে গেছে বহুদিন। কোটরগ্রস্থ পিচুটি চোখে উদাস দৃষ্টি। বদলে যাওয়া পৃথিবী টায় ওরা পরিযায়ী শ্রমিক।

ডালে ফোড়নের গন্ধে কঁকিয়ে ওঠে ছেলেটা। চিল চিৎকারে ছিন্ন হয় নিস্তব্ধতা। অল্পবিস্তর কাশি সবার হলেও, নিরন্ন পেটে শিশুর কান্না যেন অসহ্য!

        কোণায় বসে থাকা অচেনা বৃদ্ধার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়........
"বলি  অ বৌ, ছিলাটোকে চুপ করা কেনে। একটুকু বুকের দুধ দে কেনে, চুপ হয়ে যাবেক।"

         ঝাঁঝিয়ে ওঠে অষ্টাদশী , তিনদিন পথ চলার ধকলে অবসন্ন শরীর। জঠর পুড়ছে খিদের আগুনে.......
" দুধ থাইকলে তুমায় বলতেই হইতো না মাসি। বেটা তো আমার, পরাণ আমার হু হু করইছে । এই অভাগা দিনে ভাগ্যের সাথে দুধটোও শুকায়ে গেছে গো। তিন দিন জলও পেট ভইরে জুটে নাই।"

বৃদ্ধার চোখ ভিজে আসে, অপলক তাকিয়ে থাকে উনুনের ছাইয়ের দিকে।

পাত পড়তে শুরু করেছে কাঙালী ভোজনের জন্য।



##অণুগল্প:গৃহযুদ্ধ## ভারতী দাস


অনুগল্প: গৃহযুদ্ধ

কলমে : ভারতী দাস




এই লজ্জা আর প্রাণে সয় না। সামান্য একটা চাওয়া, সেটার জন্য এতো কিছু.......
        রাগে গজগজ করতে করতে এসে বসলুম,চায়ের দোকানে। কি ভাগ্যিস সেটা খোলা ছিল! এতদিনের গৃহবন্দী জীবনে একটু মুক্তির স্বাদ।
        দূরত্ব টা বজায় রেখেছিলুম, পুরো এক মিটার। প্রাণে ভয় সবারই তো আছে!
        দোকানের বেঞ্চির শেষ প্রান্তটা একেবারে জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষা। এখন গাড়ি চলাচল নেই বললেই চলে। হরিণ গেলা অজগরের মতো পড়ে আছে রাস্তাটা। ইতিউতি এক দুটো মানুষ চোখে পড়লেও, সংখ্যায় খুবই কম।
        মোহন সবে চায়ের জল বসিয়েছে। আমিও মুঠোফোনে নতুন খবরের সন্ধানে ব্যস্ত। চোখ পড়েনি সড়কটার দিকে। একটা পাগলা হাতি কখন যেন চাকার সাহায্যে এলোমেলো ছুটে আসছে..........
গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কিছুতেই, হুড়মুড়িয়ে এসে পড়লো দোকানের ওপর.......
যন্ত্রণা, অসহ্য যন্ত্রণা........
ককিয়ে উঠে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতেই........
হিমশীতল জলের ঝাপটা চোখে মুখে, সাথে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ বিদীর্ণ হল কর্ণপটহ......

"সারাদিন শুধু পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, আর স্বপ্ন দেখে চেঁচাচ্ছে। দেখে গা জ্বলে যায়।
           তোমায় যে চা পাতা আনতে বললাম, সেটা না এনে, তুমি দিবা নিদ্রায় মগ্ন!বলি, সংসারটা কি আমার একার? "
        হাজার কথার মাঝেও দেখলুম এককাপ চা বেলা বারোটার সময়েও, সরলা রেখে গেছে আমার জন্য।কোথা থেকে যে সবদিক সামলায়,ঈশ্বর জানেন। বড্ড ভালো বৌ আমার। না, কাল সকালেই সব বাজার করে নিতে হবে, না হলে গৃহযুদ্ধ যে কোন দিন শুরু হয়ে যেতে পারে।।

ঈশ্বর যখন লকডাউনে বন্দী গৃহকোণে##সুপ্রীতি বর্মন


ঈশ্বর যখন লকডাউনে বন্দী গৃহকোণে,,,,,,

(( Picture Illustration)),,,,,,,

ফেসবুক টাইমলাইন পোস্ট,,,,

((Bumba Mukherjee))


((Exclusive))

Editorial Note,,,,

সুপ্রীতি বর্মন,,,,



কাউকে কোনকিছু প্রকাশ করতে না পারাটাই হলো সবচেয়ে বড় অজ্ঞাতবাস আর শাপগ্রস্ত কারাগার তার থেকে বড় নৈঃশব্দ্য যাপন কিছু নেই যেখানে সমানে একে অপরের অপ্রতিরোধ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মনের ভেতর প্রতিশোধ স্পৃহার গুমোট নিঃশ্বাসে যন্ত্রণার আঁচড়ে রক্তাক্ত আধিভৌতিক অক্ষরে লেপ্টে যায় মনুষ্যত্বের নাকাবপোষ মুখোশের আড়ালে থাকা শয়তান যার সাথে ঈশ্বরের সবসময় চলে খাওয়াখাওয়ি যেমন এক নেউলের সাথে চলে সর্পের খ্যানামনা আঁচড়াআঁচড়ি,,,,
অস্থিচর্মসার হাড় কঙ্কালের ম্রিয়মাণ কুঁচকে যাওয়া সোনাঝুরি পাতায় যখন হাড়পিঙ্গলা রাগে পাঁজরের আঁচড়ে টিকে থাকা দায় আগামী দিনের অনিশ্চয়তার পিচ্ছিল কড়ি কৃষ্ণকলির দ্যোতনায় কী হবে কী হবে ওগো শঙ্করী তখন মনমাঝে যূপকাষ্ঠে হরি হরি কৃষ্ণনাম জপে সখী কবে আসবে আমাকে পার করবে তুমি এই জীবন বড় টালমাটাল,,,,,তাই একা একা টিকে থাকা দায়,,,, দুঃশ্চিন্তার শমনে,,,,,


ওদিকে যখন ঈশ্বর প্রতিটি অট্টালিকার পাষাণপ্রস্তরে চিরঘুমে কালযোগনিদ্রায় মগ্ন আর পঞ্চনাগের লেজের ঝাপটায় উত্থিত মথিত কাঠগরায় থাকা মহামারীর প্রকোপে মুর্মূর্ষু রোগাক্রান্ত ক্ষীণায়মান শরীর উঠবো উঠবো করছে চারকাঁধের সমুদ্রে তখন দশটা পাঁচটা চিন্তা গেছে পগার পার ঘরপোড়া লকডাউনে,,,,,
হিমশীতল জমাট পাথরে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় অশৌচ সংসার আশ্রম কিংকর্তব্যবিমূঢ় মিছিলে মিথ মানবী ও মানবের দল প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে,,,,
তখন আমার রমণীর ঈর্ষান্বিত উল্লাসে আটপৌরে বিলাসী ভব্য স্বর্ণকাতানের শাড়ির আঁচল ধরে আঁকড়ে কাঁদে আমার ঈশ্বর আর কতো সঞ্চয়ের খুদকুঁড়োয় জীবনযাপন করবো বলো তুমি,,,,
আমি যে আর পারছি না,,,,
তখন ঘোর অমাবস্যায় বাইরে দরজা ধরে স্থৈর্য ও ধৈর্য হারিয়ে ফেলে চিৎকার করে পাষাণপ্রস্তরে আটকে থাকা ঈশ্বরের শালগ্রাম শিলা প্রখর ক্ষুধায় চৈতন্য হারিয়ে প্রায় ভক্তি বাৎসল্য রসের সোহাগ আগুনে পুড়ে পুড়ে অস্থিভস্মছাই দারুব্রহ্ম কাঠ হয়ে,,,,
যেন বলতে চায় উন্মুখ হয়ে আমাকে একটু ভালোবাস তোরা আর কিছুই চাই না রে আমার তার জন্য মন্দিরে দশকাটা জমি ডিঙিয়ে তিনতালগাছ সিঁড়ির পর সিঁড়ি পেরিয়ে ঘটা করে উলঙ্গ চাহিদার ঘটি হয়ে আমার কাছে যাবার কোন দরকার নেই রে,,,,, ঘরে বসেই ডাক নিমন্ত্রণ দিয়ে তাতেই আমি ধরা দেবো তোর কৃতাঞ্জলিমুষ্ঠিতে তার থেকে বেশি কিছু চাই না আমার কারণ আমি শুধুই সোহাগের কাঙাল,,,,,,,


অণুগল্প## ফলন ##প্রদীপ দে


অনুগল্পঃ

 ফলন
     

 প্রদীপ দে
     
•••••••••••••••••••••



আকাশের মুখটা ভার। আবার বারিপাতও নেই। নামতা পড়ার মত মিডিয়ায় আবহাওয়া দপ্তরের ঘোষণা ঘোষিত হয়েই চলেছে - সাবধান! ওই বুঝি প্রলয় আসে! রোদ্দুর সকলেই চায়, কিন্তু সেও তো চায় নিস্তারিতে। নিয়মের ঘানি টেনে চলেন এক অশরীরী হর্তাকর্তা যাকে কেউ কোথাও কোনদিন দেখেনি।

চাষা আবদুলের ও মুখ ভার। অকালের বারি যেন তার ক্ষেতের দৈত্য! মাটির ভিতর থাকা তার চাষের আলুর অকাল প্রয়াণ প্রায়! ক্রোড়ের সন্তান মাতৃসম! হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুজরায়।
মানত করে তার বিবি। দরগায় ছোটে, যদি হাওয়ারে ঘুরায়ে দেন তার প্রাণের আল্লা!

এরকমই তো ঘটেছে এবার। বিবির তলার শরীর ভারি হলো। বিয়ের প্রায় দশবছর বাদ। অনেক মানতের পর দুর্যোগ প্রায় কেটে গেল। সবার কথা অমান্য করি আল্লা বুঝিবা তার বিবির শরীরে সেঁধিয়ে গেল। অসম্ভবকে সম্ভব করে বিবির পেট ভরে উঠলো, গরিবি ঘরের এক ছোট্ট কামনাকে স্বাগত জানাতে।

আট মাস কেটেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বারবার সাবধান বাণী কানের গোড়ায় শুনিয়ে ছেড়েছে - দেখো বাপু একটু বুঝে শুনে চলো, প্রথম পোয়াতি, একটু নজর দিও। নষ্ট যেন না হয়!

আবদুল তার বিবি জাহানারার প্রতি ভালোই নজর দিত। নিজস্ব চাহিদা গুলোকে বিসর্জন পর্যন্ত দিয়ে দিল। ভয়ে স্ত্রীর সঙ্গে যৌনতার ইচ্ছে ভুলে যেত। তার একটিই মনস্কামনা তাকে তাড়িত করতো তা হলো ঘরের বাইরে ক্ষেতের ফসল যেন ঘরে উঠে আসে।

এইরকম পরিস্থিতিতে বারবার ঘোষণা, ঝড় -জলের আগাম পূর্বাভাস তার অশান্ত মনকে বড়ই বিচলিত করে তুললো। বাইরের ক্ষেত নিয়ে যখন দুর্যোগ তাকে পীড়ন করছে ঠিক তখনই ভিতরে বিপদ তাকে ছোবল বসালো।

জাহানারা বিবি বাথরুমে পড়ে গেল। রক্তপাতের দরুন গর্ভপাতের সম্ভাবনা প্রবলভাবে দেখা দিল। হাকিম এলো, পরীক্ষণের পর দাওয়াই দিল। কিন্তু আশঙ্কা তীব্রতর হলো,যখন গর্ভস্থ শিশুর অস্তিত্ব নিরুপণ করা কষ্টকর হয়ে পড়লো। মহিলা  প্রতিবেশীরা সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল,জান দিয়ে পারলে, সন্তানটিকে বাঁচা‌তে সচেষ্ট হলো।


এদিকে কালোমেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। প্রচন্ডভাবে প্রকৃতি তার বায়ু ছোটাতে শুরু করলো - যার নাম ঝড়। বড় বড় গাছগুলো তাদের প্রচন্ড শক্তিতে সেই ঝড়ের সঙ্গে লড়তে থাকলো। আবদুল এ অবধি ঠিক লড়াই চালাচ্ছিল নিজের সঙ্গে,  কিন্তু  একেবারেই ভেঙ্গে পড়লো যখন তীব্র বায়ুর সঙ্গে বৃষ্টির সূচনা সূচিত হলো।

বাইরে প্রকৃতি তার ধ্বংসাত্মক লীলা খেলায় ব্যস্ত। ঝড় -জলে মাটি ধুয়ে গেল, আর আবদুলের বুকের পাঁজর যেন ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যেতে থাকলো - ফসলের আলু তার আর ঘরে উঠবে না -এই আশঙ্কায়।

ভিতরে তখন হাকিম আর মাসিদের আরো এক লড়াই চলতে থাকলো আবদুলের ফসল কে বাঁচানোর জন্য। আবদুল এতটাই অসহায় হয়ে পড়লো যে আল্লাহর কাছে মানত করার কথা মনেও এলো না।
----------------------


##মৃত্যুর এসরাজ## টুটুল ওয়াহিদ


কবিতা: মৃত্যুর_এসরাজ

টুটুল ওয়াহিদ



আমি তোমাকেই মেনে নিয়েছিলাম যদিও সময়ের কাছে কখনো নিমেষেই মুছে যায় আত্মার নিগূঢ় সম্পর্ক তাই আজ আর আমি কিছু চাইতে আসিনি  ---

ভোগের উন্মাদনায় যখন মৃত্যুর বিন্যাস তখনো সময় চলে সময়ের নিয়মেই অনন্তের পথে --
তবুও আমি তোমাকেই মেনে নিয়েছিলাম !
কিন্তু বার বার স্বপ্নভঙ্গের বাস্তবতা আর আমার নিদ্রাহীন অপলক দৃষ্টি আজ ঐ প্রাসাদ চূড়ায় --
যেথা ভোগের শতরঞ্জি খেলায় স্বপ্নের মাতম বোড়ের অট্টহাসির লেলিহান লালায়।


আমি তোমাকেই মেনে নিয়েছিলাম --
অথচ আজও হালাকু চেঙ্গিসের সিনা টানে আমার দামের চৌকাঠে পড়ে বিষাক্ত নিঃশ্বাস !
তেমনি জাগতিক হিংসা - ভয়াল প্রবঞ্চনা
আর লালসা কাতর রঙিন চোখ
যা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক তা আজ আত্মকেন্দ্রিকতায় কেন্দ্রীভূত হয়ে আরো যেন প্রকট !
আমার সামনে - পিছে - ডানে - বাঁয়ে
শুধু হাত আর হাত --
তাই ক্ষুধার এক অস্পষ্ট প্রতিচ্ছায়া দেখতে পাই আমাকে ঘিরেই অদূরে ,
যদিও এখনো সলতে পোড়া গন্ধে বেড়ে চলেছে গুমোট --
হয়তো আর ক্ষণিক বাদেই বেজে উঠবে মৃত্যুর এসরাজ ! অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত চারিদিকে --
শুধু একটিই আওয়াজ শঙ্খনিনাদে
ভাত না দিস ফেনটুকুই দে।


আমি তোমাকেই মেনে নিয়েছিলাম --
কিন্তু অবাক বিস্ময়ে যখন দেখি আমার ক্ষুধার উদরেই পোষ্টমর্টেম চলে বারংবার অথচ তাতেও প্রতিধ্বনিত হয় তোমার অমল স্তুতি ছেয়ে যাওয়া পোস্টারে ফেস্টুনে !
হয়তো এমনি করে একদিন তোমার ভাস্কর্যও শোভা পাবে আমার ভস্মীভূত এ নাভিমূলে --
অথচ কি সামন্যই না আমার চাওয়া
স্রেফ একটি ছায়া বৃক্ষ --
যদিও আমার হাতে আজন্ম ভিক্ষার পাত্রই ছিল --
বলতে পারো শূন্যতার অহংকারে এ আমার স্বাধীনতার খোঁজে ফিরা ,
শুধু জেনে রাখো এ এক নতুন সময় নতুন করে জন্ম নিবার --
আক্রোশের দাঁতগুলো যেন সাম্যের গান গেয়ে চলেছ শেষ আশ্রয়ে --
বানের জলের মত ধেয়ে আসা সেই কলকল ধ্বনি তুমি শুনতে পাও বা নাইবা শোনো  --
আসছে বিস্ফোরণ যে আমার রক্তচোষা প্রাসাদ গুড়িয়ে দিবার।


তাই এবার না হয় আমার কবরের মাটিতেই পুঁতে যাবো--
শতবর্ষী নয় এক চিরঞ্জিব বৃক্ষের
চারা।


## ডর লাগে না খিদা লাগে খাতি দে## সুপ্রীতি বর্মন


Classified news segment:

("ডর লাগে না খিদা লাগে খাতি দে"),,,,,

প্রচ্ছদের চিত্র সংগৃহীত মনোজ হালদারের টাইমলাইন থেকে,,,,,


Editorial Note:

Picture Illustration,,,,,

সুপ্রীতি বর্মন,,,,



কঙ্কণে-সিঁদুরে ধন্যা শঙ্করী কাঁধবদল করে সমগ্র সংসারের দিন আনা দিন খাওয়া দিনমজুরের কাজে কপালখাকি খিলানে যখন ছোবলভরা চঞ্চল ভবিষ্যত এর আখের গোছাতে ব্যস্ত সেই সময় শিবের গাজনে শাপগ্রস্ত তালা ঝোলায় লকডাউন,,,,

হাহাকার ক্ষুধার অভিশাপে পৃথিবী যখন গদ্যময় তখন শীর্ণ ঠোঁটে ক্ষিধের চাবুক পঞ্চকন্যার মায়ের পিঠে মারতে থাকে অশ্বক্ষুরের মতন,,,,,
কালশিটে দাগ মাতৃত্বের আঁচল ফুঁড়ে ফুঁসে উঠে ঐ কুটিল হাঙর শরাবী স্বামীর সাথে প্রত্যহ ঝগড়া উঠতে বসতে খরার উপোষে জীবন তখন পোড়াধরা তাল তাল মাটি হয়ে যায় একটু এই আঁকড়া জ্বরের প্রকোপ থেকে বাঁচতে জল চায়,,,,,


যে সোহাগের বীর্যরস শুষে একদিন সন্তানকণিকার জন্ম হয়েছিল রাতের জঠরে যখন প্রখর ক্ষিধে চাগাড় দিয়ে উঠে তখন মহেশ্বরের জটাজুট কেশবল্কলকুঞ্জে আশ্রিতা গঙ্গার কোলে আকন্ঠ-রোষে সমর্পণ করাই শ্রেয় বলে ভাবে এক মাটি হারানো হাভাতে মা,,,,

তাই জঘন্য কুরুচিকর সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হয়নি সেই কোমর ভাঙা মা,,,,,
ছুঁড়ে ফেলে একের পর এক সেই পঞ্চকন্যা কে গঙ্গার বুকে যাতে চিরতরে অন্তর্জলি যাত্রায় জন্মের মতন ঘুচে যায় খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা ধিকিধিকি কাঙাল শরীরের জিয়ন কাঠির সহ্যশক্তি,,,,,


চ্যালাকাঠের কোন প্রয়োজন নেই পঞ্চভূতে আপনা আপনিই হয়ে যাবে গ্রহণ তার কন্যারা,,,,
এইসব সাত পাঁচ ভেবে যখন এক কপালখাকি মাগি চিলচিৎকার ছাড়া আঙুলের ক্ষিপ্র চালে পাঞ্চজন্য বাজিয়ে তোলে নৈঃশব্দ্যের যাপনে শুধুমাত্র একটু শান্তির ঝংকারের ঋণে তখন কেমন করে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে যায় গঙ্গার পারে থাকা বিন্দুবিসর্গ না জানা জেলের দলের যারা ক্ষিধের তাগিদে মাছ ধরতে ফেলেছিল জাল যেন তারা ঐ এক‌ই সহমরণের যাত্রী ঐ কপালখাকির সাথে,,,,,,


রাত্রির জঠরে যখন শীতকটিবন্ধে জাঁকিয়ে বসেছে এক মা অসহায় হয়ে এক প্রখর পরাধীনতার শৃঙ্খলে,,,,,
তখন আপন সন্তানদের ধিক্কার ও ঘৃণায় অশ্রুর রজ্জুতে বাঁধা মৃত্যুঝাঁপে ছুঁড়ে মারবে বলে স্বৈরাচারে কেমন করে যেন তার সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে চেপে বসে এক ছিন্নমস্তা মাথা ছাড়া,,,,,
বোধবুদ্ধি কিংবা হিতাহিতজ্ঞান শূন্য,,,,
যার রূপরঙে তখন ঝলসে উঠে এক ক্ষাপাটে ডাইনি যে নিজের ছেলেকে নিজে খেয়ে খলবলিয়ে হেসে উঠে শীঘ্রপতনের অট্টহাস্যে,,,,,
জেলেরা তখন সেই কান্ড কারখানা দেখে ভয়ে শুকিয়ে কাঠ জাল ফেলে পালায় সেই চর থেকে,,,,
ঐ যে কথায় আছে না আপনি বাঁচলে বাপের নাম,,,,,
তাদের অবস্থা ঠিক তখন ঐরকম অনেকটা হয়ে গেছিল যে কী দেখছে কেন বা কী দেখলো কিছুই তাদের মন ও মাথায় ঢোকে না কী বিভীষিকা কান্ড যা ভুলে থাকা যায় না,,,,,


কিন্তু কপালখাকি মা তার ঘরের খিলানগুলো হারিয়ে আর কোন ভরসায় ফিরে যাবে সে নিজের ঘরের চালে কারণ সে এখন সর্বগ্রাসী ক্ষুধার বৈশ্বানরে নিজেকে নিংড়িয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে কাঙাল হয়ে গেছে,,,,
নতুন করে ফিরে পাবার বা হারিয়ে যাবার কোন ভয় আর নেই তার তাই ঘরে ফেরার কোন তাগিদ তার মধ্যে চাগাড় দিয়ে ওঠে না,,,,


অতন্দ্র প্রহরীরা তখন দৌড়ে আসে সেই জায়গায় আর খানাতল্লাশি চালাতে থাকে কারণ অন্বেষণের জন্য তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠে,,,,,
কিন্তু এক পাগল মা তখন মানসিক দ্বন্দ্বে অবসাদে সম্পূর্ণ রূপে অজ্ঞাতবাসী হয়ে গেছে,,,,,
সে তখন অমনোনীত হয়ে গেছে সাংসারিক চাহিদার শোকের থেকে সম্পূর্ণ কাছছাড়া,,,, নিজের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব খুইয়ে এক শনিশ্চরী যার আর নতুন করে কোন আতঙ্ক রেখে তার বৃশ্চিক দংশনের দীর্ঘশ্বাসে প্রতিনিয়ত নিজেকে মেরে নতুন করে জেগে উঠার কোন প্রয়োজন নেই,,,,,,


প্রাসঙ্গিক একটি কবিতার ছেঁড়া চালচিত্র তুলে ধরা হলো,,,,,,,

ভাত দে হারামজাদা

- রফিক আজাদ


ভীষণ ক্ষুধার্ত আছিঃ উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হতে থাকে- প্রতিপলে- সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি- যেমন চৈত্রের শস্যক্ষেত্রে- জ্বেলে দ্যায়
প্রভূত দাহন- তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দু’বেলা দু’মুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোন দাবী
অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়ঃ
বাড়ি, গাড়ি, টাকা কড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে
আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-
ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠান্ডা বা গরম
সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ’লে
কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ
দু’বেলা দু’মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য-সব দাবী;
অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা
চাইনিতোঃ নাভি নিম্নে পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক;
যে চায় সে নিয়ে যাক- যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও
জেনে রাখোঃ আমার ওসবের কোন প্রয়োজন নেই।

যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবী
তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘ’টে যাবে
ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন কানুন-
সম্মুখে যা কিছু পাবো খেয়ে যাবো অবলীলাক্রমেঃ
থাকবে না কিছু বাকি- চলে যাবে হা ভাতের গ্রাসে।
যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তোমাকে ধরো পেয়ে যাই-
রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে।
সর্বপরিবেশগ্রাসী হ’লে সামান্য ভাতের ক্ষুধা
ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে।

দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা,
তা না হলে মানচিত্র খাবো।