শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

অণুগল্প## ফলন ##প্রদীপ দে


অনুগল্পঃ

 ফলন
     

 প্রদীপ দে
     
•••••••••••••••••••••



আকাশের মুখটা ভার। আবার বারিপাতও নেই। নামতা পড়ার মত মিডিয়ায় আবহাওয়া দপ্তরের ঘোষণা ঘোষিত হয়েই চলেছে - সাবধান! ওই বুঝি প্রলয় আসে! রোদ্দুর সকলেই চায়, কিন্তু সেও তো চায় নিস্তারিতে। নিয়মের ঘানি টেনে চলেন এক অশরীরী হর্তাকর্তা যাকে কেউ কোথাও কোনদিন দেখেনি।

চাষা আবদুলের ও মুখ ভার। অকালের বারি যেন তার ক্ষেতের দৈত্য! মাটির ভিতর থাকা তার চাষের আলুর অকাল প্রয়াণ প্রায়! ক্রোড়ের সন্তান মাতৃসম! হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুজরায়।
মানত করে তার বিবি। দরগায় ছোটে, যদি হাওয়ারে ঘুরায়ে দেন তার প্রাণের আল্লা!

এরকমই তো ঘটেছে এবার। বিবির তলার শরীর ভারি হলো। বিয়ের প্রায় দশবছর বাদ। অনেক মানতের পর দুর্যোগ প্রায় কেটে গেল। সবার কথা অমান্য করি আল্লা বুঝিবা তার বিবির শরীরে সেঁধিয়ে গেল। অসম্ভবকে সম্ভব করে বিবির পেট ভরে উঠলো, গরিবি ঘরের এক ছোট্ট কামনাকে স্বাগত জানাতে।

আট মাস কেটেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বারবার সাবধান বাণী কানের গোড়ায় শুনিয়ে ছেড়েছে - দেখো বাপু একটু বুঝে শুনে চলো, প্রথম পোয়াতি, একটু নজর দিও। নষ্ট যেন না হয়!

আবদুল তার বিবি জাহানারার প্রতি ভালোই নজর দিত। নিজস্ব চাহিদা গুলোকে বিসর্জন পর্যন্ত দিয়ে দিল। ভয়ে স্ত্রীর সঙ্গে যৌনতার ইচ্ছে ভুলে যেত। তার একটিই মনস্কামনা তাকে তাড়িত করতো তা হলো ঘরের বাইরে ক্ষেতের ফসল যেন ঘরে উঠে আসে।

এইরকম পরিস্থিতিতে বারবার ঘোষণা, ঝড় -জলের আগাম পূর্বাভাস তার অশান্ত মনকে বড়ই বিচলিত করে তুললো। বাইরের ক্ষেত নিয়ে যখন দুর্যোগ তাকে পীড়ন করছে ঠিক তখনই ভিতরে বিপদ তাকে ছোবল বসালো।

জাহানারা বিবি বাথরুমে পড়ে গেল। রক্তপাতের দরুন গর্ভপাতের সম্ভাবনা প্রবলভাবে দেখা দিল। হাকিম এলো, পরীক্ষণের পর দাওয়াই দিল। কিন্তু আশঙ্কা তীব্রতর হলো,যখন গর্ভস্থ শিশুর অস্তিত্ব নিরুপণ করা কষ্টকর হয়ে পড়লো। মহিলা  প্রতিবেশীরা সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল,জান দিয়ে পারলে, সন্তানটিকে বাঁচা‌তে সচেষ্ট হলো।


এদিকে কালোমেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। প্রচন্ডভাবে প্রকৃতি তার বায়ু ছোটাতে শুরু করলো - যার নাম ঝড়। বড় বড় গাছগুলো তাদের প্রচন্ড শক্তিতে সেই ঝড়ের সঙ্গে লড়তে থাকলো। আবদুল এ অবধি ঠিক লড়াই চালাচ্ছিল নিজের সঙ্গে,  কিন্তু  একেবারেই ভেঙ্গে পড়লো যখন তীব্র বায়ুর সঙ্গে বৃষ্টির সূচনা সূচিত হলো।

বাইরে প্রকৃতি তার ধ্বংসাত্মক লীলা খেলায় ব্যস্ত। ঝড় -জলে মাটি ধুয়ে গেল, আর আবদুলের বুকের পাঁজর যেন ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যেতে থাকলো - ফসলের আলু তার আর ঘরে উঠবে না -এই আশঙ্কায়।

ভিতরে তখন হাকিম আর মাসিদের আরো এক লড়াই চলতে থাকলো আবদুলের ফসল কে বাঁচানোর জন্য। আবদুল এতটাই অসহায় হয়ে পড়লো যে আল্লাহর কাছে মানত করার কথা মনেও এলো না।
----------------------


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন