রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯

সম্পাদকীয়,,,, সুপ্রীতি বর্মন



সম্পাদকীয়,,,,

সোহাগ আগুনে প্রণয়িনী ফাগুন,,,,

সুপ্রীতি বর্মন,,,,

কৃতজ্ঞতা ঋণ,,, ছবিসংগ্রহশালা,,,
রঙ্গ রসিয়া,,,,চলচ্চিত্র,,,,
ইন্টারনেট,,,,


নিকষ কালোরাত্রি গেরস্থালীর ভাঙা চৌকাঠে ঠেস শ্যামবর্ণা কৃষ্ণ বিরহিনী রাই
মনে অপার জলধির লাগামছাড়া উদ্বিগ্নতার আছড়ে পড়া স্রোত,,, এখন যেন কোন রঙিল চান্দ্রমাস,,,
অমায়িক স্নেহরসে সিক্ত প্রিয়শশী,,,,,

অসহনীয় প্রতীক্ষায় অসমাপ্ত শৌচে নাইতে নামা
যেন কোন হরিদ্রাভ গৌরবর্ণ অঙ্গ পুড়ে ছারখার জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি,,,
প্রোথিত কোন ক্ষুধিত পাষাণ মৌন দেওয়াল প্রস্তরে কোনারকের প্রতিমা,,,
অচ্ছুৎ কালঘামে আটক প্রণয়ক্ষুধায় ঈশ্বরী,,,,

ফেলে আসা শুমসান রাজপথে কানহার সেই মোক্ষম রক্তিম চুমুর বুভুক্ষু ঘ্রাণ,,,
করতে চাইছে আড়ালে তাকে পাগলপারা,,,
ইতিউতি চেয়ে অবিচ্ছেদ্য বিরহে
পুষ্করিণী শূন্য শ্যাওলা মাখা অন্ধরমণীর কালরাত্রি,,,
আবক্ষ বিষাদে যখন তন্বীর নৌকাডুবি,,, আগন্তুক অতিথি পানকৌড়ি,,,
 চাতক চাহনিতে মাথাচাড়া স্পর্ধা,,,
সোহাগ আঙিনায় রঙের মাদকতায়
লেগেছে যেন নৈশিল রঙীন রাত্রিবাস,,,,
রতির রংমশালে তখন লেগেছে নিজের অজান্তে,,,,
পাংশুটে রুগ্ন ছায়া প্রেমিকের হলদেটে লন্ঠনের আঁচ,,
আলপথে তণ্বী কামাগ্নি আবক্ষ বিষাদে জ্বলন্ত কর্পূর,,,দাউ দাউ আলিঙ্গন,,,,
 উদ্বায়ী আজ কালরাত্রির প্রণয় ভ্রমর,,,



অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহের মাৎসর্যের স্পর্শ কাতরতায় হঠাৎ নগ্ন খাজুরাহোর শ্যামের মনমোহিনী বাঁশির আলাপ,,,,
অবিন্যস্ত শ্বাসে যোনি মুদ্রার অনিচ্ছুক কম্পনের উপসংহারে  
বিষেলা বাঁশির গহ্বরে রাখে প্রেমিক তার উদ্ধত তর্জনী ,,,,বিব্রতকর পরিস্থিতি।
তণ্বীর গৃহকোণের সীমারেখা উলঙ্ঘন উলুধ্বনির একাক্ষরে জমাট 
ভৌগলিক দূরত্বের নয়ছয় ছোঁয়াচে রক্তিমপলাশের যৌতুক সোহাগ।।
 অহরহ চোষে গোলাপী ওষ্ঠ রমণীর,,,, 
রূপালী ইছামতীর কাঁখে পুরুষালী নিষিক্ত চামড়ার আঘ্রাণে রেখেছে প্রেমিক তার হাত,,,
বাহুডোরে রোমশ আক্রোশে অনভ্যাস কংকনার তখন জ্যোৎস্নায় ভেজা চাঁদ খোঁজা,,,,,
চিরহরিৎ লাউডগা লতার আড়িমাড়ি ফাঁস জটে রঙের সমুদ্র, সৈকত এ হাপুচুপু নিঃশ্বাসের উর্ধ্ব গতি আঙুলের ডগায়,,,
 কল্কাকটি খাঁজ অলকার রঙে ডুবন্ত কোমর,,, 
দাহ্য চিটেল ফাঁদে আঁকড়ে তখন রাত্রিবাসের নিষিদ্ধ নিখাদ রঙ,,,,প্রণয় ক্ষুধা,,,, 
শুভ্র জ্যোৎস্না পুলকিত যামিনীম,,,  
লালায়িত প্রেমিকের ত্রিনেত্রের অনিক্ষিপ্ত শানিত দৃষ্টি,,,, 
নগ্ন সাগরের আতুরতায় পুনর্জন্ম কামশাস্ত্র



দামাল পুরুষত্বের চুম্বন আখমিচালি প্রিয়ার,,, 
যেন কোন ছেলেখেলা ধরাছোঁয়ার বাইরে,,,,
 কামনার জ্বরে স্তনবৃন্ত এ মাথাচারা স্পর্ধায় অজগরের দুঃসাহসী বেহায়া লেজের ঝাপট কৃষ্ণ গুহায় ,,,
কালিয়ানাগের মন্থনে দলিত মথিত উচ্ছ্বসিত ঢেউ,,,
 মদমত্ত মাতাল প্রেমিক বিষদগ্ধ,,, অমৃতচোষণ কন্ঠলগ্ন প্রেমিকার,,, স্তনদুগ্ধ,,, 
বাৎস্যায়ন,,,  
নারীনাভিতে পুরুষনাইকুন্ডের অবসাদ বিলীন দাহ্য মধুপ,,,,
কামুক রমনীরাত্রি তিলে সঞ্চয় পুরুষালী সংযোগ,,,

ইত্যবসরে শংখ-কুসুম-কাঁচুলী ভিজে সপসপ
যেন কোন অসংযত ক্ষিধেয় হতে লেগেছে চুরমার,,,,,
পদ্মনাভ যোনির লালিমায় অযাচিত সমর্পন
অকাল দুর্ভিক্ষ জরা সেঁধিয়ে উঁচুমাথার কালনাগ বিশল্যকরণী,,
কুচযুগ নিংড়ে রতিক্রিয়ার নৃত্যশৈলীতে মদহোশ প্রেমিকের কন্ঠলগ্না ঊর্বশীর 
তন্দ্রায়িত ক্লান্তি,,,, 
পুনঃজারন ক্রিয়ার উত্তেজক স্পৃহা বাড়াতে
প্রেমিকের স্পর্ধা ক্ষরণ,,,



কায়াপলটে এখন হতে চায় কোন উদোম উপোষী চন্দ্রাহত কামুক বিছে,,প্রিয়ার তলপেটে ঝাঁপিয়েছে,,,
 প্রখর দংশনে আনতে চায় যৌনক্ষুধার গলাধঃকরণ,,,উলঙ্গ রাত্রি।
অপেক্ষা শেষে এখন তড়পানো ঈশ্বরীর প্রমোদবিলাসে অগাধ রঙীন সমুদ্র
তপ্ত নগ্নিকার সৈন্ধব লবন যোনি,,,
সোহাগী লাল শাড়ি এখন ক্ষুধাতুর 
তৈলাক্ত দেহচিত্রের শয়ানভূমি,,,,
 ক্ষুৎকাতর পিপাসায় অন্ধি-সন্ধি,,,  

সোহাগী লাল আঁচলের প্রচ্ছদে লুকানো অধর ও কায়া,,,
 আগুনরাঙা ঠোঁটে বিধ্বস্ত ঝড়ের কামড়াকামড়ি কামাগ্নি শলাকার প্রবেশ গর্ভগৃহে,,,, 
ঝিমধরা আলস্যে যখন মগ্নচৈতন্যে ঝুঁকে শীষ
তখন জোরালো পুরুষপ্রতিম থাবায় থাবড়ানো সফেদ ঊরুতে লেগেছে 
অস্থিরতার কাঁপন,,,, 
পিচ্ছিলতায় জমাট বেপোরোয়া প্রেমীর কাম‌উদ্গিরণ স্পৃহা
 পুনঃপুনঃ লিঙ্গবর্ধক চাহিদার শিকড়ের মন্থন লালসা খোঁজে জলাজঙ্গম,,,
যেন কোন ক্ষুধাতুর বন্য‌আদিমতা,,,
জঙ্ঘাদেশ ছাদের আলসেতে শুকানো বীর্যবীজ পরম আলস্যে,,,  
জঙ্ঘা অশ্বে আরোহন,,, আমার রাজন,,, 
সাহসী সদর্পে মন্থন ঘোরে শিরশিরানি,,, 
লালা উদগীরণ মুখে হ্রেষা ধ্বনি,,,, 
পুরুষালী অহম তেজ,,,,সৌরপ্রাংশু,,,  
আবার যেন এক তন্দ্রায়িত রূপসী কন্যের হিমশৈলকেশে জমাট ক্লান্তি,,,
পুরুষালী ঔরসে শীতঘুম,,,




ঋজু পৌরুষের রূপান্তরিত বশীকরণে 
জাহ্নবী হয়ে ওঠে কখন তড়পানো যুবতি মৎসিনী,,,,
উচ্ছ্বসিত অলকানন্দার জলে,,,
গর্ভিণী ঈশ্বরী মৃত্তিকা আঁকড়ে দৃঢ় চোয়ালের গা ঘেঁষটে সংযমহীনতা অক্লেশে ছাড়তে বাধ্য হয়ে ওঠে,,,,,
অমোঘ গোঙানো হিলহিলে ঢ্যামনা সাপের অবাধ্য গোঁত মারণের শীৎকারে,,,
উর্বরা গর্ভিণীর মৃৎকায়ার নির্মাণ  স্বয়ংক্রিয় শিল্পীর রঙের মূর্চ্ছণায় আনতে লেগেছে সফেদ বীর্যরসের ফেনিল ঢেউ,,,,

 মৎস্যজীবীর বড়শি মোহগ্রস্ত ছিপ,,,
 কেবলি প্রিয়ার নাতিদীর্ঘ নাভিতে ঘাইমারা মৎস্যে,,,আনতে চায় ক্ষুধার্ত আলোড়ন,,, 

 তুমি তো কেবলি মাছরাঙা মৎস্য শিকারী,,,,
প্রিয়ার কপোলের সৈকতে তখন জমতে লেগেছে 
সোহাগ সঙ্গমের অহর্নিশ ক্লান্তিঘাম
নাইকুন্ডে আটক প্রেমীর উঠা-নামা নাভিশ্বাস,,,


 ক্ষয়াক্ষয়ি নীলচে বিপর্যস্ত স্তনে মেয়েলি ধামসায় পুরুষালী মাদলের বোল
ধর্ষনের দুর্বোধ্য লাঙলের গা ঘেঁষে
 বিবস্ত্র রতিক্লান্ত যাপন ক্ষুধায় শঙ্খলাগা ,,, 
মণিকান্ত ঠোঁটের ঔদ্ধত্য চুম্বনে ,,,
 বিষাক্ত ফণীশয্যায় নিঃসঙ্গ যাপন বিষ শোষণ,,,, 
প্রেমিকের ঋণ
রাইয়ের শাপমোচন।


মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯

নবম ভাগ


ক্ষমা কর ঈশ্বর

সুদীপ ঘোষাল



 বিশ্বাস  ভেঙ্গে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে
বিশ্বাস সরে যাচ্ছে মেঘের মত
ভক্তি শ্রদ্ধার অর্থ ভুলে গিয়ে
একটা হিংসার আকাশ ঘিরে ধরছে সভ্যতা
মূর্তি ভাঙার অর্থ আমার জানা নেই
ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন   থাকে    অন্তরে
মনের ঘরে যে দীপ জ্বলে
শত ঝড়ে নেভে না
ক্ষমা কর  হে ঈশ্বর
নতুন পথের সন্ধান দাও...


ভুলে যাওয়া এক মারণ রোগ
জাতির গোঁড়ায় ঘুণ ধরে যখন
তখনই ঈশ্বরের  উপর আঘাত আসে
সে আঘাত ফিরে ফিরে বাজে
অবিচল নীরব চেতনা জাগ্রত বিবেকে


মানুষই দেবে এর হিসাব    
ভাঙা গড়ার জীবন জুড়ে
বিস্তৃত আদিগন্ত দয়ারসাগর
দয়া কর ক্ষমা কর আপন সুরে      


জীবন  নিভে যায় অন্ধকারের কোলে
আরও আরও ধামসা মাদল বাজে
আনন্দ  আগমনে
চাঁদের গাজন জুড়ে নাচে বর্ণপরিচয়ের  বিহু...



ভাষা নেই

সুদীপ ঘোষাল


মুখোশ পরে আছে যে হায়েনা

তাকে বল্লমের খোঁচা দাও
ভিড় থেকে সাদা পোশাক খুলে দেখ
কী ভীষণ নিষ্ঠুর  রাতচড়া জানোয়ার
ঘন অন্ধকারেই ওরা লুকিয়ে থাকে      

সমাজে ওরা শিকারি বন্য কুকুরের  মত নির্মম
আড়ালের কোনো প্রয়োজন নেই শূকরের
প্রকাশ্য জনপথে ওরা কুকুরের আচরণে অভ্যস্ত
ঘৃণা আর থুতু ছড়িয়ে যায় ওদের  মুখে


সভ্যতা ওদের বেয়াদপিতে গোল্লায় যায় না
গোল্লায় যায় সমাজের নিষ্ঠুর   নীরবতায়...

অষ্টম ভাগ


উগ্র প্রতিবাদী মুক্তগদ্য....

আর হব না সুবোধ বালক....

মানসী বিশ্বাস।



এখন আর সুবোধ বালক হবো না।রাজনীতির তরজা, গালিগালাজ বুকে নিয়ে মরা ভালো। নোনা আতার মতো দিগ্বিদিক চেয়ে থাকি।ভ্রূণ উঁকি মারে জানালায়।তুমি না হয় আমার মতো রাখাল হয়েই থেকো !

এবার থেকে ডজন খানেক মিথ্যে বলবো।স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে কি লাভ হল ? যৌবনবতী চিত্রায়ণ চাপা পড়ে ছাইয়ের গাদায়।খড়ের গাদায় জমে আছে সুবুদ্ধি। যেগুলো সূঁচ খোঁজার মতো খুঁজে বেড়াই আজও।

উসকানি নয়, উগ্রপন্থি ভাব পেটের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি প্রত্যেকে।যাদের মধ্যে চাপা পড়ে আছে এক এক বিশালাকার দৈত্য।চোখে চোখ পড়লে,খুবলে নেবে এক লহমায়। কফিনের সামনে দাঁড়াবে আত্মীয়স্বজন। পরিবারের পাশে দেখবে আর কেউ নেই !

মাটিতে পড়ে থাকে শোক-তাপ-যন্ত্রণা।পায়ের পাতায় পিষে ফেলি মানসিকতা। যার জন্য শিক্ষার 'শ' শেখা, 'অ','আ' পড়তে শেখা, তাকে নিয়ে রাজনীতি !  জোর জবরদস্তি দেশপ্রেম আবার আরেক হাউসে ! দাপিয়ে বেড়ায় দাপুটে ঝড়ের রক্ত।এখন মনে হয় মুখে বোবা হলে স্বাধীন হতাম। কথা বলার স্বাধীনতা হারালে,শান্তি পেতাম !

কর্তৃপক্ষ এখন ধর্মান্ধতা আর বেপরোয়ার শৌখিন বেড়াজালে আবদ্ধ। শুধু ধূ ধূ বালি,জোরালো হাওয়াও নেই, অক্সিজেন মাক্স চাপা পড়ে আছে তেতলার ফ্ল্যাটে। অদূরে দাঁড়ানো আলমারিতে ঠাসা নির্জীব অন্ধকারের ভূত !


শিক্ষাদানের মামুলি ধাঁচ বখাটে হয়ে গেছে। ভারী হয়ে গর্দানে চেপেছে ইংরাজি। ইংরাজি শিখে সবাই ভুলেছে পুরোনো কে।কল্পনাকে সর্বাধিক আলোড়িত করে ঠাট্টা করে দুনিয়া, তবু চেয়ে চেয়ে গান্ধারীর মতো দেখি।হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে ছুটি লোকের দোষ ধরতে !

একটা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। ডি.এন.এ'র মতো রক্তে রক্তে পোকা মিশেছে। জ্যান্ত পোকা গুলো কিলবিল করে। জরাসন্ধরা আবার এসে গেছে। ব্যবহার করছে নিজেদের স্বতন্ত্র স্বাধীনতা ! কচু পাতায় ফুটে ওঠে নিখুঁত অভিনয়।


'ভ্রান্তিবিলাস'কে হেলেদুলে পড়েছি এককালে।কাঁথার শুয়ে ঠাকুমার কাছে শুনেছি 'সীতার বনবাস'।এখন ভ্রান্তি গুলো চাঁদের কলঙ্কের মতো লাগে।সীতার বনবাসে শুধু কানে আসে, সীতার কথা।বৃদ্ধা স্বাধীনতা বৃদ্ধাবাসের পথে হেঁটে চলে যাচ্ছে। সঙ্গী লাঠিটাও আজ ভেঙে গেছে। প্লাসে মাইনাসে পাওয়ার অতি বৃদ্ধ, ঊর্ধ্ব।চশমা গড়ানোর সামর্থ্য টুকু নেই আজ।

স্মৃতি গুলো দলাপাকিয়ে গলার কাছে উঠে আসে।নিজেরা যেন গার্হস্থ্যজীবনে এক একটা টেররিস্ট।ইমোশনাল কাব্যের জাল বুনি অহর্নিশ। আমাদের নাটকের কোন পরিচালক নেই।

ধন্বন্তরি ওঝা কথা দিয়েছে, তুমি স্থান পাবে।তুমি জিতবে শেষে, দেখে নিও,মিলিয়ে নিও আমার কথা।

আমি কিন্তু আর সুবোধ বালক হব না।রাখাল-ই না হয় রইলাম।তবু তোমাকে জুড়ে বাঁচবো।ইংরেজিপাশ জানোয়ারদের কামড় থেকে তোমাকে বাঁচাতে রাখাল-কে খুঁজবে লোকে।আমি ওই অস্তগামী সূর্যের মতো ঝিলিক দেব মাঝেসাঝে।




সপ্তম ভাগ


ঈশোপনিষদ

(আমন্ত্রিত কলম)

সুধীর দত্ত


কীই-বা করবার আছে যখন চোরের মায়ের গলা বড়ো,
কীই-বা কররার আছে যখন ঈশ্বরচন্দ্রের ধড় থেকে
আলাদা করা হয় মাথা
মন্দার বাজারে যাতে চড়চড়  টি আর পি বাড়ে।
গড় করি মাগো ঠনঠনে,
তোমাকে নোলক দেবো, পায়ে মল,বাজুবন্ধ
কোমরে, দু'গাছা চুড়ি হাতে,
চড়কা পড়বার আগে যেরকম চিড়িক-কাটা আলো
দু'চোখ ধাঁধিয়ে দ্যায়, তেমনটি না হয় যেন--- দশ চক্রে ভূত
ভগবানকে হত্যা ক'রে আমাদেরও এক একটি তোতা
বানায় সে-জাদুকলে,  পাতে পাতে পেড়ে দ্যায় হলুদ ব্যঞ্জন।
আর আমরা গো-গ্রাসে গিলি, চক্ষে দেখি সরষে ইব চারদিক হলুদ।
ভাগ্যিস বর্ণ-পরিচয়ের আলোয়
অন্ধরাও দেখেছিল পথ ;
দোবাঁকির সুড়ি খাল, বন-বাদাড় মাড়িয়ে ঠাকুর
এসেছিলেন ঈশ্বরের কাছে !

কে কনিষ্ক করল তাঁকে , কোন ব্যাপারী সওদা করে মুণ্ডহীন ধড়টুকু নিয়ে
কীইবা যায় আসে তাঁর ! তিনিই প্রথম
গীর্জা ও মন্দির ভেঙে
জ্যান্ত ঈশ-উপনিষদ হলেন।

ষষ্ঠ ভাগ


তিনি ঈশ্বর
----------------

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

(বজ্রকন্ঠনিনাদী অগ্ন্যুৎপাতে তীক্ষ্ণাগ্র প্রতিবাদী আলোড়ন,,,,কলম)


#########################

বিদ্যাসাগর একটা যুগের নাম ৷ একটা চেতনা , একটা রেঁনেসা বা নব জাগরণের নাম ৷ আমাদের শিরদাঁড়ার নাম ৷ বিদ্যাসাগর -অক্ষরপরিচয় , নারীর উত্তরণ ৷ যে আলোকবর্তিকা কুসংস্কারকে নির্মূল করে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে চারিদিক , সমাজের কদর্য নিয়মগুলোর মূলে সজোরে কুঠারাঘাত করে দুর্বিনীতের ছলকে চুরমার করে , নতুন দিগন্তের সূচনা করে , খুলে যায় সকলের জন্য অবারিত দ্বার , সেই আলোকবর্তিকাই  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যসাগর ৷ নারী শিক্ষা প্রসার , নারী মুক্তি , বিধবাবিবাহ প্রচলন , এক কথায় নারী জীবনের ত্রাতা , জীবন্ত বিগ্রহ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ৷


একটা স্পর্শকাতর আবেগ গলার কাছটাতে  কুন্ডলী পাকিয়ে ধরে ঈশ্বর চন্দ্রের নাম , উচ্চারণের সাথে সাথে ৷ একটা নির্ভয় আশ্রয় যেন দুহাতে আগলে রেখেছে আমাদের ৷ মাতৃ ভাষার জোৎস্না যখন আমাদের উঠোনে খেলা করে , সেই সৌন্দর্যের গরিমায় , ঐশ্বর্যশালী হই আমরা , তাও তো তাঁরই দান ৷ লড়াকু প্রাণ , অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা , জন্মভূমির বীর সন্তান বিদ্যাসাগর বাঙালীর গর্ব ৷ বোধের গভীরতায় তিনি আত্মার ঈশ্বর ৷


তাই ঈশ্বরের অববাননা হলে মস্তিষ্ক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় ৷ রক্তের ধারায় উত্তপ্ত লাভার স্রোত অনুভব করি ৷ তবু মারমুখী হয়ে ওঠা হয় না , কারণ উনিই তো শিখিয়েছেন সহিষ্ণু হতে , পরিমার্জিত হতে ৷ তবে তার মানে এই নয় , প্রতিবাদ করতে ভুলে যাবো আমরা ৷ উনি যেভাবে গর্জে উঠেছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে , ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ,সেইভাবেই ,  ঠিক সেইভাবেই আমরা সমবেতভাবে গর্জে উঠব এই ধিক্কৃত কাজের বিরুদ্ধে ৷



দলাদলি , রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভাবতে হবে , যেদিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছিল সেদিন আমাদের ঈশ্বর আক্রান্ত হয়েছিল ৷ আমাদের স্বপ্ন , আমাদের সংস্কৃতি , আমাদের চেতনা , ঐতিহ্যের অবমাননা হয়েছে সেই মুহূর্তে যেই মুহূর্তে খন্ডিত হয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ৷ এ লজ্জা আমাদের সকলের লজ্জা ৷ বাঙালীর লজ্জা , বাংলার লজ্জা , জাতির লজ্জা , সমগ্র দেশের লজ্জা ৷ ধিক্কার আমাদের ,এ কেমন নৈরাজ্যের আমরা বাসিন্দা , যেখানে দেবতা আসনচ্যুত হয় , যেখানে আমাদের আবেগ চুরমার হয় !

কাগুজে বাদ নয় , রাজনীতির প্রহসন নয় , আমাদের চেতনার উদ্ভব হোক ! যে হাতগুলো আমাদের ঈশ্বরের শরীর স্পর্শ করেছিল তার গরিমা কলঙ্কিত করার জন্য তাদের শাস্তি অনিবার্য করার জন্য আমাদেরই তো পদক্ষেপ নিতে হবে ৷ কারণ পরোক্ষভাবে হলেও এই দূষিত সমাজের জন্ম দিয়েছি আমরাই ৷

পঞ্চম ভাগ


আমার হামলায়

কৌশিক চক্রবর্ত্তী


তোমার ঘর ভাঙলে আমায় শাস্তি দিও আরো--

আমার বিছানার তলায় মজুত আছে আদপে শ্মশানফেরত মানুষের চোখ
আমার সন্তানকে আমি ঘুম ভাঙাইনি নিজহাতে
এখনো ঘেরা অংশে যতটুকু ছাউনি ভেঙে জমে আছে নিজস্ব জঞ্জাল
তার দায় নেবো বলে নিজে দাঁড়াতে পারিনি খালিপায়ে

হয়তো তোমার পিঠেও ভেঙে পড়ছে নির্মীয়মাণ গাছের কার্নিশ
মাথা বাঁচাতে গেলে তোমাকে হাঁটতে হচ্ছে রেড লাইট বাসিন্দার কোলেই

খবর আসছে নতুন সাম্রাজ্যের
রাঙানো হচ্ছে নতুন পতাকাও
কিন্তু এসবের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই তোমার সেরে ওঠার

আমি শুধুমাত্র তোমার ঘরের ভাঙা দেওয়ালেই অনায়াসে জিভ রাখতে পারি
কারণ আমি জানি
এ সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন কত অনায়াসে ধ্বসে গেছে আমার হামলায়--

চতুর্থ ভাগ


লোকটা জেগে আছে

(আমন্ত্রিত কলম)

শুভঙ্কর দাস

পালকি চলেছে বীরসিংহের দিকে। চারজন বেহারা
হনহনিয়ে ছুটে চলেছে মাঠ-হাট পেরিয়ে।
ভেতরে বসে আছেন, এক আলোর পথিক।
যতদূর এগিয়ে যান, ততদূর অন্ধকার দূর হয়ে যায়।
সহসা ধেয়ে এল আক্রমণ। মাঠের মাঝখানে।
ক্রমাগত পাথর, ঢেলা আর লাঠির কুরুক্ষেত্র।
বেহারা রক্তাক্ত। প্রাণ বাঁচাতে হাওয়ায় গেল মিশে।
এবার পরমপথিক বেরিয়ে এলেন।
যে লোকটা পায়ের তলায় পিষতে থাকা মেয়েদের সামনের সারিতে এনেছেন।
 যে লোকটা পিতা-মাতাকে ঈশ্বর মনে করেন।
যে লোকটা বাঙালীর হাতে দিয়েছেন এমন এক আশ্চর্য ব‌ই,
যা ধরে তারা পৃথিবী পারাপার করতে পারে।
যে লোকটা ধর্মের দেখনদারির ঊর্ধ্বে কর্মকে পূজা করেছেন,
সেই লোকটা নেমে এলেন, দিলেন এক সিংহগর্জন,
'ওরে মূর্খ, এখন‌ও নিজেদের ভালো বুঝতে শিখলি না'


মূর্খের দল ভয়ে লুকায় যুগের জমাট অন্ধকারে।
কিন্তু তারা কোনদিন সরে না, নড়ে না বা মরে না!
তারা ঘরে ঘরে এইট পাশ মেয়ের বিয়ে দেয়, বিধবা মেয়েকে লাইনে নামিয়ে দেয়, লোহার পাতের উপর ধর্ষণ করে, পুত্রসন্তান হয়নি বলে বুকের উপর করাত চালায়, টাকার জন্য রেশনের কেরোসিনে
খান্ডবদহন সারে আর দিনরাত জিভে-চোখে-আঙুলে পুতুলের মত নাচায়।

তখন সেই সিংহগর্জন মহালয়ার অসুরদলনী
সুরের মতো ভাসতে থাকে
যা কোনদিন থামে না----
'ওরে মূর্খ, এখন‌ও নিজেদের ভালো বুঝতে শিখলি না!'

তৃতীয় ভাগ


মূর্খের স্বর্গ-----১

 আবদুস সালাম

ভাবাবেগের সূর্য ডুবে গ‍্যাছে
শিক্ষা র গৌরবে চৈতন্য লোপাট হয়

শিক্ষা র আকাশ জুড়ে সিঁদুরে মেঘের ঘনঘটা
মলিন বিদ‍্যাসাগর রাস্তায় বসে আজ বিভ্রান্ত

বিংলিশ শিক্ষায় রপ্ত  করেছি বিংলিশ শ্রদ্ধা
ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে মূল্য বোধের দরজার
স্মরণ নাই "সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
 সারাদিন যেন আমি ভালো ভাবে চলি"

বাঙলার মঞ্চে নৃত্য করছে চৈতন্য হীন হনুমান
পাথরের দেহ ভেসে যাচ্ছে রক্তের ফোয়ারায়
আমরা সবাই স্নান করছি মর্মান্তিক জলে
@@@

মূর্খের স্বর্গ----২

আবদুস সালাম


বিষন্ন অন্তর রক্তহোলি খ‍্যালে
অন্ধকার খুবলে নিচ্ছে জীবনের ঘ্রাণ
বিবেকের কালো মাটিতে পা ডুবে গ‍্যাছে
সতীদাহ, বিধবা বিবাহ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না
মৃত আত্মারা গ্রহণ করেছে ভৌতিক মৃত্যু
ঝরে পড়ছে মৃত আত্মার মৌনকথা
অবলীলায় ভেঙে ফেলছি দেবতার বিগ্রহ

দ্বিতীয় ভাগ


বিদ্যাসাগর বলছি

অমলেন্দু বিশ্বাস


হে ধর্মাবতার,
কী এমন দোষ ছিল-----
যে আমার আবক্ষ মূর্তি
ভাঙল নির্মম হাতে।

# অনেক বছর ধরে যারা শুধু
অন্ধকুঠুরিতে বসে কাঁদছিল
তারা কোনদিন দেখেনি আলোকচ্ছটা

# বর্ণ-শব্দ-‌অক্ষরের দ্যুতি
তাদের চৈতন্যে আমি তমসাবিহীন
বর্ণদ্যুতি ছুঁয়ে দিতে চেয়েছি প্রান্তিকে।

# ও আমার প্রান্তজনের সখা,
নিরীহ প্রমীলাগণ, শিশুমন।
চেয়েছি ভাষার হাত ধরে
হেঁটে যেতে সবুজ সড়কে।

# হে ধর্মাবতার, আপনিই বলুন
বর্ণজ্ঞানদান করা তবে অপরাধ।
তবু মূর্খগুলো বর্ণহীন অন্ধকার
ছুঁড়ে মারছে বিদ্যার বিতানে ।

# এখন‌ও কী আপনি দুচোখ 'ধৃতরাষ্ট্র '-----
করে নিয়ে নিরুত্তর থেকে যাবেন।

# ঐ দেখুন গান্ধারী খুলছে
তার অনালোক কাপড়ের চক্ষুবন্ধন।.......

# আপনিও পর্দা সরিয়ে
দেখে নিন একবার :
বর্ণমালা কীভাবে ভাষার উদ্যানে
অমল রোদ্দুর হয়ে
খেলছে শিশুর মতন।.......

প্রথম ভাগ


জানিনা কার এই লিখন --- অপুর্ব স্বরলিপি

মর্মান্তিক পরিণাম : বর্ণপরিচয় খন্ডন।।

অগ্রগামী পথিক তুমি,,, তোমার মগ্নমূর্তির ভাঙন।।


# কলঙ্কিত - বর্ণপরিচয় -


অ - অশিক্ষিত আসছে তেড়ে,

আ - আজকে রাবণ রামের ঘরে।

ই - ইচ্ছে হলেই ভাঙছে মেরে,

ঈ - "ঈশ্বর" ‌আজ পথেই পড়ে।

উ - উস্কে দিয়ে জাতের দোহাই,

ঊ - ঊর্ধ্বে নাচে জগাই মাধাই।

ঋ - ঋণের বোঝা যাচ্ছে বেড়ে,

এ - এদের নামাও ঘাড়টি ধরে।

ঐ - ঐতিহাসিক ভুল কোরোনা,

ও - ওদের দলে কেউ ভিড়োনা।

ঔ - ঔদ্ধত্য মানবো না আর,

----- গর্জে ওঠা খুব দরকার।।


(কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকার,,,,

সংগৃহীত কবিতা,,,)