বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

পদ্মজা--৫



১. কবিতা: স্নাতক

জয়দেব মহান্ত

আমার স্নাতক ডাকটিকিট ঝুলিয়ে
একপ্রান্ত বিনুনী তালিকায় বাঁধা।
বিরতিহীন উল্কার গন্ধ
ভাবেনি পস্টারিটি আবেগে
মুখলুকানো প্রতিবেশী
আমার অভিমানের পকেট কাটে
গান্ধর্ব ঘোমটা,
খিড়কির শ্যাওলা লকলকে নিঃশ্বাসে
ছোঁয়নি, কোলবালিশের হ্যাংলা মুখ।
পেনেটির মাঝে তখনও সুতপা
ঢলে পড়া গতিক নিংড়ে
ডাকছে,,,,,,


২. কবিতা: গাঁটছড়া

জয়দেব মহান্ত

ডুমুর ফুলের গাঁটছড়া বেঁধে
নিকশ্ করে খাচ্ছে অকাল।
খুচরো সকালের কন্ঠস্বর বিঁধে
ঢোলক বুনছে, ইস্পাতি বাউল।
কমলার সন্ধ্যেটা চলতি গর্ভবতী
মোচার কোলাজে গুটানো করুণ শ্রীমতি।

মুখফেরা দেরাজে পাতানো বিকেলের কুঁচি;
আঁতুরে সিগারেটের কোল ঠেসে-
জিরুতে চায়, সেতুর আঁচলে বুঝি।
লিপলেট রুগ্ন কাগজ, ছেঁড়া প্রেসে;
টানছে ইঞ্চি, হাঁপরের উসকানি আলতো ঝুলে,
কয়লাটিপে সুতপা, সন্ধ্যা রাখছে তুলে।


৩. কবিতা: তোমার গীতবিতান

জয়দেব মহান্ত

পলাবাঁধা এলোমেলো যে কয়েকটা
সম্পর্ক তোমার কাছে ইজারা চেয়েছিলাম।
বুদবুদে কাদা মেখে সবটা
হারিয়ে নব শ্রাবণ ধারায় হয়নি উদ্দাম।

আঁচড়ের স্পর্শটা জ্বলছে এখনও,,,,,

ডুবানো নোঙরে বিকেল সাজাচ্ছো?
দম্পতি মেঘের কার্নিশ বেয়ে,
গীতবিতান হবে, জলপিন্ডের পুচ্ছ
ব্লানচেটে হিজল স্পর্শ নোনতাদিন হয়ে

মিলিয়ে দিলে, অন্তর কন্ঠ! দাও,,,,,,

যাক্, এভাবেই বোলতা ভাবনারা
কুয়াশার ফ্রেমে ম্লান হবে।
আগন্তুক নিঃশ্বাসে মেকি উত্তরা
গন্ডপিঠ থেকে আমায় ছোঁবে।

তুমি কালান্তকে মিরান্দা হয়ে হবে উধাও,,,,,




৪. কবিতা: নভেলির ছাইপাশ

জয়দেব মহান্ত

নভেলির ধাঁচে আমার কিংডোম
শাসন চালায় নির্জন - আলাপচারিতা।

খানসামাদের গোলাবাড়ি গোধূলির দিকে নশ্বর,

চারিত্রিক জীবাশ্মে শাসক পর পর

আমার আঁতে, দেবাদূর ত্রিলজি
আলংকারিক গম্বুজ-
ছাইপাশ মাখিয়ে আঙুলময় আবছা।

যতটা পরিসীমায় জলবায়ু পরের পাতায়
লাঙল টেনে নদীখাত বোনে।
মধ্যরাতের ব্যাকডোরে সেলাম ঠোকে
অশরীরী প্রজা।



৫. কবিতা: তুই বা সান্ধ্য - পেনিক

জয়দেব মহান্ত

তোকে নিয়ে অনেকটা দিন ব্লেড আঁকা হয়নি
নিয়োগী পাতার গুচ্ছ খানেক ব্যাক ক্লিপ;
অন্যমনস্ক, লিপস্টিকের অর্ধচ্ছেদে
তোর কপাল ভাঁজ করে আউস ধানের টিপ।

তুই নিমপেথির সবুজটুকু শিষের তুষে বেহুল কর,,,,

ঘুমানো বালিশে মুখের বিকৃত সকাল
ভিজানো হাওয়ায় যেমনটা রোদ মাখে।
ফ্যারাশে তালুর বিপরীতে কাজলে টানা আঁচল
ঢেকে দেয় নিস্ফলক বিস্মৃতির ফাঁকে।

উচ্ছন্ন রুমালকাঁটার হিমগ্লোবিনে আমায় ধর,,,

আমি তোর গোলাপী মোহরের রক্ত তিল,,,,,
ভ্রূ উঁচিয়ে মুছে দেব সন্ধ্যা - পেনিক মিল।









বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৮

পদ্মজা--৪



৪. কবিতা: বেদনা

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

তখন বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ
খড়ের চালে পাক ধরছে
কেবল হ্যারিকেন আলো
মৃত সকালের খোঁজে
ব্যস্ত ট্রামলাইন আঁকড়ানো হাতিশুঁড় গাছ
অপেক্ষায় মায়াপুর লোকাল
ভুট্টার আগুনে ছেঁকে নেওয়া
কচি শরীর হাঁপিয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকতে
মনে পড়ে সকালের বাসি ভাত
কাদামুখ পথিকের পাশে
উত্থিত বেদনায় পৃথিবী শিরা ভাঙ্গে
নেশার জোয়ারে ভাসা মহুয়ার গাছে


৫. কবিতা: নীলরোদ্রের ঘ্রাণ

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

কুয়াশা: দূর্বায় ঢলে পড়ে
অনামিকায় জড়ানো এভারেস্ট চূড়া
পাতা ঝরা চৈত্রের বুলি
লেগে আছে পেয়ারার বাকলে
মোরগ চাপা ভোর, ভবঘুরে চাঁদের পিঠে
সাদা কালো কিছু কথার মহড়া
লোপাট করা বটের অন্তরীক্ষে
নীলরোদ্রের ঘ্রাণ মেখে নিচ্ছে বসন্ত
আপেল খোসার আঙুর রসে
উথলে ওঠে নীল আকাশী দোয়াত


৬. কবিতা: প্ল্যাটফর্ম

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

নির্জীব জড়বস্তু, লোকালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে
বক্ষচ্ছেদ করে তার চলছে ট্রেন সাপের মতো
প্রাণ নেই তবু যেন কত প্রাণের সমাগম
দিনরাত চেঁচামেচি তবু মনে হয় সে যেন চুপচাপ
কত করি পদাঘাত তবুও সে করেনা রাগ
মায়ের মত আগলে রাখে
মায়ের মত কোমল কোলে বিশ্রাম নিই কত রাত।

পারেনা সে কথা বলতে তবুও সে বলে কথা
আওয়াজ করে ডেকে দেয় সে তার বিশ্রামকারীদের
সে যেন কথা বলে করে দেয় সবাইকে সজাগ
'ধনুক থেকে ছুটল তীর করবে এসে আঘাত'
ধীরে ধীরে আসলো ট্রেন এই স্টেশনে
একে একে সবাই গেল
এখন কোন যাত্রী নেই এইখানে।

দিনরাত সবাইকে করে আমন্ত্রণ, জান কি তার নাম
সে হল নির্জীব জড়বস্তু, শুধু্ই প্ল্যাটফর্ম।



৪. কবিতা: বেদনা

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

তখন বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ
খড়ের চালে পাক ধরছে
কেবল হ্যারিকেন আলো
মৃত সকালের খোঁজে
ব্যস্ত ট্রামলাইন আঁকড়ানো হাতিশুঁড় গাছ
অপেক্ষায় মায়াপুর লোকাল
ভুট্টার আগুনে ছেঁকে নেওয়া
কচি শরীর হাঁপিয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকতে
মনে পড়ে সকালের বাসি ভাত
কাদামুখ পথিকের পাশে
উত্থিত বেদনায় পৃথিবী শিরা ভাঙ্গে
নেশার জোয়ারে ভাসা মহুয়ার গাছে


৫. কবিতা: নীলরোদ্রের ঘ্রাণ

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

কুয়াশা: দূর্বায় ঢলে পড়ে
অনামিকায় জড়ানো এভারেস্ট চূড়া
পাতা ঝরা চৈত্রের বুলি
লেগে আছে পেয়ারার বাকলে
মোরগ চাপা ভোর, ভবঘুরে চাঁদের পিঠে
সাদা কালো কিছু কথার মহড়া
লোপাট করা বটের অন্তরীক্ষে
নীলরোদ্রের ঘ্রাণ মেখে নিচ্ছে বসন্ত
আপেল খোসার আঙুর রসে
উথলে ওঠে নীল আকাশী দোয়াত


৬. কবিতা: প্ল্যাটফর্ম

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

নির্জীব জড়বস্তু, লোকালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে
বক্ষচ্ছেদ করে তার চলছে ট্রেন সাপের মতো
প্রাণ নেই তবু যেন কত প্রাণের সমাগম
দিনরাত চেঁচামেচি তবু মনে হয় সে যেন চুপচাপ
কত করি পদাঘাত তবুও সে করেনা রাগ
মায়ের মত আগলে রাখে
মায়ের মত কোমল কোলে বিশ্রাম নিই কত রাত।

পারেনা সে কথা বলতে তবুও সে বলে কথা
আওয়াজ করে ডেকে দেয় সে তার বিশ্রামকারীদের
সে যেন কথা বলে করে দেয় সবাইকে সজাগ
'ধনুক থেকে ছুটল তীর করবে এসে আঘাত'
ধীরে ধীরে আসলো ট্রেন এই স্টেশনে
একে একে সবাই গেল
এখন কোন যাত্রী নেই এইখানে।

দিনরাত সবাইকে করে আমন্ত্রণ, জান কি তার নাম
সে হল নির্জীব জড়বস্তু, শুধু্ই প্ল্যাটফর্ম।












পদ্মজা--৩



প্রান্তিক মুহূর্ত

কৌশিক চক্রবর্ত্তী


পারলে মাছেদের সঙ্গে সংসার করে দেখো

কানকোর নিঃস্বাস চিরে ধ্বসে পড়তে পারে দেয়াল-

সমস্ত ইতিহাস বইতে তুমি লেপ্টে রাখো শহরের ছবি

সমুদ্রে ডুবে থাকা সত্ত্বেও যেসমস্ত ঘর জলমগ্ন নয়

পারলে সেখানেই বাস করে দেখো

বেঁচে থাকার জন্য আরো উদাহরণ খুঁজে পাবে...


শুধু মাছেদের নিঃশ্বাস জমে থাকে সমুদ্রের নিচে-

তুমি প্রেমিকের সঙ্গে একা দরজা আটকালেও

জলজ সমাজ সেই খবর ধামাচাপা দেয়...


আমি বহুযুগ ধরেই জ্ঞানত ঘুমিয়ে আছি জলের গভীরে

তুমি চাইলে আসতেই পারো

আমি কোনদিন কানকোর নাতিশীতোষ্ণতায় তাজা রোদ্দুর লাগতে দেব না-


সামান্য উষ্ণতার তারতম্যে আমি প্রতিটি জীবনের প্রান্তিক মুহূর্ত খুঁজি...




শরীর চুরি

কৌশিক চক্রবর্ত্তী


ঘামে ভেজা চিঠি থেকে সরিয়ে রাখো ছায়া

কখনো তা শরীরে মুড়ে শুধরে নাও অনিচ্ছাকৃত ভুল-

ঘরে মুখ লুকিয়ে রাখলে তুমি আবার দোষী সাব্যস্ত হও

সমস্ত শরীর ছেড়ে বুকে ছায়া মেখে নিলে

আমি জানতে পারি আকাশ থেকে শাখাবট ঝুলে পড়েছে ধুলোর রাস্তায়...


তুমিও সন্ধ্যে হলেও নিয়মিত ছায়া খুঁজে দেখো

শুয়ে থাকো প্রবীণ উত্তাপ থেকে জেগে ওঠা সুচালো ঠেসমূলের গায়ে

প্রতিটি অস্ত্রের ধার পিঠে সয়ে নিলেও

হাত রাখার জন্য কোনো অবাধ নির্ভরতা প্রশ্রয় দেয় নি আজ-


যেকোনো সকাল থেকেই তুমি ছদ্মবেশে বন্দি

বুকে জমে থাকা পাথরের ছায়া সরালেই

আমি প্রতিদিনের মত তোমার ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাই...


আবার রাত্রি নামবে

আবার ঘন হবে গাছেদের একাকিত্ব

তুমি বিশ্বাস রেখো

ছায়ার বিভেদ বোঝাতে আমি আজও তোমার শরীর চুরি করি...




খোলস

কৌশিক চক্রবর্ত্তী


একটা বৃত্তের মধ্যে বেড়ে উঠছে ক্ষমতা

এখনো সমানুপাতে চওড়া রেললাইনের ধারে

বিক্রি হচ্ছে খসে পড়া বুক

কাওকে ভালোবেসেছিলাম বলে জমা করে রেখেছি সমস্ত কৈফিয়ত

যা হয়ত কখনো তুলে দিতে হবে গণতন্ত্রবাদীদের হাতে...


আমি এখন ব্যারিকেড ভাঙতে পারি,

আমি এখন হেঁটে যেতে পারি সমস্ত ধর্মঘটের বুকে,

আমি আবার ডানাপাখনা গুটিয়ে নিজের শরীরেই পুষে রাখতে পারি লোভ-

ফিরে যাবার জন্য কোনো ফুটপাথ লাগে না-

একটা আঁচড়ে যখন খুলে পড়ে রোদ, আলো পড়ে রাস্তায়

স্বভাবতই আমি তখন বিচ্ছিন্নতাকামীদের দলে...


এখনো সাহসী হোক রাস্তায় শুয়ে থাকা গোপনচরিত্ররা-

হয়ত সেখানে কিছু জবানবন্দী ফেরি হতে পারে,

যা শুনলে বলে দেবো রেললাইনের পাশে নির্জীব পাতাগুলো

সৈনিকের বুক থেকে ঝরে পড়েছে কিনা...


পদ্মজা--২



ক্রমশ

মধুরিমা মণ্ডল

★*************★

একটা ট্রেন গড়িয়ে যাচ্ছে তেতলার কড়িকাঠ বেয়ে।

আমি ডুবে যাচ্ছি অচেনা গহ্বরে,

চ্যাপটা হচ্ছে শরীর

প্রতিটি ওভারব্রিজইই দুলতে চাই

কেউ ট্রেন পায় কেউ ---- দেখা  ;

তারপর থেকে আমি চশমা খুলি না।




অশরীরী -০

পলাশ চৌধুরী

★**************★


বয়স নিয়মে বাঁধা মেয়েরা  প্রলেপে মুড়াই

অথচ তরলবৎ ক্ষুধারা চরম হলে রতিময় কুম্ফু।

ত্রিপান্ত শরতে মোড়া মনিকাঠে শ্যাওলা

নাভিতে গরীব হলে মাতাল কজ্জলে গুণ্ঠন ছাঁকা।

নুইবে আষাঢ় রোগে বোতামঘরের ফুটো

তমসা নিবিড় জ্বালা পূজারী পূজারী ডাকে।




অশরীরী -১

পলাশ চৌধুরী

★**************★

সকলজন্ম দিয়ে, পুষেছি প্রেমিকা দায়

ট্যাবু ট্যাঁস ট্যাঁসে, বোনে সূঁচের সূচীর তালায়।

কাছে আসে যারা, কে বলে তারাই প্রেম?

ক্যাঁচরম্যাচর করা ক্যাকটাস যারা,যুবতি তারাও হয়।

গভীর জ্বরেতে যারা, এখনো শ্রাবণী চায়

যাপিত নরমে আজও, তারাই তারাপথ হয়।



রাতকাহন

পলাশ চৌধুরী

***************

ধরো আমি তোমার সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ফেটে যাচ্ছে সকল মাংসল পেশী,দৃঢ় হচ্ছে বৃন্তদ্বয়।


এবার ভালবাসবে? নাকি বলবে অবিশ্বাসী ভয়??


আমি নরম কামড়ে চরম হয়েছি

কামড়াবো কামঘর  ;

সুগন্ধি দাও সুগন্ধি দাও, মুছবো সকল পুঁজঘর।


তুমি পাশবালিশে বুক ঘষে ঘষে বলে যাও শুধু আমি নই কামখোর,

আমি একাই নাহয় নরক ঘাঁটবো তুমি শুদ্ধ থাকো রাতভোর।



পদ্মজা--১



মেন্সট্রুয়েশন্

...... সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরাম কেদারায় হাঁটুর উপর হাঁটু রেখে জ্বলন্ত চুরুট,
অবগাহন সেরে প্রবেশ সঙ্গীনির দিকে পলক,
তৈলাক্ত গাত্রে ফোঁটা-ফোঁটা  জলবিন্দু ধরে যায়,
দর্পনের সম্মুখে দাঁড়িয়ে
কেশ নিয়ে ক্রীড়া ও সৌন্দর্যের মাপ-ঝোপ চলে,
বুকভাঁজ থেকে উরু অবধি ভেজা ন্যাপকিন্,
ঢাকা গেছে কোমরের নীচের সেই তিল যৌবনের অলংকার গুলো ।
বিলম্ব নয় তাই এগিয়ে পশ্চাত্ থেকে বাহুদ্বয় দিয়ে গাঢ় আলিঙ্গন,
কাঁচে চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় মুখ নামে,
ঘুরিয়ে দেওয়ালে পিঠ সেঁটে গভীর চুম্বন.......
মেঝেতে আবরণ ছুঁড়ে ফেলি
উপর থেকে চুমু দিতে দিতে.. হঠাৎ থামিয়ে দেয়,
মেঝেতে তাকিয়ে দেখি সান্দ্র তরল।

তলপেট চেপে শুয়ে থেকে
আবদার পূরণ,
দিব্যি দিয়ে গলায় খাবার নামে,
এভাবে স্নেহাদরে
মেন্সট্রুয়েশন্ ব্যাথা যেন শূন্য হয়....।।




প্রণয় ও প্রোজেস্টরন

...... সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়।


টগবগে যৌবনের প্রণয়ী,
অফুরন্ত বসন্তে, স্যাঁতসেঁতে শাড়ির বাঁধন খুলে যায়,
কর্ণের লতিতে ঈষৎ কামড় পড়তেই...
উষ্ণ !!
ফ্রিজের রাতে মদ্যপূর্ণ বোতলে-র গায়ের মতো ঘর্মবিন্দু নিমেষে জমা হতেই
নেশা লাগে,
লোডশেডিং এর দেশে
জ্বলন্ত মোমবাতির সাথে সাথে গলে যায় যত দুঃখ ।

গলা থেকে দু-ইঞ্চি নিম্নদেশে  যৌবনে প্লাবিত হওয়া দু-পাশে উঁচু পাড়ের মাঝে মাথা চেপে ধরে।
লালা দিয়ে বুক নালীর এপার-ওপার,
নাভির জোয়ার-ভাঁটা আছড়ে পড়ে উপরের দেহে, ...
তৃষ্ণার্ত রাতে
আঁকড়ে ধরে মাতোয়ারা হয়ে কেটে কেটে বর্ণমালার উচ্চারণ -
উমম-আহ্হ্হ্ -হুঁ-আ-রো-কা-ছে !!!
সোহাগ স্পর্শে যোনিপথ যেন সুপ্ত গোলাপের পাঁপড়ি,
অহংকারে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় রোঁয়া।
নীচ-উপর
উপর-নীচ...
ক্রমশ জাপট ও ফোঁপানি...
প্রণয় মিটতেই চাই না,
শিহরণে চলতে থাকা টিক্ টিক্ শব্দে আরও মিনিট কুড়ি ওলট-পালট,
এলোমেলো চাদর
ঠোঁটে-ঠোঁট
নিষ্ঠীবনের গারগেল
শেষমেশ চার দেওয়াল ঘুম আঁকে চোখে......।


এখন রাত হলেই
দু - চারটে লাথি ও
পাঞ্জরভাঙা কষ্টে উদরে হাত মালিশ করে দিতে হয়।
তিল তিল করে বড়ো হয় ভ্রূণ,
ছেলেমানুষি করে বাইরে থেকে কথা বলে...
কতশত আদুরে সম্বোধন !
আঁশটে প্রোজেস্টরনের ঘ্রাণ নিতে নিতে কখন যে প্রণয়ী ঘুমিয়ে পড়ে
বুঝে উঠতে পারি না......।।


উমা পর্ব--১৭



কবিতা:

অসুর  ধ্বংস

সোহিনী সামন্ত


ত্রিশূলের অগ্রকণায় ধ্বংস হবে আসুরিক চিত্তের বাসনা ......রতিসুধার

বিষ দাঁত ভেঙ্গে যাবে গোধূলি লগ্নের রক্ত মাখা বিদ্যায় ...।।

যত হিংস্র ধর্ষণকারী কীট অগ্নিকুণ্ডে জ্বলে যাবে ...আর ভ্রূণ হত্যাকারী

পশুরা বিনাশ হবে বিসর্জনী শক্তিতে ......

মা ফিরে ফিরে আসবে... আর বিসর্জন যাবে মনের ভিতরের যত

বিষ কীট যে শেখায় নারীপুরুষ বিভেদ ... কখন বা জাতি ধর্মের বিদ্বেষ ......ক্ষান্ত হবে ভাবসাগরের খেলা ... রেখে যাবে শক্তিজয়ী বীজ

যা এনে দেবে নারী মুক্তি ... মুক্ত বিহঙ্গণে ...

বীজ অঙ্কুরিত হবে আর উৎপন্ন করবে মুক্তি যোদ্ধাদের দল ..যারা এনে দেবে শান্তি ... মুক্তি পাবে ডাইনী আখ্যান ...প্রতীক্ষা কেবল দেবী পক্ষের শান্ত মুক্তাঙ্গন ... দারিদ্র্যতা দূর হয়ে যাবে ... নারী শক্তি ফিরে আসবে বারবার ... উন্মত্ত নারী পিপাসু অসুরের দল উমার অগ্নি চোখের রোষে ভস্মীভূত হবে ... বার বার ফিরে আসবে জীবন্ত কালের দেবীর আখ্যান ...।।


উমা পর্ব--১৬



১. কবিতা:

চাঁদের বারাঙ্গনা মুখ
--------------------------
   ~©জয়দেব মহন্ত

বসন্ত আঁকা মেহেদিপনায় বারাঙ্গনা মুখ
অপেক্ষার বেড-কভারে ময়ূর ভঙ্গি পা
লাশের চেয়েও নেকলেস চমক
অমাবস্যা গন্ধে চাঁদের কলঙ্ক মাখে।

আলোয়ানে আশ্রিত রাতের মোহরা দক্ষিণে
রক্তের নীল নিভে নুপুর খোলে
প্রজাপতি রং ঘাম জড়িয়ে দুধ-আলতা হলে
জিহ্বার সংমোহনে নরম আঁশ যাপন করে।

ডালিমের দেহ থেকে কামধেনুর রস
পর্ণমোচন করা নখচাপা সাধুবাদ
জেবরা লাইনে স্তম্ভিত অজগর চোখ
পাঁজরের মেরুস্কেপ কোমরে আহুতি ঢাকে।

লালার বিসর্গপনা আর মদনের ক্যালেন্ডুলা
কপালের মানচিত্রে টিপের বিনিময় রাখা থাকে।
--------------------------



২. কবিতা:

আমিও সরীসৃপের খোলস-

জয়দেব মহন্ত


অক্টেভারে পুরু ডাকফেরা রেশমগুটি
বৈভবের জাগরণে আঁচড় ভাঙে।
যে মতো প্যাপ্সিগাম ঠোঁট তালিকাশূন্য;

সমস্ত অঙ্গীকার ক্রমাগত শামুকের গম্বুজে-
পূর্বের লেপরাস কাজল টানা ঘননীল;
গ্লাস খানেক অচেনা চরিত্রের হামাগুড়ি
শান্ত টিপে কপালপুড়ে ছাই মাখে ।

উফ্ ! মিলিটারী বাতাসের পর্দা পাল্লার চৌকাঠে
নিম্নচাপে বোতাম শুকোয়।

সিলিং ভাংচুর্ ,কাকুলি রাতের লাভা-
জ্যোৎস্নার কাট করা গণিত মুঠো খানেক ইতস্তত।
পেয়ালা বেয়ে বাঁশিযাপন ভারচুয়াল ডিগ্রীর দিকে;
বিকৃত ফুল ভোরের ফ্যানা চুইয়ে
ম্যাজিসিয়ানের নখের ফাঁকে বিকলাঙ্গ হতে থাকে।

ট্রেনের পাতে বুনো আউচের রৌদ্র-
কান্নায় পরকিআ উড়ে দেয় দীর্ঘশ্বাস মেঘমুখে।
দোতলায় পোড়া কাক নিখুঁত ভাবে আমার অস্থি গুনছে;
চারমিনার থেকে একেক চরিত্র
বিনা মুখোশেই সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে
সরীসৃপ হবার কৌশল খুঁজছে ডাস্টবিনে।
------------------------




৩. কবিতা

মৃত্যুর গুণিতক

জয়দেব মহন্ত


গৃহস্থ রং আর আলতা পা

ক্রমশ নদী ডুমুর তলা পালকের দিকে

বারোয়ারি অন্ধকার;

ছিলিমের দগ্ধলগ্ন পার করে

প্রজাপতি ডালিম সজনেলতা।


উফ্ !হিমগ্লোবিন খরনের সব ইমোগুলো

জলের মৃত প্রেমিকা ভাবনা

দুপুরের গা ঝড়া ক্লান্ত শরীর দিয়ে

ক্ষুধার্ত চিতার ক্যালেন্ডার

দু'হাতে ময়ূর তলে।


নকল করা জলসিপায়ের গাফ্

তেজা লন্ঠন চয়নিকা ভেদ করে

উলঙ্গ চোখে লতিয়ে ওঠে

আলপিনের অনুগত শতকার...

-----------------------


৪. কবিতা:

সুতপা

জয়দেব মহন্ত


টিপ থেকে বৈষ্ণবী বিকেল

দ্রৌপদী ওড়নার বউ বউ খেলা

হলুদ হয়ে আসছে সুতপা !


আমার শেষ পকেটের চিল ডাক

জোনাকি সন্ধ্যার  লালন চিহ্ন

তোমার খোপার ইফ্, আজানু কেশের বসন্ত

আলতা পায়ে বৃহস্পতি হবে


ভাঙা চৌকাঠ শ্যাওলা হতে থাক্ কৃষ্ণকলি...

-------------------


৫. কবিতা:

শিউলিযাপন

জয়দেব মহন্ত


হাওয়া বদলের শেষ লগ্নে তৃপ্ত আঁচল

আলতোক্ষরে কাছে ডাকতে থাকে ।


সিঁদুর রাঙা মেঘের নীলে মৃতগন্ধ

ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে, কাশ-যূথিকার বোল,


রুগ্ন এক এক ফর্মা ছায়া আমার ললাটে

রক্তক্লেশে জেগে উঠছে মদিরার হসন্ত

রাত্রি জাগা ঐ পায়ে -


বিকৃত গন্ধ ঝরে পরছে আজানু কেশ বরাবর

আঙুলের ফাঁকে অপেক্ষার শেষ বিন্দু  নিমজ্জিত।


ভোরের অন্তরালে মিশে থাক্ পরিচিতা রাতঘুম

সাদা ঋতুর কাছে রক্তলগ্ন ফিরে এলে

শিউলি যাপনের দোহায় মুছে যায়।


--------------------------------





উমা পর্ব--১৫



১. কবিতা:

হে, অমৃতস্বরূপিনী

তনিমা হাজরা


পঙ্গু মন্ত্রধ্বনি গুলি অতিকষ্টে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় ক্লাচের উপরে, ভক্তি ভেসেছে বন্যায়,এখন আলোকমালারা শুধু গৃহহারা ফেরে দুয়ারে দুয়ারে।

তবে কার জন্য বোধনের আয়োজন?


ফণিমনসার পাতায় পেতেছি কাজল,সেদিন বোধহয় চন্দ্রগ্রহণ হবে,তোমাকে বলিনি চোখের পাতায় ছিল জোয়ারের জল, আজ ভাঁটায় সরে যাবে।কোজাগরী আগুনে কে চাপাবে ভোগের পরমান্ন আজ।


উদ্বাস্তু জানে গৃহ তার নেই কোনোদিনই। তবু কেন ছাত খোঁজে, চামর দুলিয়ে ঘুম পাড়ায় সংশয়? দেবীর ঘুম আসে না। কালি করাল বদনা, নগ্না যত মানবীর দল আজ ঘোর অমাবস্যায় মন্দিরে মন্দিরে প্রস্তরীভূত হবে।।।


২. কবিতা:

আগমনী

ত নি মা হা জ রা


শব্দে শব্দে দীপাবলি জ্বালি,

ক্ষমা চেয়ে নিই ধর্ষিতা বালিকাগুলির কাছে।

ঝরে গেছে যারা শিউলির মতো,

যাদের হাইফেন, কমা সব একদিন ভোরবেলা পূর্ণচ্ছেদ হয়ে যায়।


বর্ষার পর শরৎ আসবে বলে

পাড়ায় পাড়ায় বাঁশ পড়েছে,

ম্যারাপ বাঁধা শুরু হবে,

অথচ দুর্গাটি পেয়েছে ভয়

দুহাতে সবুজ শরীর ঢেকে রয়,

লজ্জার আঁচলে পড়েছে টান,

রক্তের দাগ লেগেছে শিশিরেভেজা ঘাসে।


বৃথাই জ্বালালো ওরা আলো,

বৃথাই করেছে ওরা বোধনের আয়োজন,

ঢাক বাজালেই কি আর

পায়ে হেঁটে  পার্বতী  মন্দিরে দুর্গা হতে আসে??


বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--১৪



মা মাটি ও রোবসন

উজান উপাধ্যায়


দেশের বাড়িতে এতদিনে

কাঠামোতে মাটি পড়ে গেছে।


চোখ মুখ স্পষ্ট পার্বতী ও তার ছানাপোনার।


কতক্ষণে বীরেন বাবু বলবেন --আয় মা , মাগো দশপ্রহরণধারিণী , সেই অপেক্ষায় মহাদেববাবুর গোটা পরিবার ।


কলাবৌ , মহিষাসুর আর আদিমতম প্রেমিকশ্রেষ্ঠ শিববাবু , যিনি বৌকে ছেলেমেয়েশুদ্ধু বাপের বাড়িতে রেখে একদিনও শান্তি পাননা !


সদলবলে ক্রমাগত বেড়ে উঠছেন খড়বিচুলিতে , ডাকের সাজে --


আসলে আমার মেয়েকে আমি মাটি বলে ডাকি , আমি জানি কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা অন্তত আজীবন ভালোবাসবে মেয়েটাকে আমার --


ওকে ছাড়া যে ঈশ্বরের ডেমো দেওয়া অসম্ভব , পুরাকাল থেকে আমার কন্যাই যে ভরসা অকালবোধনের।


সেদিন স্কুল থেকে ফিরতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো কোলে --শিউলি গন্ধে সারা গায়ে আগমনির সুর --


জানো তো বাবা , আমাদের স্কুলের উল্টো দিকে এত্ত এত্ত কাশফুল --

আমার মনে হচ্ছিল ওরা আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে --


বোধনের মন্ত্র পড়ছে কেউ আকাশবাণীতে -


দুচোখ জুড়ে অলকানন্দা --মেয়েকে যেই আরও একটু জড়িয়ে ধরতে যাবো অমনি তার রণচন্ডী রূপ ---অসুরনাশিনীর দশহাতে অজস্র আগ্নেয়াস্ত্র --


বাবা , আর কতদিন এভাবে ?

আমার কি কোনও দিন শান্তি করে বসে তোমার কবিতাগুলোতে ছাইভস্ম ছড়িয়ে দেবার ফুরসত আসবে না ?


সারাশরীরে লৌহবর্মের ধাতব হুঙ্কার , যোনিদেশে বজ্রহলকা --


দেবীপক্ষে অন্নপূর্ণা আর তার দুই মেয়েকে ধর্ষকদের হাত থেকে নিরাপত্তা দিতে এসব কৌশল আমার মাটির ।মেয়ে আমার গোলাপবাগানে নিয়ম করে আগুন মেশায় --


মৃৎশিল্পী চক্ষুদান করছেন , পাঞ্চজন্যের ডাকে যুদ্ধের ভেরী বেজে উঠছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাজানো নাট্যদৃশ্যের অন্তরালে --


মেয়ে জোরসে চেঁচিয়ে উঠলে --বাবা শিগগিরই এসো , শুনবে না , এই দেখো  টিভিতে বলছে --মেয়েদের গান গাওয়া নাকি এখনও নিষিদ্ধ অনেক পরিবারে ।


ছুটে গিয়ে দেখলাম--


মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেয়ে।

হাতে একতারা , কাঁধ থেকে বুকের ওপর দিয়ে ছুঁয়ে গেছে শুকতারা প্রতিটি রাতেই , ঝুলে আছে গীটারের সাত তার , সমমেলে।


মেয়েটির গানের ভিতরে ঢুকে পড়ছে নদী , ভেসে যাচ্ছে উপত্যকা মায়াবী সুরের অনাবিল স্রোতে ,মেঘেরা জুড়েছে সাঁতার।


ভেঙে পড়ছে মেয়ে , আছড়ে পড়েছে আস্ত আকাশ বুকফাটা কান্নায়।


ভাতের থালায় পর্যাপ্ত সবজি পড়তো না , এমনকি  চালচুলোহীন ঘরে চাদরে বালিশে উপোষের সংকেত। মা বাবা উপড়ে ফেললো দায় --


মাত্র সতেরোয় দিদা শিক্ষিত চাকুরে দেখে বেঁধে দিয়েছিল ঘর , বেঁচে যাবে গান , বেঁচে যাবে মন , বিদ্যেবুদ্ধি বেড়ে বেড়ে মস্ত ব্যাপার হবে।দিদার অন্ধতা স্পষ্ট হলো খুব শিগগিরই।


অক্টোপাসের প্যাঁচালো জিহ্বায় ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে কন্ঠনালী ,

করাত বসেছে দেশোয়ালি গানে , উদাত্ত বাউলের সুরেলা বন্দিশে।


সংসার ছেড়েছে মেয়ে , উনিশের গর্ভবতী , কোলের মেয়েকে নিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে ঝর্নাজল , ছিনিয়ে নিয়েছে মোৎসার্ট , সিম্ফনি , গোষ্টগোপাল লালন সাঁই আর লোকগাঁথা --গাইবার আজন্ম অধিকার--


মঞ্চ জুড়ে নেমেছে বৃষ্টি , গোলাপের পাপড়িতে ,সেতারের ঝংকারে ছোট্ট মেয়েটা মায়ের নাভি থেকে তুলে এনেছে প্রকৃতির গভীরে লুকিয়ে থাকা অনিন্দ্য মূর্ছনা , সরগম সরগম --রক জ্যাজ

পল্লীর গান।


মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেয়ে , শরীরে আত্মায় সংগীতের অপরূপ তাল লয় ছন্দ পেয়েও অধিকার কেড়ে নিতে হয় -যেমন লড়াই মল্লযুদ্ধে , যেমন লড়াই মেয়েদের ঘোমটায় ঢেকে রাখা অন্ধকার সুড়ঙ্গে উদ্ধত জিনস্ টপ স্কার্ট আর খোলাচুলে মেলে রাখা হেমন্তের মৃতদেহে জলতরঙ্গের মাদল বাজিয়ে  নিতে।


মঞ্চ জুড়ে তছনছিয়ে গেয়ে যাচ্ছে মেয়ে , নটরাজ ছন্দে কিচিরমিচির নেচে যাচ্ছে তন্বী প্রস্রবণ --


আকাশচুর্ণ  করে হেসে উঠলো মাটি , দশদিকে ছুটে ছুটে হাততালি --সদলবলে দলছুট পাখির মতো  গলা ফাটিয়ে বলে উঠলো --


মিললো তো বাবা , বলেছিলাম কিনা --মেয়েরা নিষেধাজ্ঞা ছুঁড়ে ফেলে গেয়ে উঠবে  অহল্যা পাষাণির ঘুম ভাঙিয়ে আগমনির গান।


অন্য ওথেলো , ডেসডিমনা-র

উজান উপাধ্যায়




কথায় কথায় রেগে যাচ্ছে প্রিয়তমা,বোধনের অসাড় সময়ে -যদিও কাঙ্ক্ষিত নয় এই বিহ্বলতা।


তার যত গুনগুন গান কোথায় যে চাপা পড়ে যায় , বেদনার্ত গাছগুলো নালিশ জানিয়ে রাখে-

দিনগত ক্ষয়ে লেখা হয় স্তব, অতঃপর চঞ্চল সব নীরবতা।


এই যে হঠাৎ করে অসহিষ্ণু প্রিয়া ,  জেগে উঠছে লাভা , ভেতরের ক্লান্ত ঘরে ভেঙে যাওয়া প্রতিটি স্তরেই । এও কি আসলে কারও চতুর কৌশল ! প্রাকৃতিক হিমবাহ যেমন গলেছে জলবায়ু বুঝে--

নাকি স্তূপে স্তূপে জমা হওয়া ভগ্ন পরবাসে অকৃপণ আত্মসমর্থন!

তোমার বলয় ছুঁয়ে স্বার্থমগ্ন পুরুষের অক্ষাংশ বুঝে নেওয়া !


ঘূর্ণাক্ষে এত ঘুণ তোমাকে ভিতরে ভিতরে এত যে উত্তাপ দিয়ে যায় , তবুও তোমার এই রেগে যাওয়া আমি কিন্তু উপভোগ করি এবং কষ্ট পাই যদিও নাট্যাঙ্গনে অপলাপ হয়ে চলে যৌথ সংলাপের --


পৃথিবীর কোনও দ্রাঘিমায় আর কি পুরুষ আছে কেউ , তোমার রুগ্ন রিপুগ্রস্থ ঠোঁটে বুনে যাচ্ছে ব্যক্তিগত শোক ফুরিয়ে ফেলার মতো উপযুক্ত ঢেউ --


এত ধান্দাবাজ প্রেমিক আছে কি কেউ , আমার মতোন-

নিজের উল্লাসে নভোনীল আলোক সম্পাতে দহনজাত খাদে যার আদ্যোপান্ত প্রিয়া-সমর্পণ।



উমা পর্ব--১৩



১. কবিতা: যমুনা দের বারান্দা

             রাখী সরদার

যমুনাদের বারান্দায় ভিড় উপচে পড়ছে
রেখা মার্কা চেহারা নিয়ে
যমুনা এসেছে ফিরে ।
পাড়ার আশি পার হ‌ওয়া কাশী বুড়োও
এসেছে ,বুড়ো শালা দুদিন পরে চিতাকাঠে ঝুলবে
তাও দেখো লুবলুব করে দেখছে যমুনাকে।
রেমো মস্তান পান চিবোতে চিবোতে বলে---
এ মৌসি ই-ই তুমহার লেড়কিকে ফিরে যেতে বলো
এটা ভদ্দর লোকের পাড়া।
জনার্দন মিস্ত্রী ভুঁড়ি নাচাতে নাচাতে চিল্লায়--
আমাদের ঘরের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে আছে
এখানে এসব চলবে না...
হারু নাপিতের ব‌উ সব্বাইকে ঠেলে
বারান্দায় উঠে পড়ে--জেঠিমা তোমার মেয়েকে
চলে যেতে বলো,বেশ্যা মাগির কোন লাজ নেই।
যমুনা এতক্ষণ অসুস্থ মায়ের মাথার ধারে
চুপটি করে বসে ছিল।
এবার ভিড়ের মুখে সুরসা সাপিনী হয়ে ওঠে
লাউডগা শরীর ঝাপটা দিয়ে ফণা তোলে।
এই যে সতী লক্ষ্মী নাপিতিনী তোমাকে বলছি-
প্রতি শনিবার তোমার নাপিত চুল কেটে
ফেরার সময় আমার ওখানের গুলো ও পরিস্কার করে আসে।
আঙুলে রস লাগলে জিভ দিয়ে চেটে বাড়ি ফেরে আর সেই জিভ তোকে বেড় দিয়ে আদর করে।
এই যে শালা রেমো ,আমি রেণ্ডী হলে তুই কি?
মাতাল হয়ে আমার বুকের ঘামের কুচি না
চাটলে তো তোর ঘুম হয়না। তুই তো বে যমের অধম।
কোথায় পালাচ্ছো বাবা জনার্দন?
ভুঁড়ি নিয়ে তো উপরে উঠতেই পারিসনা
আমাকেই তো ঠাপ মারতে হয়।
দেখো মা দেখো  সব রেণ্ডীদের সুপুত্তুরা লেজ
গুটিয়ে পালাচ্ছে
শোন্ কুত্তার দল এই যমুনা কে কে নিয়ে গেছিল
ওই সোনাগাছি তে?
আসুন স্যার ,এই দেখুন বাজে মেয়েছেলে টা
এখানে ফিরে এসেছে,কোথায় এইডস..
পুলিশ অফিসার রমাকান্ত যমুনার চোখে চোখ রাখে
কে নিয়ে গেছিল জানিস সোনাগাছিতে?
তোদের পাড়ার প্রফেসর রবীন।পেরেম করেছিল পেরেম।
ব‌উ জানতে পারবে সেই ভয়ে আমাকে
অন্য জায়গায় নিয়ে রাখার নাম করে বেচে দিয়েছিল।
যমুনা ককিয়ে ওঠে-"আমার পেটে ওই শয়তানের
বীজধান ছিল তিনমাসের"
তাকে এই এই আমার নিজে হাতে খুন করিছি।
দ্যাখ নাপিত ব‌উ এখনো হাতে রক্ত লেগে।
শোন্ কাপুরুষের দল ,তোদের ওই নোংরা লাঠি তে
প্রতিদিন একদলা থুতু ফেলি।
নরম বোঁটায় তোদের বিষ দাঁতের ছোবলে
ঘা হয়েছে ঘা।যন্ত্রণায় ঘুম নেই কতদিন।
তোদের সাধ মেটানোর জন্য যোনি পদ্ম ফেটে রক্তাক্ত হয়েছি কত রাত।
সেই রক্তাক্ত টাকায় আমার মা বেঁচে।
দেখেছিলিস?যে ছমাস আমি নিপাত্তা ছিলাম আমার মা না খেতে পেয়ে মরতে বসেছিল।
এইডস?এইডস তোদের ঘরে ঘরে।
মৃত্যু তোদের অন্তরে অন্তরে।
কি রমাকান্ত বাবু আর কিছু বলবো?রাতে
আপনিও...
হারু নাপিতিনী বলে ওঠে...ব্যাটাছেলের মুয়ে মারি
ঝাঁটা,যমুনার জলে এ পাড়া পবিত্র হলোগো
পবিত্র।
যমুনার বারান্দা ভেসে যায় শত চোখের নোনা জলে।

                    ------*------

২. কবিতা: নচ্ছার রোগ

     নন্দিনী        

আর সাহস পাইনা স্বামী ভাবার
বারণ করেছো ...
চার বছর চল্লিশ ঘণ্টার প্রেম  ফুড়ুৎ।

যখনই বুকের পলিমাটি খুঁড়তে চেয়েছো
টুকরো করে এগিয়ে দিয়েছি
প্রায়ই সায়ার লেশ
দাঁতে জড়িয়ে গর্জে উঠেছো ।

তুমি এখন শুদ্ধাচারে ব্যস্ত

অথচ আমাকে নিয়ে ছজন বিবাহিতা
নারীর ওম টেনেছো জোঁকের মতো
গলা উঁচিয়ে বলেছো
তোমার মতো ওরাও মনের মানুষ,


কতবার বলেছি
আমি কিন্তু অন্য পাঁচজনের মতো ন‌ই
তাও নগ্ন হয়ে প্রমাণ দেওয়া
যেখানে যত কুচো তিল ছিল একটা একটা
করে গুণে নিয়েছো

এখন থিয়েটারের লাস্ট বেল পড়ার মতো
মহামারি মৈথুন শেষ
কাহিনী ও শেষ ।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বেবুশ্যে
কিছু রাত আর হতচ্ছাড়া
যৌনরোগ

পালালে কি হবে এইডস মোমবাতি
জ্বেলে  ঠিক খুঁজে নেবে...

             ----------*---------




৩. কবিতা: যাকে পাবি তাকে ছোঁ

               রাখী সরদার

   কাশের বনে গা ধুয়ে উঠে আসছে শারদ ভোর।
চারদিক শিউলির ঘ্রাণ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে
পড়ছে।দুদিন পরেই উমা বাপের বাড়ি আসবে ছেলেপুলে নিয়ে। তার‌ই তোড়জোড় রমরমিয়ে
চলছে।হিমালয় নন্দিনী আলোর মালায় নতুন বস্ত্রে সেজে উঠবে।গহনার চমকে ভক্তরা চোখ ফেরাতে পারবেনা। এতো ক্ষীরগন্ধী আনন্দের মাঝেও চারদিক কালোঘোড়ার দাপাদাপি ।ঐশ্বর্য ময় আলোর ফোকর দিয়ে দেখা যায় আর এক আয়নাজীবন ...


বিরাট আকাশ থাকতেও সাপের মতো পেঁচানো গলি থেকে একটুকরো ধবধবে শরত আকাশ দেখা যায়না।মাছির ভন ভন শব্দ ,নর্দমার পচা জলের গন্ধ,টিনের চালা ,খুপচি ঘরের জানালায় রঙচটা ওড়না ছেঁড়ায় মাঝেমধ্যে দখিনা বাতাস উতলে ওঠে।

উদ্বাস্তু বস্তি ঘরে সকাল থেকেই রামলীলা।ভোররাতেই সিঁথি ঘষে গোপন পথ কেটে রাখে এখানের উমারা।খদ্দেরদের সিঁদুরে অ্যালার্জি।ক্ষুদে রুগ্ন শিশুকে বুক নিংড়ানো শেষ দুধ ফোঁটাকে
চুষতে না দিয়ে বাইরের কাদাঘাঁটা জায়গায় ছেড়ে দিতে হয়।সবটুকু নির্যাস খেয়ে নিলে শুকনো স্তনে
শ্বাপদদের মন ভরেনা।

অগোছালো সংসারে মদ্যপ পতিদেব প্রায়ই সব কিছু ভেঙে ফেলে।ভাঙা সানকি র কোন ছোঁয়া
শাকান্ন ন্যাংটো ঈশ্বরের মুখ থেকে সরিয়ে টান মেরে ফেলে দেয়।লাল পানি যোগানোর অর্থ তার চাই।বেহায়া পুরুষ শুধু টাকার অঙ্ক বোঝে।ঘরের লক্ষ্মীকে যে এর জন্য প্রতি দগ দগে রাতে কত পুরুষের অঙ্কশায়িনী হতে হয় তার খবর রাখেনা।

একদিকে দশভূজার আরতি দেখতে  মানুষের ঢল নামে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে অন্য দিকে প্রতি বিষণ্ণ রাতের তুলনায় বেশি বেশি খদ্দেরের আরতি চলে
তালগোল পাকানো বিছানায়।

শিকারি পুরুষ বাদুড়চোষা করে শুকনো খটখটে শরীর।লিপস্টিক ঘাঁটা ঠোঁটের কোণায় রক্ত জমাট বাঁধে।চিটচিটে বালিশ গোপন চোখের জলে আরো
স্যাঁতসেঁতে।তবুওউদরের হাঁ মুখ মেটাতে যোনিক্ষেতে লালসার কর্ষণ নিয়মিত সহ্য করে।

ছোটবেলার কানামাছি ভোঁ ভোঁ ,যাকে পাবি তাকে ছোঁ  খেলাটির সংস্করণ ঘটে অন্য ভাবে।স্তনে অনেক ঝলসানো ঘা ছাই হয়ে গেছে,তবুও বিচিত্র ফুলকি তুলে গভীর বুকের খাঁজ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।কে এইডসের রোগ পুষেছে।কে গনোরিয়া এসবের খোঁজ রাখার দরকার নেই।যাকে পাবি তাকে ছোঁ এর খেলায় খেলতে নামা খেলোয়াড়দের এসব ভাবলে  মুখে কি অন্ন জুটবে?

      উমা তুমি অসুর মেরে করো অন্ধকার দূর
     আমরা অসুরের বুকে মাথা রেখে গাই অন্য সুর
     রূপোলি রাত আজীবন যাতনার শিকার
    বড় একা...কাকে জানাবো ধিক্কার?



               -----------*----------

৪. কবিতা: সূর্পণখা

                  রাখী সরদার

সূর্পণখা
তুমি না লঙ্কেশ্বরের বোন,তাও এত
বড় ভুল করলে?
স্বাধীনচেতা নারী হয়ে ভুল!
কি দরকার ছিলো আর্যপুরুষকে প্রেম জানানোর
শুনেছি অনেক বীর শ্রেষ্ঠ অনার্য পুরুষ ও
তখন ছিলেন।

সূর্পণখা তুমি সত্যিই বোকা
নারী হয়ে পুরুষকে কামনা করেছো
তাও একজন অনার্যা,রাক্ষসী ,কুরুপা নারী।
বলেছিলে ঠিক আছে মানা গেল
কিন্তু পঞ্চবটীর কোন নিরালা
জায়গায় তো  বলতে পারতে
একেবারে শ্রীরামচন্দ্রের সতীসাধ্বী স্ত্রীর সামনে!!
এ কারণেই বলে রাক্ষসী বুদ্ধি।

কেন বোঝোনা পুরুষ শত নারীকে কামনা
করতে পারে,কিন্তু নারী পারেনা
আর তুমিতো রীতিমতো উত্যক্ত করেছো
যা পুরুষের জন্মগত অধিকার
এত বড় বংশের মেয়ে হয়ে
পুরুষদের কাম ইচ্ছায় বাধা দিলেও বিপদ
আবার কাম‌ইচ্ছে জানালেও বিপদ।

বলিহারি ভাই লক্ষ্মণ
ভাতৃপ্রেমে সত্যিই তুমি শ্রেষ্ঠ
অমর রহে ভাতৃপ্রেম
অমর রহে লক্ষ্মণজী
আহা -যুগে যুগে এমন  আরো শত শত
ভাই যদি পাওয়া যেত ।
দাদা বললেন আর তুমি কচ করে
নাক কান কেটে ফেললে!
ভাগ্যিস ও সময়ে আ্যাসিড বাল্ব ছিলোনা
নাহলে সূর্পণখার তো নাক কান কেন গোটা
মুখটাই তো গলে যেত।

রঘুপতি
তুমি নাকি সীতা মা ছাড়া অন্য
নারীর দিকে ফিরেও তাকাওনি
তুমি ধর্মপ্রাণ পুরুষ
সেই তুমি সূর্পণখার সাথে পরিহাস করেছিলে -
"রাক্ষসীর সহিত করিব পরিহাস।"
কেন?অনার্যা বলে?রাক্ষসী বলে?
নাকি কুরুপা নারী বলে?
সূর্পণখার তোমাকে ভালো লাগতেই পারে
তাবলে ভাইকে দিয়ে চরম অপমান করানো!
সূর্পণখার নাক,কান কেটে ফেলার
ইঙ্গিত দেওয়া?

হায়রে নারী
কত কাব্য মহাকাব্য যুগে যুগে কবি
করেছেন রচনা
কত শত বীর পুরুষের বীরগাথা
কিন্তু নারীর অধিকার সেই এক‌ই
জায়গায় ক্রমাগত পাক খায় ।

সূর্পণখা
তোমার আলুথালু বুকেতে সেদিন
কি উল্কাপাত ঘটেছিল
সেদিন কি নিবিড় অভিমানে,অপমানে
ফিরে গিয়েছিলে কেউ বোঝেনি
তবুও তো তোমার কারণেই
রাম রাবণের যুদ্ধ ,
তোমার কারণেই রামায়ণ মহাকাব্যের শরীর পেয়েছে।

                   -----------*----------

মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--১২



  "মহিষাসুরমর্দিনী ধরায় রক্তাক্ত ধর্ষিত সামাজিক অবরোধে বিপর্যস্ত ছাপোষা মানুষ শুধু শারদীয়ার জৌলুসে চারদিনের উৎসবের ঘোর",,,,,,,,,


 কবিতা: ১ " সেরা তকমা "
   
 রাণা চ্যাটার্জী


জগত সভায় এবার অন্যভাবে ভারত সবার সেরা,

বিপজ্জনক দেশ আমাদের, নিরাপদ নয় নীরা।


ট্রেনে বাসে পড়ছে সবাই হেড লাইন নিউজ ।

কেউ হাসে বাঁকা চোখে,কেউ লজ্জায় ফিউজ।


মন্দ কি আর গর্ব করো , এমন ভালো খবর

পুরুষরূপী জন্তু গুলো খুঁড়ছে দেশের কবর ।


যে দেশে হয় গৃহ হিংসা, মজার খোরাক নারী

সে দেশ মাতা কলঙ্কিত,এ আমাদের বাহাদুরি!


অ্যাসিড অ্যাটাক ,পাথর ছোড়া, কত কুৎসা বলি,

বিজ্ঞ চোখে খবর পড়ি ,বাড়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি।


মনে কি পড়ে দু-হাজার বারো, নির্ভয়া গণ ধর্ষণ,

মিডিয়া ,পেপার মন্ত্রী সান্ত্রী কতো কথার বর্ষণ ।


কি দেখলাম প্রতিবাদী ঝড়, মোমবাতির মিছিল,

শত শত অভিযোগ আজও,ফাইল গড়ছে পাঁচিল।


এদেশে আছে অনেক আইন,বাঁচার অনেক পথ,

কামুকতা আড়ালে ছিল,এখন প্রকাশ্যে বিজয়রথ।


নারীরা আছে সে তিমিরেই,দিকে দিকে লোলুপতা

রাস্তাঘাটে কি ভিড়েতে কনুই,অদৃশ্য হাতের গুঁতা ।


এখন দোসর ফ্রি জিও ডাটা,এ দেশে আটা দামী ,

বেশ করেছি,স্বাধীন দেশ,প্রকাশ্যেই  খাবো হামি।


বাড়ির বৌ কেনা দাসি বাঁদি ,যা খুশি পারি বলতে

স্বামী,ভাসুর,শ্বশুরও পটু পণ নিয়ে খোঁটা ডলতে।


কত রকমের প্রকল্প আছে,সামাজিক সুরক্ষা

নারীপাচার,যৌনতা ভীতি,কে করবে শুনি রক্ষা।


মেয়ে হলো ঘরের লক্ষী,নয়কো সে ভোগ্য পণ্য!

'থমসন'রিপোর্টে মুখপুড়লো,ভারত হলো ঘৃণ্য।


দ্য থমসন রয়টার ফাউন্ডেশন এর রিপোর্টে অনুসারে,(যে নারী রা সেফ নয় ভারতে)



কবিতা -২

  পরকীয়া

   রাণা চ্যাটার্জী

পেপার খুলে চমকে দেখি পরকীয়া নয় অপরাধ বাতিল সেই মান্ধাতা আইন প্রেমে মঞ্জুরি অবাধ।
৪৯৭ ধারা অবৈধ হলো,পরকীয়ায় আর নয় ভয়।আমার ভারত প্রগতির দেশ , নারী প্রগতির জয়।

দেশ চলেছে সমুখ পানে উন্নয়নের আকর্ষণে,
প্রেমে বাধা থাকছে না ,খুশি হও প্রেমের টানে। পরকীয়া নো ম্যাটার,প্রেম তুফানে বাজুক গিটার
প্রেমপর্বে ঘাটতি কেন,বাড়তে দাও প্রেমের মিটার।
প্রেমের বীজ হলে বপন,কি হবে রেখে তা গোপন এসব নিয়েই দৃষ্টি ঘুরুক,মুদ্রাস্ফীতি যখন তখন।

অসুখী দাম্পত্যে নাকি পরকীয়া  খোলা হাওয়া, ধর্ষণ কি কমবে এতে ভালোবাসার গান গাওয়া!
স্ত্রীর ওপর খবরদারি ,নয়কো পুরুষ এ বাহাদুরি
স্ত্রীও তো স্বাধীন মানুষ,কমুক এবার নজরদারি।



কবিতা: ৩

বনধ-অবরোধ

                      রাণা চ্যাটার্জী


রাজনীতিতে ঘেন্না,বীতশ্রদ্ধ আমি,

এসবের শেষ কই,শুধুই দেখি নোংরামি।

রাজনীতি আর দুর্নীতি যেন যমজ ভাই,

রোজ হুমকি,নেতার ধমকি,মানুষ অসহায়।


উৎসবে কোলাকুলি, নামাবলী সম্প্রীতি

দিন ভোর রাজনীতি যার নেই কোন ইতি ।

ছোট বড় কত দাদা,রোয়াবেতে লাগে ধাঁধা,

শক্তি প্রদর্শনে মাঠে,খেয়ে নামে জল আদা।


জনসভা,পথ অবরোধ ,মিটিং একগাদা

মিথ্যার প্রতিশ্রুতি,ছোঁড়াছুঁড়ি শুধু কাদা।

এই নিয়ে বসবাস, রাজনীতির সহবাস

অশান্তি বুকে নিয়ে সুখে থাকা বারোমাস।


চারিদিকে রব হৈ হৈ, নেপোয় মারে দই

নেতাদের মুখে বুলি,মুখেতে ফোটে খই।

তবু বলি আছি বেশ,অশান্তির হোক শেষ,

নেট দুনিয়ায় ভাসো,অবক্ষয়ের নোনা রেশ।




কবিতা-৪

       দোষারোপ

               রাণা চ্যাটার্জী


তকমা দেওয়া ভীষণ সহজ

  পুরুষগুলোর ভাবখানায়,

পাড়ার মোড়ে ক্লাবের ঘরে

সমালোচনার কারখানা।


নারী কেন বাইরে একা ,

কার সাথে সে ঘোরে,

মুচকি হাসি কাকে দেখে

সে চর্চাও রাস্তার মোড়ে।


কোন অফিসে কি কাজ

  ফিরছে কটায় বাড়ি!

ওরে পুরুষ কাজ কি নেই

কেবল নারীর খবরদারি?


নারী হল মায়ের জাত,

   অসুর নাশিনী।

যুগে যুগে পুরুষ শাসন

কবে বন্ধ হবে শুনি ?


মিডিয়া পেপার যতই বলে

"নারী পুরুষ" একই .

বিভেদের এই আঁতুড়ঘর

  সহজে বন্ধ হবে কি!



উমা পর্ব--১১



কবিতাগুচ্ছ

রাজিত কুমার বন্দোপাধ্যায়


১.

রক্তাক্ত যোনি ব্যথায় দীর্ণ  
তবু সে এসেছে মধুর হেসে --  
আসার পথের রক্ত লেখা ,  
যৌবন মদে পুরুষত্ব মাখা !  
তোমার উমা ফিরেছে ঘরে  
রক্ত যোনির ধারায় ধুয়ে --  
একি শুদ্ধতা মাখা তোমার পৃথিবী    
উন্মাদেরা আছে উল্লাসে মেতে !  
এখানে শান্তি , এখানে বৈভব    
এখানে এখন মা যশোরেশ !  
তোমার উমা ছিন্নভিন্ন --  
থাকুক না মা আগের মলিন বেশ ।  
তোমার ঘরের উমার দেখো  
সে কী হর্ষ , সে কী যৌবনের বেশ --    
পূজোর গন্ধে ধূপ আর ধূনোয়    
নেই পতিতার মাটির ক্লেশ !!

                  ***  

              ২.      

কে এলি মা ঘরেতে মোর  
উমা নাকি এতো মলিন মুখ !  
সে আসেনি সঙ্গে বলে --    
তোর অন্তরে নেই কি সুখ ?  
সে কি আছে মা তোর সদাশিব  
পকেটে তাঁর উচ্চ ন্যায়ালয়ের 'স্লিপ'!

তাই নিয়ে সে ফিরছে যে হায় --  
দুনিয়াটা যেন তাঁর পিঙ্গল ছায় ।  
এখন তো আর নেইকো দায় ,  
ব্যভিচারে আর নেই কো ভয় ।  
জগৎ জুড়ে নারী পুরুষ --  
নেইকো আর উঁচু - নীচুর জয় ;  
সব ভুলে এই শারদ উৎসবে    
গাও উচ্চে জয় ন্যায়ালয়ের জয় !  

                    ***

                      ৩.    

তুষার ধবল অমল আলোয়    
বেজার মুখ উমা আসছে ঘরে ;  
জগৎবাসী তক্তপোষী --  
মা উৎকন্ঠায় দিন গোনে প্রহরে !  
বাজারের দাম দাবানল যেন ,  
কাজের পকেট ফাঁকার ঘোরে --  
বেরোজগারী অঙ্গের ভূষণ মা    
তোর মলিন বেশও হারে !  
তোর সাথে মা ফারাক কোথায়
কে জানে তা কোনখানে --  
সঙ্গে আবার পতির পরকীয়া ছাড়ে  
এবার পূজো মা উচ্চ চালে !!  

                  ***

                   ৪.      

শারদ উৎসবে আজ বেপরোয়া ভাব ,  
জীবনের মানে যে বদলেছে !  
তোমার উমা ছেড়ে আজ মান্ধাতা সাজ --  
আমার আধুনিক রসে মজেছে ।  
রক্ত আলেখ যোনি যদিও বারবার --  
তবু উগ্র যৌনতা ভালোবেসেছে ;  
শিবের ত্রিশূল পুরোনো সে আজ ,  
কনডোম ঢাকা পুরুষত্বের খোঁজে --  
পুঁই - পিচ্ছিল পথে চলেছে !  
তোমাদের গড়া সমাজের কড়া  
ছিন্নভিন্ন আধো সে ন্যায় --  
নতুন দিনের নতুন উৎসবে তাই  
হিন্দুত্ব হলো বরাবর ব্যায় !  
নারী অধিকার শুধু পুরুষের বরাবরে --  
জীবনের মাটি আঁকড়ায় না আজ ,
জীবন এখন জীবন শুধু --  
পুরানোতে বেঁচে আর নেই কাজ !!

                      ***    

* শারদোৎসবের এক অঙ্গ হল তার আগমনী গান । যা মা উমার ও তাঁর জগৎবাসীর সুখ দুঃখ বয়ান করে । সেই আগমনী গীত ও কবিতা মিশিয়ে আজকের আটপৌড়ে জীবনের সুখ দুঃখ , কিছুটা বিদ্রুপ আর কিছুটা দুঃখের উত্তাপ রচনার চেষ্টা করেছি । পাঠকেরা নিলে সার্থক নচেৎ কুঁড়োদানে ।      ~ রাজিত

       

               


উমা পর্ব--১০



"উমার মর্ত্যলোকে জীবনযাত্রার পঞ্জিকা"
মানুষের ঠেলা গোঁজা ভারাক্রান্ত দায়ভার সংসার।"


১. কবিতা: উত্তরাধুনিক

তুলসী কর্মকার

************

আর কোনদিন চিঠি খামে প্রেম

লালচে বিকেলে কিতকিত

লণ্ঠনের আলোতে মুখ

রাজার পুকুরে রাজা নামবে না


অভিযোজন সরণী ধরে হাঁটছি

ক্রমশ ছাল মাংস অস্থি নরম হচ্ছে

হাতে হাইস্পীড নেট

দিকে দিকে যোগাযোগ পাতা

ইচ্ছে হলে বাথরুম থেকে জীবন্ত চুমু ছুড়ি

অনলাইন যৌনতা কুড়িয়ে চলি

রাত লুকিয়ে এল ই ডি জ্বালাই

ত্যাগ নয় ভোগ চলে

স্বাধীন ব্যভিচারী সাজে স্ত্রী উপেক্ষা করি

কাম আর টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত সভ্যতা আঁকি



২. কবিতা: পার্থক্য

তুলসী কর্মকার

********

তুমি বললে মানুষ গঠিত হয় মান আর হুঁশ দ্বারা

তলিয়ে দেখলে না পাড়ার নেড়িটার মান আছে

ডাণ্ডা দেখে চুপসে যায়, আদরের সুরে লেজ নাড়ে

বিড়াল বেহুঁশ হয়ে কেরোসিনে মুখ দেয় না


কাঁকড়ার গর্তে চলে শিয়ালের ছলনা

কোকিল ডিম কাকবাসাতে রেখে প্রতারণা করে

ময়না কথা অনুকরণ করে

জাল বুনে চলে মাকড়সা


ছাগল নিজের বাচ্চাকে চিনে

রাতচোরা বাসা খুঁজে পায়

আপনজন হারিয়ে গরু দুঃখী হয়

হাতি সঙ্গমের আগে প্রেম করে


শক্তিশালী গিরগিটি এলাকা দখল রাখে

মাটির ব্যবহার জানে উই

অনেক মদ্দাকুকুর দ্বারা রেপ হয় মাদি

পশুরা ক্ষমতার রাজনীতি জানে


এ সবই আমাদের বৈশিষ্ট্য, তুমি গর্জে উঠলে


শোন তবে, মানুষের আছে পশুর সমস্ত গুণ


পার্থক্যটুকু টাকার ব্যবহার, গড়তে পারে আগুন


ঘুস নিতে পারে, অনুকরণ মডেল তৈরি করে


নিজ জাতির কাছে একবার পরাজিত হলে

পুনরায় খুঁজে চলে জয়, চাকরি করতে চায়

ঈশ্বর আঁকে, ধর্ম্ম ও সরকার গড়তে পারে....



৩. কবিতা: প্রেম

তুলসী কর্মকার

*****

একটি বিকেল দাঁড়িয়ে আছে

জানালার ফাঁকে আলো হাওয়া টুকরো দৃশ্য পারাপার হয়

মেঘ ছুটাছুটি করে, বৃষ্টি নামবে


ভবিষ্যৎ খুঁজে চলেছি


রঙ করা দেওয়ালে তিনটি পেপার কাটিং প্রজাপতি দুটি মঙ্গল ঘট কয়েকটি কাগজের গোলাপ লাগানো আছে

চ্যাটচ্যাটে ময়লা দেখে উপড়ে ফেলেছি

সাফাই করেছি দেওয়াল

উদাস হল প্রেম, তোমার চোখে জল

ছেড়ে যাওয়া বেলা বড় অদ্ভুত

কখনো জানতে চাইনি

তুমিও বলনি কোথায় স্মৃতি লুকিয়ে আছে

বর্তমান সুন্দর করতে অতীতের ঘাড়ে কোপ

ক্ষমাপ্রার্থনা, এড়িয়ে যেওনা

আমাকে চিনিয়ে দাও তোমার সাজানো পৃথিবী

বুঝছি

প্রেম কুড়োতে চাইলে স্মৃতির মূল্য দিতে হয়



৪. কবিতা: ঘূর্ণন

তুলসী কর্মকার

*****

পাখার সুইচ অন করা হলে

কিছুটা ত্বরণ পেরিয়ে সাম্যে থেকে হাওয়া ছোড়ে

বিদ্যুৎ বিভবের তারতম্যে গতির হেরফের হয়

অকস্মাৎ কয়েল পুড়ে গেলে, মন্দন হারে ঘূর্ণন থেমে যায়

বেয়ারিং খারাপ হলে ক্ষতের কর্কশ শব্দ বের হয়

কন্ডেনসার নষ্ট হলে ভারসাম্য হারায়

ঘূর্ণনের কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নাই

হাওয়া দিতে থাকে নির্দিষ্ট এরিয়া ঘিরে, জাতি বর্ণ নির্বিশেষে

ঘাম শুকিয়ে চলে বা নাকে কাঁচাজল বের করে

কোন গোলযোগে পাখা সম্পূর্ণ থামতে সময় লাগে

এই ঘুরে চলা অভ্যাস লেগে থাকে স্বভাবে..........


জীবনটি পাখার মতো


একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়

দুধ পানে শক্তি সঞ্চয় করে

সূচনা হয় জীবন চাকার ঘূর্ণন

চলন গমন সক্ষমতার পরিচয় জাহির করে

হঠাৎ একদিন মায়ের উনুনে কাঠ ঠেলে দেয়

অফিস টাইমে দরকারি ব্যাগ বাবার হাতে দেয়

আরম্ভ হয় দায়িত্ববোধ শুরু হয় কর্ম জীবন

স্বভাবগত স্বস্তি বয়ে চলে বন্ধু শত্রু উপকৃত হয়

জীবন চাকা থেমে গেলেও কাজের বায়াস মৃত রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রসংগীতে কনভার্ট করে

যার জীবন্ত সুর মুখে মুখে বাতাসে ভেসে চলে.....



উমা পর্ব--৯



"পূজোর উড়ো উড়ো মন প্রেম অনু তোমায় একপশলা উজানি স্রোত মাঝির নোঙর সামলে,ধরো তোমার আঁচল,,,,"


কবিতাগুচ্ছ: "অনুকে-১"

ময় শুকিয়ে এসেছে অনু
আঁচল ঢেকে নাও শরীরে।

গ্রহদের দ্বারে বৃষ্টি নামে।
দু-একটা বরফ ডেলাও প'ড়ে।
কাঁধের জামা ঠিক করো অনু।

ঝড় উঠতে পারে বুকে।

পিঁপড়েগুলো মাটি খাচ্ছে শুঁকে।

সময় নিরাশ প্রকৃতিকে
একলা আঁধারে ফেলে যায়

গোধূলি সন্ধ্যা কালে
কথা চলে মিলনের সুখে।

পাতাবাহার বসন্ত মেখে নেয়
শ্যাওলায় আক্ষেপ রক্ষা পায়
তর্ক চলে পরস্পরের মুখে মুখে।

অভিমান জমে লিপস্টিকে
আমিও ঠোঁটের পার ভালোবাসি
রক্ত আদর জমে প্রভৃতি বুকে।

আমরা দুজনে আবারও
 ভুলে ফিরে আসি. . .


#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)


"অনুকে-২"

শরীরটাকে গুটিয়ে নিচ্ছো সুখে
পরিণতির উত্তরে থমকে হৃদয়।

প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ জাফরান ঠোঁটে।
অন্তরে জন্মে ওঠে চাপা সংশয়

বুকের ভাঁজে লেগে থাকে
ঐতিহাসিক শাহাজাহান সুখী
মমতাজ যন্ত্রণা।ক্রমশ প্রকাশ্য ।

ওঠো অনু দিন যে নাভির মুখে
অন্তর দ্বন্দ্বে একের পর এক
কাটাকুটির দান দিয়ে চলেছে

রূপের বয়স হয়নি এখনও
তোমার।থমকেছে প্রত্যয়।
যা কিছু মেলে দিয়েছো ভোরে
রবির উদয় রক্ত শুষে খায়।

বিছানায় পরে রয়েছে স্মৃতি
অভিমান রেখে দেয় শুকনো পাতা।

স্বপ্ন প্রেমে আকাশকুসুম
ভেবে উঠি।দিনের আলোয়
ক্রমশ মুছে যায়।।

#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)



"অনুকে-৩"

তখনও বীর্য চুইয়ে পড়ছে
শরীরে।কতটা ঘনিষ্ট আমি।
তোমার ঠোঁটের সময় খুঁজি।

নোঙর খানা সজাগ করো
তবে।তোমার হাতের ছোঁয়ায়
নিজের শরীর টুকুই মুছি।
আলগা কাপড় আগলে ধরো।

কথা ছলে বেঁধে রেখেছি
তোমায়।যদিও রাত্রি গভীর হতো।
আঁচল যদি আবার পড়ে যেতো!

অনেক সাগর পার করে
তোমার কাছে যেতাম।
নেহাত ক্ষতের ঘায়ে মিশে. .

কাম সুখ সজাগ করেছে
হৃদয়ে তখনও সংশয় ।
এবার তবে মেলে দাও শরীর
আমি রক্ত নেবো চুষে।।

#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)


"অনুকে-৪"

তোর সুখে ভিজেছি আমি,
উদ্দীপনা মেখে নিয়েছি ঠোঁটে,
মেলেছিস স্তনে রসপ্রাপ্তি অসুখ।

আমার শতকোটি বসন্তে
রেখে যাস শুকনো গোলাপ।
ফাগুন এসে চেটে নেবে শরীর।
মুছে দেবে অনন্ত অতীত।

ঘাসের ওপর শুয়ে আছিস
নগরের নগ্ন উর্বশী তুই
রোজ বসন্ত ফোটে বুকে।
পাতাঝড়া সুখে আমিও হারাই।।

অনু আজ মেখে নি তোকে
স্মৃতিগুলো হোক পাথুরে।চটচটে।

সময় নিরাশ গণিতের চোখে
মিশে গেছে অজানা অন্ধ-ক্ষতে

উড়ে গেছে পাহাড়ি খুশি বসন্ত রেখে।

#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)

উমা পর্ব--৮



পরীকাহিনী
..................

ফিরোজ আখতার


| ১ |
রাত বারোটার পরপর-ই স্বরবর্ণের স্টপেজে এসে
ভিড় করে পরীদের দল । হলদেটে আলো-আঁধারি'তে
তাদের খিলখিল হাসি'র সাথে মিশে যায় পীতনগরী'র
নেকড়ের দল, মেরুদন্ডী সভ্যতার ছদ্মবেশে ৷

| ২ |
শুরু হয় নগ্নতা'র কেনাবেচা ও দরদাম
প্রবৃত্তি'র বহুমাত্রিক জ্যামিতিক স্বার্থের ধারালো কোণে
হোঁচট খেয়ে ফিরে আসে বিবেক...
সেখানে শুধু পচা নারীমাংসের ইরোটিক গন্ধ ৷

| ৩ |
মোম লাগানো দড়ি'র শক্ত ও মসৃণ গেরো'র মতো
ছল ও ছলনা জমাট বাঁধে পরীদের স্তনবৃন্তে
কামনা'র গলিত ম্যাগমা তাদের বুকের উপত্যকায়
ক্ষুন্নবৃত্তি'র ছদ্মবেশে আন্দোলিত হয় ৷

| ৪ |
হঠাৎ-ই ঝিলিক দিয়ে ওঠে পরীদের শ্বদন্ত
বিকৃত ডানাগুলি ঝলমল করে ওঠে
বিপথগামী নেকড়েদের দাঁত-নখ হারিয়ে আসে
আইভরি রশ্মি'র শিরায় শিরায় ৷ পরীরা বলে ওঠে তথাস্তু !

উমা পর্ব--৭



নবমী
সুতনু হালদার


একটা শব্দের মতো অস্থির অথচ বাক্যের মতো দাম্ভিক, ভালোবাসার মতো দুরন্ত কিন্তু রোদের মতো কামার্ত শিরশিরানিগুলো পলেস্তারার নিত্যবৃত্ত অতীত

আমাদের ঘটমান বর্তমানে মিশে থাকে উমার নৈব্যক্তিক দীর্ঘশ্বাসের নির্যাস! পাশবালিশের মধ্যে জমিয়ে রাখা ক্রোধকে বহন করতে করতে একদিন অমাবস্যার হুক খুলে জানা যাবে স্তনাগ্রের খিদে...

রাস্তার বদল হয়! কৈলাস হেঁটে আসে জরায়ুর মুখে

ভালোবাসার শিউলি ঝরে গিয়ে আড়মোড়া ভাঙে নদীর স্রোতে, প্রতিরাত ধর্ষিত হতে থাকে - বৈদ্যুতিন বায়বীয় উচ্ছ্বাস; গতিজাড্যের যোজ্যতা মিশে থাকে মেয়েলি  ঊরুসন্ধির নিঝুম প্রান্তরে...

যদিও অভিযোজনের জবানবন্দি দ্বিপাক্ষিক সমীকরণ হতে হতে শেষমেশ হয়ে যায় জ্যা উন্মুক্ত সুন্নত...

প্রতিটা অন্ধকারের আঁচলে লেগে থাকে উমার গন্ধ,
প্রতিটা কাশফুলের চুমুর জ্যামিতিক বিয়োজন রক্তের শ্রমিক সত্তাকে মনে করিয়ে দ্যায় বদলহীনতা!

ঘরে ফেরার থেকেও ঘরের মশারীতে ছোপছোপ দাগের প্রতিসরাঙ্ক রোদের প্রেমিক সত্তাকে ইশারায় ভালোবেসে ফেলে। উমারা ঘরে ফেরে, অথচ কোথাও কোথাও  রক্তের কণিকারা উমা হয়ে থেকে যায় জৈবিক উপশিরার প্রান্তিক মুদ্রাদোষে, সূর্যের হীনবীর্য তেজস্ক্রিয় আলো প্রতিটা সংসারেই পরকীয়ার মতো চুমু খায়...

ফিবছর প্রতিটা নবমী নিশি রজঃস্বলা হয়ে পড়ে

উমা পর্ব -- ৬



১. কবিতা:

___উমা এলো ঘরে

           সুনন্দ মন্ডল


     লাল আলোর সংকেত,

     ভাঙা চালায় খেজুড়ে আলাপ

     ‎মিষ্টতা কাশ ফুলের নাকছাবিতে


    সুগন্ধ ওই কোণের শ্যাওলা ভেঙে

    ‎মহল্লায় সুর বেঁধেছে কানা মুনি

    ‎গলির বুকে আল্পনা

    ‎মহালয়ার ভোর



    উমা নাকি এলো ঘরে

    ‎মাটির প্রদীপে জ্বলবে আলো

    ‎নাকি জ্বলবে মাটির বুক

    ‎          -----------


২. কবিতা:

_____পক্ষকাল

                সুনন্দ মন্ডল


বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সাজঘরে সেজেছেন

কন্ঠের তালিম শুরু হয়ে গেছে বাংলার আপনজনের

নাচের তালে সুরেলা গানের কলি


শরৎ যৌবনে পূর্ণ চাঁদের লহমা

বিল্বপত্রের কানাকানিতে ফুটেছে

ভোরের বোধনে দেবীর পক্ষকাল


জিতুয়া উৎসবে দেবী সেজেছিল

নয়া আদলে প্রাণের বিষণ্ণতা ভুলে


আজ নাকি মহালয়ার পুণ্য প্রভাত

কাঙাল পেতেছে চট প্রাসাদের শিরদাঁড়ায়

নগ্ন সমাজের পেটে লাথি

পূর্ণ ঘটে নীরব মানবিকতা

             -------------




৩. কবিতা:

_____নারীই দুর্গা

              সুনন্দ মন্ডল


লাল শাড়িতে তোমার শরীর

    জড়ানো প্রেম অল্প আবেশ।

কানের দুল, ঝাপড়ানো চুল

    মনের গলিতে দুরন্ত মেস।


রাতের আলোয় তোমার চোখ

     নতুন মহড়া ক্লান্তি মেটায়।

স্বপ্ন লেপা হৃদয় চাতাল

     সুর মিশেছে অজানা নেশায়।


সুডোল হাত নিটোল গাল

     জমানো ক্ষীর পেটের পাশ

নাভির খাতা খোলা যখন

     টানব ভাবি কলমে রাশ।


আর কিছুটা এগিয়ে গেলেই

     যৌনকাম চরিত্রে জাগে

নিন্দাবাদী নিন্দা ছড়াক

      ছুটব আমি নিজের বাগে।


দুর্গা জাগে দেবীপক্ষে

      আমরা জাগি তোমায় দেখে

যখন দুর্গা নারী, নারীই দুর্গা

      শাড়ির আঁচলে আদর মাখে।

      ‎       -------------


৪. কবিতা:

_____চোখ

              সুনন্দ মন্ডল


অঞ্জলিতে পাঞ্জাবি বেস্ট

   ধুতির কাছাও টাইট হবে।

তোমার হলুদ পাট্টা শাড়ি

    গোড়ালি ঢাকা মাটি ছোঁবে।


ব্লাউজ সটান পিঠের ওপর

    একটি রেখার মতোই যেন।

কোমল ত্বক থাকবে জেগে

    মত্ত গ্লাসের যুবক মানো।


বুকের ওপর ছড়িয়ে মেঘ

    বৃষ্টি নামুক শরৎ ঘাসে।

আকাশ একটু হিংসে করুক

     বর্ণ গাথা পুজোর মাসে।

 

ঠোঁটের আবির নামটা জানি

     লিপস্টিক হয়তো বলে।

কথারা ক্লিপে আটকে যেন

     মাথার ওই ঘন চুলে।


মন্ত্র পরে পুরুত মশাই

      অঞ্জলি দিই ঠাকুর মা'কে।

তুমিও দেখ আমার পাশে

     চেয়েই থাকি মায়ের চোখে।

      ‎        ------------




শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--৫



কবিতা--১
           #বস্ত্র_হরণ।।
             ---#অভিজিৎ_দত্ত।।

চারদিন ধরে মহা ধুমধাম  জৌলুস কতো বেশি
নাকছাবিটা হীরের এবং মুক্তো খচিত আরশি।
কেউবা মাকে দিয়েছিলেন কোটি টাকার সোনার শাড়ি
কোথাও বা মা পেয়ে গেলেন দামি দামি গয়না ভারি ।

এসব নিয়ে দুগ্গামাতা রওনা দিলেন কৈলাসেতে
পাড়া কমিটির দাদা বলেন দুচার মিনিট  দাঁড়িয়ে যেতে।
দিদি বলেন নানান সাজে দেখতে তোমায় চাই
মাতাশ্রী খেতাব তোমার রিজার্ভ করেছি তাই।

রেড রোড তো জনারণ্য  তিল ধারণের নেইকো ঠাঁই
সবাই বলে পার্বতী মার মিছিল দেখব ভাই।
তারপরে সেই ট্রাকগুলো যেই পৌঁছে গঙ্গাঘাটে
ছিনতাইবাজ হুমড়ি খেয়ে গয়না লুটতে ছোটে।

কোটি টাকার সোনার শাড়ি পড়িয়েছিলেন যারা
তারাও বলে 'ও দুগ্গা মা একটুখানি দাঁড়া ।
এত দামী শাড়ি পড়ে কৈলাসেতে গেলে
মহিষাসুর পথেই আছে কাপড় নেবে খুলে'।

তার চেয়ে মা মর্ত্যবাসী পুজো যারা করে,
তাদের হাতেই দাও খুলে আজ সোনার শাড়ি ছেড়ে ।
হাপুস নয়নে কেন্দে মাতা বলেন 'শাড়ি ছাড়া
কৈলাসেতে  ঢুকলে মোরে,
করবে বাবা তাড়া।'

সন্তানদল শুনতে নারাজ  মায়ের  এসব আর্জি
বলে তোমায়  নাইটি দেব  আনছি ডেকে দর্জি ।
এর মাঝেতেই বস্ত্রহরণ  হয়ে গেল শুরু
পাড়ার দাদা বলে ওদের  'জলদি করনা গুরু।'

লজ্জা পেয়ে মাতা নিজেই  দিলেন জলে ঝাঁপ
ঝন্টু বলে সোনার শাড়ি  কেড়ে নিলাম বাপ।
মাদুগ্গার বস্ত্রহরণ করিয়া সম্পন্ন
পাড়ার দাদা বাড়ি ফিরলেন  কাজ আছে তার অন্য ।
                               ******




কবিতা--২

          ।। #অস্তরাগের_গান।।
                          ------#অভিজিৎ_দত্ত ।।

পূজামণ্ডপে আয়তনয়না নারীদের ভিড়
দেবী দুর্গার বন্দনাতে চলে শুদ্ধাচারের স্নান
মণ্ডপের পাশেই একটি বস্তি,
সেখানে আলো আঁধারির চিতায় পোড়ে
অস্তরাগের গান।  

মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে আজও
আর তার অপেক্ষার স্পন্দনে শোনা যায়
নাতিদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসের বিস্ফোরণ
কখন বা সময় হবে পাত পেড়ে খেতে বসার ?

সাড়ে চার কোটি টাকা চাঁদা উঠেছে মোট
জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে
কখনও বা নারীমুক্তির শ্লোগান শুনিয়ে।
কিছু যাবে মায়ের  ভোগে কিছু যাবে রাহা খরচা
দেবদেবী তথা প্রহরীকুলের
তাও বাঁচবে কোটি দেড়েক, আর এটা শুধু তাঁর সন্তানদলের।

তোমার দূর্গার পদতলে শোভে মহাভোগের পরমান্ন
আমার দুর্গা জ্বরেতে বেহুঁশ, জোটেনি ক্ষুধার অন্ন।
তোমার দুর্গা বরবর্ণিনী, বন্দিতা তিনি প্রতি ঘরে
আমার দুর্গা বারবিলাসিনী, পেটভাতা পায় গলির আঁধারে।

চাঁদ হাসতে হাসতে চলে যায় অস্তাচলের দিশায়
জোয়ারজলে একা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে
মদ্যপ নীল জ্যোৎস্না আর একরাশ ভয়।

যতক্ষণ না পোশাক টেনে হাঁটু ছাড়িয়ে গোড়ালি পৌঁছলো
যতক্ষণ না পুরুষের জন্য করলাম ব্রতের উপোস
যতক্ষণ না মানলাম আমরা নারী--  পুরুষের সেবাদাসী,
যতক্ষণ না অক্ষিকোটরে ঢাললাম গলিত সীসার মতো
একটুকরো ভয়।

                             ******



উমা পর্ব--৪



কবিতা-- জগজ্জননী
সৌরভ ঘোষ

"দেহি সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি পরং সুখং
রূপম দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো দেহি
বিদেহি দেবী কল্যাণাং বিদেহি বিপুলাং শ্রিয়ম
রূপম দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো দেহি"

মেয়েটা আগের বছর জগজ্জননী সেজেছিল,পাড়ার নাটকে
লাল পাড় সাদা পাটের শাড়ি, আলতা মাখা পা,
একটা হাতের চেটো আশীর্বাদের জন্য তুলে ধরেছিল
আর একটা ছিল মাটির দিকে,সৌভাগ্য ঝরছিল
চোখে  অপার মায়া,হাসিতে বিশ্বশান্তির কুসুম ছায়া

মেয়েটা দশম শ্রেনী
মেয়েটা রোজ ভোরে ওঠে,
বাবার জন্যে শাক তোলে
কাঠ কুড়িয়ে রান্না করে,
তারপর স্কুল,এক মাইল দূরে...
দশভূজার মত একা হাতে সবদিক সামলায়
মদ্যপ বাবা রোজ টলতে টলতে ফেরে,
মা, আগেই মায়াডোর ছিন্ন করেছে
এখন পুব আকাশে সুতিশুভ্র শুকতারার বেশে

প্রতিদিন ভাত না জুটলেও, মার ঠিকই জোটে,
সব কিছুর মতই রপ্ত হয়ে গেছে
ক্লাস সিক্স থেকে...
ভয় হয়, দরজার পাশে চ্যালাকাঠটা দেখে
পিঠের থেকেও বেশি আঁচড় জর বস্তুর গায়ে,
কি ভেবে যেন তুলে রেখেছে।

বাবার মার তবুও সহ্য করা যায়
রাস্তার মোড়ের বেহায়া ছেলেগুলো বড্ড জ্বালায়,
টোন করে "এই মাতালের মেয়ে"
ষোড়শী, ঠোঁটে ওড়না চেপে পা চালিয়ে হাঁটে
কালা হলে ভালো হত,এত অপমান!
যেদিন নিলু গায়ে হাত দিল বন্ধুত্বের অজুহাতে
চর কষিয়ে ছিল জোরে
নিলুও বলে গেছে" বদলা নেবে"
"কেন মেয়ে হলাম?তুমি কি অন্ধ, দেখেও দেখো না?
আমি তো  প্রতিদিন সন্ধ্যেয় ধূপ জ্বালাই,
তাহলে তুমি কাদের ডাকে সাড়া দাও?"
নিঃসাড় ঈশ্বর,দুর্বলদের ডাকে সাড়া দেয় না,
মেয়েটা এখনও জানে না।
ঘরে বাইরে লড়তে লড়তে ক্লান্ত মেয়ে...
রমেশ দাদু ও'কে জগজ্জননী বলেই ডাকে।




দশমীর রাত,
আশ্বিনের ঝড় আছড়ে পড়েছিল মেয়েটির জীর্ণ কাঠামোয়।
সে'রাতে বাবা মদ খেয়েছিল অনেকটা,বিলিতি মনেহয়
বন্ধুর কাঁধ ভর দিয়ে টলতে টলতে
একচালার ঘরে,খোলার চাল মাটির দোর,
বাইরে চাঁদ , ঘরময় কুৎসিত গন্ধ আর ঘোর অন্ধকার...
বন্ধুবেশী শয়তান
নিদ্রিত শিশুর মত মাথায় হাত বুলিয়ে
উপদেশ দেয় সদ্য যৌবনাকে
সুযোগে হাত চলে যায় মেয়েটির পেলব বুকে
বন্ধুবেশী হায়না জানে ফূর্তি কি,পিপাসার মানে
প্রবল বাহু দুর্বলাকে জোর করে টানে...
মেয়েটি তখন দৌড়বাজ
রক্তশূণ্য দেহে আকস্মিক বজ্রপাত,
বিষাক্ত কামড় বসায় হায়নার থাবায়
বাবা তখনও অচেতন,বন্ধু ঝাঁপিয়ে পড়ে-
নখের আঁচড়ে ফালা ফালা করে দিতে চায় পৃথিবী,সৃষ্টি
অভুক্ত মেয়েটি ছিটকে আসে ,চাঁদের নীচে...

বাবার বয়সী লোক,"ছিঃ"
এরাও মানুষ!
মেয়েটি,সেইরাতে প্রথম বুঝল পুরুষ মানে ভয়,
প্রথম বুঝল অন্ধকার কতটা নির্দয়।
শুকতারা তখনো মাঝ আকাশ
লোভী নেকড়ের জিভের গরল অন্ধকারেও চকচক করে
জান্তব ইশারায় কাছে ডাকে,যুগের সভ্যতাকে...

বারোয়ারিতলায় ঢাকের আওয়াজ তখনও থামেনি,
মনে হয়,'মা' জলে পড়ার সময় হলো ,
তবে কি নিজেও...
নিচুগলায় বিবেক গর্জে ওঠে "কক্ষনো না,
মা বলেছিল -"লড়তে হবে,
মেয়েদের প্রতি মুহূর্তে লড়তে হয়,
এটাই সমাজের নিয়ম..."

নক্ষত্রের অভাবে মেয়েটি নিজেই জ্বলে ওঠে
কোমড়ে ওড়না বাঁধে, হাতে নেয় চ্যালাকাঠ
আয়তনেত্র থেকে বেরিয়ে আসে দুরাধ্যয় তেজ
যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবে বাঁচার মন্ত্র
খোলা চুল থেকে বিকরিত হয় হাজার সূর্য সমষ্টির আলো,
এলোকেশী রণমূর্তি ধারন করে...
দূর থেকে ভেসে আসে শেয়ালের ডাক, ঘণ্টাধ্বনি,
অসংখ্য শাঁখের আওয়াজ,মহামন্ত্র
"চন্ডীকে সততং যুদ্ধে জয়ন্তী পাপনাশিনী
অচিন্ত্যরূপ চরিতে সর্বশত্রু বিনাশিনী..."
ঢাকের বিসর্জন বোল আর এক দেবীর আবাহনে মেতে উঠে...

এই মেয়েটি সেই মেয়ে
যে আগের বছর জগজ্জননী সেজেছিল পাড়ার নাটকে
এই মেয়েটি সেই মেয়ে
যে মুখ বুজে সব সহ্য করত ঘরে-বাইরে,হাটে-বাজারে
এই মেয়েটিই সেই মেয়ে
যে ভাগ্যের সাথে আপোষ করেনি,স্বেচ্ছায় অস্ত্র ধরেছে হাতে
এই মেয়েটিই সেই মেয়ে
যে সাহসে আছে, মানসে আছে
এই মেয়েটিই সেই মেয়ে
যে তোমাদের পাশের বাড়িতে থাকে
এই মেয়েটাই সেই মেয়ে
যে তোমাদের মা,তোমাদের বোন,তোমাদেরই মেয়ে
এই মেয়েরাই সেই মেয়ে...তোমরাই সেই মেয়ে
তোমরাই জগজ্জননী...  




উমা পর্ব--৩



কবিতা--সেইসব শরতেরা।


নাম--নিলয় নন্দী।


ট্রেডমার্ক শিউলি বা কাশ। বাকিটা অহেতুক...


এভাবেই নজরে পড়ে না খসা পলেস্তারা

নজরে পড়ে না রুক্ষ চুল, ছেঁড়া শাড়ি

অস্থির বারোমাস....


আটচালা জুড়ে পড়ে আছে কবেকার কাঠামো।

স্মৃতিপট মাটি ছানে কলির কুমোর

রঙ চড়ায় বয়সের বলিরেখায়...


প্রাচীন জনপদে পা রাখে শহুরে আশ্বিন

অনলাইনে বিকোয় নিটোল কারুকা

দ্রাঘিমা সংলাপ, শ্রাবণের খোলাচিঠি।


কান্না মনে রাখে না কেউ

কিশোরের কাঁধে মাথা রাখে সমকাম স্রোত

বৌদির হাত ধরে অপটু দেওর...


কবেকার অকালবোধন পূর্ণ মনস্কাম

শীর্ণকায়া শরৎ, প্রাগৈতিহাসিক।


উমা পর্ব--২



কবিতা--১

নিস্তব্ধ উঠোন  --আবদুস সালাম

  অসহায় ঝরে পড়ে পাড়া মহল্লায়
কিশোরী আত্মহত্যার মড়ক  খবরের শিরোনামে

সকালের  মনখারাপ বদলে দেয় রাতের ঘুম
ছন্নছাড়ার উঠোনে মরে যায় কল্পনা
বিন্দু বিন্দু অবিশ্বাস ঝরে সকালের রোদে
 

মনখারাপের আগুনে পুড়ে মরে সভ‍্যতা
পুড়ে ম‍রে শরতের অবিশ্বাস্য দলিল

অন্ধকার হাঁতড়ে মরে প্রজন্ম

কিশোরী প্রজন্ম ডুবে যায় অতলে,
বিধ্বস্ত নারী- প্রজন্ম নবীকরণ হয়
সর্বনাশের তাঁবুতে মিলে অবৈতনিক চাকুরী
বন্দী -শিবিরে  প্রতিধ্বনিত হয় বিনিদ্র- চিৎকার আর আর্তনাদ
রিংমাস্টার ছড়ি হাতে  নিঃশব্দ শাসনে মগ্ন

নিস্তব্ধ উঠোনে ঝরে  হতাশার আগুন
পুড়ে  যায় প্রজাপতি

@@@


কবিতা--২

নির্বোধ ---আবদুস সালাম

আদি মানবের রক্তে লেখা কামইন্দ্রিয়ের কবিতা
  এই ভাষাগুলোকেই  লোকে ভালোবাসা বলে
ভালোবাসা নিংড়ানো রসে হাবুডুবু খায় কামগন্ধ ব‍্যাকরণ

নির্বোধ অমাবস্যায় উপোস করে সূর্য
হৃদয় খুঁড়ে তুলে আনে সর্বনাশ

প্রেমের সমুদ্র উথালপাথাল হলে মানুষ বোকা বনে যায়
হারিয়ে ফ্যালে ঠিকানা
উত্তাল সমুদ্রে  হাবুডুবু  খায় পুনর্জন্ম

বিষন্নছাতার তলে ঢুকে পড়ে  কাম আর আর্তনাদ
@@@



কবিতা--৩

অনাহুত   ---আবদুস সালাম

  আয়োজন লেখা আছে প্রকৃতি জুড়ে
এক একটা সময় চেনা পথ ও অচেনা হয়
অব‍্যক্ত কথা আঁকা হয় অমসৃণ দেওয়ালে

লাল সংকেত ভেঙে প্রেম  ডানা মেলে
নিপুণ হাতের ছবিও বুঝে গ‍্যাছে সময়ের ব‍্যবধান
ভাদরের ভরা গাঙে নিশ্চুপ গল্পেরা সাজায়
অক্ষর
  আর ঝরা পাতাদের আয়ু দিয়ে যুবতি সাজায়  অনাহুত জলসা ঘর 

অনাদরে জাদুঘর জুড়ে অসংলগ্ন ঘুম
দ্রুত অক্সিজেন কমে আসে
হয়তো  বা পৃথিবীর আয়ু  কমে আসছে 

অসতর্ক মুহূর্তে উড়ে আসে বিচ্ছেদ
ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ে বিশ্বাসের সেতু
@@@


কবিতা--৪

    অপরিচয় লিপি ---আবদুস সালাম

শুঁয়োপোকার ইতিহাসে রূপান্তরের ঘনঘটা
প্রাগৈতিহাসিক জীবনে শুধুই অপরিচয়
ভালোবাসার রূপান্তর মেখে ক্লান্ত হয় সময়


দিনবদলের সংবিধানে শুধুই মমির দীর্ঘশ্বাস
মেঘের মতো ঝরে পড়ে অপরিচয়
বুকে জড়িয়ে নিয়েছি ম‍্যাজিক পৃথিবী
দুঃসময়ের উপত্যকা জুড়ে বাস করছে ভূতগ্রস্ত ভালোবাসা


ঘরকন্না মিলে জড়ো হয় আর্তনাদ
দরজায় টাঙানো আছে সুন্দরের ভায়োলেন্স আর বিচ্ছিন্ন একক

ভালোবাসার তাঁবুতে জড়ো হয়ে আছে বিচ্ছিন্নতার মেঘ
ঝরে পড়ছে হাড়রঙা স্বপ্ন বৃষ্টি 
@@@@

উমা পর্ব---১



কবিতা --১

               সোহাগ

         নাসির ওয়াদেন

কুয়াশার হিমে ভেজা
রূপালি বিছানায়
নিস্তব্ধ বাতাস গিলে ফেলে
হিংসার বীজ ----

যুবতির স্মৃতি আমি,
নিত্যদিন
হ্যারিকেন হয়ে জ্বলি

মেহেদী পাতার গন্ধমাখা
ধোঁয়া
জোছনার আলো হয়ে
ঝরে ধর্ষিত শরীরে••••

এবার বর্ষণের দিনে দেখি তুমি
কতটা সোহাগ ধরে রাখো

     
   কবিতা--২

 প্রদীপ
              নাসির ওয়াদেন

কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা শোনেনি
তথাপি প্রদীপ আলো ঢেলেই যাচ্ছে

কী বীভৎসতা ! মাথার ছাদে রজনী হাঁটে,
বুকে দুধে দুরন্ত আবেগী জোছনাঢেউ ,,,,

' মা ' বলে একবার, শুধু একবার ডেকেছিল ভোরের কুয়াশা
বাকি মিথ্যে, সব কাল্পনিক, মায়া,  সত্য শুধু
ঝুলে থাকা দুরন্ত ভালোলাগার বাসনা

বৃষ্টিচ্ছায়া,  গোপন অঙ্গ ছুঁয়ে দেখো
সত্যিই তুমি সতী আছো তো
নাকি অ-সতী,  তৃতীয় পুরুষ,,,,,

প্রদীপ তবুও জ্বলতে থাকবে অন্ধকার পোড়াতে
বিকল্প স্বপ্নের ভেতর বেঁচে থাকে মানুষের জীবন
                             --------


কবিতা --৩

              পরিবার 

         নাসির ওয়াদেন 

স্বপ্নে ভরতি শিউলি ভেজা রাত 
বি-নির্মাণে ভরে দেবে 
অনন্ত পুরুষ ---

পাহাড়ের বুকে রোপন করেছে 
অদ্ভুত আঁধার রাত 
শুধু ভাতের হাঁড়ি 
টানাটানি 
কখনও কখনও লাল হয়ে জ্বলা 
মাটির কুপির আলো 

বাড়ন্ত ভাত, শরীরে আগুনের ছ্যাঁক 
আমাদের পূর্ব পুরুষের গায়ে 

পরিবার •••জ্ঞাতি কুটুম্ব ••••সহোদরা 
অন্নপূর্ণা ফেরার অপেক্ষা----


কবিতা--৪

             উদীক্ষণ

                    নাসির ওয়াদেন 

সব সত্যিই মিথ্যে হয়ে যায় না, সরলতা 
চোখের আড়ালে ছায়া ছায়া খেলা নিত্য 
কীসের আওয়াজ ভরে আ-ফলা মাটির বুক ?
না, সেভাবে দেখেনি সর্বনাশ, আশঙ্কা,,,, 
স্নায়ু শিহরিত মুহূর্ত আচমকা নির্জন হয়ে যায় 
বুকে বুক রেখে শপথ করো-- প্রতিরোধ হোক ---

অভিমানের কোন শেষ আছে ? শেষটুকু সহিষ্ণুতার
হিসেবনিকেশ চুকে যাক কদমতলার নির্জন মুহূর্তে
তোমার কনফিডেন্সিয়াল ফাইলে চোখ বুলায় আর
ভাবি, স্মৃতির পেয়ালা কীভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে আছে 
গভীরে,গর্তে 



শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮

"পদ্মজা সংগ্রহ"-সুপ্রীতি বর্মন।



"মৃন্ময়ী নাভির প্রস্ফুটিত ১০৮ কোকনদে আমার চূড়ান্ত প্রেমাঞ্জলী প্রিয় কবিতাগুচ্ছের রৈখিক আলাপনে,,,,,,,,,,,
পদ্মজা সংগ্রহ।
সম্পাদক সুপ্রীতি বর্মন।"