শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--৫



কবিতা--১
           #বস্ত্র_হরণ।।
             ---#অভিজিৎ_দত্ত।।

চারদিন ধরে মহা ধুমধাম  জৌলুস কতো বেশি
নাকছাবিটা হীরের এবং মুক্তো খচিত আরশি।
কেউবা মাকে দিয়েছিলেন কোটি টাকার সোনার শাড়ি
কোথাও বা মা পেয়ে গেলেন দামি দামি গয়না ভারি ।

এসব নিয়ে দুগ্গামাতা রওনা দিলেন কৈলাসেতে
পাড়া কমিটির দাদা বলেন দুচার মিনিট  দাঁড়িয়ে যেতে।
দিদি বলেন নানান সাজে দেখতে তোমায় চাই
মাতাশ্রী খেতাব তোমার রিজার্ভ করেছি তাই।

রেড রোড তো জনারণ্য  তিল ধারণের নেইকো ঠাঁই
সবাই বলে পার্বতী মার মিছিল দেখব ভাই।
তারপরে সেই ট্রাকগুলো যেই পৌঁছে গঙ্গাঘাটে
ছিনতাইবাজ হুমড়ি খেয়ে গয়না লুটতে ছোটে।

কোটি টাকার সোনার শাড়ি পড়িয়েছিলেন যারা
তারাও বলে 'ও দুগ্গা মা একটুখানি দাঁড়া ।
এত দামী শাড়ি পড়ে কৈলাসেতে গেলে
মহিষাসুর পথেই আছে কাপড় নেবে খুলে'।

তার চেয়ে মা মর্ত্যবাসী পুজো যারা করে,
তাদের হাতেই দাও খুলে আজ সোনার শাড়ি ছেড়ে ।
হাপুস নয়নে কেন্দে মাতা বলেন 'শাড়ি ছাড়া
কৈলাসেতে  ঢুকলে মোরে,
করবে বাবা তাড়া।'

সন্তানদল শুনতে নারাজ  মায়ের  এসব আর্জি
বলে তোমায়  নাইটি দেব  আনছি ডেকে দর্জি ।
এর মাঝেতেই বস্ত্রহরণ  হয়ে গেল শুরু
পাড়ার দাদা বলে ওদের  'জলদি করনা গুরু।'

লজ্জা পেয়ে মাতা নিজেই  দিলেন জলে ঝাঁপ
ঝন্টু বলে সোনার শাড়ি  কেড়ে নিলাম বাপ।
মাদুগ্গার বস্ত্রহরণ করিয়া সম্পন্ন
পাড়ার দাদা বাড়ি ফিরলেন  কাজ আছে তার অন্য ।
                               ******




কবিতা--২

          ।। #অস্তরাগের_গান।।
                          ------#অভিজিৎ_দত্ত ।।

পূজামণ্ডপে আয়তনয়না নারীদের ভিড়
দেবী দুর্গার বন্দনাতে চলে শুদ্ধাচারের স্নান
মণ্ডপের পাশেই একটি বস্তি,
সেখানে আলো আঁধারির চিতায় পোড়ে
অস্তরাগের গান।  

মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে আজও
আর তার অপেক্ষার স্পন্দনে শোনা যায়
নাতিদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসের বিস্ফোরণ
কখন বা সময় হবে পাত পেড়ে খেতে বসার ?

সাড়ে চার কোটি টাকা চাঁদা উঠেছে মোট
জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে
কখনও বা নারীমুক্তির শ্লোগান শুনিয়ে।
কিছু যাবে মায়ের  ভোগে কিছু যাবে রাহা খরচা
দেবদেবী তথা প্রহরীকুলের
তাও বাঁচবে কোটি দেড়েক, আর এটা শুধু তাঁর সন্তানদলের।

তোমার দূর্গার পদতলে শোভে মহাভোগের পরমান্ন
আমার দুর্গা জ্বরেতে বেহুঁশ, জোটেনি ক্ষুধার অন্ন।
তোমার দুর্গা বরবর্ণিনী, বন্দিতা তিনি প্রতি ঘরে
আমার দুর্গা বারবিলাসিনী, পেটভাতা পায় গলির আঁধারে।

চাঁদ হাসতে হাসতে চলে যায় অস্তাচলের দিশায়
জোয়ারজলে একা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে
মদ্যপ নীল জ্যোৎস্না আর একরাশ ভয়।

যতক্ষণ না পোশাক টেনে হাঁটু ছাড়িয়ে গোড়ালি পৌঁছলো
যতক্ষণ না পুরুষের জন্য করলাম ব্রতের উপোস
যতক্ষণ না মানলাম আমরা নারী--  পুরুষের সেবাদাসী,
যতক্ষণ না অক্ষিকোটরে ঢাললাম গলিত সীসার মতো
একটুকরো ভয়।

                             ******



২টি মন্তব্য:

  1. ভাল লাগল । সাবলীল ও স্পষ্ট তুলির টানে অক্ষরে ফুটিয়ে তুলেছেন দৃশ্য কল্প ।

    উত্তরমুছুন
  2. ভাল লাগল । সাবলীল ও স্পষ্ট তুলির টানে অক্ষরে ফুটিয়ে তুলেছেন দৃশ্য কল্প ।

    উত্তরমুছুন