বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০

শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী # কবিতাগুচ্ছ #


১..# শব্দজাত #
----------------

শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী


ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ




পয়গম্বররা বহু আগেই পৌরাণিক শুদ্ধ গ্রন্থে আশ্রয় নিয়ে নিয়েছেন। এই সুযোগে ভুল-ভুলাইয়া অন্ধ অনুগতরা মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডাকে রক্তের রঙ্গে সাজাচ্ছে প্রতিদিন।
আর কোনও বলশেভিক মু্ভমেন্ট হবে না। মিলিয়ন মার্চ হবে না মার্টিন লুথার কিংয়ের পায়ে পায়ে। বব মার্লি গাইবে না আর ঝাঁঝালো র্য্যাগে। কোনও এক চে গুয়েভারার চুরুটের অগ্রভাগে জ্বলবে না বিপ্লব।
ভাঙ্গবে না বার্লিন প্রাচীর। প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জেগে উঠবে না তিয়েনমান ও তাহিরি স্কয়ার কিংবা অপরাজিত বাংলা মিছিলে মিছিলে।
উন্মাদ,ভাঁড় আর রক্তলিপ্সু দু পেয়ে দানবেরা ক্রমাগত দখল করে নিচ্ছে মানুষের অস্তিত্বকে। গিলে নিচ্ছে মানুষের বাক, শেখাচ্ছে মৌনতা।  গিলে নিচ্ছে বন-বাদাড়, নদী-জল, মৃত্তিকা এমনকি মেঘ ও আকাশ!
আর ওই যে আমরা আম বলি না যাদের সেইসব মানুষ আরোও ক্রমেই কেঁচো হবে, প্যারাসাইট হবে মানুষ। মেরুদন্ড লোপ পাবে বিবর্তনবাদে।
আমরা ভাববাদীরা ভেবে নেবো আমাদের অপারগতায় প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে করোনা ভাইরাসে। তাই যদি হয় তবে তাই হোক অবলীলায়!...

তারপর কোনও এক আগামীতে শিশুরা সহপাঠ বইয়ে একটা ননসেন্স রাইম পড়বে-
''সৈনিকের হুলে ছিল ঘুম পাড়ানিয়া
অদৃষ্ট কিনেছিল রাজা উৎপাতে,
বিপ্লব গল্পটা শুনেছি ভুলের মাশুল
বিক্রি হয়েছে কোন এক কালোরাতে!''
(দহন)
---------------------------------------------------------------



২..# শব্দজাত #

----------------

শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী



ইদানিং আমি প্রায়শ্চিত্তের ঢেকুর তুলছি-

ফিরে আসা দোয়েল-শালিকের বিচ্যুত পালকে,

ঈষৎ নীলের আঁচড় বেড়ে যাওয়া আকাশের দিকে চেয়ে।

ঘরের কোণে মাকড়সার জাল ঝেড়ে-মুছে

জানান দিচ্ছি আমার ভৌত গাহর্স্থ্য,

বারবার বার্নিশ করছি ধোয়া হাত

শিশুসুলভ প্রিয় স্কেচে রাবার ঘষার ভুল মুসাবিদায়।

ইদানিং আমি জোরপূর্বক আস্তিকতার সঙ্কট জানান নিচ্ছি-

ফেলে রাখা জায়নামাজের পরিপাটি বেশভূষায়,

ধুলোর আস্তরণ মুছে মধ্যযুগের পবিত্র গ্রন্থের অবুঝ আবৃত্তিতে!

হিমবাহ গলা পৌরাণিক অভিশাপের বাষ্পীয় আদলে,

লাল-নীল নির্বাসনে কিংবা অমল-ধবল স্বেচ্ছা কারগারে;

জানি ইদানিং আপনিও ভালো নেই মোটেও।

ভেকধারী হয়েছেন আমার মতোই!

বেঁচে থাকার শর্ত ও সময়সীমা পেরোলেই-

ফের মুখোশ পুড়াবেন কড়াত কাটা গাছের আঁচে,

পবিত্র হবেন সাগর জলে পেট্রল ছিটিয়ে!

--------------------------------------------------------------


৩..# শব্দজাত #
---------------
শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী


⏩⏩

বিলুপ্ত পেঁচারা হঠাৎ ভুতুড়ে ডাক দেয়।
ইট-পাথরের আড়ালে পালায় বিস্মৃত শহুরে শেয়ালের দল। ল্যাম্পপোষ্টের ছায়ায় প্রচ্ছায়ারা দল পাকায়!
তারপর...
বৃহন্নলা পোকা গুনগুনিয়ে শুধায় -
'ভালোবাসা কিনবি কী না বল?'
পতিতার কন্ঠে নেই শীৎকার,
নেই কোনও পিচ্ছিল মনোবল।
(দহন)


⏩⏩

আমি পোড়ার গন্ধ পাই।
হৃদয়ে আউরানো কবিতা পোড়ার ঘ্রাণ।
সে কি এসব টের পায়?
যে গোলাপজলে মিশিয়ে বিকোয়
আমার কবিতা, প্রেয়সীর অপারগতা,
অগুণতি মানুষের মুখ
কিংবা মানচিত্রের অকপটতা।
ছাইভস্মের সুবাসে তোমাকে তাড়াবো হে গন্ধবণিক!
(দ্রোহ)


।।শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী #শর্টকাট#..."সংক্রমণ"।।


#শর্টকাট#
--------------
📌 সংক্রমণ 📌
------------------------


শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী



তসলিম হাঁপাচ্ছে।
মেয়েটার উত্তাল নগ্ন বুক জোড়ার উপর মাথা রেখে এখন জিরিয়ে নিচ্ছে সে।
তার সারা শরীর ঘর্মাক্ত। রমণক্লান্তিতে আর অবর্ণনীয় শরীরি আনন্দের রেশে তার চোখ দুটো বুজে এসেছে।
রাস্তার এক বারবনিতা এত শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারে আর এতটা সুখ দিতে পারে সেটা তার কল্পনাতেও ছিল না। আর মেয়েটা সাড়াও দিয়েছে দুরন্ত উন্মাদনায়। ঘরের বউও এতটা সক্রিয় হয় না!
তসলিম পেশায় ট্রাক চালক। এই জীবনে ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে কম মেয়ে মানুষের শরীর তো আর চাখা হয়নি তার। কিন্তু আজকের এই মেয়েটার মতো সে খুব কমই পেয়েছে।
মেয়েটার সাথে তার দেখা আজ রাকে মনতলা ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বে। ট্রাক থামিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে দাঁড়িয়েই মেয়েটাকে দেখে সে। সস্তা মেকআপের উগ্র সাজ সজ্জাতেই যা বুঝার বুঝে নেয় সে।
রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের ফ্যাকাশে আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো মেয়েটাকে। সস্তা লাল শাড়িতে ঢাকা যাচ্ছিল না প্রকটভাবে ফুটে উঠা মেয়েটার শরীরের উন্মাতাল চড়াই-উতরাই। একটা পতিতার দেহ গঠন সিনেমার নায়িকাদের মতো এতটা নিখুঁত হতে পারে তসলিম না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতো না।
সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল মেয়েটার গায়ের রং। কেমন যেন লালচে ভাব। আগুনের আঁচে পোড়া লাল মাংসের মতো! লাল শাড়ী আর লালচে গায়ের রং এ রাতের আলো-আঁধারিতে যেন এই মেয়ে তার অপুর্ব মুখশ্রী আর দেহ গঠনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
মেয়েটাকে ইশারা করতেই সে কাছে এসেছিল। টাকা-পয়সা নিয়ে বনিবনা হতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। মাল খালি করে ফেরার পথ বলে হেলপার ছেলেটাকে আগেই নামিয়ে দিয়েছিল। মেয়েটাকে তার পাশের সিটে বসিয়ে ট্রাক নিয়ে রওনা হয়েছিল তসলিম। একটু নির্জন রাস্তা পেতেই ড্রাইভিং সিটের উপরেই সঙ্গমে লিপ্ত হয় তসলিম।
এখন তসলিমের রমণক্লান্ত শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেয়েটি। চোখ বুজে চূড়ান্ত সুখের আনন্দটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে। মেয়েটার শরীর অস্বাভাবিক রকম উত্তপ্ত। ভেতর-বাহির দুটোতেই যেন উনুনের আঁচ। একজন বাজারে মেয়েকে শারীরিক সম্পর্কের গৌণ সময়টায় এতটা উত্তপ্ত করতে পেরেছে ভেবে তসলিমের আত্মতৃপ্তি আরো ও বেড়ে গেল।
তবে মেয়েটার একটি অস্বস্তিকর বিষয়ও রয়েছে। সেটা হলো তার গায়ের ঘ্রাণ। কেমন যেন মাটি পোড়া তীব্র একটা ভাব। কাঁচা ইট পোড়া গন্ধের মতো।
একজন বেশ্যার কাছে যতটুকু পেয়েছে সেটাই তো তসলিমের চিন্তার বাইরে। গায়ের ঘ্রাণের বিষয়টা বিবেচনার কী দরকার? বাড়িতে ফিরে সাবান দিয়ে ডলে ডলে গোসল তো এমনিতেই করতে হবে! মনে মনে ভাবলো তসলিম।
মেয়েটার শরীর থেকে উঠতে উঠতে তসলিম জিজ্ঞেস করলো - 'কিগো লাল সুন্দরী তোমার নামটাই তো জানলাম না। কী নাম তোমার সই?'
আধশোয়া মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। চাপাস্বরে বললো- 'ফুলি। চামড়ার রংয়ের লাইগ্যা নানী ছোটবেলায় ডাকতো আগুন ফুলি!'


সেদিন ভোর রাত।
নিজের ঘরে ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর এক স্বপ্ন দেখলো তসলিম। আগুন ফুলি নামের মেয়েটার সাথে কোন এক নদীর ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। মেয়েটার শরীরের লাল রং এর শাড়ি তে হঠাৎ কোথা থেকে যেন আগুন ধরে গেল। তসলিম তা নেভাতে চেষ্টা করতে গিয়ে তার শরীরেও আগুন ধরে গেছে।
তীব্র যন্ত্রণা আর দুঃস্বপ্নের ভয়াবহতায় ধড়মড়িয়ে জেগে উঠলো তসলিম। ওর সারাটা শরীরে এক ধরনের জ্বালাপোড়া। কোন মতে ঘরের লাইট জ্বালালো সে। নিজের শরীরের দিকে চেয়ে অাতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া পোড়া ফোস্কা উঠা ঘায়ে ছেয়ে গেছে।
তসলিম তখনো জানে না এই দুঃস্বপ্নটা প্রায়ই দেখবে সে। আর ফোস্কা পড়া পোড়া ঘা আরোও বাড়তে থাকবে। যার সংক্রমণ তাকে মৃত্যু অবধি নিয়ে যাবে।


অন্য আরেক রাত। অন্য আরেক শহর।
পুলিশ হাবিলদার মোজাম্মেল প্রচন্ড রমণতৃপ্তি নিয়ে শুয়ে আছে মেয়েটার ভরাট বুক জোড়ার উপর।
পৌর পার্কের পাশের নদীতে একটা নৌকার ভেতর এই নিষিদ্ধ অভিসারে মেয়েটার সাথে মিলিত হয়েছে সে। অসাধারণ দেহ সৌন্দর্যের অধিকারী বাজারে মেয়েটা তাকে দিয়েছে এক অনাবিল শারীরিক তৃপ্তি।
মেয়েটার শরীরটা আসলেই অদ্ভুত। অকল্পনীয় ফর্সা। ফ্যাকাসে বরফ শুভ্র দুধে আলতার মতো গায়ের চামড়ার রং। শরীরটা যেন বার্নিশ করা মোম গলা পিচ্ছিল। এত মসৃণ আর মিহি ত্বক মানুষের হয় ? গোটা শরীরটা যেন বৃষ্টির ফোঁটার জমাট হিমের মতো। তবে গায়ের ঘ্রাণটা কেমন যেন আঁশটে আঁশটে। ফ্রিজে রাখা মাংসের মতো!
মেয়েটার শরীরের সাদা রংয়ের শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের মুখের ঘাম মুছলো মোজাম্মেল। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো- 'কী রে সাদা পক্ষী তোর নামটাতো কইলি না?'
মোজাম্মেলের শরীরের নীচে খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটা। জড়ানো কন্ঠের মাদকতায় অস্ফুটে বললো - 'নাম ফুলি। ছোটবেলায় শইল্যের রংয়ের লাইগ্যা নানী ডাকতো বরফ ফুলি!'
----------------------------------------------------------

বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০

লক্ষ্মীকান্ত মন্ডল: প্রতীক্ষার অভ্যাস


নেতিবাচক প্রতীক্ষার অভ্যাস

লক্ষ্মীকান্ত মন্ডল



আগুন ধরতে সময় লাগল কয়েক মুহূর্ত । তারপর আর কিচ্ছু দেখা যায় না । শুধু আগুনের দাউ দাউ শিখা । আমরা যারা বারো বোঝা কাঠ মাথায় বয়ে নিয়ে এসেছি তারা অপেক্ষা করছি প্রিয় মানুষটির মৃতদেহটি পুড়ে যাবার ।  তাঁর শরীর টাকে ছাই করে দিতে কত না আয়োজন  ।  বাতাস দিচ্ছে খুব  -গরম বাতাস  - কিছু লোকের চোখের তলায়  জলের চকচকে দাগ ।  তার সাথে টিপটিপ বৃষ্টি । ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে চেতনার লোম ।  মানুষ এমন একটা প্রাণী যে আগুন জ্বালানোর ভেতর দিয়ে সভ্যতার সূচনা করেছে । আগুনের ওপর তার দখলদারি তে সে আত্মশ্লাঘা বোধ করে । কিন্তু পারে কই ?


ভোলা বলল - এত তাড়াতাড়ি পুড়ে যাচ্ছে কেন ? একজন ঈশ্বর যদি থাকতো  - তাকে খুব ভালোবাসতাম ।
শ্মশানযাত্রী আমরা । এসময় আমাদের ক্ষুধা নেই ,  তৃষ্ণা নেই , ভালোবাসাও নেই ।  শুধু জিজ্ঞাসা কাজ করছে  ।  কেন আমরা মরে যাই ,  কেন আমরা বেঁচে থাকি আর কেনই বা জন্মাই এ ভুবনে ?
উত্তর দেওয়ার দায় নেই আগুনের ।  দুমড়ে মুচড়ে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা শিরদাঁড়াকে সে শুধুই পোড়ায় । ছাই করে দেয় ।


ভাবনাটাকে দীর্ঘ করার জন্য  ' ভুবন ' শব্দের বানান ' ভূবণ ' লিখে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ ।  চোখে দেখি, কানে দেখি, ত্বকে দেখি, নাকেও দেখি । সব মিলিয়ে মিশিয়ে ঠাকুর্দার চোখ । কিন্তু ভেতরে এক অব্যক্ত বোধ জন্মায় । তা মোটেই চিত্রকল্প নয় । অথচ একটি প্রেমের কবিতা লিখতে চেয়েছি আজীবন ।  হচ্ছে না হচ্ছে না কিছুতেই  -


হে বিশ্বরূপ , আমি আপনাকে বহু বাহু,  বহু উদর , বহু মুখ ও অনেক নয়ন বিশিষ্ট দেখিতেছি বটে,  কিন্তু আপনার অন্ত মধ্য অথবা আদি কিছুই দেখিতে পাইতেছি না ।


এর পরেই  নিসর্গ শব্দটা আসে । ঝিঁঝিঁডাক বাড়তে থাকে ।  তখন শুধু নীল কিংবা সবুজ মেটাফোর  - সবুজ রঙের গাছ - ধূসর রঙের আলো , নীল আকাশ ঈষৎ ঝুঁকে ছুঁয়ে থাকে নীল জল । শেয়াল দরজার জুতো নিয়ে  পালায় , শকুনেরা ভেজা গামছায় ঠোঁট মুছে , গাছের ডালে কুচকুচে কালো কাকের ডাক তো আছেই  - কিন্তু জল কাদায় ভুলে যাই গ্রিন হাউস ইফেক্ট ।

বিমলদা গুম হয়ে বসে থাকে ।  হঠাৎ চোখ মেলে বলে - আচ্ছা রাজলক্ষ্মীর সাথে ইন্দ্রনাথের আলাপ নেই কেন ?


কিছুদিন পাউরুটি প্রিয় পিঁপড়েরা মুড়ির গন্ধ পাচ্ছিল না । তারা সাপ খেতে শুরু করেছিল। সাথে আরশোলা ব্যাঙ প্রভৃতি । ফলস্বরূপ  বেড়েছে সাইক্রিয়াটিস্ট । সে কারণেই  কিছুই মনে করতে পারছে না । না নদীর নাম, না ফুলের রং । কেবল এক বিবর্ণ ছত্রাকে ঢেকে যাচ্ছে শরীর।  বুকে সবুজ রঙের ট্যাটু । আহা কী ব্যঞ্জনা !  মানুষ নির্মিত সৌন্দর্যই তাঁর আরাধ্য বিষয় , প্রকৃতি নয়। প্রিয়ার সুন্দর মুখের ভেতর কুৎসিত কঙ্কালের উপস্থিতিও তিনি দেখে নিচ্ছেন। বুদ্ধির কোমল কেন্দ্রে তিনি মাখছেন মেধার লোশন । নক্ষত্ররা হাসছেন মিটমিট ।

রাস্তায় চলাচল বাড়ছে । উপেক্ষা করছি পড়ার ঘর । ধ্যানস্থ বুদ্ধকে সর্বভুক উইপোকা কুরে খায় । বেরিয়ে পড়ে ফাটলের জ্যামিতিক চিত্র ।  হাঁফ ধরে বাতাসের । এটাই সুনিশ্চিত।

জ্বর আসে । জ্বর বলি না আর  - বলি গায়ের তাপ । সহ্য করছি পার্থেনিয়ামের সংক্রমণ ।  ঘনঘোর অন্ধকার সহ্য করতে শিখে যাচ্ছি ।  শিখে যাচ্ছি হাড়ের ক্ষয়  - পক্ষাঘাত ।

কবি নিতাই মাইতির কবিতা পড়ছি  - ' কেউ কাউকে বুঝে উঠতে পারিনি  / রাস্তার দুপাশে দু' জন / শতাব্দী সেরা বট ও অশ্বত্থ  '।



অঞ্জন ঘোষ রায়: মৃত্যুর প্রহর


Editorial Note,,,

সুপ্রীতি বর্মন,,,,,


Picture illustration,,,,

অঞ্জন ঘোষ রায়,,,,,

((Selected from Chandramukhi Facebook Group))



শৈল্পিক মুহূর্ত খুব বেশী অমূল্য পোড়ামাটি হিরন্ময় জ্যোৎস্না
শিল্পী নতমুখে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরতে চায় মৃত্যু ভাস্কর্যলতা


"Indesensible desire to be phenomenal
Supreme reach beyond infinity
But an ordinary man somehow completely becomes a neglegible quantity,,,,
so small in front of death that the Supreme power wants to make u slave to dominate"


শিল্পী শুনতে পায় পুনশ্চঃ পুনর্জন্ম কর্মকীর্তির সর্বনাশা আত্মরতির ক্ষয়
কাকের ক্ষুধায় উজার করা মাংস কিংবা হাড় তখন সন্ত্রাসী কঠোর চিবুকের আড়াল করা মুখোশ সংক্রামিত হবার ভয়
বৈদুর্যমণি তে শঙ্খচূড় মৃত্যু শুভ্র কাফন নিয়ে জড়িয়ে থাকে ফণা তুলে আষ্টেপৃষ্ঠে
বোধের মগডালে তখন শুধু ঊষর মরুতে চাগাড় দিয়ে ওঠে
তোমার আত্মামণিবন্ধের ঘোলাটে চাঁদ
ললাটে প্রোথিত ছড়ানো সোহাগ আত্মজনের ক্রন্দন
গোবরজলে অন্তিম চৌকাঠে প্রক্ষালন
অবগাহনে তখন আত্মস্থ ক্ষুধা চীৎকার করে
কেমন যেন এক গোঙানি কাছছাড়া নিঃসঙ্গ শূন্যতায়
বলাকা তখন সরু ঠ্যাঙে অতীতের খাদ তৈরী করে মহাপ্রয়াণের প্রস্থানে
বলে উঠে শঙ্খচিল শিল্পী তোর সাথে শুধুই দোসর তোর ঘটানো শিল্পরমণসঙ্গতি
বাকি সব থেকে যাবে অবশেষ বারবেলা সত্যের অহর্নিশি খোঁজ তোর পদাঙ্ক করবে অনুসরণ
অথচ কায়াকল্প তখন অতীতের দেহদাহশিলা
তাই শুনতে যত‌ই পাস মৃত্যুর প্রহর
দেখতে থাকিস নত মুখে অবহেলায় মরণ
তবুও মৃত্যুর প্রহরে তোর তো নৈঃশব্দ্যের সলতে পাকানো অমরত্বের শিখা সঙ্গেই আছে
তুই তো জ্বলতেই থাকবি চির জাজ্বল্যমান ক্ষুধার্ত রবি,,,,,
ক্ষণ ক্ষণ হবে তোর কারণ সুধায় পুনর্জন্ম,,,,



বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

শিহরণ: রোনক ব্যানার্জি


////শিহরণ////
 ————————

((অজ্ঞাতবাসে অদৃষ্টের শিহরণে অপরাহ্ন এ খান্ডবদহনের ব্যর্থ চিৎকারে গৃহস্থের শ্রী হরণ করে নিয়ে গেছে মর্গের খোলা দরজায় অপেক্ষা রত মৃত্যু))



রোনক ব্যানার্জী



একটি ঘন বনে অসংখ্য গাছ,মর্মর পাতার ক্যাকোফোনি
দুটো গাছের স্পর্শে আগুনের শিহরণ,
ছায়াহীন একটি দুপুরে নিঃসঙ্গ হেঁটে গেছে সারস।


পাশের ফ্ল্যাটে  ধামসা-মাদল বাজছে,
বিচ্ছিন্ন কাচের টুকরো, গরম মশলার প্যাকেট থেকে বেরিয়ে আসছে বাৎসল্য ও কুমারীত্ব;
একটি কলোকিয়্যাল মৃত্যু,
স্বার্থান্বেষী কাক আগে থেকে মর্গের দরজা খুলে রেখেছে।


শিহরিত জলাশয়, একটি সাঁতারু ও মৎসকন্যার অবৈধ প্রেম
সেফটি ল্যাম্প নিয়ে আমরা 'কুরুক্ষেত্রে' রাত কাটাচ্ছি!
তানপুরায় 'ভীমপলশ্রী' র আরোহণ চলছে,
মনে পড়ছে 'খান্ডবদহনের' ব্যর্থ চিৎকার।


অপরাহ্নে একটিও পাখি উড়ে যায়নি,
শাঁখ বাজেনি তুলসীমঞ্চে,
একটি তাঁবুতে হাসনুহানার পাশে শুয়ে আছি,
এক ভীষণ জেদি সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢুকে গেছে আশাব্যঞ্জক স্থপতি,
আসমানি মুদ্রা অদৃষ্টের শিহরণে উল্টে তালুতে পড়ছে,
বন্ধ কলের মুখ থেকে জলের শেষ ফোঁটার অপেক্ষায় আছে মাটি,
নিজেকে রোমাঞ্চিত আলোড়িত করার তাগিদে 'শ্রী' কে হরণ করে নিয়ে গেছেন শিল্পী ও আগ্নেয় শিলা।

               
          

যেভাবে সন্ধ্যা আসে: রোনক ব্যানার্জি



///যেভাবে সন্ধ্যা আসে///
  —————————————

((অজ্ঞাতবাসের গুমোট সন্ধ্যা শঙ্খযন্ত্রণা গৃহস্থের অস্তগামী একটি দিনের প্রয়াণ,,,,
 আগামীর দিকে জড় পদার্থের যাত্রা))


রোনক ব্যানার্জী



বিষণ্ণ পথ অবসাদের ঘড়ি ভেঙে এসেছো সনাতন,
দুয়ারে দাঁড়িয়ে চিরন্তন কালবেলা, পার্থক্যসূচক সাঁঝবাতি;
স্থবির দীর্ঘ সূর্যাস্ত বাইনোকুলারের কাঁচের মতো দৃশ্যমান,স্ফটিক জলে
চিঁড় ধরা কাঁচের মতো নীলিমায় ক্ষতচিহ্ন,বিদ্যুৎলেখার দাপট,অভব্য অভিব্যক্তি।


ছাপোষা আঁধার নামে গেরস্থের বুকে,দিকবিদিক সমুদ্রগর্জন,
একরোখা পায়চারি,বিশ্বস্ত গুমর ভাঙে ছিনির শব্দে;
কারা যেন ফিরে ফিরে যায় নিরাপদ দূরত্বে, অস্পৃশ্য ছাঁচ
পিছনে ফিরে তাকালেই উধাও,ভূত প্রেত নাকি জাদুকর।


কার্নিশে কার্নিশে বাড়ি-ঘর দিয়ে উঁকি দেয় নির্মোক ছায়ামূর্তি
বাদামি ঘুম,ইমন বেহাগের টপ্পা ঠুংরি শুনতে অভ্যস্ত
নারকেল গাছের মাথার ওপর নোলকের মতো ধ্রুবতারা
দূরে অরণ্যে প্রলাপ বকে যায়, তারকাখচিত সোহাগি উঠোন।


সন্ধ্যারতি হয়, শাঁখ বাজে তুলসীতলায়, কিছুটা আনন্দের সময়
কূপমন্ডূকতা ছেড়ে জেগে ওঠে নিশাচর,মায়া প্রপঞ্চময়
তালগাছ সুপুরিগাছের শলা পরামর্শ,ছাদে স্বর্গবাতি,
পূর্বপুরুষের ঘ্রাণ নেমে আসে শরীরের ভাঁজে, ঝুমঝুমি বাজে।


খেলনার দোষ নেই, সময়ের দোষ, ভ্রূক্ষেপ নেই,
উত্থান থালা, যেভাবে সন্ধ্যা আসে, নাবিকের মতো,
সুবাসের মতো,ভেসে ভেসে,কন্যার মতো,চৌকাঠ ললাটে।