বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০

।।শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী #শর্টকাট#..."সংক্রমণ"।।


#শর্টকাট#
--------------
📌 সংক্রমণ 📌
------------------------


শাহরিয়ার সোহেল চৌধুরী



তসলিম হাঁপাচ্ছে।
মেয়েটার উত্তাল নগ্ন বুক জোড়ার উপর মাথা রেখে এখন জিরিয়ে নিচ্ছে সে।
তার সারা শরীর ঘর্মাক্ত। রমণক্লান্তিতে আর অবর্ণনীয় শরীরি আনন্দের রেশে তার চোখ দুটো বুজে এসেছে।
রাস্তার এক বারবনিতা এত শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারে আর এতটা সুখ দিতে পারে সেটা তার কল্পনাতেও ছিল না। আর মেয়েটা সাড়াও দিয়েছে দুরন্ত উন্মাদনায়। ঘরের বউও এতটা সক্রিয় হয় না!
তসলিম পেশায় ট্রাক চালক। এই জীবনে ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে কম মেয়ে মানুষের শরীর তো আর চাখা হয়নি তার। কিন্তু আজকের এই মেয়েটার মতো সে খুব কমই পেয়েছে।
মেয়েটার সাথে তার দেখা আজ রাকে মনতলা ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বে। ট্রাক থামিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে দাঁড়িয়েই মেয়েটাকে দেখে সে। সস্তা মেকআপের উগ্র সাজ সজ্জাতেই যা বুঝার বুঝে নেয় সে।
রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের ফ্যাকাশে আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো মেয়েটাকে। সস্তা লাল শাড়িতে ঢাকা যাচ্ছিল না প্রকটভাবে ফুটে উঠা মেয়েটার শরীরের উন্মাতাল চড়াই-উতরাই। একটা পতিতার দেহ গঠন সিনেমার নায়িকাদের মতো এতটা নিখুঁত হতে পারে তসলিম না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতো না।
সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল মেয়েটার গায়ের রং। কেমন যেন লালচে ভাব। আগুনের আঁচে পোড়া লাল মাংসের মতো! লাল শাড়ী আর লালচে গায়ের রং এ রাতের আলো-আঁধারিতে যেন এই মেয়ে তার অপুর্ব মুখশ্রী আর দেহ গঠনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
মেয়েটাকে ইশারা করতেই সে কাছে এসেছিল। টাকা-পয়সা নিয়ে বনিবনা হতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। মাল খালি করে ফেরার পথ বলে হেলপার ছেলেটাকে আগেই নামিয়ে দিয়েছিল। মেয়েটাকে তার পাশের সিটে বসিয়ে ট্রাক নিয়ে রওনা হয়েছিল তসলিম। একটু নির্জন রাস্তা পেতেই ড্রাইভিং সিটের উপরেই সঙ্গমে লিপ্ত হয় তসলিম।
এখন তসলিমের রমণক্লান্ত শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেয়েটি। চোখ বুজে চূড়ান্ত সুখের আনন্দটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে। মেয়েটার শরীর অস্বাভাবিক রকম উত্তপ্ত। ভেতর-বাহির দুটোতেই যেন উনুনের আঁচ। একজন বাজারে মেয়েকে শারীরিক সম্পর্কের গৌণ সময়টায় এতটা উত্তপ্ত করতে পেরেছে ভেবে তসলিমের আত্মতৃপ্তি আরো ও বেড়ে গেল।
তবে মেয়েটার একটি অস্বস্তিকর বিষয়ও রয়েছে। সেটা হলো তার গায়ের ঘ্রাণ। কেমন যেন মাটি পোড়া তীব্র একটা ভাব। কাঁচা ইট পোড়া গন্ধের মতো।
একজন বেশ্যার কাছে যতটুকু পেয়েছে সেটাই তো তসলিমের চিন্তার বাইরে। গায়ের ঘ্রাণের বিষয়টা বিবেচনার কী দরকার? বাড়িতে ফিরে সাবান দিয়ে ডলে ডলে গোসল তো এমনিতেই করতে হবে! মনে মনে ভাবলো তসলিম।
মেয়েটার শরীর থেকে উঠতে উঠতে তসলিম জিজ্ঞেস করলো - 'কিগো লাল সুন্দরী তোমার নামটাই তো জানলাম না। কী নাম তোমার সই?'
আধশোয়া মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। চাপাস্বরে বললো- 'ফুলি। চামড়ার রংয়ের লাইগ্যা নানী ছোটবেলায় ডাকতো আগুন ফুলি!'


সেদিন ভোর রাত।
নিজের ঘরে ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর এক স্বপ্ন দেখলো তসলিম। আগুন ফুলি নামের মেয়েটার সাথে কোন এক নদীর ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। মেয়েটার শরীরের লাল রং এর শাড়ি তে হঠাৎ কোথা থেকে যেন আগুন ধরে গেল। তসলিম তা নেভাতে চেষ্টা করতে গিয়ে তার শরীরেও আগুন ধরে গেছে।
তীব্র যন্ত্রণা আর দুঃস্বপ্নের ভয়াবহতায় ধড়মড়িয়ে জেগে উঠলো তসলিম। ওর সারাটা শরীরে এক ধরনের জ্বালাপোড়া। কোন মতে ঘরের লাইট জ্বালালো সে। নিজের শরীরের দিকে চেয়ে অাতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া পোড়া ফোস্কা উঠা ঘায়ে ছেয়ে গেছে।
তসলিম তখনো জানে না এই দুঃস্বপ্নটা প্রায়ই দেখবে সে। আর ফোস্কা পড়া পোড়া ঘা আরোও বাড়তে থাকবে। যার সংক্রমণ তাকে মৃত্যু অবধি নিয়ে যাবে।


অন্য আরেক রাত। অন্য আরেক শহর।
পুলিশ হাবিলদার মোজাম্মেল প্রচন্ড রমণতৃপ্তি নিয়ে শুয়ে আছে মেয়েটার ভরাট বুক জোড়ার উপর।
পৌর পার্কের পাশের নদীতে একটা নৌকার ভেতর এই নিষিদ্ধ অভিসারে মেয়েটার সাথে মিলিত হয়েছে সে। অসাধারণ দেহ সৌন্দর্যের অধিকারী বাজারে মেয়েটা তাকে দিয়েছে এক অনাবিল শারীরিক তৃপ্তি।
মেয়েটার শরীরটা আসলেই অদ্ভুত। অকল্পনীয় ফর্সা। ফ্যাকাসে বরফ শুভ্র দুধে আলতার মতো গায়ের চামড়ার রং। শরীরটা যেন বার্নিশ করা মোম গলা পিচ্ছিল। এত মসৃণ আর মিহি ত্বক মানুষের হয় ? গোটা শরীরটা যেন বৃষ্টির ফোঁটার জমাট হিমের মতো। তবে গায়ের ঘ্রাণটা কেমন যেন আঁশটে আঁশটে। ফ্রিজে রাখা মাংসের মতো!
মেয়েটার শরীরের সাদা রংয়ের শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের মুখের ঘাম মুছলো মোজাম্মেল। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো- 'কী রে সাদা পক্ষী তোর নামটাতো কইলি না?'
মোজাম্মেলের শরীরের নীচে খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটা। জড়ানো কন্ঠের মাদকতায় অস্ফুটে বললো - 'নাম ফুলি। ছোটবেলায় শইল্যের রংয়ের লাইগ্যা নানী ডাকতো বরফ ফুলি!'
----------------------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন