মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

স্বাধীনতা- ১৯



১. কবিতা: স্বাধীনতা

Amit Naskar

যেমনি খোলা দ্বার, সহস্র জোনাকির অভিসার,
স্বাধীনতারে বুকে নিয়ে, শুধু মরিবার!
দিন যায়, রাত যায়, চলে যায় সময়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, হায়! তারে খুঁজে নাই পায়!


দেখল সে চোখ মেলে, সেই অসীম আকাশ,
তারি বুকে লেখা কত, কত ইতিহাস।
তারি বুকে লেখা কত, কত মহা-মানুষের নাম,
তারি সাথে ভেসে গেল, কত স্বাধীনতার দাম।
ভেসে গেল কত রক্ত, কত কান্না, কত কত হাহাকার,
অনেক পথ ফুরাল, এখনও অনেক পথ ফুরাবার!
সব তারা নিভল, সব পাখি উড়ল, বাতাস ভরলো সেই দখিন্ হাওয়ায়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, হায়! তবু তারে খুঁজে নাই পায়!


দেখল সে হাজার মিছিল, হাজার মিটিং, কত প্রতিবাদের ঝড়,
তারি সাথে উড়ে গেল, কত! কত মানুষের ঘর।
উড়ল আকাশ জুড়ে, কত বিজয় পতাকা,
তারি সাথে কাটা গেল, কত মানুষের মাথা।
কাটা গেল কত বিবেক, কত মনুষ্যত্ব, আজও আছে ব্যাথা তার,
অনেক পথ ফুরাল, এখনও অনেক পথ ফুরাবার!
সব তারা নিভল, সব পাখি উড়ল, বাতাস ভরলো সেই দখিন্ হাওয়ায়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, হায়! তবু তারে খুঁজে নাই পায়!


দেখল সে চোখ মেলে, কত পদ্মমুখী চোখ,
তারি মাঝে লেগে থাকা, সেই পদ্মকাটাঁর শোক্।
উড়িয়ে তার আঁচলখানি, সে দেবী দশভূজা,
তারি সাথে লুন্ঠিত, তারি নারীর সত্ত্বা।
লুন্ঠিত কত লজ্জা, কত সজ্জা, কত কত অলংকার,
অনেক পথ ফুরাল, এখনও অনেক পথ ফুরাবার!
সব তারা নিভল, সব পাখি উড়ল, বাতাস ভরলো সেই দখিন্ হাওয়ায়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, হায়! তবু তারে খুঁজে নাই পায়!


দিন যায়, রাত যায়, চলে যায় সময়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, হায়! তারে খুঁজে নাই পায়!
তারে সে কোথায় খোঁজে, কোথায় সে পায়,
মনে মনে ভাবে তাই, সে বুঝি অসহায়।
মনে মনে ভাবে সে, নাই সে নাই,
বৃথা এই খুঁজে চলা, কোনও লাভ নাই।
দিন যায়, রাত যায়, চলে যায় সময়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, হায়! তবু তারে খুঁজে নাই পায়!!


হাজার পথ শেষে, এবার বন্ধ সে দ্বার,
স্বাধীনতারে বুকে নিয়ে, শুধু মরিবার!
যেমনি বন্ধ দ্বার, সহস্র জোনাকির অভিসার,
খুঁজে পেল, খুঁজে পেল, তারি সেই অলংকার।
বুকের মাঝে এতদিন, ছিল যে তার,
তাকে নিয়ে এইবার, শুধু মরিবার!
তারে সে ডাকে শুধু, আয় কাছে আয়,
বুকের মাঝে তবু, কেনও দূরে সরে যায়!
তারে সে পাবে, তাই সে তারি কাছে যায়,
নিজতার কোন বলে, তবু ঢাকা থেকে যায়।
নিজতার কোন জালে, সে দুরে সরে যায়,
নিজতার কোন বাঁধন, সে বাঁধা থেকে যায়।


যেমনি ভাঙা দ্বার, সহস্র জোনাকির অভিসার,
একদিন-একদিন, ছাড়াবে সে তার সকল পাড়।
আকাশ তখন ভরবে আবার, সেই আলোর ধারায়,
জীবন-মৃত্যুর কোনও খেলাই, বাকি রবে না আর।
মনের মাঝে নিজের-পরের, ছিঁড়বে সকল তার,
ছোট-বড়, উঁচু-নিচু, সব হবে একাকার।
সব তারা নিভবে, সব পাখি উড়বে, বাতাস ভরবে সেই দখিন্ হাওয়ায়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, সবই তার বুকের মাঝেই হায়!
সব তার ছিঁড়বে, সব বাঁধন খুলবে, হারাবে সে তার, নিজের অসীমতায়,
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল, স্বাধীনতা তার বুকের মাঝেই হায়!!!




২. কবিতা: আমি শুধু হাসি
Amit Naskar

অর্থ আমারে করেছে খুশি, আমি অর্থের গান গাই,
ভালোবাসা! সেতো হাসির কথা, আমি শুধু হাসি তাই।
অর্থের বলে আমি বিশ্ব ঘুরি, আমি দেখি অর্থের রুপ,
সন্ধ্যা-আরতি, আজানের গান, ভুলেছি হারানোর সুখ।
দুই শালিকে আর করেনা ঝগড়া, আমার বাড়ির ছাদে,
কখন আসে, কখন যে যায়, আমার হাসির ফাঁকে।
দমকা এই হাসির চোটে, নীরবতার বানী গুমরে কাঁদে,
মুগ্ধতা আর আসে না ফিরে, আমার এই হাসির মাঝে।
ও মেয়ে তোর আঁচল দেখে, মনে পড়ে না আর মায়ের কথা,
সোনা-রুপা দিয়ে তাই, এবার তোর মুর্তি গড়া।
ঐ মুর্তির অহং মেখে, আমি জ্বালাই তোকে, আর নিজেও আমি জ্বলি।
ও মেয়ে তোর রুপের অহং, হায়রে! কারে আমি বলি।
প্রেমের কথা যতই বলি, ইন্দ্রীয় ভোগে ততই মাতি,
ভালোবাসা, তারে হাটে কিনি, আর আমি শুধু হাসি।

অর্থ আমারে করেছে খুশি, আমি অর্থের গান গাই,
ভালোবাসা! সেত হাসির কথা, আমি শুধু হাসি তাই।


৩. কবিতা: উল্টোস্রোতে

Amit Naskar

বইছে রক্ত উল্টোস্রোতে, আসক্তিরই রঙে রেঙে,
বেচা-কেনায় মন মেতেছে, মনুষ্যত্বের এই বাজারে।
বিবেক-বুদ্ধি হল বেচা, ভালোবাসা এবার হল কেনা,
নারীত্বে আমার ঘূণ ধরেছে, যায় না আর তাকে চেনা।
ধর্ম এবার বলছে কথা, ব্যাকুলতার সব উর্ধ্বে উঠে,
সন্ধ্যা-আরতি, আজানের গান, পায় প্রতিষ্ঠা আমার আমিত্বে।
বাইবেল, কোরাণ, গীতার বানী, চলছে তারও দর কষাকষি।
ভক্তিমাখা চোখের পানি, হায়রে! তোরে আমি কোথায় বেচি?

বইছে রক্ত উল্টোস্রোতে, আসক্তিরই রঙে রেঙে,
বেচা-কেনায় মন মেতেছে, মনুষ্যত্বের এই বাজারে।





সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮

স্বাধীনতা- ১৮




স্বয়ংক্রিয় স্বাধীনচেতার মোড়কে এক নারী সত্ত্বা।

১. কবিতা: এবং একজন কবিতাগন্ধা নারী

মায়িশা তাসনিম ইসলাম


কেউ একবার বলুক, তুমি কবিতার মা

আমার একক শব্দ প্রসবিনী

ঝর্ণার মতো লিখতে লিখতে ভেঙে পড়বো পাথর-মরমে

দিনের নদীকে রাতের পরম সমুদ্রে একাই বয়ে নিয়ে যাবো।


কেউ বলুক, হে কবিতাগন্ধা নারী

তোমার বুকের গভীর খাদেই আমার মরণ!

সেই বুকের নামেই লিখে দিলাম সমস্ত জমির দলিল।

তখন নির্বিঘ্নেই হয়ে উঠবো মমতাময়ী মা, শব্দের রাঁধুনি!

ভাতের মত শব্দ মেখে মেখে খাইয়ে দিবো কবিতার সেই সন্তানকে।


কেউ যদি বলে, তুমিই কবি, আমার কবি...

যার শব্দের ভাঁজে ভাঁজে নিজের জন্য মারণাস্ত্র খুঁজি

আত্মহত্যা করে বেঁচে উঠি এক মসৃণ নরকে!

তবে তার জন্য অনন্তকাল ঝরাবো চোখের জমজম-অশ্রু

এই কবির কবিতার পাণ্ডুলিপিই হবে তার একমাত্র ধর্মগ্রন্থ।




২. কবিতা: হিপোক্রিট

মায়িশা তাসনিম ইসলাম


আমি তোমাকে কখনই প্রকাশ্যে চুমু খাবো না

এটা পাপ, বিশেষ করে সামাজিক পাপ

এবং নীতিবিরোধী আচরণ!!

আবার আমিই তোমার মত চুমু খাওয়ার দৃশ্যে বিচলিত হবোনা

ছি ছি করে উঠবো না।

তখন তুমি বলতেই পারো

"শালা আমার প্রেমিকা একটা হিপোক্রিট!"

আমি বলবো আমি আদর্শ বাঙালি নারী

এবং আমিই কবি।

দুজন যমজ হয়ে একই গর্ভে জন্ম নিলে তুমি শুধুই দেখবে আলোর মত অন্ধকার।

সেই অন্ধকারের নাম দিয়েছি মায়াবতী...

মায়াবতীর গর্ভেই জারজ সত্যেরা জন্ম নেয়।


স্বাধীনতা- ১৭



১. কবিতা: আমার কাছে স্বাধীনতা

জয়ন্তী কর্মকার।

______________________


স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

এক সিন্ধু মহাসাগর

স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

বাড়ির উঠোন দুব্বো ঘাস।


স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

মায়ের পুরোনো কাপড়

স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

ফুটপাতের থালা ভরতি বারোমাস।


স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

রক্তচক্ষু উপেক্ষা

স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

মায়ের কোল ভর্তি জুড়ে মেয়ে।


স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

ধর্ষকের শাস্তির অপেক্ষা

স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

আত্মসম্মান বড্ড দামী ঠুনকো প্রেমের চেয়ে।


স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

দু'মুঠো ধান আর তিল

স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

তীব্র প্রতিবাদ।


স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

ছোটোবেলার ঘুড়িতে আঁকা চিল

স্বাধীনতা মানে আমার কাছে

ভালোবাসা দিয়ে মিটে যাক সব বিবাদ।।




২. কবিতা: অলীক প্রদেশ

জয়ন্তী কর্মকার।
____________________

দুটো আঁকিবুকি আঁকি বরং

দুটো জলতরঙ্গ বয়ে যাক

দু'চোখের দুই  দৃষ্টিকোণ মাপুক

যে নদীর অন্তরাল পুড়ে খাক ।

দুটো চাঁদহীন আকাশ গড়ি

দুটো তারা হোক ধুমকেতু

একটা সূর্য খসে পড়ুক

যে গ্রাম ধ্বংস হয়েছে অন্ধকারের হেতু।

দুটো জলহীন ব-দ়্বীপ বানায়

দুটো মরুভূমি হোক সবুজ

একটা কাঠের প্রাসাদ হোক

যে প্রদেশে বন্দ়ুক -তলোয়ার সব বোবা

শুধু ভালোবাসা হবে অবুঝ॥

                           





স্বাধীনতা- ১৬



স্বাধীনতায়...

কৌশিক চক্রবর্ত্তী


কঙ্কাল থেকে মানুষ গড়ার চাষে

বাহাত্তরেও গৌরীদানের ভয়,

সতীদাহ নেই, তবু সতীত্বে বাজি

স্বাধীনতা ভেঙে ঘর নিয়ে সংশয়।


জমি নেই তাও বিপন্ন সমঝোতা

শহর এখনো গ্রামের মধ্যে বাড়ে

বারোয়ারী বিধি, জাতীয় উচ্চারণে

বরফ গলুক এদেশের কালচারে।


ঘোর কেটে গেলে অনুনয় পাংক্তেয়

গ্রহণযোগ্য বর্তমানের খেদ

স্বাধীনতা নয়, নেশা আছে সব মনে

সবে ধেয়ে গেছে অখিলেশ, মুর্শেদ-


প্রকাশিত মেঘ, অঘোষিত বৃষ্টিরা

শহীদ সাজতে অন্যধারায় ঝরে

মাটি ভিজে নেই, নেই আর সঙ্কোচ

বেশ ধরা যায় প্রগতির অন্দরে


ভিটেমাটি ছাড়ো, রাজা হও সস্তার

প্রাসাদ বিকিয়ে পাদুকা পূজন যথা

স্বপ্ন শিয়রে, ভেঙে গেলে রাজকোষ

নিলামে উঠবে গোপনীয় স্বাধীনতা।




স্বাধীনতা- ১৫



১. কবিতা: স্বাধীনতা দিবসে

            -বরুন কুমার আড়ী


এই দেশ আমার দেশ।

এই দেশ আমাদের দেশ।

এসো বন্ধু সবে মিলে ভোগী,

বিলিয়ে নিই স্বাধীনতার রেশ।


স্বাধীনতা দিবসে মরমের সুর আর

আক্ষেপের হুঙ্কার,ফুটছে ধানভাজা খইয়ের মতো,

সেই সকাল থেকে, বক্তৃতা হয়ে।

কখন থামবে কে জানে!

দুপুর দুটোয় মধ্যাহ্নভোজন।

সময় আর এগোতেই চায় না।

স্বাধীনতার স্ব- না বোঝা ওদের ধুলোমাখা

অভুক্ত শৈশব,আজ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে

১৫ই আগস্টে দুপুর দুটোর মধ্যাহ্নভোজনে।

আমাদের পাড়ার নবোদয় সংঘ‌ ক্লাবে।


অবশেষে প্রস্তুত ভাত মাছ ভরা টেবিল।

কিশোরির অপটু কাঁখ ছোটো ভাইকে নিয়ে,

ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার্ত হায়নার মতো।

হঠাৎ কি বিভৎস হাঁক ডাক।সেই আগের মতো।

মঞ্চে শক্ত শক্ত কথা বলা সেই ডাক। তখন কিছু বোঝেনি ওরা।

এখন ওরা শুধু বুঝলো,জামাপ্যান্ট পরা ভদ্দরলোক বসবে এখন।

অগত্যা আবার সেই পেট আঁকড়ে অপেক্ষা,আর শক্ত ভাষার পুনরাবৃত্তি।




২. কবিতা: জননীর যাতনায়

                   -বরুন কুমার আড়ী


কোথা যাও পথিকবর সঙ্গে লয়ে ঝুলি।

       দেখিয়া ভাবি যোগী তুমি

   লও এ যাতনা ধ্বনি।

       বিবর্নতার পোশাকে আমি

     অনগ্রসর কলি।


তুমি মাগো স্কন্ধমাতা

     এ ভারতের জননী।

পঙ্কিলসম তিক্ততায় আজ

    তোমার ললাটবরনী।

রক্ষিতে মা তোমায় আজি

       যাইবো অমরাবতী।

ধ্বংস করিব ইন্দ্রপুরী

        হইব শক্তিপতি।

দেখিব কে দেয় বাধা

   কে ধ্বংসে,এ আরতি।


পুত্র তুমি,হে যোগী

   ধ্বংসিও না কিছু।

তোমা সম সন্তান হোক

   থাকুক ধরনীর পিছু।


আমার মাতা ধ্বংস যেথা,

        সেথায় ইন্দ্রপুরী !

বিলাসপুরীই সে তো শুধু,

তোমার অনিষ্টকারী।

ক্রুদ্ধ চোখে নামেনি সে

        বজ্র সঞ্চারী।

ক্রুদ্ধ আমি ধ্বংসিব সব

       সকল অনিষ্টকারী।

আশীর্বাদ হে মাতঃ

       হই সফলকামী।




স্বাধীনতা- ১৪



স্বাধীনতার মানে


শুভ্রাশ্রী মাইতি।


স্বাধীনতার মানে কি?


চৌমাথার মোড়ের প্লাস্টিকের তেরঙ্গা পতাকা বিক্রি করা ছেলেটাকে প্রশ্ন কর।

পিচুটি চোখের একমুখ হলুদমাখা হাসি বলবে----

ই আর বলতি হয়! দুটা বেশি পয়সা গো বাবু...আর কিছু নয়!

যা দিয়া ইকটা রুটি বেশি কিনা যায়...

পেটের উনানটার আগুন কিছুতেই নিভতে চায় নি যে!


যদি প্রশ্ন কর মাংস দোকানের ফাই-ফরমাশ খাটা বাচ্চা ছেলেটাকে

রক্তমাখা ছুরিটা ছাল ছাড়ানো মুরগীর শরীরে বসাতে বসাতে বলবে---

দোকানের বেশি বিক্রি ছাড়া আবার কি?

একটা গোটা ছুটির দিন বলি কথা---মদ-মাংস ছাড়া আয়েস হয়!

জান,আজ মুইও খাব মা-বোনের সাথে--একথালা গরম ভাত আর বাতিল ছাঁটকাটের মাংসের ঝোল।


আদালতে ছেলের বিরূদ্ধে বিচার চাইতে আসা আশির নুয়ে পড়া বৃদ্ধাকে প্রশ্ন কর।

শুকনো চোখের জল মুছে বলবে---

লাথি-ঝাঁটা না খেয়ে আর কটা দিন যেন শান্তিতে কাটাতে পারি।


যদি প্রশ্ন কর অন্ধকার গলিতে দাঁড়ানো রং মাখা সূর্যাস্তের যৌবনকে--

কোমর দুলিয়ে চোখের ইশারায় বলবে---

আজ বাবুরা দিলখোলা গো!

হাতে দুটো পয়সা জমলে কোলের মেয়াটারে পড়ালিখা শিখাবো।


এভাবেই প্রতি বছর আসে স্বাধীনতা দিবস।

যেমন আসছে একাত্তরটা বছর ধরে---

বিপ্লবীদের মিছিল,পিস্তল,হাতবোমা আর ফাঁসির দড়ির রক্তভেজা মানচিত্রের

টুকরো টুকরো সীমায় আজও দাগা বুলিয়ে চলে

ভিটেছাড়া আব্দুল মাঝি,ছিনাথ বহুরূপী আর দুলে বাগদীর বউটা।

বয়স বাড়তে বাড়তে তিন কুড়ি ছাড়িয়ে যায়--এখনও খুঁজে চলে নিজের দ্যাশ,নিজের মাটি।


দেশ ভাঙে আর গড়ে----

স্বাধীনতার মানে শুধু পাল্টে পাল্টে যায়।



স্বাধীনতা- ১৩



কিছুটা স্বাধীনতার জন্য

---------------মৈনাক চক্রবর্ত্তী

আরো কিছুটা স্বাধীনতা পাবে বলে,
সীমান্তের কাঁটাতার ধরে-
হেঁটেছে মানুষ মুক্তির আনন্দে।
একদিন এই মাটিতে ঝরেছিল
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, ঘাম, ছিন্ন অঙ্গ;
সান্ত্বনা ছিল মনে, দেশ স্বাধীন হবে.....
লৌকিক লোকাচারে স্বাধীন হয়েছে দেশ!
কিন্তু,
তার প্রতি ধূলিকণায় পরাধীনতার বিদ্বেষ।

আরো কিছুটা স্বাধীনতা পাবে বলে,
ডানা মেলে আকাশে ওড়ে
নিষ্পাপ শৈশব।
তবুও তাকে বাঁধা হয়
অক্ষরমালার লম্বা শিকলে-
পরাধীন হয় শৈশব।

আরো কিছুটা স্বাধীনতা পাবে বলে,
এক নারী স্বপ্ন দেখে,
এক প্রগতিশীল সমাজের।
তবুও স্বাধীন দেশের প্রতি প্রান্তে
শোনা যায় চিৎকার.......
নারীদের স্বাধীন করার জন্য......

আরো কিছুটা স্বাধীনতা পাবে বলে,
গরজে ওঠে প্রতিবাদ।
দৃঢ় হয় লেখনীর কলম।
তার বদলে সে পায়, দেশদ্রোহীর তকমা.....
লুন্ঠিত হয় স্বাধীনতা।

আরো কিছুটা স্বাধীনতা পাবে বলে,
অন্ধ গলির মোড় ছেড়ে-
ছুটে পালাতে চায়, অসহায় নারী সত্ত্বা।
কিন্তু,
সমাজের অনৈতিক শিকল, জড়িয়ে ধরে পা!
টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় আরো অন্ধকারে,
দেহের মলাটে অন্ধকার এঁকে দিতে।

আরো কিছুটা স্বাধীনতা পাবে বলে,
হাঁস-ফাঁস করে দশটা পাঁচটা মধ্যবিত্ত মন।
তবুও মেলেনা স্বাধীনতা!
উর্দ্ধতনের অঙ্গুলিলেহনে
নিতান্ত খেলার পুতুলের মতো,
এ ফাইল থেকে ও ফাইল-
স্বাধীনতা পায়না টাইয়ে বাঁধা কলার.....

আমরা স্বাধীন হয়েছি বহুকাল,
বুক ফুলিয়ে বলতে ভালো লাগে,
আমার দেশ স্বাধীন।
কিন্তু, তা প্রশাশনিক স্বাধীনতা।
আমরা পাইনি সামাজিক স্বাধীনতা-
........পাইনি মন খোলা আনন্দের স্বাধীনতা
........পাইনি মুক্তির অনুভব
তবুও আমরা খুশী, একপেশে স্বাধীনতা নিয়ে!

স্বাধীনতা- ১২



তোমরা যাকে হত্যা করেছো
টিপু রহমান

যার উন্নত তর্জনীর সন্মোহনী ইশারায়
বেড়ে গিয়েছিল মনোবল মিছিলে,মিটিংএ,আন্দোলনে
ঢেউ উঠেছিলো প্রতিটি নদ- নদীতে বঙ্গপোসাগরে
ঢেউ উঠেছিল প্রতিটি সবুজ সোনালী মাঠ-ফসলী ক্ষেতে...

তোমরা তাঁকেই হত্যা করেছো যিনি এ বঙ্গের নামে নাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান?
তোমরা তাঁকেই হত্যা করেছো এ দেশটা যিনি এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান?

যাকে গণমানসের নেতা করেছে পুরো জাতি
কেন তাঁকে হত্যা করলে তবে তোমরা পাপী?
রাজপথ-মিছিল-বিক্ষোভ আন্দোলন চেনা মানুষটিকে
রাষ্ট্রযন্ত্র প্রশাসনের কুটিল মারপ্যাঁচ বুঝতে কতটুকুই বা সময় দিলে?
দূর্ভিক্ষের অসহিষ্ণুতার সুযোগ নিয়ে
কিছু সুযোগসন্ধানী চাটুকারদের ভুলের সুযোগ নিয়ে
মনের গভীরে ক্ষমতার গোপন লোভ নিয়ে
বৈদেশিক ইন্ধনে বিপথগামী তোমরা তাকে হত্যা করলে
গুটিকয়েক নোংরা রাজনৈতিকের ইশারায় তোমরা তাঁকে হত্যা করলে...
এতো বড় বিশাল মনা মানুষটিকে স্রেফ খুন করলে....

তোমরা একজন মুজিবকে মারতে পেরেছো
তাঁর দেহটাকে অশ্লীল বুলেটে ঝাঁঝড়া করে দিয়েছো
তাঁর স্ত্রী দেশমাতাকেও খুন করেছো
তাঁর আত্মজদের বিভৎস ভাবে খুন করেছো
এমনকি শিশু রাসেলকে পৈশাচিক হত্যা করেছো...
কিন্তু তোমরা কি তাঁর রেখে যাওয়া কর্ম আদর্শকে
আদৌ হত্যা করতে পেরেছো?
একজন মুজিবকে হত্যা করে তোমরা কোটি মুজিবের জন্ম রুখতে পেরেছো?

বাংলার ঘরে ঘরে এখন তাই কোটি মুজিবের দীপ্ত পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়...
বাতাসে ভেসে বেড়ায় তোমার সৃষ্ট চির অমর কবিতা
অজর কাব্য,সেই শ্লোগান "জয় বাংলা"...

বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নাম্বারের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে
মিশে গেছে এই নদী মাটি মানুষের হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে...
এই বাংলার প্রগাঢ় সবুজ শষ্য ক্ষেত, সোনালী ফসলের আঘ্রাণ
সব কিছুতেই তুমি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান...

স্বাধীনতা- ১১



●   ভালবাসার স্বাধীনতা  ●

         □   নাসির ওয়াদেন   □

আন্দোলিত দিনসমূহ বৃক্ষের শাখা হয়ে
অনবরত দুলছে বাৎসল্যের ঢেউয়ে

একটি স্বাধীনতা দিবস মুঠো মুঠো
লাবণ্য ছিটোচ্ছে দুই হাতে

কচি কচি শিশুর মাথায় জটিল গণিত •••

বইখাতা ফেলে আমাদের শিশুরা
অন্যরকম অমলিন সাজে সেজেছে
ইউনিফর্ম নেই, নেই বাক্সপাটরা, কলম
শুধু খেলা আর একরাশ উচ্ছ্বাস ---

শ্রাবণের মিষ্টিধারা ক্লান্তিহীন বাতাসে
একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি ছুঁড়ে মারে
স্বাধীনতার শপথে
বিষন্নতা ভেঙেচুরে জমে ওঠে ভালবাসা ---

                        ####

         ■  স্বাধীনতার স্বপ্ন চোখ  ■

          □   নাসির ওওয়াদেন   □

কে ছিঁড়েছে  ওই মন্দাক্রান্তা শরীর  ?

শরীর তো নয় তাজা টগবগে গোলাপ
গোলাপকে ছেঁড়ে কেউ ?
দূর হতেই
শুধু দেখা আর গন্ধ শোঁকা --

রাস্তা ওৎপেতে থাকে সুস্বাদু মাংসের দিকে
বুভুক্ষু নারী
যে জননী হতে চেয়েছে
যে মা হতে পারত
যে একটা সোনার সংসার চেয়েছিল

কঠিন লৌহচর্ম লোভ ছিঁড়ে ফেলল
শকুনের তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ে•••

ট্রেন লাইনের পাশে, সেপটিক ট্রাঙ্কে
ঘন ঝোপের আড়ালে
ছিন্নভিন্ন আধখাওয়া শরীর ---

স্বাধীনতা কী দিয়েছ তাঁকে ?

কে ছিঁড়েছে মন্দাক্রান্তা শরীর ?
জবাব চাই , জবাব দাও  --
আমাদের ব্যস্ততার স্বাধীনতা -- বিবেকের স্বাধীনতা---

স্বাধীনতার স্বপ্ন চোখ আজও নারীকে হাঁটায়--


স্বাধীনতা- ১০



১. কবিতা: আমি স্বাধীনতা বলছি

                  সুনন্দ মন্ডল


তোমরা কেমন আছো?

আজ এই ৭২ বছর পরে!


বাস্তবের চিড় ধরা ঢালাই গাঁথুনি

শ্যাওলা জমা মনের গলি

কচুরিপানা থিকথিক করে সোঁতা হৃদয়ে...


পৌনঃপুনিক থেকে গেছে চোখে

বৃত্ত ছোট হতে হতে ক্রমশ তালুতে বন্দী

মিথ্যের সূত্রে সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কের কৌশল...


বুলবুলির আওড়ানো কথার প্রাচীর

চিলের ছোঁ ছোঁ রব গাছের মাথায়

শকুনের আড্ডাখানা তেমন শৌখিন নয়

তবু এস্ট্রোলজী বলে আগামীর দিনলিপি!


অক্টোপাস টেনে ধরে পিছন থেকে

শুধু ভালো আছি, ভালো থাকার অভিনয়

দিনের আলো মুছে রাত, রাত পেরিয়ে দিন

তোমরা এভাবেই স্বাধীন, মুক্ত খাঁচার ভিতরেই।


তোমরা কি সত্যিই ভালো আছো?

না! নেই ভালো, শুধু ভালোর বীজ পুঁতেছো!

জানি সে চারা ৭২ এর পরেও জন্মাইনি

কারন আমিই 'স্বাধীনতা' বলছি!

             ------------



২. কবিতা: স্বাধীন-ভারতে

                সুনন্দ মন্ডল


জন্ম স্বাধীন ভারতে

মৃত্যু হবে স্বাধীন ভারতে।


মাঝে অনন্ত অন্তরফল পরাধীন

অন্তরে আক্ষেপ অবহেলন আর অপ্রাপ্যতা....


রুটির লড়াই

     রীতির ফাঁড়া

     ‎     সংস্কৃতির উলুখাগড়া

প্রাত্যহিক কলহ

      বিবাদের পিন্ডি

      ‎     স্বার্থের দর কষাকষি

      ‎মনুষ্যত্ব বিক্রি....


সবই পেয়েছি স্বাধীন ভারতে

ডাক্তার, উকিল, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার

যন্ত্রচালিত সভ্যতা, যান্ত্রিক সমাজ।


বলি দেখি প্রতিনিয়ত সমাজের বেদীতে

টাকার হাতে নর-পিশাচ, মানবিকতা


কে বলেছে? আমরা স্বাধীন হতে পারিনি!

          -------------




৩. কবিতা: স্বাধীন নাকি স্ব-অধীন!

                    সুনন্দ মন্ডল


প্রত্যেক জাতি

      ধর্ম কিংবা বর্ণের দোলনচাঁপা


লাল লাল বিপদ

    বিভেদের শীর্ণ শলাকা

    ‎প্রকৃতির নিয়মের অনুসারী

    ‎     দোর্দণ্ডপ্রতাপ চামুন্ডার

    ‎আগ্রাসনী খিদের জ্বালায় নিজস্বী


ব্রিটিশ শাসনমুক্ত

     ভারত মাতা!

     ‎শুধু অন্যের দাসত্ব মোচন হয়েছে

     ‎পরাধীনতার তকমা নেই আর

     তাই বলে স্বাধীন হতে পারেনি!

     ‎

পারিনি স্বাধীন হতে,

      এখনো কোথাও না কোথাও বন্ধনের হাওয়া

      ‎পিছন থেকে টান অনুভব করি


সমাজের সিংহাসনে উপবিষ্ট তাবড় তাবড়

      সুবিশাল দেহীর অঙ্গুলিলেহনে ‎সাধারণ মানুষ।

প্রত্যেকেই সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত কর্মে নিযুক্ত

আলাদা আলাদা বেঁচে থাকার লড়াই

নিজস্ব শক্তির সাধনায় লিপ্ত।

      ‎তবুও নেই কোনো বাক স্বাধীনতা

      ‎কর্ম স্বাধীনতা

      ‎কৈফিয়ৎ দিতেই হয় পর্দা ঘেরা দরবারে।

      ‎

নিচু তলার মানুষেরা পদদলিত আজও

দীর্ঘ ৭২এর পরেও স্বাধীন নয়

কেবল মাত্র স্ব-অধীন।


বিদেশীর শৃঙ্খল মুক্ত মানেই স্বাধীনতা নয়

স্বাধীনতা মানেই নিজস্ব কল্পনা শক্তির স্ফুরণ।

              -------------------



স্বাধীনতা- ৯



১. কবিতা: একটি সকাল।

শুকদেব পাত্র।


স্বাধীনতার সকাল তেরঙ্গায় মোড়া

দুই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল

আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলি l

হসপিটালের কাছে রাস্তায় বসে যে ভিখারি ভিক্ষা করে

রোজ,প্রতিদিন

আজও দেখি বসে আছে ,

বৃষ্টিভেজা ছেঁড়া জামা পরে কাঁপতে থাকে l

ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুল ড্রেস পরে পতাকা হাতে এগিয়ে চলে....গান বাজে মাইকে

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি l


একটা সকাল হটাৎ ম্যাজিকের মতো সবাইকে

কেমন স্বাধীন করে তোলে ,তাই না !

অফিস হীন ছুটির দিনে ভালো ভালো জামাকাপড় পড়ে

সবাই কেমন স্বাধীন হয়ে যায়....

বসের বকুনি নেই ,পদলেহন নেই

আছে শুধু দৃঢ়মুষ্ঠি আকাশে তুলে 'জয় হিন্দ' বলা l


বড়ো রাস্তা পেরিয়ে গলি রাস্তায় ঢুকি ,একটা সিগারেট ধরাই

পাশের চায়ের দোকান থেকে নেতাদের ভাষণ ভেসে আসে

গলা থেকে চোঁয়ানো ঢেকুর ওঠে l

ইট ভাটার শ্রমিকেরা পতাকা তোলে ,শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে বলে...ভারত মাতা কি জয় ,বন্দে মাতরম l

পতাকা তোলা হয়ে গেলে একজন আস্তে আস্তে বলে

ও সফিকুল চাচা একটা বিড়ি দেবা ?



               



স্বাধীনতা- ৮



১. কবিতা: ইতিহাস ।।
               
অভিজিৎ_দত্ত ।।

আকাশের জানালাটা খোলা পেয়ে  ---
ভেজা রোদ্দুর বিছিয়ে দিল একাকীত্বের চাদর,
বহিরঙ্গে ঘুণেধরা  ইঁটের পাঁজরে,
শ্যাওলা জমা চারপাশের দেওয়ালে।

মুছে যাচ্ছে বাঙ্গালীর বৈপ্লবিক ইতিহাস,
কালের কপোত তলে।

জ্যোতির কিরণে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে
ভুলে যাচ্ছি কে বা কারা ছিলেন বিনয় বাদল দীনেশ -----

প্রোথিত বা দোদুল্যমান তাঁরা রাস্তার ফলকে বা মেট্রোর স্টেশন প্রাঙ্গণে ।

সূর্যের সপ্তাশ্ববাহন ---- মখমল চোখে,
খুঁজতে বেরিয়েছিল গৌড়ের দিনপঞ্জি
বিগত শতিকার  
ভ্রাম্যমান গোধূলি আলোকে।

কিন্তু নাহ ! বাজারের 'ভাও' কষা আঙুলে,
হাতবদল হতে হতে আমাদের দিনলিপি
এখন হারিয়ে গিয়েছে-----

রাজনীতির আঁচলের আড়ালে ।
   
                *******


২. কবিতা: বারোভূতের_সংসারে।।
           
অভিজিৎ_দত্ত ।।

(দাড়িবুড়ো ক্ষমা করে দিও)

ভগবান তুমি যুগে যুগে ভূত
পাঠিয়েছ মোর ঘরে,
তাঁরাই আসিয়া করিছে বসত
আমাদের সংসারে।

কোন ভূত তবে কাটিছে পকেট,
কেহ বা উঠিল ঘাড়ে,
বড়ো ভূতিনির শাপশাপান্ত
শুনি দিনমান ধরে।
এক ভূত কহে দোসরেরা তার
চিকেন কাবাব খায়
বন্ধুরে তার মাটন খাওয়াতে
পশ্চাৎ ফেটে যায় ।

আরেক ভূতিনি ম্যাটিনি দেখিতে
পাঁচটি পাত্তি চায়,
মলে গিয়ে নাকি ছবি না দেখালে
প্রেস্টিজ চলে যায় ।
যদি বলি সেই মাটন ম্যাটিনি
এবার মুলতুবি থাক
ভূতের ছানারা বক্ষ বিদারিয়া
কাঁদে ছেড়ে এক ডাক।

বড়ো যে ভূতিনী তাহারও শুনেছি
জমিদার বাড়ি গোত্র
সাঁঝ বেলাতেই মেয়ে  কিডন্যাপ
আমিই ছিলাম অপাত্র।
সেই ট্র্যাডিশনে খেসারত দিতে
হাঁটিয়া অফিস করি
গেঞ্জিটা মোর ছিঁড়ে গেল তাও
সেলাই করিয়া পড়ি।

পাড়ার ভূতেরা সহাস্য বদনে
আমারে ডাকিয়া কয়,
দূর্গা পূজার ভূতের যজ্ঞে
চাঁদা কিছু দিতে হয়।
শুনিয়া চাঁদার পরিমাণ তবে
ভূতেরও হৃদ্কম্প হয়
ভূতের খোলস ছাড়িয়া সে তবে
মানুষের রূপ চায়।

ভূতেদের এই মহান কর্মে
ভূতবাড়ি গমগম
কিন্তু সেথায় সমন ধরায়
সরকারী এক যম।
কহে সে হাঁকিয়া আছে কি তোমার
বসতবাড়ির পাট্টা,
নেই যদি তবে অনুপ্রবেশকারীর
খাইতে হইবে গাট্টা।

সেই ইস্তক ভূত হয়ে আছি
নিজেদের সংসারে
মানুষ মরিলে ভূত হয় জানি
ভূত ম'লে সে কি করে?

   

  ৩. কবিতা: মেরা_ভারত_মহান।।

অভিজিৎ দত্ত।

পাশবালিশটা বুকে জড়িয়ে
দুপুরের ভাতঘুম শেষ করে
মরা বিকেলের ছায়া ছায়া রোদ্দুরে
বাবুমশাই যাবেন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে
আয়োজিত এক সভায় ।

এখনো সভা বসেনি রোদের তাপ যে কমেনি
তাই তো ঘামে ভেজা  শরীরের সাথে
লেপ্টে থাকা শিশুকন্যাটিকে বুকে জড়িয়ে
রোদের তাপ থেকে রক্ষা  পেতে
সামিয়ানার নীচে আশ্রয় নিয়েছে
এক স্বাধীন ভারতের নারী।

আজ সকালে  ভাত জোটেনি
কোথাও যে আজ ভোজ হয়নি
হয়নি তাই কাঙ্গালী বিদায়  ।
ওই যে মোটরবাইকে ধুলো উড়িয়ে
সামনে তেরঙ্গা ঝাণ্ডা লপটিয়ে
আরেকজন স্বাধীনতার ফসল এলেন
জন-সমায়েতের স্থান নিজের চোখে দেখে যেতে।

ক্ষুধার্ত মেয়েটি ডাস্টবিনে পড়ে থাকা
উচ্ছিন্ন রুটির টুকরোটা
বড়ো তৃপ্তি করে খাচ্ছে
কোলের বাচ্চাটা তার দুধ না পেয়ে কাঁদছে
আর বাবুটি ভাতঘুম  শেষ করে
সভায় বক্তৃতা দিতে হেলে দুলে  আসছে
আজ যে স্বাধীনতা দিবস
মেরা ভারত মহান।

         

স্বাধীনতা- ৭



১. কবিতা: তুমি কথা দিয়েছিলে

নাম: নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত


তুমি কথা দিয়েছিলে আসবে বলে
দরজায় দাঁড়িয়ে
তোমার মোহিনী রূপ দেখিয়ে বলেছিলে,
অপেক্ষা কর,আমি আসছি।
কেউ কথা রাখে না,তুমিও রাখো নি।
শুধু দেয়ালে একটা বার্তা লিখে গেছো।

বুঝতে পারি দিন পাল্টাচ্ছে।
পাল্টাচ্ছে হালচাল।
মাঝে মাঝে মেঘের গর্জন শুনি
শুনি সমুূদ্রের ডাক
ঝড় এসে দোল খায়
মাঠে ঘাটে সবুজ বৃক্ষলতায়।
ভাবি এই বুঝি এলে
চোখ মেলে দেখি--
সেই থোড়-বড়ি-খাড়া,খাড়া-বড়ি-থোড়।

তাই আমি আছি
সেইসব ডানপিটেদের অপেক্ষায়
যারা তোমাকে ঘাড়ে ধরে নিয়ে আসবে
জনগণের দরজায়।

জানি তো

তুমি শক্তের ভক্ত,স্বাধীনতা।




২. কবিতা: স্বাধীনতা বাহাত্তর পেরোলো

নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত


একুশ শতকের দেড়যুগ চলে গেছে প্রায়
বাকি আর বড় জোর শদেড়েক দিন।
প্রথম দশকে আমাদের প্রার্থনা ছিল--
বাতাস থাক স্বাধীন।স্বপ্ন রঙীন।
আকাশে ওড়ানো ইচ্ছেমতো ঘুড়ি।
কলে কারখানায় ভোঁ বাজবে
শিশুরা আমআঁটির নিত্যনতুন ভেঁপু বাজাবে
বর্ষা মাটিকে ভেজাবে
ভেজামাটির সোঁদাগন্ধ মিশে যাবে
তুলাই-গোবিন্দভোগধানের সুগন্ধের সাথে
থালায় ভাতের গন্ধ বাতাসে সুবাস ছড়াবে।
সোনালি রোদ এসে শীতার্ত দিনগুলিকে
হেসে সোহাগে জড়াবে।
আমাদের শাড়ির রং, পাজামার রং
মিশে যাবে আকাশের রঙে,
নতুন দিনের আলো ধুলো ঝেড়ে
ঊর্ধ্বগামী হবে।

মানুষের উচ্চাশা,উচ্ছ্বাস ছিল--ভয় ছিল না।
ভয় ছিল না বলে  সাবধানও ছিল না।
ফলত মানুষেরই দুর্বার লোভ
শব্দহীন বেড়ালের মতো
লক্ষ কোটির ঘাড় মটকালো।
সজ্জন ইঁদুরেরা ভাবতেই পারে নি
আগামী দিনে কী খেলা খেলবে তপস্বী বেড়াল।

স্বাধীনতার বয়স কি বাহাত্তর পেরোলো?



শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮

স্বাধীনতা- ৬



তোমাকে প্রনাম
(কার্গিলের জোয়ান শহীদদের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রনাম)।

প্রশান্ত কুমার ঘোষ

তুমি বহুমুখী প্রতিভার আশীর্বাদ ধন্য।যেখানেই দৃষ্টিনিক্ষেপ করছে সেখানেই এঁকেছ সাফল্যের রণতরী।বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, নিঃস্বার্থ সমাজসেবী, শক্তিশালী বক্তা, সুপ্রসিদ্ধ কবি ও সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের সম্ভার ছিলে তুমি।তুমিই জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক।তোমার কাজের মধ্যে ছিল জাতীয়তাবাদের প্রতি পরিপূর্ণ নিষ্ঠা।তুমি ভারত মাতার সুসন্তান।দেশের স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত করছিলে অহরহ।
জননেতা তুমি চলে গেলে!তোমার মানস গর্ভ থেকে যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল,তাকে নিজহাতে তিলোত্তমার মত গড়লে,লালনপালন করলে,মহাবৃক্ষে পরিণত করলে জীবনে প্রতিটি ক্ষণ খরচা করে,ভ্রষ্টাচার মুক্ত দেশের শপথ নিলে,এগিয়ে দিলে প্রগতি-সমৃদ্ধি-শান্তির সুনামি।সন্ত্রাস মুক্ত করার জন্য বললে,"এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না"।কায়-মন-বাক্যে নেতৃত্ব দিলে কার্গিল যুদ্ধের।জয়লাভ করলে,জিতিয়ে দিলে তোমার স্বপ্নের মাতৃভূমিকে।আর আজ তুমিই হেরে গেলে মৃত্যুর কাছে।
     আসলে সময় মহাপরাক্রমশালী
তার কাছে পরাজয় নিশ্চিত,কিন্তু সময়ের স্রোতে ডুবুরি হয়ে যা রেখে গেলে তা ভারতের আকাশে দীপ্তমান সূর্য হয়েই থেকে যাবে,তুমি মরেও বেঁচে রইলে আমাদের হৃদয়ে,দেশ মাতৃকার শিরা-উপশিরায়-রক্তে-মাংসে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮

স্বাধীনতা- ৫



। স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা। বাতাসের মতো অদৃশ্য, অক্সিজেনের মতো দরকারি।
স্বাধীনতা। নিজের বাড়িতে নিজের রোজগারে ভরপেট ভাত রুটি তরকারি।
স্বাধীনতা। বন্দেমাতরম না বলে জয় হিন্দ বললে যার তফাত হয়না।
স্বাধীনতা। শুধু গেরুয়া নয়, সাদা আর সবুজও যে পতাকার গয়না।
স্বাধীনতা। এল ও সি'র ওপারের গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া সৈনিকের শেষ নিঃশ্বাস।
স্বাধীনতা। পালটাবে একদিন , সোনার স্বপ্ন দেখা কিছু মনে আজও বেঁচে থাকা বিশ্বাস।
স্বাধীনতা। জন গণ মন শুনে বাড়িতে সোফার থেকে সটান দাঁড়ানো।
স্বাধীনতা। কোহলি ,বিজেন্দর, মেরি কম ,দীপাতে আবেগের উচ্ছাসে তেরঙ্গা ওড়ানো।

নাগরিক কি খাবে শাসকের বেঁধে দেওয়া মাংস আইনে। স্বাধীনতা নয়।
বাড়িতে আনাজ নেই, পাঁচশো হাজার নিয়ে আবালবৃদ্ধ সব দাঁড়ানো লাইনে। স্বাধীনতা নয়।
প্রশাসনী বেনজরে কোথাও পুজোতে বাধা , কোথাও নামাজে।
স্বাধীনতা নয়।
সত্তর সাল গেল, তবু জাতপাত লেগে সমাজের ভাঁজে।
স্বাধীনতা নয়।
ফেসবুকে ওগড়ানো আনাপসানাপ যত বিদ্বেষবমি। স্বাধীনতা নয়।
ফিসফিস গুজবের বিষ কানে ঢেলে দিয়ে যত্নে তৈরী করা দাঙ্গার জমি। স্বাধীনতা নয়।
ঋণদুখী কৃষকের জীবন ফুরিয়ে যাওয়া আজও ফলিডলে।
স্বাধীনতা নয়।
ধর্ষিতা রমণীর চরিতমানস ঘাঁটা জেরা করা ছলে। স্বাধীনতা নয়।

স্বাধীনতা। কিছুটা এসেছো পথ , আরো যে হাঁটতে হবে, জানো নিশ্চয়।
সকালে পতাকা তুলে বিকেলে মাতাল হওয়া দস্তুর হতে পারে। স্বাধীনতা নয়।

আর্যতীর্থ

স্বাধীনতা- ৪



দেখো আমি বাড়ছি

   ---- দেবদূত

অ্যাকোয়ারিয়ামের পেটের ভিতর বাড়ছে ফুটবল
রাজনীতি-ধর্ম-সংখ্যায়
কেউ বলছে না এবার ক্ষেমা দাও সত্তর বছরের ভুল!

দুই মল্ল লড়ে ময়দানে
বাইরে তামাশা দেখে তার শতগুণ
কেউ বলেনি সেদিন, এবার নিয়ে যাও
শরীর শিরা রক্ত থেকে
দুই পাপিষ্ঠের জিন৷
সদ্যোজাতর নাক থেকে দূরে রাখো
বিষাক্ত হাওয়া ভাগ মন্থনের...

ফুটপাতের ভিড়ে
গুঁতো মেরে এগিয়ে চলুক ভারতবর্ষ
প্রতিটি গর্ত যেখানে কাঁকড়াময়
হে সমুদ্রগর্ভা ক্ষান্ত হও!
পশুর প্রসবে যে
                 মানুষের কাজ বাড়ে,
কে ফিরে যেতে চায় জঙ্গলে

ঝালে ঝোলে অম্বলে
কিছুতেই না থাকা সুখি পেপারওয়েট
আজ আপনিও ফেলে এসেছেন চশমা
না হলে ভারতবর্ষকে পাশাপাশি রেখে
একটুকরো বরফে মেপে দেখতেন
 সংখ্যায় কিছু রাখা নেই
আইসল্যান্ড সে কথাই বলেছে বার বার গুণের গুণিতকে

সেই সব দিনের মতো আজও
দর্শকের ভূমিকায় আমরা অবিচল থাকি নিরাপদে শুধু এই ভেবে

 আমাদেরও একদিন ভালো হবে!

স্বাধীনতা- ৩



মেয়েটি বুড়িয়ে যাচ্ছে।
(দুর্দান্ত রচনায় সমৃদ্ধ হল।)

শুভঙ্কর দাস


মেয়েটির কোনো কান্ডজ্ঞান নেই!এত ক্ষতবিক্ষত, শেকলের দাগ ভরা মুখ নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়,ধানখেত থেকে কাকরঙা হাইওয়ে, ঝুপড়ি থেকে রাজভবনের গেটে,মরুভূমির বালি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফে,ভাঁটিশালা থেকে কলেজস্ট্রীটের চারমাথায়।

মেয়েটি নিজের কাপড়ের বাইরে যেতে পারল না!নিজের জন্মদিনের উল্লাস সেরে নিজেকেই পাট করে রাখে কোনো ঝুলপড়া খুপরিতে,কাপড়ে কত রক্তের রেখা,ফাঁসির শূন্যতা,অস্ত্রের অন্ধকার,ধ্বংসের ধারাবাহিকতা ফেঁসু হয়ে ঝুলছে।

মধ্যরাতে জন্ম বলে,মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে,পিতার হাতে মার খেয়ে সেই যে হাত ভেঙেছিল,আর জোড়া লাগেনি!

জোড়া লাগার আাশায়

বাহাত্তর বছরের বুড়ি হয়ে গেছে মেয়েটি,কানে কম শোনে,চোখে কম দেখে,কথাও জড়িয়ে যায়,মুখে গেঁজলা তুলে খোঁজ করে, ওগো সুভাষ আমার কি বাড়ি ফিরেছে!আর যতীন-ভগৎ-রাসবিহারী-ক্ষুদিরাম এরা সব কোথায়?

বুড়িয়ে যাওয়া মেয়েটি পথ হাঁটে,আর তাকে ঘিরে থাকে হাজার চাকার দাগ, শ্মশানের খইয়ের মতো ছোলামুড়িবোঁদে,সহস্র বোতল, নানা রকমের মাইক,আর সেই চিলমারা চিৎকার,ভারতমাতা কী!


স্বাধীনতা- ২



১. স্বাধীনতা মানে
প্রশান্ত কুমার ঘোষ

স্বাধীনতা মানে মুক্ত বিহঙ্গ,নয় শৃঙ্খলার কাতর যন্ত্রনা
স্বাধীনতা মানে মতামত প্রকাশ নয় অপরের কথায় সায়
স্বাধীনতা মানে সকলেই সমান নয় দেশের স্পেশাল কেউ
স্বাধীনতা মানে দুমুঠো অন্ন নয় অনাহারে জীবনযাপন
স্বাধীনতা মানে একটা বাড়ি নয় ফুটপাতে দিন যাপন
স্বাধীনতা মানে আত্মনির্ভর নয় অপরের আনুগত্য
স্বাধীনতা মানে শ্রমের অধিকার নয় অপরের দাসত্ব
স্বাধীনতা মানে আত্মকথন নয় মিথ্যা স্লোগানে কন্ঠ মেলানো
স্বাধীনতা মানে নিজের অধীন নয় অপরের কাছে গোলামি
স্বাধীনতা মানে নিজের জীবনচর্চা নয় অপরের প্রতিবন্ধকতা
স্বাধীনতা মানে বুভুক্ষের অবসান নয় করুনানিধির পাত্র
স্বাধীনতা মানে অবাধ যাতায়াত নয় লুঠ-খুন-ধর্ষণের থাবা
স্বাধীনতা মানে নারী সমান নয় ভোগ্যপণ্যের বস্তু
স্বাধীনতা মানে আমিই চালক নয় কারো দ্বারা পরিচালিত।




২. আমি ভারতবর্ষ বলছি
প্রশান্ত কুমার ঘোষ

মনে পড়ে কৃষ্ণ পক্ষের দুশো বছরের ইতিহাস ?
প্রাণের বিনিময়ে আমাকে ছিনিয়ে আনার আকুলতা
কত ফুল বিকশিত হতে পারে নি
কতক ঝরে ছিল কুঁড়িতেই
আজও আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি।

হায়েনাদের কাছে আমি এক ফালি চাঁদ
আমার গহনে ছিল রত্ন খনি
আমার শরীরে ছিল উর্বরতা
ওদের লোলুপ দৃষ্টিতে আমি ছিন্নভিন্ন;
আমার কোষের ধ্বংস করে
রক্ত বিছিয়ে পথ পিছল করে
আমার সর্বস্ব
ওদের আঁতুড়ঘরে টেনে নিয়ে গেছে।

এখনও আমার বুকে
স্বার্থের দামামা বাজে
জোঁকেরা রক্ত চোষে ,
পাচার চক্রের রমরমায় আমার ডায়বেটিস
ধর্ষণের আদিখ্যেতায়  আমার রক্তাল্পতা।

আজও চলছে আমার ক্যানভাসে স্বার্থের দাঙ্গা
কথায় কথায় আমার সম্পত্তির ভাঙচুর ,
সহনের সূর্য আজ অস্তমিত
গঙ্গাতে এখনও বয়ে চলে
রক্তের স্রোত ।

তবুও এগিয়ে চলেছি
তোমাদের হৃদয়কে সঙ্গী করে
প্রযুক্তির বাতাবরণে আমি এগিয়ে চলেছি
আমি খুঁজে চলেছি গুপ্ত যুগের স্বর্ণযুগ।


স্বাধীনতা- ১



১. *স্বাধীনতা*

আরিয়ান প্রিয়স(পাল)।

পেটের খিদে পেটেই মরে গামছা বেঁধে কাটে,
রুগ্ন পাঁজর ফুঁপরে ওঠে টিকটিকি হাত চাটে ।
এসব দিকে তোমার খেয়াল কেন নেই –
শুধু বৃষ্টি খোঁজো নিজের অধিকারেই।

নদীর তীর নাম ছিল তার সোনার তরীর দেশ,
জল শুষে নিয়ে ফসল কাটে সরীসৃপের বেশ।

নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে স্বীকার করো ত্রুটি।
চাল নড়ছে বাঁশটা ধরো শক্ত করো খুঁটি ।

যুদ্ধশিবির এদিক ওদিক রক্ত লাগে জামায়,
ঘোড়ার ক্ষুরে বড্ড আওয়াজ, স্বাধীন বাংলায়।
আড়াই চালেই বর্ষা নামে শ্রাবন মেঘের ক্ষেতে,
পাঁক জমেছে জলের ঘটে, ভাত কই তার পাতে!
দূরে যে দাঁড়িয়ে, কিছু প্রেম সেও জানে।
একদিন স্বাধীন হবো,সমর্পণ স্বাধীন ভারত নামে।




২. *স্বার্থকতাই স্বাধীনতা*

আরিয়ান প্রিয়স(পাল)।


দেখবেন কত কষ্টে থাকি
আসুন না আজ আমার বাড়ি
দেওয়াল গুলো সবে গাঁথা,
ভাঙলে তবু হৃদয় ভারি. . .

রাস্তাগুলো ধুঁকছে দেখো
বর্ষা হতেই কাজের রেষ!
উন্নতি আজ মাঠেই বসে
হচ্ছে এবার মাল্টিপ্লেক্স।।

কি প্রয়োজন এসব দেখার
ওপরে তো গদির লড়াই,
দু-একশ জন সড়েও গেলে,
ভোট হবে তো গুনতি ছাড়াই।।

এত কিছু শোনার পড়েও
আমরা বলি মহান দেশ
মুখের হাসি ফুঁটিয়ে খেয়ে
সবাই তো আজ স্বাধীন বেশ! !


রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

সম্পাদকীয়: স্বাধীনতা সংখ্যা।



সম্পাদকীয়:

সংকীর্ণতার চারদেওয়ালে বন্দী ঘুপচি জীবন বিষধর সর্পের অর্থনৈতিক যাঁতাকলের নিষ্পেষণে রুদ্ধশ্বাস। চাহিদার খানা খন্দ বুজিয়ে চলছে তো চললেই হল এই একঘেঁয়েমি সামঞ্জস্যের চীৎকারে আমরা ধর্ষিত। স্বীকৃতি আর ক্ষমতার লোভে মাকড়সার ইন্দ্রজালে দমবন্ধ হয়ে আমাদের যবনিকা পতন। খোলা নর্দমায় গা ডুবিয়ে ছ্যাঁচড়া এঁদোগলির কুকুরের সাময়িক প্রশান্তি শীতলতার প্রশ্বাস। বন্দেমাতরম বলে হাত পা ছুঁড়ে একদিনের লৌকিকতার পূজা উপাচারে দেশ মাতৃকার বিজয়ধ্বজা ভারতের পতাকা তুলে ক্ষান্ত। উন্মোচনের পরেও কেমন যেন মিথ্যা স্লোগান আর মিছিলে দেওয়া ভাষণের মিথ্যা তবকের মিষ্টিতে কেমন যেন গা গুলিয়ে পতাকার মাথা হেঁট হয় ভূমির দিকে লজ্জায়।সমীকরণে আত্মমগ্ন দুঃশ্চিন্তার বলিরেখায় প্রৌঢ়ের কপালে ভাঁজ কোথায় স্বাধীনতা। সত্যি কি আছো মা, মাটি ফুঁড়ে উঠে এসে বলো খোলা গলায় চীৎকার করে ফিরিয়ে দাও আমার আত্মসম্মান আমার পুরানো গৌরব স্বর্ণালী স্বাধীনতা। শূণ্য অঙ্কে জীবন গতি ক্যালকুলাসের জটিল উপপাদ্য আজকের দিনে স্বচ্ছন্দ্য।
           আটপৌরে ঘর পোড়া অবলা কুমারী আইবুড়ো না তোমাদের সমাজের চোখে দৃষ্টিশূল জগদ্দল পাথরের বোঝা বহন দুঃসাধ্য শুধু চাই তার একরত্তি পণ সাথে সিঁদুরের মুক্তি গতি গতি না হলে তা গর্হিত অপরাধ।

ভাত পচা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বেকারের বেকারের হদ্দ অপদার্থ গঞ্জনা কিংবা গরু ভেড়ার পালে লাইন দিয়ে দাঁড়ানো ফর্ম ফিলাপে মাথা ঠোকা দাও দাও ভিখারী হাতে ঘুষের ফুটো থালা।রদ্দী সার্টিফিকেটের নিম্নচাপ   কাজল মেঘ কোলে আঁখিতে অবসাদের অকাল বর্ষণ স্বেচ্ছায় নির্বাসন চাইনা আর এই অব্যবহৃত জীবন চাই শুধু মুক্তি গতি গতি।

ফ্রী মাল রাস্তাঘাটে সহজলভ্য প্রস্ফুটিত কুসুমে ভ্রমরের আতিথেয়তা নিষ্প্রয়োজন বৃশ্চিক দংশণ ধর্ষিতা,,,, চাই মুক্তি গতি গতি।

স্বাধীনতার এই পূণ্যলগ্নে তোমাদের মনে কোথাও যদি একটু স্বাধীনতার শিখা জিইয়ে রেখেছো তাহালে তার সলতে আরেকটু উসকিয়ে দাও আর এ জীবন পূর্ণ করো।

দুটি অথবা তিনটি স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতা পাঠিয়ে দিন আমার মেলে supritibarman769@yahoo.in.
Last date of submission 18th August.

Editor.
Supriti Barman.

শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮

রথযাত্রা- ১০



মোক্ষম তীক্ষ্ণাগ্র আলোচনা: রথযাত্রা প্রবন্ধ।

প্রবন্ধ: "কিছু কথা কিছু স্মৃতিচারণ"

নাম: শুকদেব পাত্র।

সময়ের সাথে সাথে বয়স যতই বেড়েছে অনুভূতি গুলো ততই হয়েছে বিকৃত ও বিবর্তিত l প্রকৃতির ওতোপ্রোত প্রভাব থাকা সত্ত্বেও মানব প্রকৃতি নিয়ত পরিবর্তনশীল---- অজানা রহস্যময় রাজ্যে যার অবাধ বিচরণ l মানুষ সত্যিই কি অজানা রহস্যময় স্থানে ভ্রমণ করতে পারে! কেউ কেউ হয়তো পারে , বেশিরভাগ মানুষের সম্ভব নয় দুবেলার অন্নসংস্থান করে দুর্গম স্থানে পাড়ি জমানোর l তবুও মানুষ যায়---- ধনীদের তুলনায় গরিবেরা ,বুড়োদের তুলনায় শিশুরা ;,অনেক বেশি করে যায় l

                  একবার বকরূপী ধর্মরাজ যম যুধিষ্ঠিরকে জিঞ্জাসা করেছিল --- পৃথিবীতে সবথেকে দ্রুতগামী কে ? উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন "মানুষের মন "....মানুষের মন

আলোর চেয়েও দ্রুতগামী মনের দ্রুততার জন্য মানুষ মনকে রথের সাথে তুলনা করেছে l মনরূপ রথে চড়ে মনোরথ বা মনোবাসনা ।মানুষের চিন্তা চেতনা নিয়ত ছুটে চলেছে স্থান থেকে স্থানান্তরে ,কাল থেকে কালান্তরে.... রথের সঙ্গে আমাদের তাই ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ l

           ছোটবেলায় রথের মাহাত্ম্য না বুঝেই মন্দিরের মতো ফুলমালা দিয়ে সাজানো রথের দড়ি বড়োদের মতো টানার অনুভূতি যে কত সুন্দর ! তা এখন উপলব্ধি করতে পারি l ছোটবেলার অনুভুতিগুলোর চরম সুখ বোধহয় বড়বেলায় এসে ধরা দেয়...এ যেন অনেকটা গরুর জাবর কাটা সুখের মতন l পাঁপড় কিনে বন্ধুদের খাওয়ানো কিংবা বন্ধুদের দেওয়া পাঁপড় , অন্যান্য ভাজাভুজি খাওয়ার মধ্যে যে কতটা নিষ্পাপ শান্তি ছিল তা এখন অনুভব করি l

            সময়ের সাথে সাথে রথ ও রথের সংজ্ঞা বদলে যায় l রথ হয়ে ওঠে কখনো ব্যবসায়িক কখনো রাজনৈতিক কখনও বা প্রেমের প্রতিচ্ছবি l তাই ছোটবেলায় শোনা কথা "রথ দেখা ও কলাবেচা " বড়বেলায় এসে স্বার্থের গল্প শোনায় l শিশুবেলার অনেক বড়ো খেলনা গাড়ি ভোল বদলায়----- চেতনায় গভীর মনোরথে l

             রথের চাকা মাটিতে বসে গিয়ে কর্ণের জীবনের রথ থমকে গিয়েছিলো l আফশোষ হয় সেইসময় কেন যে পিচের রাস্তা ছিল না, তাহলে অন্তত অন্যায় সমরে কর্ণকে অসহায় ভাবে মরতে হতো না l এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনের রথ থমকে দাঁড়ায় বারেবারে l

        বর্তমান সময়ের স্রোতে রথের চাকা থমকে গেছে l এখন উল্টোরথের বৃষ্টিভেজা বিকেলে ভীরু হৃদয়ে প্রেমিকার হাতে পাঁপড় গুঁজে মন বিনিময় করার বয়স না থাকলেও আজও চোখে পড়ে নবপ্রেমের বর্ষাভেজা অরুণরাগ ,যারা উষ্ণতা খোঁজে---ভালোবাসার ভুবন পাড়ি দিতে চায় জীবনের রথে চড়ে l

দাঁতপড়ে যাওয়া বিধবা বুড়িটা ছোট নাতিটাকে পাশে বসিয়ে ঝোলাগুড় দিয়ে বানানো মুড়ির নাড়ু বিক্রি করে রথের মেলায়.....অজস্র লোকের ভিড়ে রথের দড়ি টানতে না পেরে পথের পাশে বসেই দুহাত কপালে ঠেকিয়ে জগন্নাথদেবকে প্রণাম করে l আমি চেয়ে দেখি আর মনে মনে বলি....হে ভগবান ওদের আশীর্বাদ করো l


                 

                     


রথযাত্রা- ৯



(অভাব ও দুঃশ্চিন্তার দারিদ্র্যতার কালো মেঘ শ্রাবণ রথের মেলায়)।

পাঁপড়ভাজা'র অমসৃণ ধারগুলো।
..................................................
ফিরোজ আখতার।

পাঁপড়ভাজার গন্ধ'টা গুলিয়ে গুলিয়ে পাক খায়
দুই ভাইবোনের নাকের চারপাশে -

একটা অতৃপ্ত ঘূর্ণি ৷ বড়ো ভালো লাগে গন্ধ'টা ওদের-
ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে আছে দোকানের একপাশে । তেলাকুচো গাছের ফলের মতো ৷ হঠাৎ পাওয়া একটা পাঁপড়ভাজা ভাগ
করে খাবে দু'ভাইবোন ৷

রুক্ষ লালচে চুল ৷ মায়াময় চারখানি চোখ ৷ ময়লা জামা দেখা যায় না
আধোঅন্ধকারের আবহে । ততোধিক অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে পাঁপড়ভাজা'র
অমসৃণ ধারগুলোতে৷

রথযাত্রা- ৮



(অন্যরকম রথযাত্রা জীবনযুদ্ধের চিত্র দৈনন্দিন)

কবিতা-- দেশান্তর
সৌরভ ঘোষ

শিয়ালকোট থেকে চিটাগং পাদানীতে ...
ডাকাবুকো ইঞ্জিণ সামনের দৃশ্য গিলে -
কয়েক মাইল শ্বাসবায়ু ভরে নেয় ফুসফুসে।

দিনের আলো যথেষ্ঠ ভরেছি চওড়া বুকে।
অন্ধকারে মিটমিট জোনাকি তারা আঁচে,
ঝিঁঝিঁ পোকার নিরন্তর ডাকে
খুঁজেছি পরিচিত মায়া স্বর
পেয়েছি নমুনা ,ট্রেনের চাকার ঘড়ঘড়।

বর্ডারে আপাদমস্তক চেকিং ,নকল যন্ত্রের বিপবিপ
সব সাজানো...
রাস্তায় শুধু দিল্লীর কথা, উদ্বাস্তু জটলা
শেষ ঠিকানায় সাড়ে তিনফুট চৌকিতে
আমার কোনাকুণি বিশ্রাম...
ট্রেন আবার ফিরে যায় দুটো বর্ডার পেড়িয়ে...

রথযাত্রা- ৭



____রথ মানেই পুজোর গন্ধ

                সুনন্দ মন্ডল


রথের দড়িতে পড়ল টান

      উল্টো রথে জগন্নাথের ফেরা।

      ‎বুঁদির ছাঁচে তোমার শরীর

      ‎      জগতমাতার রূপের বেড়া।


রথের দেব রথেই থাকলো

      মানুষ গাইল আগমনীর গান।

      ‎পায়েস মুখে মিষ্টভাষী

      ‎        জানলো সুখেই মাতবে প্রাণ।


জগন্নাথের চাকা ঘুরতেই

       ত্রিকাল দেবীর পদার্পণ

        লক্ষ্যভেদে সাঁতার কাটা

        ‎       নৌকা করে আগমন।


কথায় আছে রথের দড়িতে টান

     মানেই দুর্গা পূজার আবাহন

     ‎আমরা মানি বিশ্বলোকে

     ‎    মায়ের মমতা নয় অসমান।


মুখের হাসি লম্বা দড়িতে

         রথের সাথে শরীরে ঘ্রাণ

         ‎মা আসছেন নতুন রূপে

         ‎এইতো জেনে উৎফুল্ল মন।

         ‎     ----------


রথযাত্রা- ৬



চিরঞ্জীব হালদারের কবিতা।

যেওনা কিশোরী একা মেলা জগন্নাথ,
যেওনা কিশোরী একা বামুনের দেশে-
জিলিপিরা ফাঁদ পেতে সাজিয়েছে রাত
নাগর আসিতে পারে জগন্নাথ বেশে।


এই ধানপথ কি রথের মেলায় মিশেছে।
কোন ভাষায় টিনেজার কিশোরী
চিঠি লিখবে কাঁঠাল গাছকে।
সমস্ত গোপন কুঠি ভরে আছে চাপ চাপ উদ্ভিন্ন প্রেমে।
নেমে এস বাইনারী লজিক,হোয়াটস আপ
টুকে রাখো তাহাদের কথনমালা
পাঁপড় সৌজন্যে।
বেঁটে জিরাফেরা আজ
জগন্নাথ দর্শনে চলেছে।


ভেবোনা এ চিঠি কোন ডাক হরকরা
পড়ে নেবে বিতরণের আগে।
অলৌকিক অক্ষরে লেখা ঠিকানা কিশোরী।
গোপন ফিতের ভাঁজে কাঁচের চুড়ির মত ডেকে ওঠে বাদল ময়ূর।
ক্যালকুলাসের পাতায় পাতায় দেখো কেমন রঙ্গন হেসেছে।
তাই এত একাকী কিশোরী
খুঁজে পায় রুনু-ঝুনু জগন্নাথ  সঙ্গম।

রথযাত্রা- ৫



রথ

---সবর্না চট্টোপাধ্যায়


মধ্যবিত্ত দাম্পত্যকলহের
ডালভাত রেঁধে মেয়ের হাত ধরে
জগন্নাথ দর্শনের ভিড়ে
বাকীদের মতো আমিও
ভেঁড়া হয়ে গেছি
ঈশ্বরের মোহে...

ওদিকে আরও কিছু ঈশ্বর
কিছু মধ্যবিত্ত ঘরে
বুক চাপড়ানোর প্রদীপের শোকে
অসুস্থ পড়ে আছে থরে থরে....

খালি পেটে
মায়েদের সন্তান,
তেরোদিন ধরে
দেওয়ালে আঁচড় কেটে কেটে
চড়াচ্ছে প্রতিবাদ।

তবুও চোখকানহীণ ক্ষমতার
কঠোর সরকার
রথের মেলার আগে
উপহারে
বন্দেমাতরম তুলে দিচ্ছে পাঁপড়ভাজার মতো..!


প্রতিবার রথে

----সবর্না চট্টোপাধ্যায়



বৃষ্টি পড়লে ভেতরেও আজকাল
জল জমে যায় ভীষণ,
জমতে জমতে একবুক
একগলা
তারপর দুটোচোখ
ঝাপসা হয় না,  শৈশব ওঠে আসে কেমন!

একটা মেয়ে ঘন্টা বাজিয়ে
ছুটে যায় রথ টেনে,
তার বাবা
হাতে কালো ছাতা ধরে
তেত্রিশ বছর, ভিজছে বৃষ্টিতে...

উল্টোরথে প্রতিবার ঝাপসা হয়ে আসে শহর
কলকাতা ছাড়িয়ে যতদূরে যত গ্রাম
গ্রাম ছাড়িয়ে অন্যকোন শহর।
জগন্নাথবাড়ি থেকে
গরদের শাড়ি পড়ে
মা হেঁটে আসে ছোট ছোট খেলনা কিনে...

এখনও বৃষ্টি হয় প্রতি রথে।
ডুব দেওয়া বিকেলের স্মৃতি
ঘুড়ি ওড়াচ্ছে প্রেমিকের হাতে...
আকাশের এখনও কোনোখানে
মেঘেদের দেখে মনে পড়ে দুটো মুখ...
কোনোএক দুপুর ঘন হতে হতে
দুটো পাতা নড়ে ওঠে....
ঠোঁটে ঠোঁট
ঠোঁটেদের ভাষা..
কিছু কিছু মেঘ আজও কাঁদতে পারে না, জানি।
কিছু চুম্বনের শোক ফিরে আসে নদীর মতো..
শুধু প্রতি বার, বৃষ্টি হলেই
আমার তেত্রিশ বছরের ছেলেবেলা
ছুটে আসে
'মা' বলে ডাকে....
ক্রমশ মেঘেদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে যেতে
হাত ধরা দুটো মুখ
হেসে ওঠে ঘুরন্ত নাগরদোলায়....

রথযাত্রা- ৪



রথযাত্রা - স্বরূপ সিংহ রায়



মলিনতা ছুঁড়ে দাও রোজ

ভেঙে প​ড়ি আমি

দু চোখের জলে হাঁটি

ঝাপসা রাজপথ ---।



সে জলের দাম কি বা

চোকানোর দায় নেই কারো ---

অরণ্যরোদন তাই করি না আর,

অবহেলা দিয়ে তুমি

যত খুশি মারো ----।



মলিনতা ভেঙে দেয়

মেরুদন্ড রোজ

ভিতরে ভিতরে ঘূণপোকার মিছিলে

ধর্মঘট স্লোগান ----।



তবু সোজা হাঁটি আমি

হেঁটে যেতে হ​য় ---

নিজের​-ই রশি তে টানি

শূণ্য সে রথ ----

মাধুকরী ফেরা জানে

পিচগলা পথ -----।



বিষণ্ণ দিনের শেষে

আশা রাখি মনে

ফাঁকা রথ টেনে রাখি

তোমার​-ই পথেতে ----,

হ​য়তো বসবে এসে

বিবশে সুবাসে

হ​য়তো বলবে কথা

কিছু ভালোবেসে

কাছিতে থাকবে টান

দারুন আবেশে -----।



নতুন যাত্রার পথে

আলোকিত​ রথে

ফিরে এসো সীমন্তিনী

নতুন শপথে -----॥


রথযাত্রা- ৩



প্রণয় পুষ্পের ঘ্রাণ
মৈনাক চক্রবর্ত্তী

এবার যদি উল্টোরথে- মেলায় না যাই,
তুমি আমি, দিনটা কাটাই, বন্ধ ঘরে-
জিলিপি আর পাঁপড় ভাজায়, রথ শুধু নয়-
তোমার ঠোঁটের জিলিপি স্বাদে, সময় কাটে...

এবার যদি রথের মেলায়- সন্ধ্যা ঘিরে
ঝাপসা বৃষ্টি, ঝাঁপিয়ে পড়ে, শহর জুড়ে-
শহর ভিজুক রথের মেলায়, আমরা ঘরে-
তোমার দেহের উষ্ণতারা আমায় খোঁজে...

এবার যদি রেশমী চুড়ি- নাইবা কেনো,
শ্রাবন মাসে, বৃষ্টি মেখে ঘরে ফিরো-
পাঁপড় ভাজা, এবার হয়ত নাইবা খেলে-
শরীরে শরীর, ডুবে থাকুক পাপড়ি ঘ্রাণে...


শ্রাবনের রথ
মৈনাক চক্রবর্ত্তী

আমার কাছে রথযাত্রা,
ধর্ম কথার উৎসব নয়-
আমার কাছে রথযাত্রা,
শ্রাবণ কিংবা আষাঢ় মাস-
মেঘ গুরগুর ঈশাণ কোণ,
পেঁচিয়ে যায় রথের চাকায়-
বৃষ্টি আসে, ভিজিয়ে দেয়,
উড়ে আসে মেঘবালিকা...
টুকরো টুকরো শ্রাবণ মেঘ,
বিন্দু বিন্দু জমতে থেকে-
ভেসে যায় রথের চাকা,
মাসি নাকি পিসির বাড়ি;
তা আমার ঠিক জানা নেই...
রথের দিনে শ্রাবণ তোমায়
চিনতে পারি নিজের করে।

শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮

রথযাত্রা- ২



(অসাধারন রচনায় আত্মমুগ্ধ রথযাত্রায় কৈশোর)।

কৈশোরের স্বপ্ন
              নাসির ওয়াদেন

নিষিক্ত বেদনা ঝড় হয়ে ভেঙে পড়ে কালাচাঁদ
জোৎস্নার ম্লান মুখে ঝরে অশ্রুধারা, অবসাদ

পদ্মপাতার উপর জলবিন্দু সাতরঙা আলো
রূপ ঠিকরে বন্যাঢেউ বহে বিমূর্ত জমকালো

কৈশোরের সেই ভাঙা দিনগুলো,সরবে নীরবে
পোড়া মনদুটি সিক্ত হলো যে পুনর্রথ উৎসবে

কিশোরী কুমারীর লালঠোঁটে দেখি সিঁদুরেমেঘ
অপটুছায়ার বুকে নৈরাশ্যের শীতলইচ্ছা আবেগ

কাকজোৎস্না ভোর আঁকে অবাঞ্ছিত প্রেমের  চিত্রকথা
লালসার হৃদে জেগে ওঠে শুধুই বিবর্ণ আদিখ্যেতা

হারিয়ে যাওয়া শুকনো ঢেউবনে জাগে প্রেমঘন
জগন্নাথের রশির বাঁধনে বাঁধা  গেছে দুটো মন
                     ¤¤¤¤¤

                  ঈশ্বর ও প্রেম
                 নাসির ওয়াদেন

চেনা দিনগুলোতে অচেনা কাঠের খটমট উল্লাস
হাতের তালুর নীচে ভালবাসা,মোবাইলেই বিশ্বাস

খুনি ফাটা শব্দের বুকে বিশ্বাসী লোনা ছোঁয়া
বৃহৎ জলাশয়ে গভীরে লুকিয়ে শুধুই হারিয়ে যাওয়া

গোপনে গোপনে প্রেমিকার কাঁধে রেখে নির্ভর হাত
জিলিপি, আলতা, সিঁদুরে সাধ বড়,অঝোরে ধারাপাত

যমে মানুষে টানাটানি চলে,টানাটানি রথে রশি
ঈশ্বরপ্রেম জেগে ওঠে মন, কোথায় অবিশ্বাসী,,,,

সত্যের আলো উঠলে জ্বলে, পালায় অন্ধকার
মিথ্যের বড় শত্রু সত্যেরা, জলফোঁটা এক পদ্মপাতার

হতাশ প্রেমিকের বুকে মালাবারি ঢেউ উঠে তোলে
ভরতুকি বাতাসের প্রেমবেলুন নীলকাশে আজ  দোলে

উন্মাদ হাসি উছলে পড়ে নিরাশার সংভূমি পাঠে
হারানো প্রেম ফিরে আসে রথে,সহিষ্ণুতার মাঠে

                          ¤¤¤¤¤¤

রথযাত্রা- ১



| রথের চাকা সচল কী? |
---------------কলমে সুদীপ্ত সেন (ডট.পেন)

রঙ কিনে রাখা ছিল খাতায়, সে খাতায় জল পড়ে গেছে, লেখা ভিজে গেছে কী দারুন.....!

তবুও রথের দিনে আশ্চর্য রকমের জেদ প্রেমিকার, মেলায় যাবে সে। আমিও যেতে চাই তার কারন রথের মেলার খুব সস্তাদর।

একসাথে যাবো, জিলিপি খাবো,দেখবো হরেক রকম ১৫ টাকা সব।ফুচকাও খেতে চাইবে হয়তো, আবার এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়েও দিতে পারে আমাদের ফিরতি পথের আড়াল খুঁজে।

 রথ দেখতে যাবো সাত-পাঁচ সব না ভেবেই, মেঘ করেছে ছাতা নেবার দরকার নেই নাক সিটকে জানিয়ে দিল সে।

 হঠাৎ করেই মেলায় যাওয়ার পর একটা অদ্ভূত কারুকার্য চোখে পড়ে হ্যাঁ কারুকার্য তো, লক্ষ্য করবে রথের ওপরে ঠাকুর বসানো হয় আর আমরা সবাই রথের দড়ি টেনে নিয়ে যাই ঠাকুরকে মাসির বাড়ি পৌঁছানোর জন্য। আচ্ছা এখানে একটা ব্যাপার দেখবে খুব চোখে লাগে সেটা হলো
        'ঠাকুর কে'?
' যাকে বসানো হয় সে নাকি যে বসে থাকে? '

ছোটো থেকেই দেখি আর প্রশ্ন তৈরী হয় মনের ভেতর আজও প্রশ্ন আছে উত্তরটা দিও প্লিজ যার জানা আছে,

'আমি যে ঠাকুর চিনিনি এখনও.....'

 রথ ঠিক এগিয়ে যায় নীচের তলার মানুষ দিয়ে তখন কিন্তু ভেদাভেদ হয়না তুমি জাতে ছোট ছুঁয়ে দেখবে না রথ এটা তোমরা বলতে পারো  না দড়ি তো সবাই টানবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি বলব না দড়ি সবাই টানতে পারেনা বরং দড়ি সবাই না টানলে রথ এগোবে কি করে, কী আশা করি বুঝতে পেরেছ ..বেশি না বলাই ভালো নইলে আমাকে ধমকি দিতে পারে আস্তিকের দল, ধরে নিয়েও যেতে পারে আদলতের কাগজ...ইত্যাদি, ভয় পাই।

এসব চলুক চলছে যখন কি আর করা যায় কিন্তু কতকাল?
নিশ্চয় একদিন অচলায়তনের মতো করে কেউ প্রাচীর ভাঙবে আর যে হাতে নামাজ পড়া হয় সে হাতও রথির দড়ি টানবে। জাতি ভেঙে সবাই মানুষ হবে।আর যে ভারতবর্ষে ভিক্ষার নীতি চলে, হয়তো একদিন সেটাও মিটে যাবে আর সচল হবে রথের চাকা, চলবে... চলবে... চলতেই থাকবে....

এই শোন এই ঝুমকো টা দেখ?
  নিবি?  হি হি
নে না মানিয়েছে।
কত ভাই?
হরেক মাল ১৫ টাকা!
 


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ৩০



১. কবিতা: মুখস্থ।

             রাজীব মৌলিক


সেই বই মেলায় প্রথম কুচিতে ঢাকাই শাড়ী

কি লাজুক মেয়ে তখন তুমি ষোড়শীর এক নারী

কচি চাঁদ আশেপাশে দু একটা দোকান চেয়ে

মঞ্চের গানে তোমার হয়তো মন,রবি যাচ্ছে বেয়ে

হঠাৎ বুকের গভীরে আচমকা সাইরেন সংকেত

বেজে ওঠে সুর,অজানা সমুদ্রে আঘাত হেনেছে বেত

দিগ্বিদিক কে, কার চোখ!কার  নোলক আর দুল

মস্তিষ্ক জুড়ে,কেউ জানে না,ফুটছে রকমারি ফুল

এ কোন ললাট? এ কোন নারী? আমি কি তারে চিনি!

তবে কেন সে মুখস্থ যেন হাজার বছরব্যাপী জানি

নিষ্পাপ ওষ্ঠে নিখাদ ব্যাবিলন,মেঘের বাসর কেশে

দোলনচাঁপা অমরাবতী পেয়ে ফোঁটে,ভ্রমরও শায়িত তার দেশে

মর্ত্যের স্বর্গ দেখেছি সেদিন চোখে,একফালি জোৎস্নার দন্ত

কি সুখের চাদরে জড়িয়ে গেল বুক,স্বপ্নিল তবু প্রাণবন্ত

হঠাৎ গুরুগুরু মেঘ কোথা এসে মাড়িয়ে দিল সাজানো  ঘর

হাত ধরে বলে 'এই মেয়ে চলো,অপেক্ষা করছে তোমার মাদক বর।'

হায়রে মাদক অকালকুষ্মাণ্ড তুই একটা,যে নেশার খনি রয়েছে ঘরে

ঈশ্বর তুমি বড়ই নির্দয় বিচারক,এতো যাকে রূপ দিলে সোনা দাওনি তারে।

কি জানি কি ভেবেছে সে কেবল,হাসিল আমার পানে

মুখস্থ পৃষ্ঠা আরও কিছুক্ষণ থেকে যেতে চায় ভাঙ্গা মনের গানে।



২. কবিতা: প্রতীক্ষিত চাঁদ।

           রাজীব মৌলিক


বধূ ছুঁয়ে দ্যাখো আমার নীলদুপুরের শরীর

এখনো টগবগিয়ে যৌবন ঝরছে,হৃদপিন্ড হিমাদ্রীর

জমাটবদ্ধ প্রেমগুলো হর্ন দেয়-অদূরে বসন্ত বায়ু

এই নিশুতি তমসায় গাঁথা হোক ভবিষ্যৎ-রক্তের জরায়ু

আর নয় অবহেলায় অযাচিত  সময়ের পানে ছুট

এ রাত জানুক,মরুর বুকে কত ভালবাসা সঞ্চয়-অটুট

পৃথিবী মুখ ঢাকুক তোমার বক্ষের রূপে

সময় থেমে যাক আজ প্রণয়ের সুখে

আলুথালু কেশে মেঘ ঢেকে যাবে-নিটোল দেহের গড়ানে

লজ্জিত কুমারী ভেঙ্গে দেবে সাঁঝ-উদ্বেল যৌবনের বানে

সমস্ত যামিনী নদীকূলের বিথী কেউ চোখ রাখবে না চাঁদে

ফুলসজ্জায় আজ লাল চাঁদ উঠবে গগনচুম্বী রাতের ফাঁদে





বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৯



শ্রাবণ
সুপ্রকাশ অধিকারী

আমার কচিবেলার  শ্রাবণ...
সাঁকোর নিচে অগাধ স্রোত
এ-মাঠ থেকে ও-মাঠ ভাসতে ভাসতে শিখে গেছি কত বিচিত্র সাঁতার।

এখন জলে জলে বিষ;
নর্দমা মিশে গেছে মাঠেদের সাথে; বাথটবে শিখছে সাঁতার
ও-পাড়ার ধনীদের মেয়ে।

আমার অঙ্কুরোদগমের শ্রাবণ...তিন-চারদিন লাগাতার চলতো বৃষ্টি-তুফান।

গাঁয়ে ঘরে লোকে বলে ফাঁপি...এ-দুয়ার সে-দুয়ারে ঘুরে ঘুরে অবসরে কচিকাঁচা শিখে যেত টোয়েন্টি-নাইন।

রাতে জেগে চলতো পাউস; আঙটি'তে লাগাতার লড়াই... মাগুগের কাঁটা-মানুষের হাত আর ঢ্যুঁর'টার দাঁতে।

সেই বিল আর নেই ... বয়েসের ভারে মজে যায় সব...
এই শ্রাবণের তাপে।

আমার আঠারোর শ্রাবণ!
কুঠার ওপর হ্যারিকেন জেলে,  খড়ের চালের ফুটোর নিচে হাঁড়ি পাতে মা! সারারাত জেগে জল ভরা জল ফেলা খেলা ... হাসি মুখে অবহেলা অভাবের সাথে।

আমার বন্যার শ্রাবণ...
সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছি তোমার পাকা দালানে...মুঠো ভরে খেয়েছি চিড়ে-গুড় সুখে।

কোন ফাঁকে চুপ করে গুঁজে দিলে হাতে গরম পাঁপড়।

এখনও শ্রাবণ আসে;
বৃষ্টি বিহীন মেঘে আর নেই জল...এখানে সুখ নেই... দুঃখ নেই...
শুধুই সময় বয়ে যাই হাওয়াদের সাথে!

অজান্তে বোকা চাষি হয়ে গেছে কখন মজুর।।

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৮



১. কবিতা: বোধিবৃক্ষ।
নাম: মহাম্মদ আরিফ।

ওগো বটবৃক্ষ আবৃত পাতায় কলেবর তোলো
বেতস চোখে অঞ্জন দিলে প্রায়ান্ধকার আঁচলের
সমাকীর্ণ কোটরে পাতি এক অধিবাস।
আবার যদি বা জন্ম নিল হংসমিথুন তোমার সকাশে।

ফিরে এসে দেখি তোমায় তেমনই অলকদামে।
জোনাকিপুঞ্জ হাসে ও ভাসে তোমার আলোর ঝর্ণা স্নানে।
স্তব্ধ রাত পাতা খুলে দ্যাখে জাতক গল্প
ঝুরি বেয়ে বেয়ে নেমে যায় গভীর প্রক্ষালনে।

বিরহ হলো প্রগাঢ় এখন নিথর দুপুরে
দীঘির জলের বেদনা তোমার মুখের চাদরে
নামিয়ে দিল শরৎ মেঘের টুকরো বাহু
পথের কাঁকড়ে আরো দাগ লাগে পিঙ্গলঘন।

কতদিন তুমি অদেখা হয়ে নিজের মাঝে?
কম্পিত হাতে কম্পিত পায়ে বুকের সমাধি আরো প্রাচীন
সকাল সন্ধে বাহু বন্ধনে তোমাকেই ডাকি,
একাকী, সুগম বন্ধু আমার মর্মতলের
বটবৃক্ষ, আঁকড়িয়া থাকো আমায় আমার।



২. কবিতা: মেঘ সারাদিন।
নাম: মহাম্মদ আরিফ।

মেঘ সারাদিন বৃষ্টিতে হলাম সর্বহারা
শার্সি ভেজে বাষ্প জলে, সামনে দাঁড়িয়ে
অথৈ ভিড়ে ভাস্কর্যের নিঁখুত মীরে, পাগলপারা।
ধুয়ে গেছে কবে 'বৃষ্টি ভেজা'।
মেঘের আদলে মেঘের ভিতর চতুর ঝঞ্ঝা
কীট ঘোরতর, ছেয়ে দিল সব হৃদিমজ্জা।
তুমি অপেক্ষায়, নগ্ন কায়ায় আছে শয্যা
আদুর পুলকে নিভু আলোকে খেলার মায়ায়।
আতিপাতি খুঁজি, বহু চেনা তুমি ফুঁপিয়ে কাঁদো
হারিয়ে মুখোশে মুখ ধ্রুবতারা লুকোচুরি খেলায়।

উৎপাটিত 'মন কেমনের" দুয়ারে বাড়িয়ে
পায়ের দলন, যেন সব ক্ষণ অনাদি স্মরণ।
কোন সুদূর নদী হয়েছিল সে সব মেঘেরা?
রামকিঙ্করও গেয়ে উঠেছিল বেসুরো গলায়
রাত নর্তকীকে শক্তিতে পেল, গালিবে পেল সাকীকে।
বিষাদস্নাত স্নিগ্ধ বিকেলে জল ঝরিয়ে
সে সব মেঘেরা হাওয়ার দোলায় জলকে যায়
সাত সমুদ্দরে ঠিকানা হারিয়ে মাঝ রাত্তিরে।
তখন তোমার মুখে ফুটে উঠেছিল প্রদোষ ছায়ায় একাকী বনলতা।
সামনে রাখা চতুর্ভূজ আলো কবে হয়ে গেল
মেঘ সারাদিন মেঘ সারাদিন
শার্সি ভেজে বাষ্প জলে, বৃষ্টিতে আমি সর্বহারা
অথৈ ভিড়ে পাগলপারা।



বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৭



বাস্তবিক প্রেক্ষাপট বর্ষন।(তোমার আমার)।

১. কবিতা: কাঙাল।

          সন্দীপ ভট্টাচার্য


এরপর রাত আরও গভীর হলে

গর্ভবতী সময় জন্ম দেয় স্বপ্ন সন্তানের

অজানা গন্ধ মাখা দীর্ঘ অতিদীর্ঘ স্বপ্ন সব


পচা ডোবায় পালিত শামুকেরা

এক পা দু পা খুঁজে পায় রাস্তা সমুদ্রপানে

গভীর নীলসায়রে নোনা জলের ওপারে মৎসকন্যার ঠোঁটের তিলের মতো সুখ


ঢুলচোখে রেশমী ছোঁয়ার মতো

চাঁদ গলে পড়ার যন্ত্রণা দিয়ে যায়

                                        একরাশ কষ্ট

রাত্রি ভোর হলে পা দুটো টেনে ধরে মাটি,

ঘুম ভাঙা সকাল বোঝে-

                    স্বপ্ন ভাঙা  মন কতোটা কাঙাল



২. কবিতা: মহাকাব্য।

      সন্দীপ ভট্টাচার্য।

চৌকাঠ ভাঙা স্বপ্ন গুলো ভয়ানক জ্বরে আক্রান্ত
খরা বন্যা পেড়িয়ে
মুহূর্ত রা গেছে অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজে
উত্তর মহাদ্বীপ থেকে উড়ে আসা
এক স্বর্ণঈগল ছাতিম গাছে বসে বলে গেল
সে নাকি এথেন্স ভাস্কর্য ছুঁয়ে এসেছে
আর ডানা ভিজেছে লেক গার্দায়
আমি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে ঘরের দৈর্ঘ্য মাপি

গাভিন বুকের গেরস্থালী হলুদ আতঙ্কে
শ্রাবনের উল্লাস জুড়ে আশ্চর্য কালো বিষাদ
চালের ঝুলে লেগে থাকা ক্লান্তিরা হাসে ম্লান হাসি
চার দেওয়ালে বন্দী আমি তখন আঁকিবুকি চিত্রী।
অথচ কথা ছিল দেখা হবে
দুমলং এর পশ্চিম চুড়ায়
বুক ভরে খাবো তোর ঠোঁট ছোঁয়া পাহাড়ী জল

মুক্ত হতে হতে পিছুটান যত
হারানো হলো না রাখালিয়া বাঁশিতে।
ভিত কাঁপা লোকাল ট্রেনের বুক ফাটা বিদ্রূপে
চাপা পড়ে বেদনা স্নাত মূর্ছণা
বুকেতে উল্কি দাগা বিদীর্ণ লিপিতে
আমার মহাকাব্য লেখা থাকে
অন্তঃপুরের পৃথিবীতে।।


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৬



কৌস্তভীয় গঙ্গোপাধ্যায়।

আমার ভেতর নারীর কোমল বৃষ্টি নামুক
জিতেন্দ্রিয় প্রথম রিপু
আবজে থাকুক
তোমার অধর রক্ত রাঙা গোপন হাসি
স্তনমাদলে পেলব ময়ূর চঞ্চু রাখুক

লেহন লেহন লেহন সখী নোনতা মেয়ে
দিনবদলে চাবুক মারি পিঠের ত্বকে
শোক মাদুলী ঝড় বয়ে যায় বিডিএসএম
অঙ্গুলী তোর অঙ্গুরীয় বোতাম কেটে
চাবকে তোকে আঁচ ধরাবো ঝর্ণা গ্রিলে

হায়রে কামোদ সেফটিপিনে রিয়ার কষি
ভাঙছে কোমর দিগ্বলয়ে চন্দ্র শশী
রোমপশমে বসন্তকাল শিশির ধোওয়া
আমার খিদে একলা খাটে ন্যাঙটো শোওয়া

চরিত্রমাস তাঁবুর ভেতর শিলের বাটন
আমার প্রিয়া শীর্ণ কায়া মন উচাটন
পুরুষ বলেই কামের মোহ অগ্নি রুচি
জঙ্ঘা উপুর মুক্তরাশি ভস্ম মুছি
মিলন এমন অশ্বারোহীর মহার্ঘ খাঁজ
শীৎকার তোর অঙ্গ কাঁপে বিমূর্ত ভাঁজ
উগ্র যোনি শনির কোপে লোহিত বরণ
অশ্বমেধে পুংযন্ত্র ত্যাগ আভরণ

হায় রে মেয়ে পোষাক আসাক লাগবে না আর
চর্যাপদে বসাই তোকে রাগ বিরহে
শৃঙ্গদেশে ফিনকি গলন বরফ চোরা
ভোরাইক্ষণে পদ্ম মুদে জমাই সোরা

আমার প্রিয়া পুচ্ছদেশে প্রলেপ ভরা

এবার প্রিয়া অবগাহনে পুকুর জলে
শ্যাওলা মাটি নরম ক্ষেতে আলতো জড়া
পুরুষ্ট তাপ আগ্নেয় ধ্বস চাঙর কেটে
আমার না হয় মৃগয়াক্ষণে আসন পড়া

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৫



১. কবিতা: স্পর্শ।

              নাম: সন্দীপ পিপলাই।
                         

              তোমার স্পর্শে ভোরের তন্ময়তা,
     সূর্যের বিকিরণ মেঘের আড়ালে
মন জুড়ে স্নিগ্ধ বাতাস...
              আমার লেখার পরিণত রূপ,তোর মাঝে l
            প্রতিটা ভোরের মিষ্টি সুভাসে  ডিও মাখা শরীরের অমোঘ উষ্ণতা।

                 প্রথম তোমার কাছে যাওয়া আগন্তুক বেশে,
           অন্তরালে গোপন উৎকন্ঠা
    সৃষ্টির আনাচে-কানাচে শুধু তুই ...
              বারান্দার টবের পাতাবাহার লেগে থাকা শিশির----
      যেমন ছুঁয়ে দেয় তৃপ্তির পরশ,
              তোর উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ প্রাপ্তির আকাশ ছুঁয়ে...

আঙ্গুল ছুঁয়ে নতুন পথের পথিক হয়েছি
  এক নিঝুম রাতের স্নিগ্ধ নীলিমায় l
      ছাদের রেলিং জল ফড়িং---
   মনে করায়, সবটুকু চিনে নেওয়ার ব্যপকতা...

    এলোকেশী চুলের বাঁধন...
           নিশ্চুপ চোখের চাহনি--- আলিঙ্গন মনের তীব্রতা!
           উফফ আমি পাগলপারা l
তুমি আসো মননে বারবার---
    পাশ বালিশের তীব্র আলিঙ্গনে...

             
       
২. কবিতা: ছিন্নমূল।

          সন্দীপ পিপলাই


      রাত একা চেয়ে আছে আমার অপলকে
         নিঃশ্বাসের চাদর ঢেকে রেখেছে মৃত আমিটাকে ,ক্ষত ঘিরে আজ স্মৃতির সেলোপিন...
     রোদে শুকানো ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে ফাগুন ,রেনেসাঁর জরীপে আটকে থাকা মরীচিকা!
     সাদা খামে বন্দী যতো স্বপ্ন মাখা কল্পনা আজ আর্কাইভ,
        ছেঁড়া অনুভূতি,অপরিমেয় বাস্তব!

কতো কিছু ছুঁয়ে আছে কার্নিশ ভাঙ্গা মনটা ,খসে পড়া সাজঘরের কবরে--
   মৃত্যু প্রশ্ন করে জীবন তারে বয়ে চলা লুপ্ত অনুভবে !
    কে তুই ?
         দীর্ঘ শূন্যতা চিরে স্পন্দন খোঁজে আশ্রয় যবনিকার অন্তরে...

      বাস্তব এক প্রকাণ্ড চিৎকার--- অস্তিত্বের কলেবরে ,
       জীবন্ত শবের নাগপাশে পরে  অবিচ্ছেদ্য আমিত্ব!
               টুকরো হওয়া মনের শিকড়ে লেগে থাকা অনুভূতি, শুধু উপরে ফেলা ছিন্নমূল ...



৩. কবিতা: যে_যাই_বলুক।

                সন্দীপ পিপলাই।
 
 
     তোমার ঝুমকো কানের দুল...
            আর এলোমেলো খোলা চুল,
গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট,
         যতো রঙিন প্রজাপতির জোট।

ঢেউ খেলানো তোমার শরীর---ঠিক যেন তীর তীর বয়ে চলা ইছামতি!
                  ছুঁতে চাই তোমার কোমল বক্ষ নিরবধি l

        চুম্বনে চুম্বনে তুলবো ঝড়!
        যে যা বলুক যাতা ---আমি ছোঁবই তোমার শরীরের বালুচর!
             উষ্ণ শরীরে মেলবো মনের জানালা।
                        উন্মুক্ত শরীরের ভাঁজে ভাঁজে যৌনতা!
            হৃদয় ক্যানভাসে শরীর মনের মুখর মৌনতা।
                      কারণ ছাড়াই তোমাকে ভালোবাসি ঠিক যেমন আলো-আঁধারি..

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৪



১. বর্ষাবিষয়ক কবিতা:

  সেই মুখ।

অমিতাভ দাস।


ভুলিনি আজও সেই মুখ

ভুলিনি আজও এক বুক বৃষ্টি এসে কীভাবে ঝাপসা করে ছিল মনের অলিন্দ নিলয়।

যখন রক্ত রঙে রঙিন পথে পড়েছিলাম  আর সহযোদ্ধারা দেখালো কাপুরুষ পিঠ তখন ঢাল সেজে দানব দলনী হয়ে যাওয়া সেই মুখ ভুলিনি এখনো।

ভুলিনি তপ্ত কপালে টপটপ ঝরে পড়া ধারাপাত,

যা মোছার জন্য পিঠ টান টান করে উঠে বসেছি বারবার।

ভুলিনি বৃষ্টি ছোঁয়া গোধূলি বেলায় টকটকে অপার্থিব সময়ে ও মুখ দেখে মনে জেগে ওঠা বিদ্রোহী কবিতার পংক্তিগুলো।

ভুলিনি আজও সেই মুখ

যা প্রেম আর বিদ্রোহের দেওয়াল লিখন।



বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২৩



১. কবিতা:

বৃষ্টি সম্পর্কে দু'চার কথা।

চিরঞ্জীব হালদার

পায়ের নুপুর ভিজে উঠলে কি সাপিনীর মত ডেকে ওঠে।
রিম ঝিম ফোঁটায় সিক্ত সাংসারিক ছাতা কি কথা বিনিময় করে।
নিচে তার আরণ্যক ভঙ্গিমায় তৃষ্ণার্ত কেকা জুঁই ফুলের সুগন্ধ ছড়ায়।

সব মেল নতজানু মেঘেদের কাছে
সব না লেখা মেসেজ মেঘেদের ডেকে বলে আসিও আসিও।

আজ মেঘেদের জন্মদিন।
প্রেমিকেরা জ্বালিয়েছে বাতি।
খুলে দাও সমূহ কপাট।
হে বেলুন তুমিও আসিও ইহাদের সাথে বারিস সঙ্গমে।
আজ আর জল নয় ক্যাডবেরি
 ঝরিতেছে গহন সদন।


২. কবিতা:

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস---

চিরঞ্জীব হালদার।

মেঘেদের পরীক্ষায়
দশে পাবে দশ।

বলো ফোঁটা ভান---
কিশোরীর দেহ জুড়ে
ভেজাও নাদান।

প্রতি প্রশ্নের উওর
টু দি পয়েন্ট লিখো
শাড়ীহীন বৃষ্টিতে
চাই ফলস পিকো।

পিকোতে আটকে থাক
গুড়ি গুঁড়ি প্রেম।
দেখি কে ছক্কা হাঁকে
কতটা এলেম।

বৃষ্টি কতটা হলে
ভিজে ওঠে মন।
প্রেমিকা জোটাতে গেলে
কে  হবে বাহন।

৩.

এ কেমন অন্য মেঘ অন্য বর্ষা।

চিরঞ্জীব হালদারের আরেকটি কবিতা।

অমন  সুন্দরীর পাঁচটা তিল দেখলে কেনা পাগল হবে।

বট বৃক্ষের মর্মর থেকে উঠে আসা
রৌদ্রচারী সাপ
উভয়ের মধ্যে এক সমাবর্তন
আর প্রগাঢ় হেঁয়ালি মেলে ধরে।

ঢেমনীরা কি আই ল্যাসে
অনেক পক্ষীর ডাক ঢেকে রাখে।
অনেক সেতার বাদিকা তার
চুমকি নাভিতে যাপন করে পদ্মণাভ ঘুম।
কয়েকজন কীর্তনীয়া তার রমনীয়
পেশিতে এঁকে দেয় বৈষ্ণব বিনয়।

একটি বেড়াল দেখি ইদিপাস
খ্যামটা আদলে ঢলে ঢলে গুঞ্জামুখি।

আমি কোন সাতে পাঁচে নেই।
তবু তিল বহমান দেখি উর্বর আহ্ণিক।

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২২



শ্রাবণের প্রকৃতি

জয়ন্ত ব্যানার্জি

শ্রাবণের সোহাগে মেঘেদের সুরসংগতি;
বিষম রসিকতায় অংশুমালীর চপলতা ভরা হাসি।
অব্যক্ত বিভূষণ অগ্নিশিখা রমণী,
দৃষ্টির দর্পণে নন্দিত পদ্মপাণি।
শ্যামলাভ প্রকৃতির কোলে ফুলবাবুর কাকলি,
বর্ষালি মেঘে কালচে আকাশ কৃষকের মঙ্গলধ্বনি।
অশরীরী ছায়ায় কালো মেঘের গড়াগড়ি,
ফেরারি পর্যটক দেখে মেঘের সাথে অন্তরঙ্গ গিরি।

বুকের চেনা গন্ধ নিয়ে উবেছে আকাশ;
বনান্তে শুরু বৃষ্টি,
উন্মত্ত "ধরাধর,বাতাস",
এভাবেই কল্পতরু হয়ে ওঠে প্রকৃতি;
উৎফুল্ল হৃদয় দেখে নিসর্গ ইতিহাস;
শুষ্কতা ছুটে এসে মুছে দেয় শ্রাবণ মোহরী।


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২১



১. কবিতা:

______লুপ্ত

             সুনন্দ মন্ডল


রম্বসের চৌকোণে শ্যাওলারা ভিড় জমিয়েছে

ভেন্টিলেশনে তখনও মেঘের ডানা ঝাপটানো

রাত্রির বৃত্তে সুখী পায়রা

বিশ্বস্ত আবহে বর্ষামঙ্গলের প্রহরী।


চড়াই গুলো খড়ের চালে আর বাসা বাঁধেনা

বাবুইয়ের ঘুলঘুলিও শুকনো।


আষাঢ়ের গলা তৃষ্ণা বন্দী

একফোঁটা জল তবু দেখিনা

কালো আকাশের নীচে নেই বৃষ্টি ফোঁটার প্রতিচ্ছবি

মাটির পঞ্চান্নতে নেই মাঙ্গলিক পদধ্বনি।


মিশ্র ভগ্নাংশের জটিলতায় হারিয়েছে বর্ষামঙ্গলের গান।

ক্ষয়ে যাচ্ছে সামাজিক তথা লৌকিক চিত্র।

                   ----------------


২. কবিতা:

______বর্ষা মঙ্গল

                  সুনন্দ মন্ডল


মঙ্গল মঙ্গলে মঙ্গলের আবাহন

স্থির চিত্র দর্শনে মনসার নাচ

দাবিদার সূত্রে দেবীর মাহাত্ম্য লীলা

ক্ষুন্ন সকল প্রতিরোধ।


সাইরেনের চেয়েও ভারী

যুগের নৃত্য তালিকায় অগণিত মোহিনী

বিলাসী রাতে ফুটে ওঠে নব কল্লোল

বর্ষা মঙ্গলের রাত।


বর্ষা আষাঢ়ের ধূলি ভেজা পথে ঘোরে

জলীয় বাষ্পের সঙ্গী মেঘের ঘাড়ে চেপে।

দূর দূরান্তের উপার্জনীয় দায়ে

আনন্দের বিশ্ব রচনা করে জলের গায়ে।

             -------------