১. কবিতা: ইতিহাস ।।
অভিজিৎ_দত্ত ।।
আকাশের জানালাটা খোলা পেয়ে ---
ভেজা রোদ্দুর বিছিয়ে দিল একাকীত্বের চাদর,
বহিরঙ্গে ঘুণেধরা ইঁটের পাঁজরে,
শ্যাওলা জমা চারপাশের দেওয়ালে।
মুছে যাচ্ছে বাঙ্গালীর বৈপ্লবিক ইতিহাস,
কালের কপোত তলে।
জ্যোতির কিরণে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে
ভুলে যাচ্ছি কে বা কারা ছিলেন বিনয় বাদল দীনেশ -----
প্রোথিত বা দোদুল্যমান তাঁরা রাস্তার ফলকে বা মেট্রোর স্টেশন প্রাঙ্গণে ।
সূর্যের সপ্তাশ্ববাহন ---- মখমল চোখে,
খুঁজতে বেরিয়েছিল গৌড়ের দিনপঞ্জি
বিগত শতিকার
ভ্রাম্যমান গোধূলি আলোকে।
কিন্তু নাহ ! বাজারের 'ভাও' কষা আঙুলে,
হাতবদল হতে হতে আমাদের দিনলিপি
এখন হারিয়ে গিয়েছে-----
রাজনীতির আঁচলের আড়ালে ।
*******
২. কবিতা: বারোভূতের_সংসারে।।
অভিজিৎ_দত্ত ।।
(দাড়িবুড়ো ক্ষমা করে দিও)
ভগবান তুমি যুগে যুগে ভূত
পাঠিয়েছ মোর ঘরে,
তাঁরাই আসিয়া করিছে বসত
আমাদের সংসারে।
কোন ভূত তবে কাটিছে পকেট,
কেহ বা উঠিল ঘাড়ে,
বড়ো ভূতিনির শাপশাপান্ত
শুনি দিনমান ধরে।
এক ভূত কহে দোসরেরা তার
চিকেন কাবাব খায়
বন্ধুরে তার মাটন খাওয়াতে
পশ্চাৎ ফেটে যায় ।
আরেক ভূতিনি ম্যাটিনি দেখিতে
পাঁচটি পাত্তি চায়,
মলে গিয়ে নাকি ছবি না দেখালে
প্রেস্টিজ চলে যায় ।
যদি বলি সেই মাটন ম্যাটিনি
এবার মুলতুবি থাক
ভূতের ছানারা বক্ষ বিদারিয়া
কাঁদে ছেড়ে এক ডাক।
বড়ো যে ভূতিনী তাহারও শুনেছি
জমিদার বাড়ি গোত্র
সাঁঝ বেলাতেই মেয়ে কিডন্যাপ
আমিই ছিলাম অপাত্র।
সেই ট্র্যাডিশনে খেসারত দিতে
হাঁটিয়া অফিস করি
গেঞ্জিটা মোর ছিঁড়ে গেল তাও
সেলাই করিয়া পড়ি।
পাড়ার ভূতেরা সহাস্য বদনে
আমারে ডাকিয়া কয়,
দূর্গা পূজার ভূতের যজ্ঞে
চাঁদা কিছু দিতে হয়।
শুনিয়া চাঁদার পরিমাণ তবে
ভূতেরও হৃদ্কম্প হয়
ভূতের খোলস ছাড়িয়া সে তবে
মানুষের রূপ চায়।
ভূতেদের এই মহান কর্মে
ভূতবাড়ি গমগম
কিন্তু সেথায় সমন ধরায়
সরকারী এক যম।
কহে সে হাঁকিয়া আছে কি তোমার
বসতবাড়ির পাট্টা,
নেই যদি তবে অনুপ্রবেশকারীর
খাইতে হইবে গাট্টা।
সেই ইস্তক ভূত হয়ে আছি
নিজেদের সংসারে
মানুষ মরিলে ভূত হয় জানি
ভূত ম'লে সে কি করে?
৩. কবিতা: মেরা_ভারত_মহান।।
অভিজিৎ দত্ত।
পাশবালিশটা বুকে জড়িয়ে
দুপুরের ভাতঘুম শেষ করে
মরা বিকেলের ছায়া ছায়া রোদ্দুরে
বাবুমশাই যাবেন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে
আয়োজিত এক সভায় ।
এখনো সভা বসেনি রোদের তাপ যে কমেনি
তাই তো ঘামে ভেজা শরীরের সাথে
লেপ্টে থাকা শিশুকন্যাটিকে বুকে জড়িয়ে
রোদের তাপ থেকে রক্ষা পেতে
সামিয়ানার নীচে আশ্রয় নিয়েছে
এক স্বাধীন ভারতের নারী।
আজ সকালে ভাত জোটেনি
কোথাও যে আজ ভোজ হয়নি
হয়নি তাই কাঙ্গালী বিদায় ।
ওই যে মোটরবাইকে ধুলো উড়িয়ে
সামনে তেরঙ্গা ঝাণ্ডা লপটিয়ে
আরেকজন স্বাধীনতার ফসল এলেন
জন-সমায়েতের স্থান নিজের চোখে দেখে যেতে।
ক্ষুধার্ত মেয়েটি ডাস্টবিনে পড়ে থাকা
উচ্ছিন্ন রুটির টুকরোটা
বড়ো তৃপ্তি করে খাচ্ছে
কোলের বাচ্চাটা তার দুধ না পেয়ে কাঁদছে
আর বাবুটি ভাতঘুম শেষ করে
সভায় বক্তৃতা দিতে হেলে দুলে আসছে
আজ যে স্বাধীনতা দিবস
মেরা ভারত মহান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন