বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সম্পাদকীয় কলম--সুপ্রীতি বর্মন


চতুর্থ ভাগ: কবিতা প্রশস্তি,,,,

(( বিদ্যাসাগর স্মৃতি গ্রন্থ থেকে কবিতাটি সংগৃহীত,,,))

সাগর- তর্পণ,,,,

লিখেছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত,,,,

(( আমার সংযোজন,,, এই অপুর্ব বিদ্যাসাগর প্রশস্তি সূচক কাব্যের সাথে আমার লিখিত খন্ডবিখন্ড অন্তরসত্য,,কিছু নিজস্ব কথন,,, ))

১,,,,,,

বীরসিংহের সিংহশিশু! বিদ্যাসাগর! বীর!
উদ্বেলিত দয়ার সাগর-বীর্যে সুগম্ভীর!
সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়,
তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়।

নিজস্ব সংলাপ,,,,
(অন্তরসত্য),,,,,

((স্থবিরতায় সেদিন যে সাগর--‌অগ্নি ঘুমিয়ে ছিল মহান মনুষ্যত্ব আদর্শে জান্নাত সংরক্ষিত মৌন‌-ঈশ্বরচন্দ্র-সৌধে,,, তা হঠাৎ করালগ্রাসী শাসনতান্ত্রিক পুঞ্জীভূত ক্ষোভে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে এক তীব্র সাম্প্রদায়িকতার পদস্খলনে,,,, কি তীব্র তার আর্তনাদ হায় বাঙালী হায়,,, তুই শুনলি না বা শুনতে চাসনি একবার,,, তাই হয়ত জেগে উঠেছে অবিশ্বাসী প্রত্যয় আবার,,))



২,,,,,,

         নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে, দয়ার অবতার!
        কোথাও তবু নোয়াওনি শির,জীবনে একবার!
দয়ার স্নেহে ক্ষুদ্র দেহে বিশাল পারাবার,
সৌম্য মূর্তি তেজের স্ফূর্তি চিত্ত- চমৎকার।

নিজস্ব সংলাপ,,,,
(অন্তরসত্য),,,,

((অখন্ড পৌরুষ তুমি কোনদিন নোয়াওনি তব উন্নত শির আজ তবে কেন খন্ডিত শিরধ্বজা বিষণ্ণ আঙ্গিক,,, ভেঙে পড়েছে অপদস্থ ধূলিশয্যায়,,, তোমার ছিন্ন-‌চির উন্নত-শির))


৩,,,,,,

নামলে একা মাথায় নিয়ে মায়ের আশীর্বাদ,
করলে পূরণ অনাথ আতুর অকিঞ্চনের সাধ,
বিঘ্ন-বাধা তুচ্ছ করে দৃপ্ত দুর্নিবার,
অদৃষ্টেরে ব্যর্থ তুমি করলে বারংবার।

নিজস্ব সংলাপ,,,,
(অন্তরসত্য),,,,

((ভাগ্যের কুচক্রী পাপবিদ্ধ শরাঘাত তোমার আদর্শে এনেছে আঘাত,,,, তাই ইচ্ছে না থাকলেও আজ দশচক্রে ভগবান হয়েছে ভূত,,, ভাঙন ও ঘুণ ধরতে লেগেছে তাদের হাড় মজ্জায়,,,,যেন জাতির নামে বজ্জাতি,,,, এ কেমন অদৃষ্টের নিষ্ঠুর পরিহাস))



৪,,,,,,,

বিশ বছরে তোমার অভাব পূরল নাকো, হায়
বিশ বছরের পুরানো শোক নূতন আজো প্রায়,
তাইতো আজি অশ্রুধারা ঝরে নিরন্তর!
কীর্তি-ঘন মূর্তি তোমার জাগে প্রাণের পর।

নিজস্ব সংলাপ,,,,
(অন্তরসত্য),,,,

(( আজ‌ও তুমি জেগে আছো ও থাকবে চির উন্নত পৌরুষ শৌর্যে ও পরম আত্মহুংকার বীর্যে,,, কোনদিন অভাব হবে না চাক্ষুষ করতে তোমার আদর্শ অমলিন,,,,কারণ তোমার অস্তিত্ব শুধু পথের ধারে কোন পাষাণপ্রস্তরে নয়,,, তুমি আজ‌ও জেগে আছো ও থাকবে বাঙালীর প্রাণের পর,,, কারণ তোমার আদিগন্ত ব্যাপী বিশালাকার করুণাসাগর সীমাবদ্ধ থাকতেই পারে না,,, কেবলমাত্র একটি মূর্তিতে,,,))



৫,,,,,,

স্মরণ-চিহ্ন রাখতে পারি শক্তি তেমন নাই,
প্রাণপ্রতিষ্ঠা নাই যাতে সে মূরৎ নাহি চাই,
মানুষ খুঁজি তোমার মত, একটি তেমন লোক,
স্মরণ-চিহ্ন মূর্ত! -- যেন ভুলিয়ে দেবে শোক।


রিক্ত হাতে করবে যেন যজ্ঞ বিশ্বজিৎ, -
রাত্রে স্বপন চিন্তা দিনে দেশের দশের হিত, -
বিঘ্ন-বাধা তুচ্ছ করে লক্ষ্য রেখে স্থির
তোমার মত ধন্য হবে, - চাই সে এমন বীর।


তেমন মানুষ না পাই যদি খুঁজব তবে হায়,
ধূলায় ধূসর বাঁকা চটি ছিল যে ঐ পায়,
সেই যে চটি উচ্চে যাহা উঠত এক-একবার
শিক্ষা দিতে অহংকৃতে শিষ্ট ব্যবহার!


সেই যে চটি দেশের চটি বুটের বাড়া ধন,
খুঁজব তারে, আনব তারে, এই আমাদের পণ,
সোনার পিঁড়েয় রাখবো তারে থাকবো প্রতীক্ষায়
আনন্দহীন বঙ্গভূমির বিপুল নন্দিগাঁয়।


শাস্ত্রে যারা শাস্ত্র গড়ে হৃদয়-বিদারণ,
তর্ক যাদের অর্কফলার তুমুল আন্দোলন,
বিচার যাদের যুক্তিবিহীন অক্ষরে নির্ভর,
সাগরের এই চটি তারা দেখুক নিরন্তর।


দেখুক, এবং স্মরণ করুক সব্যসাচীর রণ, -
স্মরণ করুক বিধবাদের দুঃখ-মোচন পণ,
স্মরণ করুক পান্ডারূপী গুন্ডাদিগের হার,
'বাপ-মা বিনা দেবতা সাগর মানেই নাকো আর।'

নিজস্ব সংলাপ,,,,
(অন্তরসত্য),,,,

(( অনেকটা দারিদ্র্য এর দুর্বিষহ যন্ত্রণা ও শোক বুকে চেপে করে গেছো দেশ ও দশের মঙ্গল,,,, নিজ লক্ষ্যে স্থির থেকে একাগ্র চিত্তে,,, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন,,,, যদি ঐ পাষাণপ্রস্তরে জাগে তোমার প্রাণ তাহলে হয়ত এই ঘোর অরাজকতার খান্ডবদহনে হাতে তুলে ধরতে আবার বাঙালী চটি আর পিটিয়ে পিটিয়ে সিধা করে দিতে পারতে ভেঙে যাওয়া মেরুদণ্ড এ দাঁড়ানো ক্ষণজীবী বাঙালী জাতি,,,, ঘুচে যেতো সকল মিথ্যা উচ্চকন্ঠী প্রতিবাদের আম্রকানন,,ভগ্নপ্রায় জাতির হাস্যকর আস্ফালন,,,, ))



৬,,,,,,

অদ্বিতীয় বিদ্যাসাগর!  মৃত্যু -বিজয় নাম,
ঐ নামে হায় লোভ করেছে অনেক ব্যর্থ কাম,
নামের সঙ্গে যুক্ত আছে জীবন-ব্যাপী কাজ,
কাজ দেবে না, নামটি নেবে? একি বিষম লাজ!


বাংলা দেশের দেশী মানুষ! বিদ্যাসাগর! বীর!
বীরসিংহের সিংহশিশু!  বীর্যে সুগম্ভীর!
সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়,
চক্ষে দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়!

নিজস্ব সংলাপ,,,,,,
(অন্তরসত্য),,,,,

(( আশায় আছি আর আমার মায়ের ভাষায় আছি সুরক্ষিত থাকার সকল উপাচার যত্নে আগলে রেখে আলপথ ধরে যেন কোন কিছুর আঁচ গায়ে না লাগে,,,, আবার হয়ত আসবে একদিন সেই সুসময় যখন দৃপ্ত বজ্রকঠিন প্রত্যয়ে ভাঙা মেরুদন্ড সোজা করে অবিশ্বাসী বাঙালীর জাগবে বিশ্বাস,,,,বিদ্যাসাগর অপরাজেয় আপোষহীন পৌরুষে সাহসিকতার বর্ণপরিচয়ে দুর্বল মানুষকে দেবে ঘুরে উঠে দাঁড়ানোর মতন দুর্দমনীয় আত্মবিশ্বাস,,,,সেদিন আবার আমার জন্মভূমি জগত সভার শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করবে,,, ))



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন