বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সম্পাদকীয় কলম--সুপ্রীতি বর্মন


উপসংহার,,,,,

(( "বিদ্যাসাগর স্মৃতিকথা" গ্রন্থ থেকে এই অংশটি সংগৃহীত। এই প্রেক্ষাপটের সাথে প্রাসঙ্গিক আমার কিছু পর্যালোচনা"))


সংসার যেরূপ বিরুদ্ধ স্থান, তাতে তুমি দীর্ঘজীবী হলে কখন‌ই সুখ ও স্বচ্ছন্দে জীবনযাত্রার সমাধান করতে পারবে না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কর্মেন্দ্রিয় এর শৈথিল্য আসবেই এবং উপযুক্ত মনোবল না থাকলে এই নৈরাশ্য ও হাহাকার এড়ানো অসম্ভব। দেহ যখন দেহধারীর বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন মনকে এক দেহাতীত আদর্শের আকাশে স্থাপন না করে উপায় নেই। তিনি মানুষের দুঃখ দেখলে আবেগের আতিশয্যে ঈশ্বরের অস্তিত্বেও প্রশ্ন তুলতে সাহসী হয়েছেন,,,,,

আজ সেই মনীষীর ভগ্নদশা ঈশ্বর বোধে নিজেই একটা অনিশ্চিত ভবিতব্য এর মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে ঝুলে আছে,,, সকল মানুষের কর্মেন্দ্রিয় তে হয়ত শৈথিল্য এসে গেছে যে ঐ ঘটনা ঘটে যাওয়া কেউ আর আটকাতেই পারলো না,,, দেহ যেটা একটা বিরাট বিড়ম্বনা তাকে পরিত্যাগ করে দেহাতীত আদর্শেই তার মহান আত্মা পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। সংরক্ষিত যার ছোঁয়া পেতে অসীম মহাকাশ শূন্যতা বুকে ধরে রাখতে হয়,,, যেটা হয়ত আমাদের মতন নগন্য মানুষের সীমারেখার অনেক উর্ধ্বে,,,, তাই এই মূর্তি ভেঙে যাওয়াই বোধহয় ভালো,,, কারণ তা গ্রহণ করতে আমরা সম্পূর্ণরূপে অপারগ,,,,

বিদ্যাসাগর দুঃসহ আঘাত পেয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত এই বেদনা বহন করেছিলেন। তিনি নৈরাশ্যগ্রস্ত  pessimist  ছিলেন বলেই আখ্যাতি লাভ করেছেন।তার বেদনা ছিল দেশের কাছ থেকে সেখানে তিনি শান্তি পাননি। তিনি তাতে কর্তব্যভ্রষ্ট হননি, কিন্তু তাতে তার জীবন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। বড় তপস্যার দিকে স্বদেশীদের কাছেও কোন অভ্যর্থনা পাননি।

মহাপুরুষেরা হয়ত না পাওয়ার গৌরবের দ্বারাই ভূষিত হন।বিধাতা তাদের যে দুঃসাধ্য সাধন করতে সংসারে পাঠান তারা এই দেবদত্ত দৈত্যের দ্বারাই অন্তরের মধ্যে সম্মান গ্রহণ করেই আসেন। বাইরের অগৌরব তাদের অন্তরের সেই সম্মানের টীকাকেই উজ্জ্বল করে তোলে,অসম্মান‌ই তাদের পুরস্কার,,,,
আর সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে সাধনায় সামান্য না পাওয়ার শোক নিয়তি ও নির্যাতনের হাহাকারে  জীবন কে বিষাদান্ত করে তোলে। বিভ্রান্তির বোধ তাকে অনুশোচনায় দগ্ধ করে মারে আর তার আত্মিক ভারসাম্য খোয়া যায়,,,,

বিদ্যাসাগরের অস্তিত্ব ঐ আঘাতে বিন্দুমাত্র খন্ডিত হয়নি আর কোনদিন হবেও না,,, কারণ তার আদর্শ হল দেহাতীত,,,, জগৎ-তত্ত্বই তার সাধনার অবলম্বন ছিল,,, সেখানে আত্মতত্ত্বকে তিনি যদি বর্জন না করে চলতেন তবে অতলান্ত সমুদ্রবক্ষে জ্বালা যন্ত্রণার বিক্ষোভের পরিবর্তে অনাসক্তির নিস্পৃহতাই দেখা দিত না কি নিশ্চল শান্তির তারল্য?

তাই তার প্রাপ্তিযোগ নিয়তির কালরাত্রির দুর্যোগে কিঞ্চিৎ হলেও তার মান সর্বত্যাগী ও অক্ষুণ্ণ আছে এবং থাকবে সকল বাঙালীর মনে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই,,,,


সমস্যার মীমাংসা,,,, সমাধান সূত্র,,,,

#######################

একদিকে লোকে অন্ধবিশ্বাসের অধীন হয়ে আপন ভাগ্যের নিন্দা করতে করতে অলসভাবে তাদের দিনযাপন করতে থাকে। জাগতিক কি ঘটছে বা আসন্ন আগামীতে কি ঘটতে পারে সেটার ইঙ্গিত ঐ যতটুকু নিউজ হেডলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়া গুছিয়ে  garnishing  করে মুখের সামনে ধরে দেয় ততটাই আত্মকেন্দ্রিক সুখে গ্রহণ করতে থাকি। বাকি কি হচ্ছে না হচ্ছে তার প্রতি উদাসীন থাকাই সংসারের পক্ষে মঙ্গল,,,,

অপরদিকে নতুন ভাব ও নতুন উদ্যমের খরস্রোতে শিক্ষিত বাঙালী যুবকদের আদর্শহীন অজ্ঞাতপথে নিয়ে যাচ্ছিল কারণ তাদের  মাথার উপর কোন নির্দিষ্ট পথপ্রদর্শক নেই বা তার অভাব যথেষ্ট রয়েছে,,, যেটা এক জটিল ধাঁধা,,,,

সেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে কর্মক্ষেত্রের দরজায় দাঁড়িয়ে নতুন বিদ্যাসাগর দেখলেন,,,,মূর্তিমান মনীষী আদর্শের এক স্মৃতিসৌধ স্মারকে দাঁড়িয়ে থ হয়ে,,,, কি সব ঘটে চলেছে চতুর্দিকে কেবল এক নৈরাজ্য স্বার্থান্বেষী খাওয়াখাওয়ি আর নৈরাশ্যের ঘন ধুম্রকালো জটাজুট এলোকেশে সর্বস্বান্ত মাতৃভূমি,,,,আমার সোনার বাংলা।

একপাশে রাজনৈতিক দলাদলি আক্রোশে আক্রমণাত্মক পারস্পরিক হিংসা ও হানাহানি,,, আবর্জনাপূর্ণ যেন কোন বিশাল অরণ্য,,, বহু রত্নের আকর হয়েও অজ্ঞাত ও কুসংস্কারের দৃঢ় নিগড়ে পরিবেষ্টিত,,,,

অপরদিকে বিচিত্র দৃশ্য সমুদ্র বক্ষ নিষ্পাপ ও নিশ্চল সাহিত্য ও সৃষ্টি সাধনার যেখানে রয়েছে হৃদয়গ্রাহী নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য আর এক অপার অগাধ প্রশান্তি,,, কিন্তু তার মধ্যেও চাটুকারিতা ও পদলেহনের কর্কট কিংবা বৃশ্চিক,,,, আর রয়েছে সর্বগ্রাসী লোভের তিমি ও মকর যাদের অন্তহীন সমুদ্রের তলায় গুপ্ত অবস্থান।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উভয়ের সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে দিব্যনেত্রে তার ভাবী সংকল্পের পথ দেখাতে থাকলেন। আর উভয় বাধা বিঘ্নের মধ্য দিয়েও একটা সুদৃঢ়পথ তৈরী করে ছাড়বেন বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন,,, যে চেষ্টা আমরা এই জাগতিক দুর্বিষহ জীবনে ও অর্থনৈতিক বৈষম্যে সমানে করে চলেছি আর পর্যুদস্ত হয়ে যাচ্ছি বারবার।

প্রাচ্য কুসংস্কার ও পাশ্চাত্য আড়ম্বর পরিহার করে নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ বীরপুরুষের উপযুক্ত পথে তিনি অগ্রসর হতে লাগলেন। উভয়পক্ষের মন্দভাগ ত্যাগ করে রত্ন আহরণের চেষ্টায় মেতে উঠলেন। আর সেইভাবেই আপন জীবনের শোভা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে বর্তমান জীবনের সমস্যার মীমাংসা করা যেতে পারে,,, আর হয়ত এই প্রচেষ্টায় একটা ঠিকঠাক সমাধান সূত্র পাওয়া যেতে পারে।।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন