রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯

অজিত রায়


নারী কী আমি জানি না

অজিত রায়

.............................

সেক্স একটা অর্গানিক ট্রুথ।  আহার, নিদ্রা আর মলসাধনের মতই নিখাদ শরীরচর্চা।  কিন্তু কপুলেশন বা মৈথুন বা তসলিমার দি গ্রেট সরাফমামু যারে কয়েছেন 'ড্যাস-ড্যাস', সেটি ভদ্দরপুঞ্জে সহজ উচ্চারণ নয়।  কেননা এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অ্যাসটোনিশমেন্ট আর ভ্যাজাইনাল সেন্সিবিলিটি।  যে কারণে এত জরুরি একটা কাজ আমাদের অন্যান্য জৈবিক কারবার থেকে বেপোট হয়ে গ্যাছে।  এটা ওই ভদ্দরপুঞ্জের টুলোদের কারসাজি।  ওরাই সামাজিক ট্যাবু ম্যানুফ্যাকচার করেছে।  শ্লীল-অশ্লীলের মধ্যে ভিড়িয়ে দিয়েছে কোঁদল।  ওই কোঁদল আর তার অ্যাডহিরিং লুকোচাপার দরুন এদেশের ফিল্ম এবং সাহিত্যেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, যৌনতা দেখানো হয় পারভার্টেডলি।  বলতে পারো, যৌন বর্ণনা বা ছায়াকরণের ক্ষেত্রে মোটামুটি পর্নোগ্রাফিকেই উল্টো ছাঁদে সার্ভ করে আসছেন এ দেশের বেশি ভাগ রাইটার-ডিরেক্টররা।


আমার সমস্ত উপন্যাসেই 'নারী' পুরুষের ইন্টেলেক্ট থেকে আঁকা।  কিন্তু একজন বখাটে খানাখারাব হলে কি নারীদেহের মহার্ঘ পার্টসগুলোকে আমি অন্য চোখে দেখতাম?  হয়ত, একদমই না।  এ ব্যাপারে ভদ্দরলোক বলো, ছোটলোকই বলো, সব মিনসের এক রা।  মাথার শিরোজ থেকে গোড়ের পদরজ, একটা হোলদামড়ি নারীর কী-ই না ভাল্লাগতো কালিদাসের!  তবে আমার-মতো উনি কতখানি সাধুলোক ছিলেন, খটকা আছে।  সাধুমণ্ডলে নারীর অষ্টোত্তর শতনাম।  শঙ্খিনী, পদ্মিনী, চিত্রিণী, হস্তিনী ----- এসব তো মানুষের নিজস্ব এলেমে হয়নি, খোদ বিশ্বকর্তা নিজের হাতে গড়ে দিয়েছেন।  ফের এদের মধ্যে শঙ্খিনী আর পদ্মিনী হলো 'আইটেম' বিশেষ।  তেনার 'অন্তিমের মার'ও বলতে পারো।  একা তুমি কেন, বাইবেলেও বলেছে, নারীই বিধাতার শেষ সৃষ্টি।  'হে শুভদর্শনা', অশোক ফরেস্টে সীতাকে দেখে রাবণ কেলিয়ে গিয়ে বলছেন, 'আমার মনে হয় রূপকর্তা বিশ্বনির্মাতা তোমায় রচনা করেই নিবৃত্ত হয়েছেন, তাই তোমার রূপের আর উপমা নেই।'  অথবা, ঈভার প্রতি মিল্টন :  'ও ফেয়ারেস্ট অফ ক্রিয়েশন, লাস্ট অ্যান্ড বেস্ট / অফ অল গড'স ওয়র্কস'।


বাংলা সাহিত্যেও নারীর উপমা যে একেবারেই নেই, সেটা বললে বাওয়াল হবে।  তবে আমি আমার কথাই বলব।  আমি মৃণার বুকে কান পেতে শুনেছি সমুদ্রের কলকল।  নারী সমুদ্র ছাড়া আর কী, বলো!  হোক নোনা।  কিন্তু নোনা থেকেই লোনা।  লোনা থেকে লবণ।  লবণ থেকে লাবণ্য।  কত নুন খেয়েছো মৃণা!  সব নুন কি তোমার দেহে?  আর খেয়ো না।  এতে সৌন্দর্য হারায়।  অবিকগুলি খসে-খসে সহসা খোয়ায়।


সত্যি, এক বিশাল মহাযোনি পয়োধি এই নারী।  আর পুরুষ কেসটা হলো, অই উষ্ণু মাংসল অলীক পাথার-কিনারে বাল্বের ছেঁড়া ফিলামেন্টের মতো অধীর কাঁপুনি সহ দাঁড়িয়ে থাকা পৌনে ছ'ফুট লম্বা একটা হাইটেন্ডেড ও ব্যবায়ী পুরুষাঙ্গ মাত্র।  মাইরি একটা কথা কী জানো, খুব কৈশোর থেকে একজন পুরুষ তার যৌন-অহংকার  নিয়ে তিল-তিল করে গড়ে ওঠে, স্রেফ, একজন নারীকে জয় করবে  বলে।  কিন্তু সে কি সেই কাঙ্খিত নারীকে পায়!  পরিবর্তে যাকে পায়, তারও তল পায় না।  কী যে চায় মৃণা, মহা ধাঁধা।  একেক সময় মনে হয়, কী যেন খুঁজছে, অবিরত।  ওফ, টস করেও বোঝা দায় এই মেয়ে জাতটাকে।  একেক সময় খটকা জাগে,নারী এক হিংসাত্মক ও নাশকতামূলক শিল্প।  নারী মৃত্যুর বিজ্ঞান।  ডেথোলজি।  আচ্ছা, এ নারী কে?  এ দিনে এক, রাতে আরেক!  এ নারীকে সত্যিই আমি চিনি না।  পরিচিত দায়রার যথেচ্ছ-নারীর কাছে কোনোকালেই বিশেষ যাচনা ছিল না আমার।  আমি এমন নারী খুঁজিনি যে শুধু ঘুমোতে আগ্রহী বা গামলা-ভরা খাদ্যে।  নারীকে নারীর মুখ বা নারীর চোখ মাত্র আলাদা করে চাইনি, কেবলি।  চেয়েছি টরসো মূর্ধা সৃক্ক নোলা কল্লা সিনা রাং নিতম্ব পয়োধর নাভি যোনি নবদ্বার সম্বলিত একটি পূর্ণাবয়ব নারী, যাকে স্পর্শ মাত্রের লহমা থেকে শব্দের স্রোত ধেয়ে আসবে বেবাক এবং প্রতিরোধহীন।  স্ব-পরিচয়হীনা, জন্মহীনা, ইতিহাসহীনা, নিয়তিহীনা সেরকম কোনও নারী আজও আমার উপজ্ঞার বাইরে রয়ে গেছে।  দ্য বেস্ট রিলেশান বিটুইন আ ম্যান অ্যান্ড আ উওম্যান ইজ দ্যাট অফ দ্য মার্ডারার অ্যান্ড দ্য মার্ডারড।  দস্তয়ভস্কির কথাটাই কি তবে মোক্ষম?  নারী পুরুষকে হালাল করবে, তার আগেই নারী বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত-সব বাহারি শব্দঘোঁটের বিছেহার জোর করে লাথিয়ে ভেঙে ফেলা দরকার যদ্বারা উদ্ঘাটিত হবে নারীর মৌল স্বরূপ।


নাঃ।  নারীকে সঠিক ডিফাইন করতে পারছি না বলে নিজেকে ভীষণ ইরিট্যান্ট লাগছে।  কলমের মুখে খাপি এঁটে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।  এলইডি-প্লাবিত বিছানার ওপর 'আমার' নিজস্ব নারীর সযত্ন-রক্ষিত দুধে-আলতা ডালপালা।  একটা উদ্ভট চেতনা আমার অসংযত মানসিক স্টেটকে পরাভূত করে ক্ষণিকের জন্যে হলেও স্বপ্নে দেখা এক দুর্বোধ্য নারীর দিকে ছুড়ে দিল আমায়।  আমি দেখতে পেলাম রানী আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ---- রানী!  কমল ছুটে গেল।  ছুটছে।  কমল ছুটে যাচ্ছে, অই। .... তারপর অন্ধকারে, তীব্র অন্ধকারে, নিজের মুখ আড়াল করে, স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে, সে, ঢুকে গেল দুর্বোধ্যতর আরও এক নারীর স্বপ্নে।  ....


নারী কী, আমি জানি না।  এই যে আমি নারীকে লিখতে পারছি না, আমি বুঝি, শুধু একটি অপঠিত নারীর ঈপ্সিত অলঙ্কার ও তার নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষা কক্ষ থেকে কক্ষান্তরে, নিস্ফল শূন্য বিহার-সম, আমাকে ক্রমশ ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শায়িত, দীর্ঘ বৈচিত্র্যহীন, একঘেয়ে এক নারীর দিকে।


আমি যে লিখতে পারছি না, এ আমার অভিজ্ঞতার হাহাকার।  নারী বিষয়ে কোনো প্রিফিগারই তৈরি হয়নি আমার মনের স্লেটে।  এই মুহূর্তে আমার ধারেকাছে কেউ নেই, যে আমার সহায়।  কে এই শায়িত রমণী?  কী তার পরিচয়?  যে নারী আমার অন্বিষ্ঠ, যে আমার সোনার পাথরবাটি, সেই কি এ?


আমি যে লিখতে পারছি না, আমি জানি, এ আমার যৌন অতৃপ্তির প্রতিদান।  এক নিরন্তর পাপ ও তার জিন আমাকে অতৃপ্ত রেখেছে। ঐ জিনই আমাকে লিখতে দিচ্ছে না।  আমি লিখতে তখুনি পারবো যখন এই শায়িত ধূসরিত বহুধর্ষিত নারীটিকে আমি সমগ্রভাবে এবং ভরপুর পাবো।  শুধুমাত্র অভিজ্ঞান দিয়ে নারীকে গর্ভবতী করা সহজ কিংবা সমাজ-অনুমোদিত উপন্যাস।  অথচ যে-সৃষ্টি আমি দিতে চাইছি, যে নির্মাণ, তাতে স্রষ্টাকে সর্বাগ্রে হতে হয় হারমাফ্রডাইট, পক্ষান্তরে উভলিঙ্গ।


আমি নিজেকে নিজের প্রেক্ষিতে এবং তোমাকে তোমার অধিধ্যানে সুসম্পূর্ণ জেনে নিতে চাই মৃণা!  তুমিই কি সেই, যা আমার অন্তরাত্মার বহির্বাস?


মৃণা, তুমি আমাকে মাদারলি আদর করো।  এই আমি চোখ বুজলাম।

উজান উপাধ্যায়


আমার দুজন প্রাক্তন প্রেমিকা

উজান উপাধ্যায়


ঠাকুরদার সামনে ঘোমটা খসতোনা ঠাকুমার , সুখদাসুন্দরী -আমার সামনে খসে যেত ঠাকুমার গায়ের গন্ধ , রাত্রিতে এক বিছানায়-আমি তখন এক থেকে চোদ্দো গুনেছি -জানলায় উঁকি দিত জাম ও জামরুল গাছের পাতারা।

প্রায় অক্ষরজ্ঞানহীন রাতে ঠাকুমা গল্প বলতো বাবার ছোটবেলার , বাবার বটগাছ হয়ে ওঠার গল্প। ঠাকুরদা হাসতেন -তৃপ্তির ঢেঁকুরে এত খুশি , আমাদের বাড়িতে প্রতিটি ঋতুর ফুল , পাখি আর আত্মমগ্ন নদীরা আসতে , সারাবছর ওদের জমাটি আড্ডায় আমাকে ঠাকুমা চিনিয়ে দিত -নিশ্চুপ ঝাউপাতার ভিতরে কিভাবে প্রেম বাড়ে ছায়ার দৈর্ঘ্যের সাথে আবার ছোট ছোট খন্ডে ভেঙে ছড়িয়ে যায় তুলসীবেদিতে।

কবিরাজ ঠাকুরদার বিশল্যকরণী তৈরির মূল উপাদান ঠাকুমার চোখের ভিতরে রাখা ছিল , হামানদিস্তায় কিভাবে গুঁড়িয়ে যেত নৈঃশব্দ্যগহীন --প্রেমিকা কতটা নীরব হলে বাড়িতে আরোগ্য আসে বধূসাজের প্রসন্ন ঘেরাটোপে-কখনো কখনো জল খেয়ে রাতের ঘুমডাকা দিনগুলোতে দেখেছি ঝুলে থাকা অন্ধকারের স্তন --ওখানেই পাহাড় জন্মেছে -ওখানেই পিতামহ একদিন সাঁকো পার হতে চড়েছেন বৃত্তস্পর্শকের ছোঁয়াচ রক্তবাহে তুফানিয়া এনে।

স্বর্ণময়ী , আমার দিদা -গম্ভীর পন্ডিত সত্যরঞ্জন বাবু -আমার মাতামহের প্রবল ব্যক্তিত্বও যে কোমলতায় গৌন হয়ে গেছে। মায়ের ঠাকুমার কাছ থেকে পাওয়া সব কুসংস্কার , প্রবচনশিক্ষা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতো দিদা।

আয়তো সোনা -বলে ডাকলেই ছুটে গিয়ে আঙুল চাটতাম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাঁধুনিরা হিমশিম খেতো সেসব রান্না একবার চেখে নিলে।

আমার দুইপ্রেমিকা , দু দুটো পাখির চোখে ছায়া রেখে গেছে , আজও খুব দুঃখ পেলে নৌকা বেয়ে চলে যাই , যেখানে ওদের খুনসুটি , দুইবোনের হাতে উল কাঁটা , বুনে চলা অগুনতি শোয়েটার --আমার জন্য --

দুজনের চিতায় আমার সহমরণ হয়েছে দু দুবার , এখন যে ধোঁয়া ধুলো , আত্মজাকে নিয়ে হেঁটে চলা , আকাশের কার্নিশে রোজ ওদের চুম্বনেই অন্তরমহলেবেড়ে ওঠে কাঁধে রাখা মাটির শিকড় -গভীরের কলঘরে , শীতলক্ষ্যার নাভির ভিতর।

আমার ফেলে আসা ঠিকানায় রোজ রোজ ওদের চিঠি আসে --অন্ধকার গভীরে না গড়ালে সে সব প্রেমের অক্ষরে বৃষ্টি আসেনা।

তাঁবু মই আর লবনাক্ত দৌড়ে ক্রমাগত ভিজে ওঠা দু জোড়া ঠোঁটে আমার বার্ধক্যের অপেক্ষা।

আমার প্রাক্তন প্রেমিকারা , আরও যারা যারা , এই দুই বুকেই পরিপূর্ণ হয় , যথাযথ লাবন্য কুড়িয়ে পেলে। জাহাজ ভর্তি শোয়েটার আর নারকেল চিংড়ি , পটলপোস্ত রান্না হয় নন্দনের পারিজাত ঠাসা উনুনে উনুনে।

পঙ্কজ কুমার সরকার


উজাগরী // পঙ্কজ কুমার সরকার

কালো বেড়ালের হলুদ মণিতে যতটা ভয়,
সাপের লেজ ততটা দীর্ঘ নয়,
ততটা গভীর নয় তার বিষ থলি  ;

ক'জন বোঝে কেন এ সব কথা  বলি !

ক'জন বোঝে
ক্ষমা ঠিক কতদূর দুর্বলতা ?
ক'জনই বা  বোঝে--
আত্মগোপনে  থাকা কতটা উচিৎ ;
কিম্বা, কতটা  খুঁড়লে গর্ত,
                 শক্ত হয় বাড়ির ভিত ...

তুমি হয়ত ভাবছো --
কী লাভ এ সব তত্ত্বকথা বুঝে ?
আমি কি বানাব বাড়ি !
না কি আমার কখনও
          প্রয়োজন হবে ক্ষমার  !

একান্তে বলে রাখি ---
তোমার এ ভাবনাও অমূলক নয় হয়ত ;
তবু, গোলাপকে যারা প্রেম বলে জানে ,
অথচ তার কাঁটাকে ভাবে অবান্তর,
তারাও একদিন বুঝবে --
পাপড়ির সাথে গোলাপের
কাঁটাটাও কতটা সংগত...

তারাও বুঝবে -- ভালোবাসা গভীর হলে --
প্রতীক্ষাও কিভাবে মধুর হয়ে ওঠে ;
বুঝবে, কতটা প্রযত্ন পেলে --
কাঙ্ক্ষিত বর্ণ গন্ধ ফুল হয়ে ফোটে !

বুঝবে,
 আমাদের যে অর্জিত স্বাধীনতা
             তাও কোন বিমূর্ত বিষয় নয় ।
গোলাপের মতো সেও এক মূর্ত বিস্ময় !
উপরে উপরে তার পতাকার  ঘটা ;
অথচ বেদিমূলে লুকোনো রয়েছে
শত শহীদের রক্ত আর
               দেশ ভাগের উদ্বাস্তু কাঁটা !

বুঝবে , আমাদের  স্বাধীন দেশের মেয়রা
এখনও কতটা  শিকড়হীন,
এখনও তাদের  মন নয়
শরীর নিয়েই কথা হয় !

ভালো মেয়ে হয়ে ওঠার সস্তা মোড়কে ঢুকে
তারা অতি অনায়াসে
অহল্যা সীতা-পাঞ্চালী হয়ে যায় ;
খোলসটা কিছুতেই এড়াতে পারে না !

তাই তো মেয়ের জন্ম মানেই
বাবার কপালে অজস্র ভাঁজ,
সংসারে নেমে আসে  সমূহ বিপদ -লাজ ,

এখনও তারা যেন
আনমনা কোনো কিশোরীর
আপন খেয়ালে গাঁথা বুনো ফুলের মালা ;
কোন পুজোয় লাগে না ,
অথচ বুকে করে বয়ে বেড়ায়
সূঁচের আঘাত,  সুতোর যন্ত্রণা...

কিম্বা তারা যেন
কোন এক পোড়ো বাড়ির বেড়ার ধারে
                     আপনি গজিয়ে ওঠা লতা ,
মধু খেয়ে যায় মৌ মাছি,
ফল খেয়ে যায় -- বউকথাকও
অথচ মনে মধ্যে লুকিয়ে রাখে
 অযথা প্রচুর অশ্রু বিধুর আত্ম যাপন কথা...

আমাদের এদেশের মেয়েরা
জন্ম থেকেই জানে ---
পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহি পরমংতপঃ
অথচ সেই পিতাও
তাদের মন বুঝতে চাননি কখনও,
যদি চাইতেন  তারাও এই জীবনেই
সুপ্রীতি বর্মন কিম্বা মেরি কম হতে পারত. ..

কিন্তু হয় না,
হয় না বলেই প্রতিটা মেয়েই একদিন
আত্ম কেন্দ্রের সন্ধানে স্বপ্নের দরজায় --
কাসার থালায় দুধ পুকুরে আলতা ধুয়ে --
প্রবেশ করে এক নতুন ঠিকানায় ,
সেখানে এসে তারা ভাবে --
এখানেই  শিকড় ছাড়ব আচ্ছা রকম,
এখানেই ভাগ ভাগ করে নেব
সদ্য আপন কারো  বিছানা বালিশ ,

অথচ দু'দিন যেতে না যেতেই
সে বাড়িটাও  তাদের বুকে জমিয়ে তোলে
হাজারো নালিশ,
মধ্যে  পড়ে বর্ণ হারায়
ও বাড়ির তত্ত্বে পাঠানো নেল পালিশ...

বুঝতে পারে, তাদের শীতার্ত সিঁথিতে
বসন্ত বাহার হয়ে ফুটেছে যে সিঁদুর গোলাপ
তারই নীচে লুকিয়ে রয়েছে
 হাজার নিষেধের  কাঁটার প্রলাপ !  

সেই সব কাঁটায় কাঁটায় ভয়
ভয়ে ভয়ে অব্যক্ত যন্ত্রণা ;
স্বপ্ন আহ্লাদ  দু' দিনেই  উধাও !
কোথাও মেলে না মুক্তির মন্ত্রণা ....

দেখে  ; তাকে সন্তানবতী করেছে যে পুরুষ,
সেও মনে মনে বিকিয়ে আছে অন্য কাথাও  ।

কাঁটার আগল  ভেঙে বেরোতেও
মেলে না  সামান্য প্রশ্রয় !

ঘরে-বাইরে সন্দেহ তিরে
কেবলই বিদ্ধ হতে  হয়, দ্বিগুণ ব্যথায় ।

যে বাড়ির মাঙ্গল্যে তারা ব্রত রাখে
নির্জলা উপোস করে, দুধ কলা দেয়,
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালে তুলসি তলায়...
সে বাড়িও ক্রমে ক্রমে
তাদেরই বুকে  জমিয়ে তোলে
অবিশ্বাসের অন্ধকার !

অথচ
সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ,
সংসারের ছেঁড়া বোতাম গুলোকে
তারা সেলাই করতে বসে,

ঘুম ঘুম চোখে
আঙুলে সূচের খোচা খেয়ে ;
আৎকে উঠে  শুনতে পায়,
হৃদপিণ্ডের অলিন্দে ব'সে ব'সে
কারা যেন, আজীবনের অব্যক্ত --
ব্যথার উপর হাত রেখে বলছে -- ইস্ !

ঠিক তখনই তাদের বুকের খু-ব গভীরে,
জেগে ওঠে এক অমোঘ উচ্চারণ ---মা...

আজীবন সঞ্জাত ব্যথার  মধ্যে তারা যেন
হঠাৎই শুনতে পায়
এক জলদ গম্ভীর মাতৃ বন্দনা .....

মনে হয় , বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠ বেয়ে
নেমে আসছে এক অলীক ভোর....

সেই বন্দনার মধ্যে
অপরিচিত এক প্রাচীন রমণী
অতি মৃদু কণ্ঠে  বলে চলেছে --
ও মেয়ে ভয় পেওনা ,
আশারা এখনও মরেনি --
সত্ত্বারা  জেগে আছে...

               ----------------------

সন্দীপ পিপলাই


#বেশ্যার_প্রদীপ:-

           #সন্দীপ_পিপলাই


      কুকুরের গ্রীবা....
  আঙ্গুলের নখে ব্যাবিলনী হিংসা
       কচি শরীর ঘিরে জিভ লকলক
            ফুটো ছাদে মেহগনি লিপ্সা
                    উঁচা হয়ে স্তনের বোঁটা
     চোষ দেখ সমাজ এক বঞ্চিত ছিবা।

 লিঙ্গের আগুনে গুঁজে দে বোধের মুখ
               সবটাই কামনার কায়া
         যুগান্তর ধংসের পোষা মাগী...
   তুই আমি অলিখিত কুঞ্চিত ছাগ।
       বলির রক্তে গৌরবের চিতা
      নিষ্প্রাণ গতিশীল অবাক বিস্ময় !
     কি মজা মানব আমি
   পরাধীন হাতের নিচে স্বাধীন ঝান্ডা,
          গণতান্ত্রিক চার অক্ষর।

  ভোগের বাটিতে চর্চিত নেশা
       দিবসের আড়ালে কুপিত শূকর...
   পর্দা খসা সতীত্বের উরুর ফাঁকে, সামাজিক স্থাবর।
   বিষ দাও অমৃত পচা লেবুর ছত্রাক...
       সাপের দাঁতে সবুজ পরাগ ,
             গরল সমুদ্রে পৃথিবী আবৃত। সাজানো প্লেটে রঙ্গিন জীবন,
      অংক কষে শিখর ছোঁয়া ---
    শুকনো বীর্য ফেলে প্রতিপালন
       জনগণের গ্রাফ বেশ্যার প্রদীপ ...

সন্দীপ পিপলাই


#নগ্ন_মানচিত্র

      #সন্দীপ_পিপলাই

ফেলে এসেছি লাবণ্য পূর্ণ মরীচিকা ...
     কুয়াশা আবৃত ইতিকথা পুড়িয়েছি স্লোগানে দেওয়া মিথ্যের আগুনে !
   আরাম কেদারা উপড়ে ফেলে হেঁটেছি গুণিতক মৌনতায় --
 মুখোশ পড়ে রোজ খেলি পাশা ,
           হারি , জিতি কাগুজে উষ্ণতা
     বান্ডিল ট্যাঁকে আঁকি সফলতার সিঁড়ি !

          বিক্রি হয় সত্তা , শরীর , বিবেক ....
  পুঁজিপতি কারখানায় ভক্ষকের রক্তবীজ---
          শোষণে গেলে জীবনের উষ্মা , পড়ে থাকে সাধারণ জীব ....
       পেটের মখমলে ক্যাকটাস গুঁজে রোজ পথ চলে আপামর  !
    বিছানা বদলায় সতীত্বের গর্ভ ...
   মাংসের দামে লেখা হয় ক্ষুদার গদ্য ,
           উচ্চবিত্ত গুলশানে রোজ আতর স্নানে সেজে ওঠে বিকাশের চালচিত্র !

     সভ্যতা !
     অক্ষরের আড়ালে থাকা চিৎকার ,  অবলুপ্ত , অদৃশ্য , বহিষ্কৃত সত্য !
    নগ্ন সমাজ , নাঙ্গা নীতি , তোষণ মেনে সমাজনীতি ---
        অর্থের পাল্লাতে মাপা জীবন !
রাজার নীতি চিবিয়ে খায় গণতন্ত্রের দালাল
         উচ্ছিষ্ট লেহনে গর্বিত জনগণ , রাতের গভীরে খুঁজে নেয় বন্দা প্রেম ।
        মালতী বুকে ঢেকে রাখে সহস্র বিপ্লব , বীর্যের বাঁধভাঙা স্রোত ....
       কতদিন নরম খাঁজে , উষ্ণ আছে খুঁজিনি বুকের অনুভব --এসো মোর প্রিয়া !

   আগামী খোঁজে তার ইতিহাস...
       খাবলানো শরীর জুড়ে ভোগের নেশায় মাতোয়ারা শাসক !
               চিতার আগুনে পড়ে রয় মনুষ্যত্বের নগ্ন মানচিত্র ...

আবদুস সালাম


প্রেম

আবদুস সালাম
 

স্রোতের টানে নিরন্তর  ভেসে যাওয়া

 অন্ধকারের ভিড়ে নিমন্ত্রিত যুদ্ধ ক্ষেত্র
 পাড় ভেঙে যায়
 বিনম্র অন্ধকার হাতড়ে জাপটে ধরি দাঁড় ভাঙা নৌকা

 বালুচর ডিঙিয়ে রাত ভোর হয়
 হাবুডুবু খায় রক্ত মাখা ভোরের নিশান
 চিৎকারে কেঁপে ওঠে অমোঘ বধ‍্যভূমি

 বিরুদ্ধতার নিশান ঝুলছে সংসারে
 সবুজ ঘাসে ঝলসে উঠেছে বিষন্ন মশাল
 সময়ে অসময়ে ছুঁড়ে ফেলি চিত্তশুদ্ধির আরক

দায়িত্বহীন  সেতার তোলে ঝংকার
 হাততালির সংলাপে পান্ডুলিপি ভরে যায়
নিমন্ত্রিত সংসারে অনিমন্ত্রণ ঢুকে পড়ে

অসময়ের বুকে প্লাবন ঢুকে পড়ুক সমৃদ্ধির
 স্নিগ্ধ সকালে পার হয়ে যাবো উৎকন্ঠার উপকূল


ফ‍্যাশন
আবদুস সালাম


আদিম পৃথিবীর দরজায় সাঁটা ছিলো না বিজ্ঞাপন ।কি জানি সে সময় ধর্ষণ নিয়ে সভা বসতো কিনা বিচার সভায় ।নুহুনবী,মূসনবী,ঈষানবী ,কৃষ্ণ যুগটা কেমন ছিল?
 প্রেমের পাঠশালায় ক্রিয়া পদগুলি বিষাদ ও চাঞ্চল্য ছড়ায় ।ইতিহাসের স্তব্ধ পাতায় আঁকা ইঁদুরের স্বপ্ন ।
 আদিম গুহায় তাদের অবাধ প্রবেশ।মহিলা পুরুষ ভরহীন শূন্যতায় উড়ে চলে।প্রশ্ন জাগে তারাও কি প্রেমের গান গাইতো? ভাষার ব‍্যাকরণ উল্টে দেখি পরাবাস্তব শূন্যতা।এখন শুধু মনে জাগে অভিশাপ গ্রস্থ প্রেম তখনও কি ছিলো না আজকের দিনে নতুন আমদানি।

মলিন উঠোনে নেমে আসুক সূর্য

অমিত লৌহ


বিধবা

      অমিত লৌহ


মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো চিল
কাকগুলো সারা পাড়া মহল্লায় চিৎকার করে  তোলপাড় করছে ।

ভেসে আসছে অদ্ভুত এক গন্ধ !

শয়ে শয়ে লোক ঘিরে রেখেছে একটি মৃত দেহ
শরীর ক্রমশ অসাড় হচ্ছে ।

পোয়াতি মেয়েটা আজ অনাহারে রয়েছে
পৃথিবীর সমস্ত আলো , অন্ধকার টেনে নিচ্ছে
মেয়েটা'র গর্ভ !
হঠাৎ কাঁটা লেগে বেরিয়ে আসে অর্ধ আবরণ বুক ,
চেয়ে থাকে কিছু লোলুপ দৃষ্টি!

আধো অন্ধকার তবুও চোখ টাটায় পুরনো সিঁদুরে লেপ্টে থাকা  সিঁথি ,

আজ উনুনে পরেনি প্রলেপ ।
দূরে ভিক্ষুক আজ খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে ।

অনতিদূরে ভেসে আসে একটি কথা "মেয়েটা বিধবা" ....


আজ আর কোন কবিতা নয় জন্ম-মৃত্যু বিধির শেষ শব্দ নারী

ক্ষয়াটে ললাটের শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ দগদগে ।

শূন্য গর্ভে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি খেলতে খেলতে জায়গা পেল নাম না জানা নরম পালঙ্কে
 আজ খিদে নেই , আগের রাতে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে তাই খিদে নেই ।
আজ নারী দিবস ,কেউ খাবার দেবে না !

মেয়েটা পোয়াতি
আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে জানা যায় ...
গর্ভে যদি থাকে পুরুষ
জুটবে তবে মাথার সিঁদুর ।

আজ নারী দিবস
মিথ্যার আরো এক নাম নারী স্বাধীনতা

সভ্যতার শেষ লগ্নে জন্ম নিচ্ছে হাজার অশরীরী নারী !
প্রতিটি দৈর্ঘ্যের নারীর অধিকার কাল্পনিক
সন্মানিত নারী নৈব চ ..

রাণা চ্যাটার্জী


কামুক দৈনন্দিনতা

              রাণা চ্যাটার্জী

তোমার তর্জনী কখন আমার অনামিকা ছুঁয়ে দিব্যি ভাব জমিয়েছে ভিড় বাসে খেয়ালই করিনি ,
সম্বিত এলো হেড়ে গলার কন্ডাক্টরের গুঁতোয় ।
এক রাশ দম বন্ধ করা ঠাসা  ধর্মতলা মিনি তখন,               ওভার টেকের খেলায় আপন খেয়ালে ।

পেছনের চাপে অনুভবের আঁশটে গন্ধ আমার চোয়াল শক্ত করে তুলেছে, হাঁফিয়ে উঠছি আমি ,এ কোন সমতার বিচরণ ভূমি,
  মানুষ রূপি চারপেয়ের আচরণ ততক্ষনে আঙ্গুল ছোঁয়ায় আমার নিতম্বের মাপ নিতে উদগ্রীব ।
নীরবে কাজ সারার অন্যমনস্ক ভাবলেশহীন  চাহনি,তাকে গিরিখাদ , উপত্যকায় অবগাহন খেলায় মাতিয়ে রেখেছে হেড ফোনের  সুরে ।

বিষাক্ত আচমকা  ছোবল , ঘৃণার  মিছিল ছড়িয়েছে আমার শরীরের শাখা প্রশাখায়!
তবু বড়ো বিধস্ত আমি আজ ,সৃষ্টি কর্তা কেড়ে  নিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা টুকুও !
পিজি হাসপাতালের বেডে ছটফট করা মা কে
দেখতে আসা আমি মফস্বলের শান্ত নিরীহ তন্বী ,
পাশে দাঁড়ানো  বটবৃক্ষ  বাবার বয়স যেন  বেড়ে গেছে এক লহমায় !
বাবাকে  শক্ত করে চেপে ধরা হাত আর অন্যদিকে পাশবিক লোমশতা সঙ্গী করে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে ছুটে চলি কিশোরী মনের স্বপ্ন দলানো আমি স্বত্তা!

ভালো থেকো তিলোত্তমা , পাশবিকতায় নয় ,  মনুষ্যত্বে বাঁচো ,স্নেহ ,শ্রদ্ধা ,ভালোবাসার
                            অবগাহনে পথ দেখাও ।

শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯

পার্থ চট্টোপাধ্যায়

#নগর_কীর্তন

পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

ঘুমেরও ঘুম আছে পৈতৃক দখলে
স্রোতবহা কল্লোলিনীর শান্ত অথচ অগভীর
অববাহিকার আড়ালে
যে পুরুষালী স্বর ভেসে ওঠে দু-একবার
তার শরবিদ্ধ জঠোরায় আকাশবাণী ঘনিয়ে আসে,
উঁচু উঁচু আধখোলা জানালার
ভেতরের গল্পগুলোকে জানতে হলে
এক তৃষ্ণার্ত সাহারা মরুভূমি তোমায় পড়তে হবে।
সূর্যাস্তের রোদ যতটা ম্লান হয়-
তার আত্মপরিচয় তার থেকেও কিছুটা ম্লানতর,
রাস্তায় তাকে পাশ কাটিয়ে যায় বিষস্পর্শী চক্ষু
আসন্ন সীমারেখার ধারে যে ব্যারিকেড লাগানো হয়
সেখানে প্রেম পদাবলী লেখা হয় না তাদের।
প্রজন্মের সূত্র দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়-
এই লাবণ্যে কি জ্যোৎস্নার রূপ দেওয়া যায় ?
বানভাসি হয়ে আমি বলি-
এ জন্মে যে শুয়োঁপোকা টা মারা গেল
তার পরজন্মে সে প্রজাপতি হয়ে উড়বে ঠিক।


রাজেশ কান্তি দাশ


মিটমিটে উপল

রাজেশ কান্তি দাশ

শ্যামলিমা প্রান্তরে স্নিগ্ধ আকাশ
সুজলা সুফলা বাংলার ফসলের মাঠে বাসন্তী ঢেউয়ের দোলা।
ক্ষুধার্ত দিনমজুরের অনাহারী চোখ দূরে চেয়ে দেখে শকুনের মাতব্বরি ;
সমুদ্র নদীকে করছে অবহেলা।
প্রেমের সাথে যুদ্ধের বর্জিত খেলা
দ্বন্দ্ব- সংঘাতেে মচকায় নোঙর
বাউরি বাতাসে ঝরে গাছের পাতা, সজীবতা হারায় জনপদ
কে বা কারা যেন হয়েছে হাঙর,
প্রতিরোধের অপেক্ষা ক'রে নির্যাতিত আত্মা,
গর্জে উঠে কবোষ্ণ প্রতিবাদ
ক্ষয়িষ্ণু মেরুদণ্ড জড়িয়ে ধরে শকুনের গলা।
বিস্ময়ে শুনা যায় কান্নার ম্রিয়মান বুদবুদ, শকুনের খোঁয়াড়ে ঝরাপাতার আর্তনাদ ;
সৈকতের পারে মাটির ভাঁজ, অপ-তেজ-ব্যোম সবই সাক্ষী গোপাল
মিটমিটে উপলে নীলকমলের বাতাসী ছন্দ
নিপীড়িত আত্মা প্রতিরোধের স্পৃহায় জন্ম নেয় সূর্যের জঠরে ;
অমানিশার কালিমা ভেদ ক'রে উদিত হয় প্রথম সকাল।
দিগন্তের কোনো শহরে জ্বলে উঠে দীপাবলী
সাঁঝবাতি জ্বালায় কম্বুকণ্ঠী গ্রামের বধূ...
পাখির কলরবে কলম শানিত হয়ে লিখতে শুরু ক'রে সবুজের পদাবলী।

অভিজিৎ দত্ত


ক্ষুধার্ত

অভিজিৎ_দত্ত


একটা মিছিল এগিয়ে আসছে।
বুনো পলাশের ঝোপের পাশ দিয়ে
খুরুশপুরের পাহাড়ি ঝর্ণার গা বেয়ে
আর হরতকি রঙা মেছুনি বস্তির ঝুপড়িটার থেকে।

আসলে মিছিলটা বোধহয় কাক চিল শকুনদের মিটিঙ
তাদের প্রত্যেকের ডানায় একটা করে মোমবাতি
আজকাল ধর্ষিতা হতে কারুর বাঁধা নেই যে।

মিছিলের স্লোগানের শব্দগুলো কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে ।

চতুর্ভুজ শব্দগুলো --- ঠিক ওই মেয়েটির,
বুকের ক্লিভেজের মত ত্রিমাত্রিক ছন্দে
ত্রিভুজে রূপান্তরিত হতে হতে হয়ে পড়ে অষ্টাঙ্গ
ব্রেসিয়ারের কেরামতিতে।

কখনও বা ষড়ভুজা ষোড়শী আর
কখনও বা দশভুজা দশপ্রহরীণী আর কখনও বা
রম্বাস আকৃতির বেলাইনের মেয়েগুলোর মত।

ভাববাচ্যেই  রয়ে গেলাম অপব্যয়ের রূপ ধরে।
ধুসস্  শালা বাঞ্চোৎ।
কাল রাতে বেশি করে মাল টেনে আজ ফের বাতেল্লা ?
কি করি বল দোস্ত ।
পেটের খিদা ভুলতে বুকের জ্বালাটা
বাড়িয়ে নিতে হয় যে।

সোনালী মন্ডল আইচ


আচার শেষে

সোনালী মন্ডল আইচ


এ তুমি কেমন তুমি
এতো নির্বাক এতো নির্লিপ্ত
ক্লেদ গ্লানি অটুট রেখে
 দুটো সমান্তরাল রেখার মিলন বিন্দু আঁকো

 বুজে আসে শেষ বিকেল
নাম ধরে ডেকে যায়
সত্যবাদী সরল সাহসী গলা জানতে চায়
দুধ দই-এর যে গঙ্গা বইয়ে দিলে

শুকনো মুখ শিশুটিকে পড়ল মনে ?
নিদেন পক্ষে বিড়াল কুকুর বা অসুস্থ কেউ--

না-না এসবে কী পুণ্যি  জোটে-----

সম্পূর্ণ উলঙ্গ গোধূলি ধীরে পরে রাতপোশাক
 লজ্জা খসে পড়ুক কে বা চায়
চোখ বন্ধ হয়ে আসে চিকচিক জলে
এখন পাতাল প্রবেশ নেই
কারণ আর সীতা জন্মাবে না

 খাদ্যের অপচয়, শক্তির অপব্যবহার
এসব খুব দুঃখের,এখানেই বারবার হার
অনাথপিন্ডদসুতা সুপ্রিয়ার কাছে ...

শুভ্রাশ্রী মাইতি


চাঁদজোছনার কাহিনী

শুভ্রাশ্রী মাইতি।


কোজাগরী জোছনামাখা একথালা আলোচালের ভাত
পেটপুরে রোজ খাবে বলে ঘর ছেড়েছিল বিধবা সাবিত্রী।
ঈদের একফালি চাঁদ হাসিতে ভরপেটে রমজান ভাঙার আশায়
চটকলের কাজটা হাতছাড়া করেনি আমিনা।
সাবিত্রীর ঘরে এখন রোজ রাতে আলো ঠিকরায়
কোজাগরী চাঁদজোছনায় নয়---
খালি হওয়া মদের বোতল,টাকার পালিশ আর কামনার লাল আলোয়।
আমিনার রমজান ভাঙা খাওয়ার থালায় এখন খুশির ঈদ উপচে পড়ে
একফালি চাঁদের পবিত্র হাসিতে নয়---
চটকল মালিকের চটচটে লোভের উদার বদান্যতায়।
তবু ফি বছর নামে ঝিমধরা কোজাগরীর মায়াবী রাত।
তবু ফি বছর আকাশে ভাসে খুশির ঈদের চওড়া হাসি।
সাবিত্রীরা গোপনে শাঁখ বাজায়,প্রদীপ জ্বালে লক্ষ্মী আসনে।
আমিনারা আয়াতের ফিসফিস সুরে কথা বলে নামাজ আসনে।
চাঁদজোছনায় সাবিত্রী আর আমিনার আর্তি মিলেমিশে এক হয়ে যায়---
যাতে আর কোন চাঁদ আলোয়
এমন নির্মম হৃদয়হীনতায় আর না নগ্ন হয়
অন্য কোন সাবিত্রী,অন্য কোন আমিনার
চাঁদ জোছনা মাখা একগ্রাস ভাত খাওয়ার অনন্ত আকুতি।



আমার বাইশে শ্রাবণ

শুভ্রাশ্রী মাইতি।


ঘুম ভাঙা ভোরে প্রকৃতির থমথমে নিস্তব্ধতায়
বৃষ্টিভেজা পাতায় টুপটাপ ঝরে পড়ে বাইশে শ্রাবণ।
বুকের ভেতর প্রসারিত নিঃসঙ্গ মাঠে ধু-ধু হাওয়া একলা অভিমানী।
আমার পনের বছরের শিকলপরা শ্বশুরবাড়ীতে
বাইশে শ্রাবণ নেই ক্যালেন্ডারের পাতায়।
রোজকার কেজো ব্যস্ততায়,হাতা খুন্তির লড়াইতে
অফিস-স্কুলের ভাত-টিফিনের রকমারিত্বে,
শাশুড়ীর বাতের ব্যথার চিৎকার আর কাজের লোকের তদারকিতে---
নিসঙ্গতার সোনার খাঁচায় ঝিমোয় বোধের ডানা ছেঁড়া পাখি।

একলা দুপুরে মেঘে মেঘে ঘনায় আকুল শ্রাবণ।
লুকানো গীতবিতান আর সঞ্চয়িতার খোলা পাতায় পাতায়
গুণগুণ গান আর কবিতার ডুব-সুরে
মন ভিজতে থাকে খোলা জানালায়।

ভিজতে ভিজতে কখন ছুটে আসে বেণী দোলানো শৈশব।
আকুল স্বরে ডাকে---যাবি? আমার সাথে যাবি?
ভিজবি একবার গান-কবিতার শ্রাবণধারায়?
যেমন ভিজতিস আগে চুপচুপে হয়ে----

টেবিলের ওপর রাখা ছবিটায় তোমার প্রসন্ন সহাস্য মুখ।
মনটা ছটফট করে ওঠে গরাদ ভেঙে বেরোনোর অদম্য ইচ্ছায়--
‘তোমার অভিসারে যাব অগম পারে.....’
হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে বলি--- নিয়ে চল্,নিয়ে চল্ আমাকে---
ঐ শ্যামলী নদীর ধার ধরে হারিয়ে যাব তাসের দেশ আর শাল পিয়ালের বনে.......।

দরজার কলিংবেলটা তীক্ষ্ণ স্বরে বেজে ওঠে।বাইরে ঝিমধরা শ্রাবণের মায়াময় আলো ম্লান হয়েছে কখন
বুঝতে পারিনি কিছুই----
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমঝিম বাইশে শ্রাবণে একাই ভিজতে যাচ্ছে আমার দুবেণীর কিশোরীবেলা।তোমার প্রশান্ত মুখ তখনও গভীর ভালোবাসার আলোয় মায়াময়।
পাশের বাড়ীতে বাজছে---- কাঁদালে তুমি মোরে ভালবাসারই ঘায়ে......।

সম্পাদকীয়,,,,,, সুপ্রীতি বর্মন


সম্পাদকীয়,

চন্দ্রমুখী ভ্যালেন্টাইন ডে, শুধু তোমার জন্য।

What is true and dedicated 😍 love

আমার একজন সুহৃদের মতে ভালোবাসার জন্য আলাদা কোন দিন হয় না।
কারণ ভালোবাসা পরিকল্পনা প্রসূত কোন কর্ম নয় যা করা যায় ভালোবাসা তো হয়ে যায়।
"সেদিন আমার চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ"।

What is true 😍 love

1.
ভালোবাসা হলো নিষ্পাপ নিঃস্বার্থ হার্দিক বন্ধন না শরীরী সহবাস।
শালীনতার চৌকাঠ পেরিয়ে কখন তোমারি অজান্তে অশ্লীল অশান্ত হয়ে তোমার নারীত্বকে আঁকড়ে ধরে যে একটা ভুল হয়ে যায়।
যার মাশুল এর মহার্ঘ্য ঋণে বোবা কান্নায় অন্তঃসত্ত্বা কচিকাঁচাকে প্লাস্টিকে মুড়ে পুকুরপাড়ে ভোগের পর বর্জ্য পদার্থ হিসেবে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়।কুমারী রোদ্দুরকে কখন নেয় সোহাগের ফাগুন লুটে তা তার বোধাতীত থেকে যায়।

2.
ভালোবাসা হলো তোমার আমার গর্ভাঙ্গের মোচড়ে উৎকণ্ঠার শত সহস্র প্রজাপতির উন্মুখ উড়ান।
যেখানে প্রেয়সীর চির প্রতীক্ষিত কর্ণকুহরে বেজে ওঠে আগামী বিসমিল্লার সানাই।
নতুন গামছায় মোড়া তোমার হাতে আমার পাণির সম্প্রদান পরিণয় শতদলে।
শুভ দৃষ্টির ভ্রমর কজ্জল চাদরে প্রিয়তমার মিলনের প্রাকলগ্নে উৎসুক দৃষ্টির আদর।

3.
প্রেম হল ছোঁয়াচে সংক্রামক ব্যাধি যা কখন বিশল্যকরণী হয়ে সর্বগ্রাসী রিক্ততার দাবানলে পুড়ে ছারখার অসুস্থ প্রেমিক হৃদয়ে জাগায় জাহ্নবীর আরোগ্যতার সোহাগ বানডাক।
এক মুহুর্তে তার থাকার উপলব্ধি তোমার হৃদকোরকে জাগায় এক অনুপম অনুভূতি সহাবস্থান।
প্রতিটি ক্ষণে এক ছায়াশরীর তোমার অঙ্গে অঙ্গে জাগায় সঙ্গমের শিহরণ মনে হয় তুমি আজ সম্পূর্ণ আর কোন কিছুই নেই বাকি।


4.
অভাবী চেতনায় যখন প্রেমিকের শূন্য গাল বেয়ে গড়িয়ে আসে না দিতে পারার কোনো অক্ষমতা তখন নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চৌহদ্দি কোন উপঢৌকনে সীমাবদ্ধ না থেকে শুধু তোমার পাশে ও সাথে থাকাকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার বলে মনে করে।
রক্ত গোলাপেল প্রণয় নিবেদন প্রেমিকের  হাঁটু গেড়ে তিনটি শব্দের উচ্চারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।তখন হয়তো তার সাথে অনুচ্চারিত থেকে যায় "উইল ইউ ম্যারি মি"।
মনে হয় নিজেকে অনেকটা শেহেজাদা যেন সমগ্র পৃথিবীর ঐশ্বর্য ঐ একটি হৃদগোলাপে  লুকিয়ে প্রেমিকাকে সর্বান্তকরণে সুখী করার আশ্বাস কিংবা প্রতিশ্রুতি যে তুমি শুধু আমার আর কারো নয় সারা জীবন আগলে রাখবো তোমায় এ বুকে।

5.
না ভালোবাসা হলো এক প্রকার শূন্যতা যা তোমার কঙ্কালের ভাঁজে আনে আমার অভাবে নিঃসঙ্গ শীতল শোণিতের জোয়ার যা আমাকে কালেভবে  বিষাক্ত সর্প করে তোলে ঘৃণার শীৎকারে।
পথে-ঘাটে মরিয়া হয়ে রাধা শুধু তার সখা প্রাণের সখা কালাচাঁদ কে খোঁজে।তার কর্ণমঞ্জুরী উৎকন্ঠিত হয়ে থাকে শুধু কানহা তোমার বাঁশির ডাক শুনতে ঘাটে।
যেখানে বালা জল আনতে যাবে কলসি কাঁখে আর অবগাহনের বাহানায় জলে নামলে নগ্নদেহে তুমিতো ছলচাতুরি প্রেমে তার অন্তর্বাসের ফাগুন নেবে লুটে।
ওই সামাজিকতার মগডালে পা ঝুলিয়ে আমার কৃষ্ণ অবাক চোখে শুধু আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
আর মগ্ন চৈতন্যে বালা তোমার ক্ষীণায়মান দাঁড়ে পাবে মোক্ষ আমাদের প্রণয়  জাগতিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে।
সকল লাজ পেরিয়ে তোমার সাথে একাত্ম হতে যমুনার জলে।

এক কথায় ভালোবাসার সঠিক পরিভাষা বোধহয় আমারো জানা নেই।কারণ ভালোবাসা হল একটি
অনন্য সুন্দর উপলব্ধি।প্রতিজনাকেই কখন কাউকে না কাউকে ভালোবাসা উচিত কারণ আমার মতে ভালোবাসা হল সেই ঐশ্বরিক সারতত্ত্ব যা মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তোলে,জীবনকে সত্যিকারে বাঁচতে শেখায়।

তোমার শুধু হাত ধরে এক কপর্দকশূন্য প্রেয়সী অনুপ্রেরণার জোয়ারে দুর্বিপাকে ঘূর্ণি কাটিয়ে পেতে পারে প্রতিষ্ঠা। তোমার প্রেম আনতে পারে প্রাণ প্রতিষ্ঠা। উমা কখন তার পিতার বৈভব স্বচ্ছলতা ত্যাগ করে নিঃস্বার্থ প্রেমে হয়ে ওঠে শিবসঙ্গিনী তা সে নিজেও জানেনা। কারণ প্রেম তো অধরাই থেকে যায়।



সৌরভ ঘোষ


পিটুইটারি সিরিজ,,,,,

সৌরভ ঘোষ


আজকের ছেলেটা আহ্,তরতাজা...
লিঙ্গ দেখে মিশ্র মনে হয়,
কোনো আফ্রিকান উপজাতির রক্ত, হয়তো...

তরতাজা সবজি বাগানে বিলি কাটার সময়
বয়ফ্রেন্ডের ফোন,খুব ডিসটার্বিং।
ছোট্ট গল্প, "লাভ ইউ জানু,ব্যস্ত"।
ছেলেটার লেবুকোয়া ঠোঁটে মেয়েটির অভিঞ্জ চিকন ঠোঁট,
কিছুক্ষণ দর কষাকষি কিছুক্ষণ দমবন্ধ...

উদ্বায়ী সোনালি লতা দুটো শরীর আঁকড়ে ধরে
লতার নাছোড়বান্দায় ওরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে...
মৃণালভূজে হাবুডুবু খায় ন্যাড়া মাথা
বৈদিক নিয়মে সঙ্গম,ছন্দ সুরেলা।

ওদিকে,বয়ফ্রেন্ড জুয়ায় তন্বী বেশ্যা জিতেছে...

সবার শরীরেই রঙিন রক্ত...
সবাই বেইমান ম্যানসনে দাঁড়িয়ে
সোনালি জোনাকি খুঁজছে আর রাতকে হারিয়ে...
 


°
লাল নীল ঝিলমিল সুইমিং পুল
চরধারে চুমকি আলো
গলা উঁচিয়ে নবম বিয়ারের বোতল।
চোখে কালি পড়া ছেলেটার গলায় পশমের স্কার্ফ।
ঠোঁটে ঠোঁট ছুলেই কিস হয় না কি!
টিপটিপ বৃষ্টি,
লম্বা কিস প্যাকটিস...
সোহাগ ভিজিয়ে দেয়,থেমে থেমে বৃষ্টি ...
ছাতা চুমকি আলো জড়িয়ে চিত সাঁতার কাটে।
ন্যাড়া মাথা ডুবে যায়,
অন্তর্বাস জড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া পতাকা মার্কা টুপি ভেসে ওঠে...

পুলের ঠিক মাঝখানে লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু
নক্ষত্রের মতই জ্বলজ্বলে...

°
মিশরীয় পুরুষের স্পার্ম
গ্রীক নারীর জরায়ুতে,
নতুন ভাষ্কর্য সৃষ্টির বিজ্ঞানসম্মত অত্যাধুনিক প্রচেষ্টা  ...
মিশ্র সংস্কৃতি খুঁজতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের
নোনা ঘাম,অনর্গল
সাক্ষী, হাতে গোনা ঐতিহাসিক নির্গমন আর
কয়েকটি মাটি চাপা ভাঙাবাড়ির ফোঁপানি ...
নকল ভাষ্কর্যের সবেদা রঙ
খারাপ স্ট্রিট ল্যাম্প,বাজারী শীত...

নিভন্ত ফায়ার প্লেসের কাছে সেক্স-স্টার্ভদের ধর্ণা
ভূমধ্যসাগরীয় বৃষ্টি,নেপথ্যে ছোটো ছোটো বন্যা...  



°
কেনাকাটা বলতে কয়েকটা লঁজারি,শর্টস,
খয়েরি না হয় কালো লিপস্টিক।
এরা এদেশীয় ক্রিতদাস,অভিজ্ঞ এসকর্ট...
পরিশ্রমের দাম কয়েক ফোঁটা সোঁদা ঘাম
রুটিনমাফিক এক ডিস ভাত
সাথে নন কাউন্টেবেল স্পার্ম...

এদের যোনি সার্বজনীন জমিন
সময়ের হিসেবে কেবল মালিকানা বদল।
শেষ প্রহরে হয়ত বা ছাড়,
তখন পড়ে থাকার মধ্যে
আগাছা আর ক্ষতিকর রাসায়নিক সার।
বুকে আঁচড়ের বহুতল ব্যাথা নিয়ে কুলখাকি
যতবার রুইবার ক্ষণ রোমন্থন করতে চায়,
ততবারই সিলিঙে অনুর্বর চোরাবালি ভেসে ওঠে
তাতে জমিন হাবুডুবু খায় আর মালিকের দলও...

স্বপ্ন দেখলে, এরা একটাই স্বপ্ন দেখে -
"সকাল আসেনি,
দরজার সামনের করিডোর ধূ ধূ ফাঁকা,
ভোরাই চিরে একটা সাদা পায়রা উড়ে যাচ্ছে।
লাল শাড়ি,কপালে টিপ -
ধীরেধীরে এক ডিস ভাত চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে..."

°
পুরুষের মধ্যপদ লোভী মেয়েগুলো সাপুড়ে
ওরা বৃষ্টি অরণ্য ঘেঁটে উদ্ধার করে যোগসর্প
গলা টিপে পুড়ে দেয় চিরায়ত চামড়ার ঝোলায়।
বিষাক্ত সর্প উপর্যুপরি বিষ ঢালে,
ঝোলা ভিজে যায়,হড়হড়ে...

চামড়ার ঝোলার ঘন সন্নিবিষ্ট ভিড়
ভেতর থেকে ভেসে আসে অদ্ভুত শব্দ সমষ্টি
হয়ত ঝড়,
অজস্র ফুলের দমকা গন্ধে সদর মাতাল...

মেয়েগুলো এবারে ঝোলা বেচে পুজো করেছে।
একেবারে দূগগা পুজো!
সাপুড়ে চত্ত্বর স্বর্গের রিসেপশনে
শাপমুক্তির অভিনব উপায় ...


°
এরা মাসিক জানেনা,বারোমাস শীত
রুক্ষতা আর পাতা ঝড়া,
রাজপথ থেকে অলিগলি
তারপর নীল আলোর কেবিন।
দুটো মাথার ওঠানামা,শরীরের মোচড়
শেষে জুঁইসিস,স্বর্গীয় মুহুর্ত
আধবোজা চোখ,মৃদু চুম
এক মগ জল সব ধুয়ে দেয়,বাইরে বসন্ত...

 
°
সিক্স প্যাকের মোড়কে ফিজিক
আর ফ্লেক্সিবেল কামুক ফিগার।
না ভাষ্কর্য নয়,
দুই জীবন্ত মূর্তির
ভীনদেশীয় পদ্ধতিতে রতিক্রিড়া প্রদর্শন।
লো ভলিউম...
পর্ণ ভিডিও শেষ হতেই  স্তিমিত মৈথুন।
চটচটে হাততালি,
অধঃক্ষেপনের আঁশটে গন্ধ, ক্রিড়া চর্চিত...



°
সাত বছর পর পুরানো ব্যাথা,
আগের মতই তলপেটের ঠিক নীচে।

এতদিন পর ব্যাথা ফিরে পেয়ে আহ্লাদিত...

আমার বাইকের পেছনে আজ তুমি নেই,
তোমার নিটোল যমজ ধবলগিরির ধাক্কা নেই,
তোমার লাল অন্তর্বাস চেবানোর তাড়া নেই,
তোমার ব্রার স্ট্রিপ খোলার দ্রুততা নেই,
সম্ভোগের অন্তিম ক্ষণে আঁকড়ে ধরা নেই,
সব শেষে আদরের মিষ্টি চুমু নেই।

নেই ভাসিয়ে দিয়েছি কবে,ব্যাথা কোথা থেকে !

তুই মেয়ে বলেই-
তোকে বিয়ে করতে পারব না।
আমি সমকামী,আমার ওটা ওঠে না,
দাড়ি সখে রাখি...

তারা দেখেছিস তো ?
ওদের একটাই লিঙ্গ
আমি তারা'দের বিশ্বাস করি।

তুই ভুল পথে।চল্ তোর ঘর খুঁজি...


সৌরভ বর্ধন


সংযম

সৌরভ বর্ধন


এমনভাবে হাত ধরে থাকো যাতে সবাইকে বলা যায়
সমস্ত আইনকানুন মানা যায়
এমনভাবে হত্যা করো আমায়

ওইসব কঠিন দিনের সংযম, বেওয়ারিশ সংলাপ
বারংবার নিজস্বী হতে থাকুক আমাদের উদযাপনে

এই পরিকল্পিত শহরের গলির মুখে মুখে
টু ক রো টু ক রো এনামেল লেগে থাকুক উত্তপ্ত আদিখ্যেতায়

বাড়ি খোঁজার মরসুম শেষ :
আমি এখন উথাল-পাতাল, এখন আমি শব্দহীন মেরুদেশ

তোমাদের গায়ত্রী ছন্দ বহুদূর সবিতার বুকে একবার
ধুকপুক তুলতে পারলেই আমাকে সম্পূর্ণ শুষে নেওয়া সম্ভব

পরিপূর্ণ বিনিময় করা সম্ভব কাঠগড়ায়...

                       



লেবুফুল গর্জে উঠলে

সৌরভ বর্ধন


মাটির ভেতর তীব্র কাচ ধরে রাখি, ফলে ক্ষতরোগ
অবিমিশ্র সিঁড়ি বেয়ে তরল চুম্বন, গলাগলা ভাত যেমন থাকে

আমি সাদা হয়ে যাই তেমন তেমন কঠিন শোকের আগে
পরে মৃত চালের ভাষান্তরে ক্ষুন্নিবৃত্তির কথা ভাবি
আকন্ঠ সাহস পান করে জেগে থাকি যুদ্ধবিরতির কাছে

চাঁদ যেন গলে পড়ছে, ওকে আতর দিয়ে কেউ ধরো...
কেউ কেউ তো বলো, একটা অমোঘ কারণ, কেন
লেবু ফুল গর্জে উঠলে কারো কিছু যায় আসে না
অথচ গোলাপের চেয়ে বেশি নির্বিকার হলে মেঘ ডাকে!

আমি তো অবান্তর ঘষতে ঘষতে এসে গেছি চটির তলায়
জোয়ারের দরজা ডিঙিয়ে কাঁঠালতলা, কলপাড়, উনুন
ব্লাউজের মতো ঝুলে থাকা দড়িতে হাতের দোসর হাত

অমীমাংসিত রমণীর বুকে পেসমেকার রেখে রোজ
শুনি কুল পতনের শব্দ, প্রতিদিন ঝরে যায় পাতার মুখ,
অপেক্ষার সংজ্ঞা শিখতে গিয়ে আমাকেও মাকড়সা
হতে হয়, এতোটা পথ দু পায়ে সম্ভব নয় জেনেও     মানুষ

                     



বাষ্পবার্তা

সৌরভ বর্ধন


নিছকই কাল্পনিক সমুদ্রের দিকচক্রবাল থেকে
এখনি বিমুক্ত হবে সকল ঘাস, উল্লসিত ফুটকির স্রোতে

খোলামেলা এক অসহ্য গন্ধ মিশ্রিত ফুলের রস,
আতঙ্কিত উলুধ্বনি মিশ্রিত গজল    - ভেসে আসবে

আরাম করে বসে থাকার দিন ফুরিয়ে এলে
অন্ধ কানাই রক্তস্রোতে জীবাশ্ম ধারণ করবে,
ডেলি প্যাসেঞ্জারি করবে তাঁর মৃত স্ত্রী এবং সন্তান

এরপরে যতটুকু না বললেই নয়, ততটুকু
লটারি করলেই একটা অবয়ব পূর্ণতাপ্রাপ্ত জলাশয়

তেমন ঠোঁট পেলে মনে করো বর্ষা রাত
কাছেপিঠেবুকে মেঘের ছবি বাজায় একাগ্র টাইপিং

সন্তর্পিয়া কাছে আসো তুমি : আঙুলে আঙুল ঢুকেছি,
বাষ্পযাত্রী ব'লে কাছে ডাকোনি, মিশে গ্যাছো বারবার
ছলে বলে অন্তরীক্ষে ; উড়ে গ্যাছো শুধু একবার শূন্যে

অনুরূপা পাল চৌধুরী

১তোড়া ক্রুশকাজলের গোলাপজল

অনুরূপা পালচৌধুরী


                    ১.

বেশ তো গলে যাচ্ছো নদীগর্ভে
অসময়ের বর্ষায় পা ডোবে না : ভিজে ওঠে বসতবাড়ির ফাটা গোড়ালি
খুঁড়তে খুঁড়তে তুমি এখন ধারালো চাঁদ
উষ্ণতা মাখছি বরফের মুখে

মুখোমুখি

একি! তুমি কাঁদছো?


                       ২.

যা কিছু হিসাবঘর : গোপন ছায়ার সূর্যবশ
হয়তো বাদামি বন্দুকেই বেয়োনেট কমণ্ডলু
সঙ্গমের চোখে একচেটিয়া ভোরের জরায়ু
প্রসব করি বরাদ্দ আঙুরের উপবাসী রক্তমাংস

আমার প্রতি____
রক্ত০-তা ইদানীং সহানুভূতিশীল


                      ৩.

জখম ভাতের দোলাচল : মরচে মাটির লকআপ
চড়া দামের চড়ুইভাতি ভিজচ্ছে
উলোট মেঘের জানলায় জানলাম তুমি শুদ্ধ কক্ষতল
ক্ষুধার্ত ডায়াল ঢুকে যাচ্ছে অস্থির অর্কিডে

নির্বাসন?

তোমাকে আমি দেইনি


                     ৪.

বেসামাল ঘন দুপুরের লাশগুলো চিবিয়ে খেয়েছি প্রতিরাতে
পাথেয় পতাকার সমর্থন : জড়ো করি আগুনের আবর্জনা
মৃত্যুর কিছু ওপারে দাঁড়াও মুখোশের উৎসবে
কুয়াশার মনোপলিতে অস্থিগুঁড়ো ঢালি

ঢলঢলে দূরবীন। দূরবর্তী
আজো ভালোবাসো বলছো?


                      ৫.

জংধরা ঘড়িসাঁতারে আলগোছের ঘুমটা ভাঙ্গতে চায় না কিছুতেই
অক্ষত আচলের ভাঁজে মুছে ফেলি গাঢ় শ্যাওলার সুদীর্ঘ চোখ
পাশ ফেরা নদীর ফেরারী ধনুষ্টংকার
ঠোঁটপতঙ্গ : কাগজী পদ্মের তলপেট

এখন প্রশ্নহীন প্রশমিত খড়িমাটি
এসো চুমু খাই প্রত্যঙ্গ জুড়ে....



চিতমাগুর : খোলতাই pic (আ)চার
অনুরূপা


বিছানার ছানায় উল্লাহে দেহবাদ

পালিয়ে বুঝি পালকি ছোঁয়া যায়

সহজলভ্য আগুনের সীমানাগুচ্ছ

ইচ্ছার শেষটা যদি লালমাংসের জানলা হয়

কত আলো মাখলে : অভিশাপ দিই না

ও আঙুলে সাহিত্য হয় না। খোলস জন্মায় প্রতিরাতের সাদা চামড়ায়

প্রতিনিয়ত ফুলের ধর্ষণ : নষ্ট পরাগের পালিত পলিঘুম

আলটিমেট ইউ আর দ্য ডিরোগেটিভ হুডলাইসেন্স

জমাচ্ছি সময়। আগন্তুক রাতের ভোরাই

অজস্র নীতি ঝড়ছে বেগুনগাছে : খারিজ বর্শার বৈঠকখাতির

মুখোশের মুখোমুখি : করুণা হয়

ভাঙা আয়নায় বৃষ্টি ধরো। হিসহিসে জলে ফুটপাতের ছাতায় ছত্রপতি দেওরা

পাতা চাদরে পরিত্রাণ নি u মে ri ক  হা ডুডুমাটি

উঁহু রতিচাটি। চাটিপাতা মেঘ ভেজে

ম র ণ ম রণ রম ণ। ও মুখ লিকলিকে চাতালে আঁঠাল জিভকাঠি  চোষে

উজান উপাধ্যায়



উজান উপাধ্যায়- এর কবিতাগুচ্ছ


হৃদমাঝারে


কবি যদি মুক্ত থাকে, যত্রতত্র হেঁটে যাওয়ার সুযোগ পায় সেটা খুব বিপজ্জনক। যদি খাদের ভিতরে আটকে যায় পা, জলের ভিতর রাখা থাকে লক্ষ লক্ষ সুন্দরী মাছের আঁশের মধ্যে  আত্মগোপন করা চিঠিদের বাদামী হরফ ঠিক তখনই এলোমেলো হবে
রীতি ও রেওয়াজ।মনখারাপের দিন গুলোকেই বর্ষাঋতু ভাবতে হলে শীতের শুষ্ক হাওয়ায় ঠোঁট ফাটলে, বেদনায় ফেটে যাওয়া বুকের পাঁজরে আটকে থাকা মেঘেদের অস্বীকার করে যেতে হয়।

কবি মুক্ত থাকলে লক্ষ লক্ষ নাগরিক বিছানায় কবির জন্য কাঁদবে নারীরা।খুলে ফেলবে রাতপোশাক। নিরাভরণ বুক আর তলপেট এগিয়ে দিয়ে বলবে -লেখো তোমার যা যা বাকি রয়ে গেছে। খবরদার মনখারাপের একটি শব্দ নয়। উড়িয়ে দাও আলোর পাখি আমাদের নাভিবিন্দু থেকে অন্তহীনে।

শপিং মল থেকে  চলে যাওয়ার পরও অসংখ্য মেয়ের ছায়া আটকে থাকে ঝাঁ চকচকে পাথর বা মোজাইক করা মেঝের খোলামেলা ডিজাইনার টাইলসের প্রতিটি শ্বেতবিম্বে। মেয়েরা তো প্রত্যেকেই নদী। যদি পাখিদের এখানে ডাকতে হয়, কবির তো দফারফা।

একজোট হয়ে সমর্পিতা অঙ্গনা রঞ্জাবতী অন্তর্লীনা নৈঋতা আরাধ্যা আর অবন্তী -শাস্তির বন্দোবস্ত করে বলবে-কী চাও কবি বলো, শরীর মন আত্মা বলোতো আমাদের শৈশব যৌবন চাওতো গোপন সব স্নান চাওতো আমাদের ঋতুজ গল্পের প্রতিটি পাতাই খুলে রাখবো তোমার আঙুলে।

মনখারাপ কোরোনা কবি। আগুন জ্বালো লক্ষ জোনাকির ছটফটে আলো জড়ো করে।দাবানল জ্বালো নিষিদ্ধ প্রেমের।

খুলে ফেলো পৃথিবীর সব অপ্রকাশিত ইনবক্স। দেখে নাও কত গুপ্ত ভালোবাসা জমা হয়ে আছে, কত কান্না কোষে কোষে
জমেছে নারীর, কত শোকাহত পুরুষ প্রতারিত হয়ে আছে সঙ্গমের শেষ পর্যায়ে। মানুষের কত অপর্যাপ্ত শোক ও বিষাদ আকন্ঠ মহুয়া গিলেছে  নিঃসাড় হয়ে যেতে যেতে, পাঁজরে জমানো সব নীলঘাস আস্তাবলে রেখে গেছে শিকারি নিশানা আত্মহননের নিঃসঙ্গ আস্ফালনে।

তোমার জন্মদিনে এ বুড়ো গ্রহের কত প্রান্তে বসেছে মঙ্গলঘট, কত মন্দিরে উচ্চারিত হয়েছে কল্যাণের স্তব, আজানের ধ্বনি শোনা গেছে কত মসজিদে, কত গীর্জায় বেজেছে প্রার্থনার স্বর।

ধূপ চন্দন ধানদূর্বা পায়েসের আয়োজনে পৃথিবীর প্রতিটি গুহায় প্রতিটি গৃহের চৌকাঠে আল্পনা এঁকে গেছে নারী, সারারাত জ্বলেছে তারারা, প্রজাপতি শঙ্খচিল গাঙশালিখেরা জেগে জেগে অতৃপ্ত ওষ্ঠভাঁজে সঞ্চয় করে গেছে অপাপবিদ্ধ চুম্বন সারিসারি।

কবি মুক্ত হলে পৃথিবীর সব ঘরবাড়ি নিষিদ্ধ প্রেমের উদাত্ত অলকানন্দা স্রোতে পুরনো গীটারে মাউথঅর্গানে সেতারে ও ভায়োলিনে বাজিয়েছে অবিরাম-

তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবোনা।

কবি মুক্ত হলেই, মনখারাপের ধূসর রঙে পান্ডুলিপি জেগে উঠলেই শীতলক্ষ্যার ওমে কারাগারের স্বরচিত জ্যোৎস্নায় পাঁজকোলা করে আঁকড়ে ধরেছে শত শত নিরাসক্ত তপস্বিনী। বলেছে - তোমাকে ছাড়লে, তোমাকে উড়নচন্ডীর মতো উড়তে দিলে, তোমার ডিফোকাসড চোখের লেন্সে ছাউনির মতো উড়ে এসে জুড়ে বসা প্রাচীন লন্ঠনের ঝুলকালি মাখা কাঁচ দিয়ে বানানো ভাঙা চশমায় ভ্রমরদের বসতে দিলে লক্ষ লক্ষ রাতবিছানা পারিজাতের গন্ধে ভেসে যাবে, উপচে পড়বে প্রাচীন বৃদ্ধার যোনি নিঃসৃত ফেরোমন, অলীক এক রাসায়নিকের সৌরভে অন্ধ হবে মালঞ্চ বাগানের সব কোমলমতি ফুলেরা।

কবি, বর্ষা এসেছে মানে  আষাঢ় শ্রাবণ নয়। তোমাকে মরতে দেখে পুড়তে দেখে ছাই হতে দেখে কেঁদেছে নারীরা।

খবরদার কবি , মনখারাপ নয়-তোমার জন্য নগ্ন হতে প্রেমিকা হতে হয়না আমাকে, শুধুমাত্র খোলাবুকে একটা আকাশ পেতে রাখা - একটা অন্ধকার ক্যানভাস।

তুমি শুধু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছিঁড়ে ছিঁড়ে তোমার বিদীর্ণ ঠোঁটে অক্ষর কুড়িয়ে কুড়িয়ে এখানে ছড়াও।

ভালোবাসা কাকে বলে জানতে হবে না, শুধু বৃষ্টি এনে দাও।
কবি মুক্ত হলে ভূগোল পড়ানো দরকারই হবে না আর, ঋতুরঙ্গ নটরাজ সবাই খারিজ।

নারীদের রাতপোশাক মহাকাশে ছুঁড়ে দিলে ভালোবাসা ঘুঙুরের মতো নেচে নেচে কবিকে জোগাবে সুখ, কবির শুধুই একটি কাজ-

সারাও এ পরবাসে প্রতিটি অসুখ।



মেয়েদের হাতে

উজান উপাধ্যায়


বুঝে শুনেই গাছের সাথে সংসার বাঁধল মেয়েটি ।
রাত্রি হলেই মেয়ে গাছ হয়ে যায় ।
ছোট থেকেই এমন ....
মেয়েটি বুঝেছে অন্তত রাতে কোন পুরুষ তাকে ঘেন্না করবে না ।
অবিশ্রান্ত স্নান পেতে গেলে ফুলশয্যা
গাছের সাথেই , অন্তত কিছু গাছ যতদিন ফুলের জন্ম দিতে থাকবে অভ্রান্ত ভ্রুণাধারে ।

ভূমিক্ষয় রুখে দিতে মেয়েদের সামনে আর যে কোন পথই খোলা থাকছে না।




পলিমাটি

উজান উপাধ্যায়


তোমার বুকের দেড় ইঞ্চি গভীরে নামলেই আমি ঘুমিয়ে যাই , অসাড় মৃত মাছের মত লবণাক্ত ঢেউ দুহাতে সরিয়ে।

তোমার কান্নায় আমার দেহদান।

ঝুরঝুর করে স্মৃতিভস্ম ছড়িয়ে যায়
অন্ধকারে মিশে থাকা ছোবলের আর্তনাদ-চিহ্নের
শিকারি উষ্ণতায় ।

তুমি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছোনা
আমার হরিণছুট , আমার নিঃশ্বাসে একশো আট গাছের রিক্তস্বর , ভিজে চুলে প্রতারক  হরিণীর গা ঘিনঘিনে ঋতুস্রাব।

তুমি মরণপণ  ফিরিয়ে আনতে চাইছো তোমার দশ আঙুলে , আমার অসহায় তীক্ষ্ণচূড়া জলাধারের আনত উত্থান
তোমার দলাপাকানো বর্ষবলয়ের প্রতিটি আবর্তে পাক খেয়ে উঠছে জলস্তম্ভের আসঞ্জিত মৃত্যু বিন্যাস।

একটার পর একটা চামড়া খসিয়ে নেমে আসছি অরক্ষিত  আস্তাবলের অশান্ত শিবিরে ।

প্রতিটি চুম্বনেই অন্য কোনও ঠোঁট বুঝছো  ,  ভাবছো প্রতিটি ঘামবিন্দু ভুলের ছদ্মবেশে এখনো
হন্তারক , বিষমদে তলিয়ে যাওয়া পাহাড়ের আতঙ্কিত চন্দনস্নান , ধূপগন্ধে মৃত জোছনার নিথর উল্লাস।

তুমি ক্রমাগত ভেঙেচুরে মন্থন শেষেও নদীপাড়ে পৌঁছোতে পারছো না।

কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা , তোমার শরীরের প্রতিটি কার্নিশে , প্রতিটি খাদে ও খাড়িতে গুছিয়ে রাখা পরাজিত লাশে তোমার অক্ষরমালার প্রতিটি বীজ রোপণ করছি নিরুপায় প্রেমিকের গত্যন্তরহীন
অবশিষ্ট যুদ্ধের মতো।

এইবার বলে দিই , শোনো-

ভালোবাসায় বিশ্বাস ফিরতে তোমার যতটুকু সময় লাগবে , ততদিন ভাগচাষীর মতো  তোমার নাভির চারপাশে আবহমানের সমস্ত পলিমাটি স্তরে স্তরে জমিয়ে যাবো।

কথা দাও শুধু এইটুকু -

প্রবল বৃষ্টি এলে নিঃস্ব আমাকে জলসেচে পৌঁছে দেবে তোমার শৈশবের প্রতিটি প্রত্যাখ্যাত উপত্যকার নিরস্ত্র অরণ্যের শিশির-শিকড়ে।

ভালোবাসা বারবার মরে , তবুও যে ভালোবাসা অজেয় অমর , প্রেমিকার নিহত কোমরে।

চাণক্য বাড়ৈ

চাণক্য বাড়ৈ - এর কবিতাগুচ্ছ


সনেট-১

আবার এসেছি বঁধু, ধরো এই কাঙালের হাত
উন্মাতাল ভ্রমরে নাও পদ্ম ফোঁটা বক্ষের বাগে,
বিরলে উঠুক জমে দুজনার কামের মৌতাত
শোয়াও সোনার খাটে, স্বর্গ রচি সোহাগে-সম্ভোগে।
অধর তূণীর হতে লক্ষ্যভেদী তীরন্দাজ নারী
তিলের ঐ তীর ছোঁড়ো; সমর্পনে পুরুষের সুখ
প্রেমের সীমার তুমি তীক্ষèধার তনু-তরবারি
বসনের আধার হতে নির্দ্বিধায় করো উন্মুখ।

কে কবে কম কোথা কামিনীর কায়ার কেরামতি
যেভাবে দিয়েছ নারী ডেকে নিয়ে বেহেস্তের ফল!
লাল লেহেঙ্গা ফেলে লজ্জাবতী লো, সাজো লীলাবতী
রূপের তর্জমা করি, পান করি অমৃত গরল।
কার্পণ্য করেনি বিধি, পেলে তাই অনন্ত যৌবন
নিরুত্তরে আছ কেন শোনো নাকি কবির ক্রন্দন?





সনেট-২

রতির আফিম নিয়ে ধীর বেগে নেমে এল রাত
যৌবন শরাব তুলে এলে তুমি দয়িতা আমার
নিষিদ্ধ লবণ স্বাদে এসো ভুলি হারানো জান্নাত
তোমার বসন আজ রমণীয় রাতের আঁধার
পিদিম নিভিয়ে দাও ফিরে যাই আদিম গুহায়
খুঁজে দেখি কোথা আছে আঁধারের সপক্ষ বচন
অলক এলিয়ে এসো সুগন্ধি ছড়িয়ে হাওয়ায়
সর্বাঙ্গে বিলাও সখি, ঈষদুষ্ণ মদির চুম্বন।

রাতের প্রহর গুণে বাড়ে সখী তোমার তিয়াস
তনুর পেয়ালা হতে ঢেলে দাও ফেনিল শরাব
স্মরণীয় হয়ে থাক আজিকার রজনী বিলাস
রাতের মাহাত্ম্য নিয়ে শাস্ত্রকার লিখুক কিতাব
সরল স্বীকার শোনো, পুরুষের মিথ্যা বাহাদুরি
কবির কাব্যের গাছে চিরকাল জল ঢালে নারী।

সনেট-৩

কর্ষণে নিমগ্ন চাষা খুলে দেখি পুবের দুয়ার
এ বর্ষণে ফলাবে সে মুঠি মুঠি সোনার ফসল
এক হাতে পুষ্ট বীজ স্বপ্ন চোখে অজস্র অপার
মাটির জঠরগামী অন্য হাতে লোহার লাঙল
ফালের আঘাত সয়ে কেঁপে ওঠে অনাবাদী জমি
মেঘের গর্জন শুনে তড়পায় কৃষাণের বুক
সাপের জিভের মতো যেই জ্বলে অস্তাচলগামী
বঙ্কিম বিজুলি ছটা কাঁদে এই বুকের ডাহুক।

দিন, ক্ষণ, তিথি গুণে এ কৃষাণ দিতে পারে চাষ
নরম কাদার মতো যদি হও শয্যায় সরস
আমার মৃত্তিকা তুমিÑ ব্যক্ত করি এই অভিলাষ
কুল রক্ষা করো যদি, পান করো রতির চরস
বর্ষণে সৃজনে সুখ প্রকৃতির এই শুদ্ধ রীতি
শিয়রে দাঁড়িয়ে কবি; একবার দাও অনুমতি।


সনেট -৪

কুসুম বদনে বঁধু কত মধু করেছ ধারণ
কারে যাচি মুখখানি ভিজিয়েছ রূপের সুধায়
রূপে তব লেখা আছে বল সখী কাহার মরণ
আলোর ঝলকে দেখো হারায়েছি ফড়িঙ হৃদয়
প্রেমিক পুরুষ আমি যেন এক কামার্ত মদন
কেন দাও দাহ দেহে দগ্ধ করো কিসের আশায়
শিশিরে সিনান করি কামরাঙা কোমল নয়ন
কেন করো পরাজিত ছলনার কপট পাশায় ?

কাতর কায়ায় কেন মেখে রাখো কামের কাজল
চুলের খোঁপায় বুঝি ছল করে আমাকেই বাঁধো
আমারে জড়াতে বুঝি পেতে রাখো বুকের আঁচল
বাঁশির বিরহী সুর কেন বঁধু সকরুণ সাধো
কেন এত প্রহেলিকা কেন বলো এত ছলাকলা
অবুঝ কবির কাছে কিছু তার যাবে নাকি বলা ?

সপ্তর্ষি মিষ্টু বসু


নব্য

সপ্তর্ষি মিষ্টু বসু


অস্থির নিরাপত্তায় পুড়িয়ে দিলে

প্রাচীন হাজার শ্লোকের কল্প অভিধান-

ব্যবহারিক গতি-বিধি,নিয়ন্ত্রিত রীতি-নীতির

সামাজিক পূর্ণাবয়ব নির্বিশেষে প্রগাঢ় প্রেমানলে

ভাসতে থাকে কোজাগরী ধোঁয়া সম্পৃক্ত বাতাসে

সুললিত আতরের ঘ্রান মাখা উদ্ভাসিত জোছনা

মাঝে ভিড় করে অনাদি অপেক্ষমান লাখো জীর্ণ

যুগ্ম ছায়া,হৃদয় গহীনে অতৃপ্তির কালশিটে

রেখা ধুয়ে এগিয়ে যেতে বর্ণিল প্রেমের দিগন্তে…


ডেকোনা ওদের,উলু দাও,

শঙ্খ লেগেছে মনে মনে।

     

রূপকথা

সপ্তর্ষি মিষ্টু বসু


তোমার বর্ণনায় যে সমস্ত ফুল ফোটে,

তার চারপাশে আমি আমার রঙের প্রজাপতি

এনে রাখি কোলাহলে বাঁধি ছন্দবদ্ধ ভ্রমর

নদীর ছলাৎছল,আর দূর থেকে কামুক বাতাস ডেকে

এনে ছড়িয়ে দি এষণা পাড়ার মেঘ,



বৃষ্টি হয় কিছুক্ষণ...



ঠাণ্ডা হয়ে যায় কফি,

হলুদ আলোর বেণী খুলে কাছে এসে দাঁড়ায় বিকেলের রোদ

তোমার চোখের তারার উচ্ছলতায় আনমনে আঁকতে থাকি

জোনাকির আলপনা,লাল বাড়ি,নীল জোছনা,ঘোড়ায় টানা গাড়ি..

ঝরতেই তুমি থাকো,বলতেই থাকো,

আর ভিতরে ভিতরে আমি আয়োজন করি রূপকথার গৃহপ্রবেশ...




ইচ্ছা অনুপ্রবেশের

সপ্তর্ষি মিষ্টু বসু



তুমি আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে দুটো নদী এঁকে দিয়েছিলে

দূর প্রান্তরে যেখানে কালো মাটি লাল মাটির হাতে ব্যাটন

তুলে এগোতে বলেছিলো,তার ঠোঁটের গোড়ায়

টই টই নীলাভ জলে মিঠে বাতাস আলপনা আঁকতে আঁকতে

মাছের সাথে গল্প করছিলো,আর চাঁদের ছিপ ধরে নেমে

আসছিলো একটা একটা করে তারা,তাদের দ্যুতিময়

বিশাল বিশাল শরীর কেমন যেন ঠিক নদীর বুকে

আংটির মতো বসে যাচ্ছিলো মাপে মাপে,শুকনো পাতার

ভেলায় কালো পিঁপড়ের রথে চড়ে জড়ো হচ্ছিলো খুশির অসুখ,

হুলস্থূল,হৈহৈ উৎযাপন শুনে আমারও বেদম উত্তেজনায় নীল জোনাক

পিঠে চড়ে যেতে ইচ্ছা করছিলো আহ্লাদী সুরের জোছনা উপকূলে

প্রাণের কলস ভরে নিতে চাইছিলাম খুব অপার্থিব মোহনার নিভাঁজ তরঙ্গে;

কিন্তু হায়!তোমার গহীন হৃদয়ের অবগুন্ঠিত সড়কের সংকেতই যে আজ পর্যন্ত

বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯

রুমা ঢ্যাঙ অধিকারী


অবেলায় ভরে উঠেছে ঋজুকায় ঘ্রাণ

রুমা ঢ্যাঙ অধিকারী

সীমান্তে ভাগ হয়ে গেছে নদী
জেগে আছে পাড়া
কখনও বোমারুওফোবিয়া,  কখনও আবেগান্বিত হোলি
পদচারণের নির্ধারিত করেনি সময়
অথচ জার্নালের বারুদখানা খোলা,  বেবাক মীরাবাঈয়ের হৃদয়
ফেলে গেছে নৌকাকাল
                      ------  তারই আগাছায় পূর্বাহ্নের ধুলো

তবু তুমি আসো ভুলের দোর খুলে
ফেলে যাও প্রস্তুতিবিহীন শিরোনাম

(২)

দীর্ণ হতে হতে অকাল লিখছিলেন বর্ষণ যখন
অসমান বসন্তওয়াড়ি পার করে চলেছি
                                                 উপবনে
দাঁড়িয়ে গিয়েছে করাত অন্ধকার
সেদিন বিছানার সহচরীদের বলেছিলাম কোজি রাতের কথা,
অনিশ্চিত বাতের কথা...
দানাবীজে বয়ে যায় স্মরণ। পিঠে মুগুর ছাপ পড়ে

লেলানো প্রকল্পের ধাঁচ এখন নিভু নিভু
দুছটাক তরল সুখান্বিত হতে
                 এই ডটপেনের এখন নীলকমলিনী হওয়া

অবেলায় ভরে উঠেছে ঋজুকায় ঘ্রাণ

তুলসী কর্মকার


ট্রেন

তুলসী  কর্মকার

আবেগ উল্লাস উতলা উদ্দীপক উপাধিজাত অস্তিত্ব
কন্যাকুমার এক্সপ্রেস গুহামুখ অতিক্রম করল
প্যাসেঞ্জার উঠছে আর নামছে প্রশান্তবদন
দয়াময় মায়াজাল সাথে মমতার লোভাতুর দৃষ্টি
সহিংস ঘৃণাবৎ ভোগসূচক হাত ত্যাগ বর্জন করে
সাহসযুক্ত অর্থ সম্প্রসারণ রীতিসিদ্ধ নীতিসংগত
কামগামী জননশক্তি আগমন ঘটে
ক্রমেক্রমে সিট ভর্তি, গমগমে রব, যাপন ছুটছে
রিপু উঠছে আর নামছে, লাল সবুজ আবহাওয়া
মাঝেমাঝে ঘটমান পথ ও মতের রদবদল
শাখা উপ শাখার শেষ গন্তব্য ছাইভস্ম অথবা কবর
মরণগামী একমুখী সফর আবদ্ধ জীবন ইঞ্জিনে


সিনট্যাক্স

তুলসী  কর্মকার

দুটি মেঘ পাথর জলধারা ধাক্কা লাগলে
তড়িৎ ফুল্কি ঘূর্ণি অনুভূত হয়

মন মনের কুরুক্ষেত্রে
প্রেম বিষাদ আনন্দ তৈরি হয়

শরীর শরীরে আঘাত হলে
কাম জখম উদ্বেগ উদ্গীরণ করে

অবৈধ স্বপ্ন ধেয়ে এলে, ক্ষরিত হয় রেণু
অন্তর্বাসে ছটপট করে সশরীরের প্রোটোকল

ঝর্ণা

তুলসী  কর্মকার

কামনার নিলিপ্ত উঠানে তোমার সংশক্তি
আদিখ্যেতা উদ্দীপনে আঘাত হেনেছি
উপরিতল ক্ষতিগ্রস্ত চুঁয়ে পড়ে মজ্জাগত তরল
দিশেহারা তুমি
শরবত পরিলক্ষিত হয়
উপলব্ধি করি শরীর মনে স্যাঁতস্যাঁতে নির্যাস
ধারা হতে চায়
বহমান কলা প্রেমজ কাম জলজ ফাঁক
যা কেবল প্রকৃতিগত অস্তিত্বের দ্রাবক
বিগত বিদ্যমান আগত পথে ক্রমাগত রেখা আঁকে

মেরু

তুলসী  কর্মকার

চোখ আমাকে দেখে
মেলেছি কাম প্রেম ভাল্লাগা
তপ্ত হয়েছ তুমি
সান্দ্র অথবা কঠিন হয়েছে অণু
সেদিন বাসস্টপে আইবুড়ো তুমি
দিয়েছে বিবাহ নিমন্ত্রণ
অতিক্রম করেছি মরু
আজ সন্তান স্বামী অনলাইন
কতকাল মুখোমুখি হয়নি
তোমার অভ্যন্তরীণ চুম্বকীয় আবেশ
লোকচক্ষুর সম্মুখে কুরি সভ্যতা ছুঁতে চায়
নির্মল সুন্দর সাবলীল
এসো অলক্ষ্যে শীতল কক্ষে সাজানো স্বপ্নে
উদাসীন অঞ্চল ছেড়ে মেরুমুখী হই......

ঝরাপাতা

তুলসী  কর্মকার

আকাশ ছোট হতে চায়
অভিমানী মেঘ প্রসারিত
অস্থিমজ্জা শুকনো কাঠ
অ্যাসিডে ভিজেছে
ইশারাতে কালো মুখ
ইচ্ছেরা পরাজিত
নাগাল ছিঁড়ে গেছে
তোমার অনেক কিছু আছে
আমার আত্মা আশকারা হারিয়েছে
অবাঞ্ছিত ঝড় থেমেছে
খুঁজে পেয়েছি
মনের গভীরে কিছু মূল আজও অক্ষত আছে

ঘোর

তুলসী  কর্মকার

রাতে থাকে ঘুম স্বপ্ন অথবা অস্থিরতা
ফ্যাক্টর ক্রমবর্ধমান
শোয়ার ঘরের দরজা অনেক মজবুত
ভিতরের কপাট আলগা রাখি মৃত্যু নামবে
দেহ বের করতে কিছু কষ্ট লাঘব হবে
ক্ষতিবিহীন সংগতিতে বিশ্বাসী
সেই কবে মরে গেছি আর জীবন নিয়ে ভাবি না
দু হাত তুলে তারে খুঁজি
একটা কান কাজ করছিল না
ঔষধ খায়নি দীর্ঘদিন
হঠাৎ কড় কড় শব্দ
আশ্চর্য রকম ভাবে ঠিক হল
এখন ভীষণ একা
স্বপ্নের মাঠে আর প্রেম খেলে না
অনেক দূরে মেয়ে ও তার ব্যস্ত মা
ভা'বাসা দুমড়ে মুষড়ে কুপোকাত

দিন আসলে অত্যধিক অচেনা হয়
অনির্দিষ্ট ঘটনাবহুল
চিকিৎসক অবাক কীভাবে সম্ভব
একটার পর একটা রিপোর্ট
অথচ সাবলীল বেঁচে থাকা
এ বোধ পোশাকি নগ্নতা অধরা ঈশ্বর

চন্দন দাস


প্রান্তিক মানুষেরা যে কথা বলতে পারে না

চন্দন দাস

১.
এখন সমস্ত উৎকন্ঠা'য় বিষ ঢেলে দিলাম
আস্তে আস্তে কচলে উঠুক শ্রীচরনেষু বিষাদ
এরপর পালাবার উপায় থাকবে'না যখন
সন্ন্যাসী চোখে জোনাকি রাত পুঁতে দেবো।
২.
অপেক্ষা করো আত্মহত্যা মূলক গৌর-প্রবচন
তোমার সারা শরীরে এখন ঝালরক্ত বইছে
পৃথিবীর ইতিহাসে ধ্যানমগ্ন সব খড়কুটো বিকেল
আলো নিভে আসা পূর্বমুহূর্ত ব্যর্থতা চায়'না।
৩.
করতলে তামাক ঘসতে ঘসতে নেশায় বুঁদ
ক্ষতচিহ্নগুলো আত্মজনেষু দুঃচিন্তানগরী
সনাতনী কুকুর ধাওয়া করতে করতে যখন
পৌঁছে যাবে নক্ষত্রকাল, তুমিও তখন একান্ত
ঘুমিয়ে থাকো প্রেতাত্মা মাখা বিষাদ জড়িয়ে !
৪.
ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছি সম্পর্কের রসায়ন
সমস্ত সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা জরুরী নয়
দেবদারু বনে  ঘুরে ঘুরে এক ফকির বিকেলে
পাখি হতে শিখে গেছি, আকাশ বড় উদাসী!



আঙুলে বুনেছি   স্বপ্নজাল

চন্দন দাস


আলপথ ধরে ফাগুনরঙা মেঘ জল ছুঁয়ে সাঁকো আঁকে
মাঘীপূর্ণিমা রাতে কুমারীবউ সাধসেধে বেড়ে দিয়েছিল
 কচুপোড়া বিউলিডাল পান্তাভাতে একছটাক সঃতেল।
সন্ন্যাসীর মতো সবকিছু ছুঁড়ে দিয়ে সেরাত  নিঃশর্ত দরাজী
একটা প্রজাপতির মত চাঁদ ছুঁয়ে যাচ্ছে শূণ্য বেহালা।
এই অপূর্ব স্বচ্ছ কল্পনায় ডুবদিয়ে গেল তিমির জোৎস্না
ভাঙা তোরঙ্গের ভেতর ঝনঝন করে রবিঠাকুরের গান
তখনো কুমারীবউ ভালোবাসে শূন্য___শূণ্যের আকাশ!

ফিরোজ আখতার

ফিরোজ আখতার'এর কবিতাগুচ্ছ

দোষারোপ ১

চাঁদকে কলঙ্কিনী বলে
দোষারোপ করেও আমরা
জোৎস্নাস্নানে কসুর করি না

অথচ, জোৎস্না কত মখমল

এটাই বোধহয় পৃথিবী'র নিয়ম

প্রতিটি কলঙ্কের দাগ
আউটপুট হিসাবে মখমল-দামী

শুধু কলঙ্কের ছায়ায় বসে
বাঁশি বাজায় কোন এক
উপত্যকাহীন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা



দোষারোপ ২

গাছের শিকড়রা যৌনযাপন করে
লবনাম্বু জটিলতায় যৌগিক হয়ে ওঠে
শ্বাসমূলের লবণচাওয়া
সবসময় শুনতে পায় না সাগর

আপন খেয়ালেই লবণমাত্রা
পূর্ণতা পায়...
কখনো বা পায় না


দোষারোপ ৪

তোমার নাভি'র উতরাই-এ
একটা পলাশ ফুল রেখে বলেছিলাম
'মনে রেখো'

পলাশ ফুল শুকোনো'র আগেই
আমায় ভুলে গেছিলে

তবু আমার ইচ্ছেধারী আলেখ্য
তোমার স্নায়ুসন্ধিতে এসরাজের
সুর তোলে ৷ পরাজিত মুর্চ্ছণায়।

রাণা চ্যাটার্জী


জ্যামিতিক প্রেম

রাণা চ্যাটার্জী


সরল রেখা ,বক্র রেখার মাঝে তোমার আমার জ্যামিতিক প্রেম যে উপপাদ্যের সমাধান তৃপ্ততা
                          আনবে না সে বেশ বুঝতাম।
তবুও গুণিতক ইচ্ছার ডানা মেলে,স্বপ্নের বীজ  
                  বপন করেছি শুখা হৃদয় জমিতে l
ব্ল্যাক বোর্ড জুড়ে জটিল অংকের সংখ্যা মোছা চকের গুঁড়ায় , ডাস্টার প্রলেপ নিত্য সুখের জন্ম দিয়েছে ।

রাগী মাস্টার মশাই এর আঁকিবুকি,সমাধান সংখ্যা ভারে তোমার সাথে বেরিয়ে যেতাম কল্পনার আঙ্গুল ছুঁয়ে।
জটিল অংক মেলানোর  আনন্দে মশগুল আমি দৌড়ে বেড়াই আজও ক্লাস জানালার গরাদ ধরে ,
ওই পুকুর পার ,শ্যামল সজীবতা ছুঁয়ে ফিরে আসা।
অনেক উৎসাহ দেয় এই বুঝি পাবো তোমায়!
তুমি নেই, নেই আমার সেই স্কুল জীবনের পলেস্তারা খসা শ্রেণি কক্ষ ,
জানলার পাশে তোমার বেঞ্চ আজ আছে কিনা জানি না ,সেই কাটা কুটি খেলা,বেঞ্চে নাম খোদাই এর দুষ্টুমি দিন তবু কাছে টানে তোমার স্মৃতিস্পর্শ।

আজ আমি বহু দূরে ,অংকের শিক্ষক হয়ে !
তুমি হারিয়েও অমর হয়েছো আমার চকের গুঁড়ায়।




অনুপ্রেরণা

রাণা চ্যাটার্জী


চার কদম এগুনোর স্বপ্ন দেখিয়ে দু কদম পেছানোয় দিশেহারা প্রেম গোত্তা খায় রম্বস জটিলতায় ।
বেশতো ছিলেম তোমাতে,আমাতে,
     অন্যদের ঈর্ষা, বিস্ময় চিহ্ন পূর্ণছেদ,কমাতে।

কচি পাতা আসা শক্ত ডালে পা ঝুলিয়ে তোমার  দোলনা বালিকা রূপ বড়ো মুগ্ধকর,সোনালী রোদ্দুরে,স্বপ্ন মাখা আবেশে অপরূপ মেঘবালিকা।

নৈঋতা নদীর স্নিগ্ধতা মেখে শুনেছি কতো গান।
ক্লান্ত রাত ফুৎকারে কাটিয়ে,ঘন্টা,মিনিট হিসেব বহির্ভূত কল্পনার শরীরী অবগাহন,পান কৌড়ি ডুব।
তবুও হঠাৎ,সম্পর্কের মিষ্টি  ঘ্রাণে বিদ্রোহী মেঘের
              দাপট, রণহুঙ্কার,বড়ো বেসামালতা !
ডাল পালা ভেঙে,জড় ভরত আমার দিন যাপন !
দোলনা ভেঙ্গেছে আগেই! বিবর্ণ, পাংশুটে সোনালী রোদ ঘিরে ধরে কালো মেঘের  ভ্রুকুটি।

ভারী বাতাসে কান পেতে রই,ভাসে আজো নূপুর
                                     ধ্বনির ছান্দিক  মিষ্টতা।
অতীতের,না ক্ষয়া স্মৃতির সিন্ধুক বোঝাই নিয়ে ,
      রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশলা বৃষ্টির মন খারাপের  ঘ্রাণ !

নদী আপন গতিতে আজও, কখনো অসংখ্য পঙ্কিল বিদ্রুপ ভারে গতিশীলতার  রুদ্ধতায় বিমর্ষ,
তবু আশার কিরণ তুমি,  ভাবনায় রোজ দেখি  সূর্যোদয় তুমি আছো ,নিঃশ্বাসে টের পাই।




অনুরণন

রাণা চ্যাটার্জী


চোখের জল কি এতো সস্তা !
যখন খুশি হৃদয় নিঃসারিত হয়ে
      হোয়াংহো হয়ে বইতে দেবে !

অনেক বুঝিয়েও পারিনি তোমায় ,
   আমি ছিলাম ,আছি ,থাকবো ।
রাতের আঁধারে কান পেতে শুনেছি
অন্তসলিলা লুনি'র নিস্তব্ধ বহমানতা ।

চাপা কষ্ট,আমায় চেয়েও,না পাবার তোমার আর্তি ,
হঠাৎ তবে কেন পথ হারালো থমকে ,
নিজের ওপর ভরসা ,বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে !
আজও তোমার জন্য বটবৃক্ষ হয়ে বাঁচা !

চাইনি তো এমন ভালোবাসা ,স্বার্থপরতার বর্ণপরিচয় !
যা মন কে তুমি-আমি সর্বস্ব ,শেকল পড়ানো
চোরা কুঠুরিতে বদ্ধ করে !

হোক ভালোবাসা শাশ্বত,শরীরী মোহময় বিহীন ,
দূরত্ব,বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন কারী জাগ্রত প্রহরী।
বিশ্বাস ,ভরসা ,সততা ,অনুপ্রেরণার শক্ত খুঁটির  ওপর দাঁড়ানো ইমারত হয়ে ।




নতুন পথের খোঁজে

রাণা চ্যাটার্জী


শব্দের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, চুঁইয়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা
      নোনা বৃষ্টি,আমার মাংসপেশিতে টান ধরায়।  
  জল্পনা-কল্পনার পারদ,থমকে যায় তোমার
                      আদুরে খোলা পিঠের জরুলে।
তখনও বিন্দু বিন্দু জল, ভেজা চুলের ডগায়
   আটকে, আস্কারা দেয় আমার অ্যাড্রিনালিন!

ছেড়ে চলে গিয়েও তোমার আলটপকা শব্দচয়ন, এফোঁড় ওফোঁড় করে,নিবিড় ভাবনার কোলাজ ।
         তবু প্রতীক্ষায় আসে কুয়াশা ভোর...
         বুকের পাঁজরে মারে স্মৃতির হ্যাঁচকা টান।
রংপাল্টানো শব্দের বর্ষা ফলক,
            আমায় লম্বা শ্বাস নিতে পিঠ চাপড়ায়।




সম্পর্কের সাপ লুডো

রাণা চ্যাটার্জী


তোমার যেটুকু ছিলো তা তোমারই আছে,
       আমার যেটুকু সেটাও উজাড় করে তোমার আঁচলে গিঁট বেঁধেছিলাম শরতের শিউলি ভোরে।

ভোগ সম্পত্তি ,প্রাচুর্যে রাজ রানী না করতে পারি,
              পেয়েছিলে অঢেল স্বাধীনতার জৌলুস।
যার অপব্যবহার, ঘুণপোকার মতো কেটে তছনছ  
                        আমাদের বিশ্বাস, প্রেম নিটলতা!
বুঝিনি পাকা মিষ্টি ফলে, বিষাক্ত পোকা এমন  
           ঘাপটি মেরে ! সুযোগ বুঝেই মরণ কামড়।

এই ঘর,ভরা শূন্যতায় ,জলপূর্ণ চৌবাচ্ছার ভ্রূকুটি    
      ইচ্ছার ঘরে অনিচ্ছার সাপ লুডো দাপাদাপি!

লুডো বোর্ডের নিচেই সাপ-মই ছকে ,বিষাক্ত সাপের ছোবল খাবার আগেই আমি মই নিয়ে সুরক্ষিত সংখ্যায় পৌঁছানোর অপেক্ষায় আজও
       রাত্রি পাহাড়ায় এক সমুদ্র ,ঘুম চোখ নিয়ে।

আবদুস সালাম

প্রেম

আবদুস সালাম

মানমানবী ঘেরা আধপোড়া বারান্দায় আমরা থাকি
সবাই ব‍্যস্ত হচ্ছি সাপলুডু খেলায়
প্রেমিকপ্রেমিকার সামনে বিষন্ন পথ
পাখিরা মেলে ধরছে কষ্টকথা

তর্কযুদ্ধের আসরে ডানা মেলছে দায়িত্ব হীন উষ্ণতা
ঝরে পড়ছে প্রেমের রক্ত রেণু

বিষন্ন আকাশে পাড়ি জমায় দীর্ঘশ্বাস
ঝাঁপি খুলে দেখি পরতে পরতে তার অদ্ভুত
কষ্ট কথা

ব‍্যথাযুবতিরা মালা গাঁথে ডুমুর ফুলে
আধপোড়া বারান্দায় চাঁদ ডুবে যায় বিষন্ন অভিমানে


নিয়তি ও প্রেম

আবদুস সালাম


যখন প্রেম বলতে কিছু  বোধ হচ্ছিল
বোঝা না বোঝার বলয়ে নিয়তি দিল মাথা ঠুকে
নিজেরই অজান্তে বিচ্ছেদকাল ধরা দেয় শরীরে

প্রেমের মাছি ভনভন করছে  সময়ে
অভিমানী আত্মা থাপ্পড় মারে গালে
জাপটে ধরে  আদর করে বিচ্ছেদের শুঁয়োপোকা

প্রেমের যে কাঁটা আছে জানতাম না

সমুদ্র  কিনারে গুনছি নীল ঢেউ
শূন‍্য প্রহরের গান বেজে চলেছে অজান্তে
কুয়াশার অক্ষরে লিখে চলেছি মহাশূন্যের কবিতা
প্রেম বোঝা না বোঝার বলয়ে নিয়তি  মাথা ঠুকে দেয়

প্রহরা বিহীন লেভেলক্রশিং এ  একলা আছি দাঁড়িয়ে
শিকার  শেষে  ফিরে এলো প্রেম
অরণ্য সভ‍্যতার মনুষ্যত্ব দূরবীন দিয়ে দেখছি
নিয়তি মজা করে পাড়িয়ে দিচ্ছে কর্কশ ঘুম

 চাকু হাতে নি:সঙ্গতা পাহারা দেয় আনমনে
নিয়তি লাটাই হাতে দাঁড়িয়ে দেখছে মজা



সঙ্গী ----    
 
আবদুস সালাম


সুখের কথা না বলাই ভালো
ওর চপলা স্বভাব
দু:খ সারাদিন নেওটা ছেলে র মতো ঘুর- ঘুর করে
শত অবহেলা গায়ে মাখে না

পাথুরে সহবাসে উথলে ওঠে যন্ত্রণার ঢেউ
উথালিপাথালী স্বপ্ন বিথান
বুকে জমা হয় অর্থহীন বিলাস কথা

সংসার সাজিয়ে সনাতন পাখিরা খেলা করে
বৈরাগ্য পাড়ায় খেলা করে সর্বনাশ

মন্দিরে বেজে ওঠে কাঁসরের ঘন্টা  
সুখের মোড়কে দু:খ বিক্রি করেন ধর্মগুরু
আঁধার ঘনিয়ে আসে
এক বালিশে চলে লটাপটি

ওরে আমার দুঃখ ,আমি যে তোর প্রাণের দোসর


বদল    
 
আবদুস সালাম


বার বার বদলেছে খতিয়ান
নক্ষত্র গতিতে বদলেছে জীবনের মানে

দুর্নিবার অন্ধকার ঢাকে জীবনের ব‍্যঞ্জনা
কপটতা দিয়ে সাজানো ভালো বাসার বিষাদ ঘর

অথর্ব শরীর ডুবে যায় ভাবনায়
গভীর রাতে শরীর থেকে খসে পড়ে জং
বিষন্ন সময়  দাঁড়ায় আয়নার সামনে
খুঁজে চলে ভুল অঙ্কের পদ্ধতি

অসমাপ্ত কাহিনী খুঁজে চলছে পরাভব শূন্যতা
নষ্ট মেয়ের মতো বদল হয় খতিয়ান

লুকানো বীজ ফুলের ঘর করবো বলে বার বার আসে

স্বরূপ সিংহ রায়


জননী জন্মভূমিশ্চ” - এক অন্য ভালোবাসার গল্প ---

স্বরূপ সিংহ রায়

(another Valentine)

ধূলি ধূসর পাথুরে টিলাকে দুপাশে রেখে
আঁকা বাঁকা বসন্ত খোবরানো পিচঢালা পথ ।

দূরের স্টেশন থেকে ঝরঝরে বাস থামে
সাতাত্তর নম্বর মাইলফলক পেরিয়ে
কাঁচাপথ জংশনে ।

নিঃশব্দে রুকস্যাক কাঁধে
নেমে আসে যুবক সে এক,
গোঁফের রেখার আভাসে
সদ্য সাবালক পরিচিতি ।

একপাল ছেলের দল কচিকাঁচা
হৈ হৈ বের হয়ে আসে
আবুল, মিরান্দা, অজয়ের সাথে
ঘিরে ধরে কাঁধে তুলে নেয় ।

সম্মিলিত “জয় হিন্দ” রণিত ধ্বনিত হয়
টিলাতে পাহাড়ে ।

বন্ধুবেষ্টিত হাঁটাপথ জুড়ে
ভালোবাসা ঘুরে ঘুরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
মল্লিকা মাসির আঁচল
আবদুল চাচার তোবড়ানো গাল ।

উজ্জ্বল চোখ খুঁজে ফেরে
মাটি মা-র মান
যুবকের দুই চোখে ।

"সাব্বাস বেটা", আদরে আদরে
বুকেতে জড়ায় হাফিজুল খুড়ো ।

কলমীশাকের আঁটি বাঁধা বন্ধ হয়,
শ্যামলী মাসির ভিজে হাত
“শান্তির মসিহা” তখন ছেলেটির মুখ জুড়ে ।

শেফালি মারান্ডির হাতে ধরে রাখা
ইঁদারার ঠান্ডা জল
আর রুকসানার চোখের গভীর আর্তিতে
অশ্বত্থ শীতল ছায়া  সমস্ত শরীর জুড়ে ।

চিকচিকে রোদে, শোঁ শো করা হাওয়ায়
ফুলের বাগানে, খড়ের গাদায়
টালির চালেতে, মোষের বাখানে
মেঠো গলি পথে, নিকোনো উঠোনে
কোকিল-কুহুর মিষ্টতায়
গ্রাম গ্রামান্তরে  ঘুরে ঘুরে ফেরে
“জয় হিন্দ” “জয় হিন্দ”
সংগ্রামী চেতনায় ।

অবশেষে সন্ধ্যের মুখে
শান্ত সে যুবকের সাথে
উদ্বেলিত গ্রাম
জড়ো হয় দরমার ঘর জুড়ে ।
সন্ধ্যাপ্রদীপ হাতে
তুলসীতলায় তখন
মূর্ত সে মা ---- জননী গড়িমা ।

দুরন্ত আবেগবশে  কোলে টেনে নিয়ে
আদরে চুমুতে  তাকে ভাসায় যুবক ।
হাজারো চোখের তারায়  শত প্রদীপের আলোয়
পুরো গ্রাম জুড়ে গোধূলির লাল মাখে
সংহত সময়।
সম্মিলিত ভারতের দুর্জয় হৃদয় ॥

পলাশ চৌধুরী


হেঁতের নিশা

পলাশ চৌধুরী


এ তুমুল, এ আধজোনাক
রাত এসেছেন। এই জন্মেছি বলে।
সাদা! কালো তো কিছুর স্কুলিং,

এ ফরিয়াদ বেড়াল, ও চোখের জ্যোৎস্নায়
রাত এসেছেন। এই জন্মেছি বলে।
রিং জন্ম তাই ঈশ্বর
পায়-পায় সিঁড়ি গুঁজেছিলেন।

দূরতা তাই অনেকটা জন্মালাম
আতায়, বাঁশপাতায়। ভাব পাতানো যায় কী?না!

লাজওয়াব সজনী খ্যালে গো সজনে
সজাগ তথা ভূত।
হে যান্ত্রিকী রাত লও বাত লও।

ক্ষণ জন্মেছি এই। রাত পোহাবার।
চামড়া শুকিয়ে যাওয়া অব্ধি দুগ্ধদোহন।



কর্মমরুর যৌনতা(০)

পলাশ চৌধুরী


                        ভা
                           লো
                        বা
                    সা
লাল
      নীল
            বেগুনী
                      গোলাপি

জ্বলনে মরমে প্রিজম প্রণাম
উটকো আদরে ভা
                    লো
                 বা
             সি
স্বাধীন  নরম  তুমি
ছুঁয়ে  যেতে  লালের  নদী
                ভা
                   লো
                        বা
                           সি

তারই  অন্তে  কুঁচকে   উঠে  প্রেম
শান্ত  পিলো  নরম  শুধু  নাভির  কালো

প্রকট  চুমি  ঢঙের  শীতে
              নগ্ন  প্রাণে
                       আদর টানে
             পৌষ রাতে

লালের খিদে
               বীর্যমাখে
নীলচে রাতে
               বৃন্তফাটে
বেগুনী ভিটে
               পদ্মজাঁটে
গোলাপি মেঝে
                 আদর রাতে

নগ্ন  চেতা  শরীর  খোঁচা
আরাম  সাধক   বুকেরপাটা

প্রথম  স্তনের  জৈব  মধু
নাভির  নীচের  চর্ম  শুধু

যৌন  মাখা  যৌথ  যাপন
নিজের  মতোই ভা
                    লো
                 বা
             সি
         



জাজমেন্ট

পলাশ চৌধুরী


হঠাৎ একলা নিঃসঙ্গতা খিদে হয়
একা পায় খুব
আঁকা হয়ে যায় তরল অন্ধকার

ভ'এ আলো দেদার নেওয়ার
ম'এর আনন্দ।

রপ্ত কাল, কালি হয়ে যাক ওসকাল
আমরা বিজনে হে বিধবা আকাল।

প্র' নামে প্রকাশ যারে চুমিল তপোধন
জানো না উজান,
আমিষ তো বিস্ময় বুদবুদ তাহাদের।



নধর২

পলাশ চৌধুরী


জল হয়, জল ভেদ করে মুখ চেপে দ্যায় রাত।
শুনছো রমা? এখন অন্ধকার।
শীঘ্র হও। চরিত্র পাল্টাতে আলোর।

কত তো বাক্য,
             আলাপ পাল্টেছে,
পাল্টাচ্ছি দরমার হলুদ।

সময়
জল পেতে তুলে নেওয়ার
আদিম লতা।

রাজেশ কান্তি দাশ

আমার হৃদয় উতলা প্রেমিকা

রাজেশ কান্তি দাশ


কত বেদনার জল পুড়িয়েছিলে তুমি
ময়ূখ রাত্রির গভীরে যখন আমি নিঃসঙ্গ-একা
আমার মৃত হৃদপিণ্ডে প্রেমের হা-হা-কা-র নেই,
নেই ছলচাতুরী কিংবা মিথ্যার ফুলঝুরি
আছে দহনে জর্জরিত প্রতারণার কিছু ছবি আঁকা।

আমার বিধবা বুকের চিনচিনে ব্যথা
কবিতার জন্ম দেয়নি তোমার ঠোঁটে ;
যদিও কবিতা আমার হৃদয় উতলা প্রে-মি-কা।
হারিয়ে গেছে অনেক বিশ্বাস-আশা-ভালবাসা
বিলোল মনের বিলাপে ঝরে না পঙক্তিমালায় চোখের নীর।
নিস্তব্ধ নদীর প্রেমজল রাঙ্গাবে না সাগরের অহমিকা।

সকালের আহ্লাদিত বাতাসে কলাপাতা চুমে শিশিরের কান্তি
আমার বিষণ্ণ মন স্বপ্ন বিভোরপ্রেমে ঢাকা।
ইচ্ছের সঞ্জীবনী আশ্রয় খোঁজেে তোমার ছায়াতলে,
আগরের সুরভিত গন্ধে অন্তরঙ্গ সময় বাসর সাজায়
ফুল্ল প্রেম প্রভাতে জ্বলে উঠে
তোমায়-আমায় ডেকে নেয় কুমারিকা



প্রেমের এপিটাফ

রাজেশ কান্তি দাশ


কত চিঠি লিখেছি নীলাঞ্জনকে
নীলমেঘের অক্ষিলোকে নেত্রস্হিত কালোমনির
দিকে তাকিয়ে...
চোখের প্রতিটি পলক কথা বলে নিশীথ সূর্যে
আমার দগ্ধ হৃদয়ে।
জানান দেয় অবিনাশী সম্পর্কের ঊষা জাগানিয়া প্রভাত আলোর ;
স্মৃতির জমিনে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছি
তোমার
পলকের পুলকিত পালককে।

সুরমা পাড়ের নীলাঞ্জনা,
তোমার ডাগর ডাগর চোখে পাখির নীড়
ঝরছে "প্লেটোনিক প্রেম" অঝোর ধারায় আমার
বন্য বৃক্ষে
বিকেলের বিজন প্রেম
তৃষিত নয়নে সমুখে দাঁড়ায় তোমার অপেক্ষায়
খুঁজে ফেরে "থেমিসের" আড়ালে তোমার অদৃশ্য
মূর্তি ;
কিন্তু হয়ত মধ্যযুগের কালশিটে পাথরে বিক্ষিপ্ত প্রশ্ন ক'রে
কাঙ্ক্ষিত উত্তর পায় না
অতঃপর...
গড়ে তুলে প্রেমের 'এপিটাফ' তোমার সমাধির পরে।

অমিত লৌহ

উপোসী প্রেমিক

অমিত লৌহ


এলোমেলো সিঁথি ঘেঁটে হেঁটে যাই বুকের দেড় ইঞ্চি গভীরে ।

যে শরীর  নিজের হাতে হয়েছে হত্যা ...
আজ বৈধব্য পালনে এত'ই অনীহা !

অচিরেই হচ্ছে সতীত্ব ছেদন ,

যোনি পথে প্রবেশ করছে সমগ্র পৃথিবী !
    উল্লাস শুধুই উল্লাস !

ভ্যাজাইনার রক্তে যৌনতার মানচিত্রে এঁকে যাই এক নতুন পৃথিবী ।
যৌনতার আঁচে আকস্মিক অন্ধকারে ভেসে আসে শব্দ তরঙ্গ ,
সারা পৃথিবী নিশ্চুপ , নীরব !

নগ্নতার অশরীরী ছায়ায় আহ্বান করি কলঙ্কিত কাব্যিক অধ্যায় .....

অকপটে স্বীকার করতে হয় আজ আমি ঈশ্বর নই ,
     নির্লজ্জ উপোসী প্রেমিক !

মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯

Dipankar Mukherjee

দূর থেকে স্বর্গ দেখি কালো◆

দীপঙ্কর।(another Valentine)

                                       
ঝকঝকে স্ফটিক চূড়ায় পারদ আকাশে ওড়ে না,
 গায়ে মেখে তুষার কুচি ঘাসে ঘাসে হীরক ঝরে

স্বপ্নে দেখি উপত্যকা জুড়ে দ্বাদশীর চাঁদ হেসে গেয়ে লুটোপুটি.... স্বর্গ লোক অপ্সরীর পদচারণায় নেশাগ্রস্থ টলোমল
ঢেউ ঢেউ মাটিতে শিশু হাসে খালি পায়
কোন সুদূর অতীতে দেবতা ছেনি হাতে গড়েছিল সুঠাম সূর্যমুখী পুরুষ....বুনেছিল পশম পরম মমতায়....
এঁকেছিল দিগন্ত শুভ্র মুকুট শোভায়

আদমের দেশে অমৃত ফল পরশে জেগেছিল প্রেম কোনো এক ফাল্গুনি সন্ধ্যায়
বকুল গন্ধী নরম মিথুন কন্যায় ঝর্ণা বয়ে যায় আজও সে উন্মাদনায়

ঘরে খিল দিয়ে বসে থাকি ত্রাসে, ও চাঁদ এখনো আলো দেয়... মোম জ্বেলে আঁধার ঘোচাই....কালো রাত শুধুই প্রাণ খায়.... জোনাক ঢুকেছে ফাটা মাইনের গহ্বরে...
গোলাপ ছাপিয়ে বারুদ ভেসে বেড়ায়....

দূরে গ্রাম জুড়ে বসন্ত নামে প্রজাপতি পাখায়, লাল সিঁথি অপেক্ষার হলুদ মাখে যৌবন জ্বালায়
স্বামী গ্যাছে পাহাড় পাহারায়....
চাঁদ ঘরে বিনিদ্র রাত জাগে
অগাস্টের পতাকা বুকে কাঁপন ধরায়...পত পত স্থির হয় বুঝি লহমায়
মুড়ে কফিন আধাখানা শরীর দেখানোর
কে দিল ও'কে দায়....!!

মরোনোত্তর পরমবীর চক্র....করতালি....কর কর করে চোখের তারায়....

                                         


বায়ু কোণ

 দীপঙ্কর


পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বসন্ত এসেছে বটে,  মনে প্রবল শীত, কুঁকড়ে যাচ্ছে লাব-ডুব হৃদয়।
চোখে পলাশ, নাকে আবীরের চেনা গন্ধ, খাঁচায় থকথকে কালো কান্না....

বুক ফুটুক না ফুটুক... উত্তর পশ্চিমে বুলেট ফোটে অবিরত।

সেই কবে চেঙ্গিস এসেছিল ও পথে, ঘোড়া টগবগ, চোখে সুরমা, কানে আতর, হাতে বাঁকা তরবারি.....

নাদীর শাহ্ গিয়েছিল নিয়ে কোহিনুর ও পথে....
ছড়িয়ে ছিটিয়ে চকচকে লোভী বীর্য অসহায় অবলা নাভিশঙ্খে, মধ্য প্রাচ্য উদ্দাম নেচেছিল হায়না হাসিতে....

শুনেছি কচুরীপানাও নাকি ওমন ভাবেই ঢুকেছিল আকাশ পথে, অমাবস্যা জলে সূর্য প্রবেশ রুধিবারে....

দলে দলে শ্রাবণ ধারায় অঝোরে ঝরেছিল শক হুণ পাঠান আর মোগল ঐ অভিশপ্ত বায়ুকোণে ..... ভেঙেছিলো সদর দরজা ইন্দ্রপ্রস্থের সাতনুটি দাঁতে কাটবে বলে....

সিংহাসন হতে লাফিয়ে নেমেছিল স্বয়ং আলেকজান্ডার ঐ ওখানেরই ঝিলাম জলে....

কোন ঊষাকাল হতে ভারতমাতার লাঞ্ছনায়  ব্রতী ও এক বিভীষিকা ময় হিংস্রতা ভরা লোভী দাঁতের পদচালনায় অভিশপ্ত ভরা ভূমি পথ

ওখানে ধূ ধূ বালি আর সাদা সাদা বরফ চিতা সাজিয়েছে নিজে হাতে করে....

তুমি কি আজও তা চিনতে পারোনি মেয়ে!!

তোমার সম্ভ্রম শুধু ও পথেই বারবার হয়েছে পদানত,
পি.ও.সি. তো বায়ু কোণেই বোধহয়!!

ওখানের লাল সাদা টিউলিপ বাগিচায়....
ঠাকুরাণী তোমায় শুধুই ঝুলির বেড়াল ছানা দেখায়....

মনে ভয়, শুধুমুধু ছেলে গুলো কেন হাজার বছর  ধরে......ছিন্নভিন্ন হয়

কেনই বা শুধু মর্জিনাদের কথায় মোস্তাফার দল বৃথাই ও নীল পাপড়ি
 জোড়া দেয় !!

যে ফুল ঝরে যেতে  চায়....তাকে কি বুকে চেপে আগলানো যায়.... ??
সাদা সাদা হিমালয় চূড়া লাল লাল রক্ত মেখে গায় অবিরাম অবোধ সন্তানে খায়....

আপেলের গাছে দেখি থোকা থোকা ফলে আছে তেরঙা কফিন....পেটে তার প্রেয়সীর ছিন্নভিন্ন অর্জুন ঘুমায়....