বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯

রাণা চ্যাটার্জী


জ্যামিতিক প্রেম

রাণা চ্যাটার্জী


সরল রেখা ,বক্র রেখার মাঝে তোমার আমার জ্যামিতিক প্রেম যে উপপাদ্যের সমাধান তৃপ্ততা
                          আনবে না সে বেশ বুঝতাম।
তবুও গুণিতক ইচ্ছার ডানা মেলে,স্বপ্নের বীজ  
                  বপন করেছি শুখা হৃদয় জমিতে l
ব্ল্যাক বোর্ড জুড়ে জটিল অংকের সংখ্যা মোছা চকের গুঁড়ায় , ডাস্টার প্রলেপ নিত্য সুখের জন্ম দিয়েছে ।

রাগী মাস্টার মশাই এর আঁকিবুকি,সমাধান সংখ্যা ভারে তোমার সাথে বেরিয়ে যেতাম কল্পনার আঙ্গুল ছুঁয়ে।
জটিল অংক মেলানোর  আনন্দে মশগুল আমি দৌড়ে বেড়াই আজও ক্লাস জানালার গরাদ ধরে ,
ওই পুকুর পার ,শ্যামল সজীবতা ছুঁয়ে ফিরে আসা।
অনেক উৎসাহ দেয় এই বুঝি পাবো তোমায়!
তুমি নেই, নেই আমার সেই স্কুল জীবনের পলেস্তারা খসা শ্রেণি কক্ষ ,
জানলার পাশে তোমার বেঞ্চ আজ আছে কিনা জানি না ,সেই কাটা কুটি খেলা,বেঞ্চে নাম খোদাই এর দুষ্টুমি দিন তবু কাছে টানে তোমার স্মৃতিস্পর্শ।

আজ আমি বহু দূরে ,অংকের শিক্ষক হয়ে !
তুমি হারিয়েও অমর হয়েছো আমার চকের গুঁড়ায়।




অনুপ্রেরণা

রাণা চ্যাটার্জী


চার কদম এগুনোর স্বপ্ন দেখিয়ে দু কদম পেছানোয় দিশেহারা প্রেম গোত্তা খায় রম্বস জটিলতায় ।
বেশতো ছিলেম তোমাতে,আমাতে,
     অন্যদের ঈর্ষা, বিস্ময় চিহ্ন পূর্ণছেদ,কমাতে।

কচি পাতা আসা শক্ত ডালে পা ঝুলিয়ে তোমার  দোলনা বালিকা রূপ বড়ো মুগ্ধকর,সোনালী রোদ্দুরে,স্বপ্ন মাখা আবেশে অপরূপ মেঘবালিকা।

নৈঋতা নদীর স্নিগ্ধতা মেখে শুনেছি কতো গান।
ক্লান্ত রাত ফুৎকারে কাটিয়ে,ঘন্টা,মিনিট হিসেব বহির্ভূত কল্পনার শরীরী অবগাহন,পান কৌড়ি ডুব।
তবুও হঠাৎ,সম্পর্কের মিষ্টি  ঘ্রাণে বিদ্রোহী মেঘের
              দাপট, রণহুঙ্কার,বড়ো বেসামালতা !
ডাল পালা ভেঙে,জড় ভরত আমার দিন যাপন !
দোলনা ভেঙ্গেছে আগেই! বিবর্ণ, পাংশুটে সোনালী রোদ ঘিরে ধরে কালো মেঘের  ভ্রুকুটি।

ভারী বাতাসে কান পেতে রই,ভাসে আজো নূপুর
                                     ধ্বনির ছান্দিক  মিষ্টতা।
অতীতের,না ক্ষয়া স্মৃতির সিন্ধুক বোঝাই নিয়ে ,
      রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশলা বৃষ্টির মন খারাপের  ঘ্রাণ !

নদী আপন গতিতে আজও, কখনো অসংখ্য পঙ্কিল বিদ্রুপ ভারে গতিশীলতার  রুদ্ধতায় বিমর্ষ,
তবু আশার কিরণ তুমি,  ভাবনায় রোজ দেখি  সূর্যোদয় তুমি আছো ,নিঃশ্বাসে টের পাই।




অনুরণন

রাণা চ্যাটার্জী


চোখের জল কি এতো সস্তা !
যখন খুশি হৃদয় নিঃসারিত হয়ে
      হোয়াংহো হয়ে বইতে দেবে !

অনেক বুঝিয়েও পারিনি তোমায় ,
   আমি ছিলাম ,আছি ,থাকবো ।
রাতের আঁধারে কান পেতে শুনেছি
অন্তসলিলা লুনি'র নিস্তব্ধ বহমানতা ।

চাপা কষ্ট,আমায় চেয়েও,না পাবার তোমার আর্তি ,
হঠাৎ তবে কেন পথ হারালো থমকে ,
নিজের ওপর ভরসা ,বিশ্বাসে কুঠারাঘাত করে !
আজও তোমার জন্য বটবৃক্ষ হয়ে বাঁচা !

চাইনি তো এমন ভালোবাসা ,স্বার্থপরতার বর্ণপরিচয় !
যা মন কে তুমি-আমি সর্বস্ব ,শেকল পড়ানো
চোরা কুঠুরিতে বদ্ধ করে !

হোক ভালোবাসা শাশ্বত,শরীরী মোহময় বিহীন ,
দূরত্ব,বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন কারী জাগ্রত প্রহরী।
বিশ্বাস ,ভরসা ,সততা ,অনুপ্রেরণার শক্ত খুঁটির  ওপর দাঁড়ানো ইমারত হয়ে ।




নতুন পথের খোঁজে

রাণা চ্যাটার্জী


শব্দের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, চুঁইয়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা
      নোনা বৃষ্টি,আমার মাংসপেশিতে টান ধরায়।  
  জল্পনা-কল্পনার পারদ,থমকে যায় তোমার
                      আদুরে খোলা পিঠের জরুলে।
তখনও বিন্দু বিন্দু জল, ভেজা চুলের ডগায়
   আটকে, আস্কারা দেয় আমার অ্যাড্রিনালিন!

ছেড়ে চলে গিয়েও তোমার আলটপকা শব্দচয়ন, এফোঁড় ওফোঁড় করে,নিবিড় ভাবনার কোলাজ ।
         তবু প্রতীক্ষায় আসে কুয়াশা ভোর...
         বুকের পাঁজরে মারে স্মৃতির হ্যাঁচকা টান।
রংপাল্টানো শব্দের বর্ষা ফলক,
            আমায় লম্বা শ্বাস নিতে পিঠ চাপড়ায়।




সম্পর্কের সাপ লুডো

রাণা চ্যাটার্জী


তোমার যেটুকু ছিলো তা তোমারই আছে,
       আমার যেটুকু সেটাও উজাড় করে তোমার আঁচলে গিঁট বেঁধেছিলাম শরতের শিউলি ভোরে।

ভোগ সম্পত্তি ,প্রাচুর্যে রাজ রানী না করতে পারি,
              পেয়েছিলে অঢেল স্বাধীনতার জৌলুস।
যার অপব্যবহার, ঘুণপোকার মতো কেটে তছনছ  
                        আমাদের বিশ্বাস, প্রেম নিটলতা!
বুঝিনি পাকা মিষ্টি ফলে, বিষাক্ত পোকা এমন  
           ঘাপটি মেরে ! সুযোগ বুঝেই মরণ কামড়।

এই ঘর,ভরা শূন্যতায় ,জলপূর্ণ চৌবাচ্ছার ভ্রূকুটি    
      ইচ্ছার ঘরে অনিচ্ছার সাপ লুডো দাপাদাপি!

লুডো বোর্ডের নিচেই সাপ-মই ছকে ,বিষাক্ত সাপের ছোবল খাবার আগেই আমি মই নিয়ে সুরক্ষিত সংখ্যায় পৌঁছানোর অপেক্ষায় আজও
       রাত্রি পাহাড়ায় এক সমুদ্র ,ঘুম চোখ নিয়ে।

২টি মন্তব্য:

  1. চন্দ্রমুখী ব্লগের সুন্দর উপস্থাপনা।👌💐

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক ধন্যবাদ আর তোমার কবিতাগুলোও তো মন ছোঁয়া খুব সুন্দর।

    উত্তরমুছুন