জননী জন্মভূমিশ্চ” - এক অন্য ভালোবাসার গল্প ---
স্বরূপ সিংহ রায়
(another Valentine)
ধূলি ধূসর পাথুরে টিলাকে দুপাশে রেখে
আঁকা বাঁকা বসন্ত খোবরানো পিচঢালা পথ ।
দূরের স্টেশন থেকে ঝরঝরে বাস থামে
সাতাত্তর নম্বর মাইলফলক পেরিয়ে
কাঁচাপথ জংশনে ।
নিঃশব্দে রুকস্যাক কাঁধে
নেমে আসে যুবক সে এক,
গোঁফের রেখার আভাসে
সদ্য সাবালক পরিচিতি ।
একপাল ছেলের দল কচিকাঁচা
হৈ হৈ বের হয়ে আসে
আবুল, মিরান্দা, অজয়ের সাথে
ঘিরে ধরে কাঁধে তুলে নেয় ।
সম্মিলিত “জয় হিন্দ” রণিত ধ্বনিত হয়
টিলাতে পাহাড়ে ।
বন্ধুবেষ্টিত হাঁটাপথ জুড়ে
ভালোবাসা ঘুরে ঘুরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
মল্লিকা মাসির আঁচল
আবদুল চাচার তোবড়ানো গাল ।
উজ্জ্বল চোখ খুঁজে ফেরে
মাটি মা-র মান
যুবকের দুই চোখে ।
"সাব্বাস বেটা", আদরে আদরে
বুকেতে জড়ায় হাফিজুল খুড়ো ।
কলমীশাকের আঁটি বাঁধা বন্ধ হয়,
শ্যামলী মাসির ভিজে হাত
“শান্তির মসিহা” তখন ছেলেটির মুখ জুড়ে ।
শেফালি মারান্ডির হাতে ধরে রাখা
ইঁদারার ঠান্ডা জল
আর রুকসানার চোখের গভীর আর্তিতে
অশ্বত্থ শীতল ছায়া সমস্ত শরীর জুড়ে ।
চিকচিকে রোদে, শোঁ শো করা হাওয়ায়
ফুলের বাগানে, খড়ের গাদায়
টালির চালেতে, মোষের বাখানে
মেঠো গলি পথে, নিকোনো উঠোনে
কোকিল-কুহুর মিষ্টতায়
গ্রাম গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে ফেরে
“জয় হিন্দ” “জয় হিন্দ”
সংগ্রামী চেতনায় ।
অবশেষে সন্ধ্যের মুখে
শান্ত সে যুবকের সাথে
উদ্বেলিত গ্রাম
জড়ো হয় দরমার ঘর জুড়ে ।
সন্ধ্যাপ্রদীপ হাতে
তুলসীতলায় তখন
মূর্ত সে মা ---- জননী গড়িমা ।
দুরন্ত আবেগবশে কোলে টেনে নিয়ে
আদরে চুমুতে তাকে ভাসায় যুবক ।
হাজারো চোখের তারায় শত প্রদীপের আলোয়
পুরো গ্রাম জুড়ে গোধূলির লাল মাখে
সংহত সময়।
সম্মিলিত ভারতের দুর্জয় হৃদয় ॥
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন