চাঁদজোছনার কাহিনী
শুভ্রাশ্রী মাইতি।
কোজাগরী জোছনামাখা একথালা আলোচালের ভাত
পেটপুরে রোজ খাবে বলে ঘর ছেড়েছিল বিধবা সাবিত্রী।
ঈদের একফালি চাঁদ হাসিতে ভরপেটে রমজান ভাঙার আশায়
চটকলের কাজটা হাতছাড়া করেনি আমিনা।
সাবিত্রীর ঘরে এখন রোজ রাতে আলো ঠিকরায়
কোজাগরী চাঁদজোছনায় নয়---
খালি হওয়া মদের বোতল,টাকার পালিশ আর কামনার লাল আলোয়।
আমিনার রমজান ভাঙা খাওয়ার থালায় এখন খুশির ঈদ উপচে পড়ে
একফালি চাঁদের পবিত্র হাসিতে নয়---
চটকল মালিকের চটচটে লোভের উদার বদান্যতায়।
তবু ফি বছর নামে ঝিমধরা কোজাগরীর মায়াবী রাত।
তবু ফি বছর আকাশে ভাসে খুশির ঈদের চওড়া হাসি।
সাবিত্রীরা গোপনে শাঁখ বাজায়,প্রদীপ জ্বালে লক্ষ্মী আসনে।
আমিনারা আয়াতের ফিসফিস সুরে কথা বলে নামাজ আসনে।
চাঁদজোছনায় সাবিত্রী আর আমিনার আর্তি মিলেমিশে এক হয়ে যায়---
যাতে আর কোন চাঁদ আলোয়
এমন নির্মম হৃদয়হীনতায় আর না নগ্ন হয়
অন্য কোন সাবিত্রী,অন্য কোন আমিনার
চাঁদ জোছনা মাখা একগ্রাস ভাত খাওয়ার অনন্ত আকুতি।
আমার বাইশে শ্রাবণ
শুভ্রাশ্রী মাইতি।
ঘুম ভাঙা ভোরে প্রকৃতির থমথমে নিস্তব্ধতায়
বৃষ্টিভেজা পাতায় টুপটাপ ঝরে পড়ে বাইশে শ্রাবণ।
বুকের ভেতর প্রসারিত নিঃসঙ্গ মাঠে ধু-ধু হাওয়া একলা অভিমানী।
আমার পনের বছরের শিকলপরা শ্বশুরবাড়ীতে
বাইশে শ্রাবণ নেই ক্যালেন্ডারের পাতায়।
রোজকার কেজো ব্যস্ততায়,হাতা খুন্তির লড়াইতে
অফিস-স্কুলের ভাত-টিফিনের রকমারিত্বে,
শাশুড়ীর বাতের ব্যথার চিৎকার আর কাজের লোকের তদারকিতে---
নিসঙ্গতার সোনার খাঁচায় ঝিমোয় বোধের ডানা ছেঁড়া পাখি।
একলা দুপুরে মেঘে মেঘে ঘনায় আকুল শ্রাবণ।
লুকানো গীতবিতান আর সঞ্চয়িতার খোলা পাতায় পাতায়
গুণগুণ গান আর কবিতার ডুব-সুরে
মন ভিজতে থাকে খোলা জানালায়।
ভিজতে ভিজতে কখন ছুটে আসে বেণী দোলানো শৈশব।
আকুল স্বরে ডাকে---যাবি? আমার সাথে যাবি?
ভিজবি একবার গান-কবিতার শ্রাবণধারায়?
যেমন ভিজতিস আগে চুপচুপে হয়ে----
টেবিলের ওপর রাখা ছবিটায় তোমার প্রসন্ন সহাস্য মুখ।
মনটা ছটফট করে ওঠে গরাদ ভেঙে বেরোনোর অদম্য ইচ্ছায়--
‘তোমার অভিসারে যাব অগম পারে.....’
হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে বলি--- নিয়ে চল্,নিয়ে চল্ আমাকে---
ঐ শ্যামলী নদীর ধার ধরে হারিয়ে যাব তাসের দেশ আর শাল পিয়ালের বনে.......।
দরজার কলিংবেলটা তীক্ষ্ণ স্বরে বেজে ওঠে।বাইরে ঝিমধরা শ্রাবণের মায়াময় আলো ম্লান হয়েছে কখন
বুঝতে পারিনি কিছুই----
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমঝিম বাইশে শ্রাবণে একাই ভিজতে যাচ্ছে আমার দুবেণীর কিশোরীবেলা।তোমার প্রশান্ত মুখ তখনও গভীর ভালোবাসার আলোয় মায়াময়।
পাশের বাড়ীতে বাজছে---- কাঁদালে তুমি মোরে ভালবাসারই ঘায়ে......।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন