বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সম্পাদকীয় কলম--সুপ্রীতি বর্মন


তৃতীয় ভাগ:

(( এই অংশের লেখা অনুপ্রেরণা পেয়েছে আর সংগৃহীত হয়েছে,, "বিদ্যাসাগর স্মৃতি",,,এই গ্রন্থ থেকে))

বিদ্যাসাগরের অসীম আত্মসম্মান বোধ,,,,

খন্ডিত হয়েছে সেই প্রাককথন,,,,

খন্ডবিখন্ড তার মূর্তি আজকের জনহিতে কল্যাণকারী,,,এখনকার সৃষ্ট প্রগতিশীল সমাজে,,,

বিমূর্ত চিন্তা ও চেতনার আখর,,,,,


একদিন বিদ্যাসাগর কোন প্রয়োজনে সংস্কৃত কলেজ থেকে হিন্দু কলেজে কার সাহেবের সাথে দেখা করতে যান। কার সাহেব তখন তার কামরায় সামনের টেবিলের উপর জুতো পরে পা দুটো ছড়িয়ে চেয়ারে বসেছিলেন,,,, বিদ্যাসাগর কে দেখে পাদুটো নামালেন না আবার গুটালেন না,,, এতটাই তার ঔদ্ধত্য। তার চেয়ে সে বরং ঐদিকে যে চেয়ার আছে পায়ের আঙুলের নির্দেশে তাতে বিদ্যাসাগর কে বসতে বললেন। সেই অবস্থায় বিদ্যাসাগর কথাবার্তা সেরে চলে গেলেন,,,,

 ((মনে মনে হয়তো ভেবেছিলেন,,,, আমারো একদিন আসবে যেদিন তোমার অন্ধ আত্ম‌অহংকারী ঔদ্ধত্যের উচিত শিক্ষা দিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে দেবো,,,, আমরা ভারতবাসী নেহাত অপ্রয়োজনীয় ক্ষুদ্র দমে যাওয়া জাত নয়))


কিছুদিন পর কি প্রয়োজনে কার সাহেব সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগরের সাথে দেখা করতে যান। তখন বিদ্যাসাগর টেবিলের উপর তার তালতলার চটি শোভিত পদযুগল কার সাহেবের দিকে প্রসারিত করে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। এরপর এই ব্যবহারে কার সাহেব অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে উপরিওয়ালার নিকট নালিশ করলেন,,,,

((নিজের কৃতকর্মের জন্য উচিত শিক্ষা পেলেন তবে কথায় নয় কাজে অনেকটা বুদ্ধিশীল ব্যক্তির ছলে বলে কৌশলে,,,কিন্তু অহমবোধ তাকে এতটাই পঙ্গু করে রেখে দিয়েছিল যে নিজেকে সংশোধনের পরিবর্তে উল্টে নালিশ জানিয়েছিলেন বিদ্যাসাগরকে জব্দ করে তাকে শাস্তি দেবার জন্য))

বিদ্যাসাগরের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হলে তিনি উত্তরে যা লিখেছিলেন,,, তা অবিকল ইংরাজীতে উদ্ধৃতি করে দেওয়া হল,,,,

বিদ্যাসাগর লিখলেন,,,

" I thought that we(natives) were an uncivilized race quite unacquainted with refined manners of receiving a gentleman visitor.

I leagned the manners of which Mr. Kerr complains from the gentleman himself, a few days ago, when I had an occasion to call on him.

My notions of refined manners being thus formed from the conduct of an enlightened, civilised European,

 I behaved myself as respectfully him as he had himself done",,,,,


এখানে হিন্দিতে একটা কথা আছে,,,(("য্যায়সি করনি ওয়াসি ভরনি")),,,,,

(( এই লেখাটি অনুপ্রেরণা পেয়েছে একটি নাম না জানা সংগৃহীত কবিতা থেকে,,, তাকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ))

সুস্থ চৈতন্যশীল বোধোদয় পুরুষসিংহে বিদ্যাসাগর যার নাম,,,,
যার মস্তক হয়েছে খন্ডিত পাপাত্মার খান্ডবদহনে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের করালঘাতে,,,,
চূর্ণবিচূর্ণ লুন্ঠিত সেই পুণ্যাত্মা আজ ভূমির শয্যায়,,,
 প্রখর আত্মসম্মান হারিয়ে এক প্রকট অবমাননা ও লজ্জায়,,,,
এই ঘটনার সাক্ষ্য সকল অবরুদ্ধ বাঙালী চেতনায় জেগে উঠুক লজ্জা,,,এক ধিক্কারে সরব দীর্ঘশ্বাসে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ,,,, ছি ছি,,,,

কিন্তু নীরব বাঙালী সমাজ আজ নির্বাক ও নীরব পাথর হয়ে বাঁচে।
যতো ভন্ডামো ও চাটুকারিতায় তাদের মুখের উপর তুলে দেওয়া ক্ষমতার পাদুকা পদলেহন করে।
তখন হয়ত তাদের মরা বিবেক দর্পণে (গৃহশোভা) দেখে,,,সভ্যতা লজ্জায় কেমন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে,,, রোজ নগ্নতায় ধর্ষণকামী শরীর পোষাকের আচ্ছাদনে লুকিয়ে রেখে,,,,

বিদ্যাসাগরের পাষাণপ্রস্তরে এই আঘাত এসেছে কিন্তু তার উচ্চ আদর্শ ও উন্নত শির এতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কুণ্ঠাবোধ করেনি।
 উগ্র অন্ধ বিষ যা সাম্প্রদায়িকতার নামে মানুষকে বিষাক্ত সোমরসের ঘোরে আসক্ত করে রেখেছে ---যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সেই মূল্যবোধটুকু হারিয়ে ফেলেছে,,,,,,
প্রকৃত জ্ঞানের ও মনুষ্যত্বের আলো অপ্রচলিত সভ্যতার হ্যারিকেনে গচ্ছিত রেখে তাকে নিভিয়ে দিয়ে শুতে চলে গেছে কর্মবিমুখ প্রতিবাদের অন্ধকার বুকে চেপে প্রচন্ড ভয় পেয়ে।
প্রতিবাদের ভাষা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে,,,,

কিন্তু তারা হয়ত ভুলে গেছে দল, মত, ধর্ম, রাজনীতি সকল কিছু পরে আসে,,, আগে আসে মনুষ্যত্ব,,,,
মায়ের দুধের ঋণ যেমন অসমাপ্ত শোধে তোমার শিয়রে সদাজাগ্রত থাকে,,,, তোমাকে লালন করতে থাকে প্রতিক্ষণে নিজ মাতৃস্নেহস্নিগ্ধ পরশে,,,, ঠিক তেমনি,,,,
বাঙালীর প্রতি নিঃশ্বাসে মাতৃভাষার অমোঘ বিশ্বাসে প্রতিক্ষণে বিদ্যাসাগর জাগে,,,,,

জাগো বাঙালী জাগো,,,, আর কেন,,,, অনেক তো হলো,,,,



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন