শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮

রথযাত্রা- ৫



রথ

---সবর্না চট্টোপাধ্যায়


মধ্যবিত্ত দাম্পত্যকলহের
ডালভাত রেঁধে মেয়ের হাত ধরে
জগন্নাথ দর্শনের ভিড়ে
বাকীদের মতো আমিও
ভেঁড়া হয়ে গেছি
ঈশ্বরের মোহে...

ওদিকে আরও কিছু ঈশ্বর
কিছু মধ্যবিত্ত ঘরে
বুক চাপড়ানোর প্রদীপের শোকে
অসুস্থ পড়ে আছে থরে থরে....

খালি পেটে
মায়েদের সন্তান,
তেরোদিন ধরে
দেওয়ালে আঁচড় কেটে কেটে
চড়াচ্ছে প্রতিবাদ।

তবুও চোখকানহীণ ক্ষমতার
কঠোর সরকার
রথের মেলার আগে
উপহারে
বন্দেমাতরম তুলে দিচ্ছে পাঁপড়ভাজার মতো..!


প্রতিবার রথে

----সবর্না চট্টোপাধ্যায়



বৃষ্টি পড়লে ভেতরেও আজকাল
জল জমে যায় ভীষণ,
জমতে জমতে একবুক
একগলা
তারপর দুটোচোখ
ঝাপসা হয় না,  শৈশব ওঠে আসে কেমন!

একটা মেয়ে ঘন্টা বাজিয়ে
ছুটে যায় রথ টেনে,
তার বাবা
হাতে কালো ছাতা ধরে
তেত্রিশ বছর, ভিজছে বৃষ্টিতে...

উল্টোরথে প্রতিবার ঝাপসা হয়ে আসে শহর
কলকাতা ছাড়িয়ে যতদূরে যত গ্রাম
গ্রাম ছাড়িয়ে অন্যকোন শহর।
জগন্নাথবাড়ি থেকে
গরদের শাড়ি পড়ে
মা হেঁটে আসে ছোট ছোট খেলনা কিনে...

এখনও বৃষ্টি হয় প্রতি রথে।
ডুব দেওয়া বিকেলের স্মৃতি
ঘুড়ি ওড়াচ্ছে প্রেমিকের হাতে...
আকাশের এখনও কোনোখানে
মেঘেদের দেখে মনে পড়ে দুটো মুখ...
কোনোএক দুপুর ঘন হতে হতে
দুটো পাতা নড়ে ওঠে....
ঠোঁটে ঠোঁট
ঠোঁটেদের ভাষা..
কিছু কিছু মেঘ আজও কাঁদতে পারে না, জানি।
কিছু চুম্বনের শোক ফিরে আসে নদীর মতো..
শুধু প্রতি বার, বৃষ্টি হলেই
আমার তেত্রিশ বছরের ছেলেবেলা
ছুটে আসে
'মা' বলে ডাকে....
ক্রমশ মেঘেদের ভিড়ে হারিয়ে যেতে যেতে
হাত ধরা দুটো মুখ
হেসে ওঠে ঘুরন্ত নাগরদোলায়....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন