স্বাধীনতার মানে
শুভ্রাশ্রী মাইতি।
স্বাধীনতার মানে কি?
চৌমাথার মোড়ের প্লাস্টিকের তেরঙ্গা পতাকা বিক্রি করা ছেলেটাকে প্রশ্ন কর।
পিচুটি চোখের একমুখ হলুদমাখা হাসি বলবে----
ই আর বলতি হয়! দুটা বেশি পয়সা গো বাবু...আর কিছু নয়!
যা দিয়া ইকটা রুটি বেশি কিনা যায়...
পেটের উনানটার আগুন কিছুতেই নিভতে চায় নি যে!
যদি প্রশ্ন কর মাংস দোকানের ফাই-ফরমাশ খাটা বাচ্চা ছেলেটাকে
রক্তমাখা ছুরিটা ছাল ছাড়ানো মুরগীর শরীরে বসাতে বসাতে বলবে---
দোকানের বেশি বিক্রি ছাড়া আবার কি?
একটা গোটা ছুটির দিন বলি কথা---মদ-মাংস ছাড়া আয়েস হয়!
জান,আজ মুইও খাব মা-বোনের সাথে--একথালা গরম ভাত আর বাতিল ছাঁটকাটের মাংসের ঝোল।
আদালতে ছেলের বিরূদ্ধে বিচার চাইতে আসা আশির নুয়ে পড়া বৃদ্ধাকে প্রশ্ন কর।
শুকনো চোখের জল মুছে বলবে---
লাথি-ঝাঁটা না খেয়ে আর কটা দিন যেন শান্তিতে কাটাতে পারি।
যদি প্রশ্ন কর অন্ধকার গলিতে দাঁড়ানো রং মাখা সূর্যাস্তের যৌবনকে--
কোমর দুলিয়ে চোখের ইশারায় বলবে---
আজ বাবুরা দিলখোলা গো!
হাতে দুটো পয়সা জমলে কোলের মেয়াটারে পড়ালিখা শিখাবো।
এভাবেই প্রতি বছর আসে স্বাধীনতা দিবস।
যেমন আসছে একাত্তরটা বছর ধরে---
বিপ্লবীদের মিছিল,পিস্তল,হাতবোমা আর ফাঁসির দড়ির রক্তভেজা মানচিত্রের
টুকরো টুকরো সীমায় আজও দাগা বুলিয়ে চলে
ভিটেছাড়া আব্দুল মাঝি,ছিনাথ বহুরূপী আর দুলে বাগদীর বউটা।
বয়স বাড়তে বাড়তে তিন কুড়ি ছাড়িয়ে যায়--এখনও খুঁজে চলে নিজের দ্যাশ,নিজের মাটি।
দেশ ভাঙে আর গড়ে----
স্বাধীনতার মানে শুধু পাল্টে পাল্টে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন