শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮

রথযাত্রা- ১০



মোক্ষম তীক্ষ্ণাগ্র আলোচনা: রথযাত্রা প্রবন্ধ।

প্রবন্ধ: "কিছু কথা কিছু স্মৃতিচারণ"

নাম: শুকদেব পাত্র।

সময়ের সাথে সাথে বয়স যতই বেড়েছে অনুভূতি গুলো ততই হয়েছে বিকৃত ও বিবর্তিত l প্রকৃতির ওতোপ্রোত প্রভাব থাকা সত্ত্বেও মানব প্রকৃতি নিয়ত পরিবর্তনশীল---- অজানা রহস্যময় রাজ্যে যার অবাধ বিচরণ l মানুষ সত্যিই কি অজানা রহস্যময় স্থানে ভ্রমণ করতে পারে! কেউ কেউ হয়তো পারে , বেশিরভাগ মানুষের সম্ভব নয় দুবেলার অন্নসংস্থান করে দুর্গম স্থানে পাড়ি জমানোর l তবুও মানুষ যায়---- ধনীদের তুলনায় গরিবেরা ,বুড়োদের তুলনায় শিশুরা ;,অনেক বেশি করে যায় l

                  একবার বকরূপী ধর্মরাজ যম যুধিষ্ঠিরকে জিঞ্জাসা করেছিল --- পৃথিবীতে সবথেকে দ্রুতগামী কে ? উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন "মানুষের মন "....মানুষের মন

আলোর চেয়েও দ্রুতগামী মনের দ্রুততার জন্য মানুষ মনকে রথের সাথে তুলনা করেছে l মনরূপ রথে চড়ে মনোরথ বা মনোবাসনা ।মানুষের চিন্তা চেতনা নিয়ত ছুটে চলেছে স্থান থেকে স্থানান্তরে ,কাল থেকে কালান্তরে.... রথের সঙ্গে আমাদের তাই ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ l

           ছোটবেলায় রথের মাহাত্ম্য না বুঝেই মন্দিরের মতো ফুলমালা দিয়ে সাজানো রথের দড়ি বড়োদের মতো টানার অনুভূতি যে কত সুন্দর ! তা এখন উপলব্ধি করতে পারি l ছোটবেলার অনুভুতিগুলোর চরম সুখ বোধহয় বড়বেলায় এসে ধরা দেয়...এ যেন অনেকটা গরুর জাবর কাটা সুখের মতন l পাঁপড় কিনে বন্ধুদের খাওয়ানো কিংবা বন্ধুদের দেওয়া পাঁপড় , অন্যান্য ভাজাভুজি খাওয়ার মধ্যে যে কতটা নিষ্পাপ শান্তি ছিল তা এখন অনুভব করি l

            সময়ের সাথে সাথে রথ ও রথের সংজ্ঞা বদলে যায় l রথ হয়ে ওঠে কখনো ব্যবসায়িক কখনো রাজনৈতিক কখনও বা প্রেমের প্রতিচ্ছবি l তাই ছোটবেলায় শোনা কথা "রথ দেখা ও কলাবেচা " বড়বেলায় এসে স্বার্থের গল্প শোনায় l শিশুবেলার অনেক বড়ো খেলনা গাড়ি ভোল বদলায়----- চেতনায় গভীর মনোরথে l

             রথের চাকা মাটিতে বসে গিয়ে কর্ণের জীবনের রথ থমকে গিয়েছিলো l আফশোষ হয় সেইসময় কেন যে পিচের রাস্তা ছিল না, তাহলে অন্তত অন্যায় সমরে কর্ণকে অসহায় ভাবে মরতে হতো না l এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনের রথ থমকে দাঁড়ায় বারেবারে l

        বর্তমান সময়ের স্রোতে রথের চাকা থমকে গেছে l এখন উল্টোরথের বৃষ্টিভেজা বিকেলে ভীরু হৃদয়ে প্রেমিকার হাতে পাঁপড় গুঁজে মন বিনিময় করার বয়স না থাকলেও আজও চোখে পড়ে নবপ্রেমের বর্ষাভেজা অরুণরাগ ,যারা উষ্ণতা খোঁজে---ভালোবাসার ভুবন পাড়ি দিতে চায় জীবনের রথে চড়ে l

দাঁতপড়ে যাওয়া বিধবা বুড়িটা ছোট নাতিটাকে পাশে বসিয়ে ঝোলাগুড় দিয়ে বানানো মুড়ির নাড়ু বিক্রি করে রথের মেলায়.....অজস্র লোকের ভিড়ে রথের দড়ি টানতে না পেরে পথের পাশে বসেই দুহাত কপালে ঠেকিয়ে জগন্নাথদেবকে প্রণাম করে l আমি চেয়ে দেখি আর মনে মনে বলি....হে ভগবান ওদের আশীর্বাদ করো l


                 

                     


1 টি মন্তব্য:

  1. ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সাহিত্য বাসরে আমাকে অংশী করার জন্য

    উত্তরমুছুন