মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--১০



"উমার মর্ত্যলোকে জীবনযাত্রার পঞ্জিকা"
মানুষের ঠেলা গোঁজা ভারাক্রান্ত দায়ভার সংসার।"


১. কবিতা: উত্তরাধুনিক

তুলসী কর্মকার

************

আর কোনদিন চিঠি খামে প্রেম

লালচে বিকেলে কিতকিত

লণ্ঠনের আলোতে মুখ

রাজার পুকুরে রাজা নামবে না


অভিযোজন সরণী ধরে হাঁটছি

ক্রমশ ছাল মাংস অস্থি নরম হচ্ছে

হাতে হাইস্পীড নেট

দিকে দিকে যোগাযোগ পাতা

ইচ্ছে হলে বাথরুম থেকে জীবন্ত চুমু ছুড়ি

অনলাইন যৌনতা কুড়িয়ে চলি

রাত লুকিয়ে এল ই ডি জ্বালাই

ত্যাগ নয় ভোগ চলে

স্বাধীন ব্যভিচারী সাজে স্ত্রী উপেক্ষা করি

কাম আর টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত সভ্যতা আঁকি



২. কবিতা: পার্থক্য

তুলসী কর্মকার

********

তুমি বললে মানুষ গঠিত হয় মান আর হুঁশ দ্বারা

তলিয়ে দেখলে না পাড়ার নেড়িটার মান আছে

ডাণ্ডা দেখে চুপসে যায়, আদরের সুরে লেজ নাড়ে

বিড়াল বেহুঁশ হয়ে কেরোসিনে মুখ দেয় না


কাঁকড়ার গর্তে চলে শিয়ালের ছলনা

কোকিল ডিম কাকবাসাতে রেখে প্রতারণা করে

ময়না কথা অনুকরণ করে

জাল বুনে চলে মাকড়সা


ছাগল নিজের বাচ্চাকে চিনে

রাতচোরা বাসা খুঁজে পায়

আপনজন হারিয়ে গরু দুঃখী হয়

হাতি সঙ্গমের আগে প্রেম করে


শক্তিশালী গিরগিটি এলাকা দখল রাখে

মাটির ব্যবহার জানে উই

অনেক মদ্দাকুকুর দ্বারা রেপ হয় মাদি

পশুরা ক্ষমতার রাজনীতি জানে


এ সবই আমাদের বৈশিষ্ট্য, তুমি গর্জে উঠলে


শোন তবে, মানুষের আছে পশুর সমস্ত গুণ


পার্থক্যটুকু টাকার ব্যবহার, গড়তে পারে আগুন


ঘুস নিতে পারে, অনুকরণ মডেল তৈরি করে


নিজ জাতির কাছে একবার পরাজিত হলে

পুনরায় খুঁজে চলে জয়, চাকরি করতে চায়

ঈশ্বর আঁকে, ধর্ম্ম ও সরকার গড়তে পারে....



৩. কবিতা: প্রেম

তুলসী কর্মকার

*****

একটি বিকেল দাঁড়িয়ে আছে

জানালার ফাঁকে আলো হাওয়া টুকরো দৃশ্য পারাপার হয়

মেঘ ছুটাছুটি করে, বৃষ্টি নামবে


ভবিষ্যৎ খুঁজে চলেছি


রঙ করা দেওয়ালে তিনটি পেপার কাটিং প্রজাপতি দুটি মঙ্গল ঘট কয়েকটি কাগজের গোলাপ লাগানো আছে

চ্যাটচ্যাটে ময়লা দেখে উপড়ে ফেলেছি

সাফাই করেছি দেওয়াল

উদাস হল প্রেম, তোমার চোখে জল

ছেড়ে যাওয়া বেলা বড় অদ্ভুত

কখনো জানতে চাইনি

তুমিও বলনি কোথায় স্মৃতি লুকিয়ে আছে

বর্তমান সুন্দর করতে অতীতের ঘাড়ে কোপ

ক্ষমাপ্রার্থনা, এড়িয়ে যেওনা

আমাকে চিনিয়ে দাও তোমার সাজানো পৃথিবী

বুঝছি

প্রেম কুড়োতে চাইলে স্মৃতির মূল্য দিতে হয়



৪. কবিতা: ঘূর্ণন

তুলসী কর্মকার

*****

পাখার সুইচ অন করা হলে

কিছুটা ত্বরণ পেরিয়ে সাম্যে থেকে হাওয়া ছোড়ে

বিদ্যুৎ বিভবের তারতম্যে গতির হেরফের হয়

অকস্মাৎ কয়েল পুড়ে গেলে, মন্দন হারে ঘূর্ণন থেমে যায়

বেয়ারিং খারাপ হলে ক্ষতের কর্কশ শব্দ বের হয়

কন্ডেনসার নষ্ট হলে ভারসাম্য হারায়

ঘূর্ণনের কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নাই

হাওয়া দিতে থাকে নির্দিষ্ট এরিয়া ঘিরে, জাতি বর্ণ নির্বিশেষে

ঘাম শুকিয়ে চলে বা নাকে কাঁচাজল বের করে

কোন গোলযোগে পাখা সম্পূর্ণ থামতে সময় লাগে

এই ঘুরে চলা অভ্যাস লেগে থাকে স্বভাবে..........


জীবনটি পাখার মতো


একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়

দুধ পানে শক্তি সঞ্চয় করে

সূচনা হয় জীবন চাকার ঘূর্ণন

চলন গমন সক্ষমতার পরিচয় জাহির করে

হঠাৎ একদিন মায়ের উনুনে কাঠ ঠেলে দেয়

অফিস টাইমে দরকারি ব্যাগ বাবার হাতে দেয়

আরম্ভ হয় দায়িত্ববোধ শুরু হয় কর্ম জীবন

স্বভাবগত স্বস্তি বয়ে চলে বন্ধু শত্রু উপকৃত হয়

জীবন চাকা থেমে গেলেও কাজের বায়াস মৃত রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রসংগীতে কনভার্ট করে

যার জীবন্ত সুর মুখে মুখে বাতাসে ভেসে চলে.....



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন