শনিবার, ১ আগস্ট, ২০২০

## ডর লাগে না খিদা লাগে খাতি দে## সুপ্রীতি বর্মন


Classified news segment:

("ডর লাগে না খিদা লাগে খাতি দে"),,,,,

প্রচ্ছদের চিত্র সংগৃহীত মনোজ হালদারের টাইমলাইন থেকে,,,,,


Editorial Note:

Picture Illustration,,,,,

সুপ্রীতি বর্মন,,,,



কঙ্কণে-সিঁদুরে ধন্যা শঙ্করী কাঁধবদল করে সমগ্র সংসারের দিন আনা দিন খাওয়া দিনমজুরের কাজে কপালখাকি খিলানে যখন ছোবলভরা চঞ্চল ভবিষ্যত এর আখের গোছাতে ব্যস্ত সেই সময় শিবের গাজনে শাপগ্রস্ত তালা ঝোলায় লকডাউন,,,,

হাহাকার ক্ষুধার অভিশাপে পৃথিবী যখন গদ্যময় তখন শীর্ণ ঠোঁটে ক্ষিধের চাবুক পঞ্চকন্যার মায়ের পিঠে মারতে থাকে অশ্বক্ষুরের মতন,,,,,
কালশিটে দাগ মাতৃত্বের আঁচল ফুঁড়ে ফুঁসে উঠে ঐ কুটিল হাঙর শরাবী স্বামীর সাথে প্রত্যহ ঝগড়া উঠতে বসতে খরার উপোষে জীবন তখন পোড়াধরা তাল তাল মাটি হয়ে যায় একটু এই আঁকড়া জ্বরের প্রকোপ থেকে বাঁচতে জল চায়,,,,,


যে সোহাগের বীর্যরস শুষে একদিন সন্তানকণিকার জন্ম হয়েছিল রাতের জঠরে যখন প্রখর ক্ষিধে চাগাড় দিয়ে উঠে তখন মহেশ্বরের জটাজুট কেশবল্কলকুঞ্জে আশ্রিতা গঙ্গার কোলে আকন্ঠ-রোষে সমর্পণ করাই শ্রেয় বলে ভাবে এক মাটি হারানো হাভাতে মা,,,,

তাই জঘন্য কুরুচিকর সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হয়নি সেই কোমর ভাঙা মা,,,,,
ছুঁড়ে ফেলে একের পর এক সেই পঞ্চকন্যা কে গঙ্গার বুকে যাতে চিরতরে অন্তর্জলি যাত্রায় জন্মের মতন ঘুচে যায় খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা ধিকিধিকি কাঙাল শরীরের জিয়ন কাঠির সহ্যশক্তি,,,,,


চ্যালাকাঠের কোন প্রয়োজন নেই পঞ্চভূতে আপনা আপনিই হয়ে যাবে গ্রহণ তার কন্যারা,,,,
এইসব সাত পাঁচ ভেবে যখন এক কপালখাকি মাগি চিলচিৎকার ছাড়া আঙুলের ক্ষিপ্র চালে পাঞ্চজন্য বাজিয়ে তোলে নৈঃশব্দ্যের যাপনে শুধুমাত্র একটু শান্তির ঝংকারের ঋণে তখন কেমন করে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে যায় গঙ্গার পারে থাকা বিন্দুবিসর্গ না জানা জেলের দলের যারা ক্ষিধের তাগিদে মাছ ধরতে ফেলেছিল জাল যেন তারা ঐ এক‌ই সহমরণের যাত্রী ঐ কপালখাকির সাথে,,,,,,


রাত্রির জঠরে যখন শীতকটিবন্ধে জাঁকিয়ে বসেছে এক মা অসহায় হয়ে এক প্রখর পরাধীনতার শৃঙ্খলে,,,,,
তখন আপন সন্তানদের ধিক্কার ও ঘৃণায় অশ্রুর রজ্জুতে বাঁধা মৃত্যুঝাঁপে ছুঁড়ে মারবে বলে স্বৈরাচারে কেমন করে যেন তার সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে চেপে বসে এক ছিন্নমস্তা মাথা ছাড়া,,,,,
বোধবুদ্ধি কিংবা হিতাহিতজ্ঞান শূন্য,,,,
যার রূপরঙে তখন ঝলসে উঠে এক ক্ষাপাটে ডাইনি যে নিজের ছেলেকে নিজে খেয়ে খলবলিয়ে হেসে উঠে শীঘ্রপতনের অট্টহাস্যে,,,,,
জেলেরা তখন সেই কান্ড কারখানা দেখে ভয়ে শুকিয়ে কাঠ জাল ফেলে পালায় সেই চর থেকে,,,,
ঐ যে কথায় আছে না আপনি বাঁচলে বাপের নাম,,,,,
তাদের অবস্থা ঠিক তখন ঐরকম অনেকটা হয়ে গেছিল যে কী দেখছে কেন বা কী দেখলো কিছুই তাদের মন ও মাথায় ঢোকে না কী বিভীষিকা কান্ড যা ভুলে থাকা যায় না,,,,,


কিন্তু কপালখাকি মা তার ঘরের খিলানগুলো হারিয়ে আর কোন ভরসায় ফিরে যাবে সে নিজের ঘরের চালে কারণ সে এখন সর্বগ্রাসী ক্ষুধার বৈশ্বানরে নিজেকে নিংড়িয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে কাঙাল হয়ে গেছে,,,,
নতুন করে ফিরে পাবার বা হারিয়ে যাবার কোন ভয় আর নেই তার তাই ঘরে ফেরার কোন তাগিদ তার মধ্যে চাগাড় দিয়ে ওঠে না,,,,


অতন্দ্র প্রহরীরা তখন দৌড়ে আসে সেই জায়গায় আর খানাতল্লাশি চালাতে থাকে কারণ অন্বেষণের জন্য তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠে,,,,,
কিন্তু এক পাগল মা তখন মানসিক দ্বন্দ্বে অবসাদে সম্পূর্ণ রূপে অজ্ঞাতবাসী হয়ে গেছে,,,,,
সে তখন অমনোনীত হয়ে গেছে সাংসারিক চাহিদার শোকের থেকে সম্পূর্ণ কাছছাড়া,,,, নিজের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব খুইয়ে এক শনিশ্চরী যার আর নতুন করে কোন আতঙ্ক রেখে তার বৃশ্চিক দংশনের দীর্ঘশ্বাসে প্রতিনিয়ত নিজেকে মেরে নতুন করে জেগে উঠার কোন প্রয়োজন নেই,,,,,,


প্রাসঙ্গিক একটি কবিতার ছেঁড়া চালচিত্র তুলে ধরা হলো,,,,,,,

ভাত দে হারামজাদা

- রফিক আজাদ


ভীষণ ক্ষুধার্ত আছিঃ উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হতে থাকে- প্রতিপলে- সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি- যেমন চৈত্রের শস্যক্ষেত্রে- জ্বেলে দ্যায়
প্রভূত দাহন- তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দু’বেলা দু’মুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোন দাবী
অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়ঃ
বাড়ি, গাড়ি, টাকা কড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে
আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-
ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠান্ডা বা গরম
সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ’লে
কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ
দু’বেলা দু’মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য-সব দাবী;
অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা
চাইনিতোঃ নাভি নিম্নে পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক;
যে চায় সে নিয়ে যাক- যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও
জেনে রাখোঃ আমার ওসবের কোন প্রয়োজন নেই।

যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবী
তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘ’টে যাবে
ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন কানুন-
সম্মুখে যা কিছু পাবো খেয়ে যাবো অবলীলাক্রমেঃ
থাকবে না কিছু বাকি- চলে যাবে হা ভাতের গ্রাসে।
যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তোমাকে ধরো পেয়ে যাই-
রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে।
সর্বপরিবেশগ্রাসী হ’লে সামান্য ভাতের ক্ষুধা
ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে।

দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা,
তা না হলে মানচিত্র খাবো।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন