রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯

নারী সংখ্যা,,,,,,,সম্পাদকীয় কলম


কবিতা: স্বয়ংসিদ্ধা

নাম: সুপ্রীতি বর্মন

( সময় যখন,,,, সংবাদপত্রে প্রকাশিত "আন্তর্জাতিক নারী দিবসে",,,,,,,)


অভিশপ্ত বিভীষিকার করালগ্রাস কালো ভূত শাকচিন্নী কন্যে জুটলো রাজপুত্র ছেলে আমার, জীবনের ও যৌবনের মধ্যিখানে ভরাডুবি, তলানিতে ঠেকে বিবাহিত চন্দ্রিমা,
অমাবস্যা পূর্নতা খোঁজে জালবন্দী খুপচি কুটুরী আমি এয়োস্ত্রী।
উচ্ছিষ্ট পাতে মুখ দেখা পাপ শ্বাশুড়ীর গঞ্জনা।

ভরা ভরা কোটাল বানে আগামী প্রজন্মের পয়োধরা, গর্ভের নিশ্চিত শাখা প্রশাখার নাড়ি ছেঁড়ার টান মাতৃত্বের আঁচ।
নিষ্প্রদীপ বংশপ্রদীপ পরপারে অসহ্য শোক বঞ্চিত পূর্বপুরুষের তর্পন।
মাংসদলা নাড়িয়ে লিঙ্গ নির্ধারন,
তোমারো চাই অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি।
আমার বউয়ের ব্যাটা হবে গো, ব্যাটা।
কে জানে বার্ধক্যে আদৌ উপার্জিত অর্থে তোমায় দেখবে কিনা না মুখে মারবে ঝাঁটা।
বলবে চুলের মুঠি ধরে এই বুড়ি লিখে দে বলছি সম্পত্তি না হলে মারবো টেনে এক থাপ্পর।

আলতা পায়ে সালংকারা মা লক্ষ্মীর গৃহপ্রবেশ একদা পেছনে রেখে স্মৃতিচিত্র ছেলেবেলা বাপের বাড়ি।
এখন জ্বলন্ত চুল্লীর অসন্তোষের ক্ষোভ কুন্ডলী পাকিয়ে উর্ধ্বসম চিন্তার ধোঁয়া,
ছেড়ে দাও ভিটেবাড়ি যাও চলে বৃদ্ধাশ্রম মুখেতেই শুধু হাজারো কচকচানি মাজা ভাঙ্গা, ভাঙা দাঁতে চাও বিলাসিতার পান সুপারী।

উঠতে বসতে গলগ্রহ সকলের দৃষ্টিশূল আবর্জনা সংসারের বাড়তি বোঝা।
কালি ছাড়া পেনের দৌরাত্ম্য সহ্য কি করে হবে সাদা কাগজে।
নির্জলা উপবাসে গৃহবন্দী শোকে বার্ধক্য,
রঙীন হাওয়া সন্ততির ঝোলা চামড়ার কোন থেকে যৎপরোনাস্তি সুবিধাভোগ,
চলবে চলবে দৌড়াবে লক্ষ্মীর ঝাঁপি মায়ের বন্ধ্যাত্বের শোক।

ভরাপেটে কাঁচা পোয়াতীর ক্যোৎ ক্যোৎ লাথি মেরে অজন্মা নবজাতক নীলমৃত্যুর কোলে শেষ হাঁপিয়ে নিঃশ্বাস, বল মা আমার কি অপরাধ।
কন্যাভ্রূনের অপমৃত্যু বাপের ঘাড় থেকে বোঝার নিষ্কৃতি, আর খুঁজতে হবে না কো ছেলে।
পুরুষতন্ত্র ছাড়া মেয়েছেলের বারো হাত কাপড়েও ন্যাংটো।
চৈতী বাসন্তী হাওয়ায় মদমত্ত নৈশিল কায়া উপক্রম বিবস্ত্রে পড়িমরি পুরুষের ক্ষুধাতুর পিপাসা, জীবাশ্ম হতে চায় সাগরের বুকে মুখ গুঁজে লজ্জায় নারায়ন শিলার পাথর।
ঝোলা স্তনে ভিখারীর অভুক্ত বাছার দুগ্ধপান শহুরে বাবুদের জীবন পরিক্রমায় জুতোর শুকতলা ফেটে চৌচিড় ঘরেতে আছে বিবাহিত স্ত্রী।

তবুও মুখে লালা ঝড়ে পাগলামো কাম উচাটন বিষ পিঁপড়ে, ডাঁশা পাকা পেয়ারায় সুযোগে অবকাশে দাঁতের কামড় বসাতে চায়।
গাছেরো খাবো আর পারলে কুড়িয়ে তলারো,
অথচ কি আশ্চর্য স্ত্রীর বাঁধাধরা ছকের বাইরে বেলাল্লাপনা মানেই পরপুরুষের সাথে রাতবিরিতে ঢলাঢলি দুশ্চরিত্রা,
সংসারের বিষাক্ত ধুতুরা ফল মহাদেবের,
অনিবার্যকারন বশতঃ তার বহিঃষ্করন জরুরী।

বাপের বাড়ির যৌতুক ধন তালাবন্দী অলংকারের সিন্দুক, একান্ত শুধু তোমার দায় বংশমর্য্যাদা, ঠেকা নিয়ে রেখেছো সমাজের আর পাঁচটা লোকের কূটকাচালী,, কি ভাববে কি বলবে।
ঝাঁকামুঠো ঋণ সকলকে খুশী করার দায় সংসারের অবশিষ্ট পাতে তুমি সর্বংস্বহা।
তোমাতেই ধৈর্য্য ধরিত্রীর শেষভাগে কোমরে আঁচল বেঁধে তোমাকেই হতে হয় কান্ডারী।

সংসারের তেলে জলে কলমীলতার বাড় বুড়ো বাপের বলিরেখার কাঁপন চোখের কোলে মান্ধাতার চাপ, মেয়ে বড় হয়েছে কি করে হবে গতি।
টানাপোড়েন সংসার চ্যাপ্টা হাতায় জ্বলন্ত ফোড়ন বিলাসিতা উচ্চশিক্ষা, নির্বাসন ছাত্রীর।
হাতেনাতে দাও সংসার চালানোর গিন্নিপনা।
ভবিষ্যতে কাজে লাগবে না হলে সমাজের মুখ ঝামটা কালশিটে কলঙ্কের ঘা,
মেয়ে বড় হচ্ছে যদি কিছু হয় পুরুষজাতি।
তুমিই রক্ষক আবার অপভ্রংশে তুমিই ভক্ষক,

ছোট ছোট হাঁটু অবধি যৌবন জল ধারনে অক্ষম পাতলা ছিটকাপড় তবেই তো হয় লালায়িত ধর্ষক অশ্লীল তুমি নারী, দেখাও কেন নগ্ন চিত্রপট অঙ্গপ্রদর্শন, কম পয়সায় বাপের হোটেলে ভাত মেরে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পুরুষদন্ড ছোটাও আতঙ্কে ঢেঁকির পাড় ভাঙার শমন, ছেলে ছোঁকড়ার ছ্যাবলামো, ইভটিজিং তুই আমাদের বাপোত্ত সম্পত্তি,
দে বলছি আকার ইঙ্গিতে তোর নরম মাংসের ভোগ।

বাপ মায়ের অজাতশত্রু মরনচিন্তা মেয়ের গতি, কপালে ভাঁজ নৈঃশব্দে ঘুমের ভাঙন সমুদ্র নেই তোমার তৃপ্তি হাঁপর টানা দীর্ঘশ্বাসে একমাত্র পুরুষের প্রদত্ত লাল দু টাকার সিঁদুরে তোমার মেয়েবেলার মুক্তি।
বিবাহিত শয্যা ছেড়ে স্বামীর পলায়ন মধ্যরাত্রির ঝরা পাতার শোক আমার অবশিষ্ট আছে মিলন।
তুমি বদতমিজ মুখশুদ্ধি করো অবৈধ ঘৃণ্য বীর্যপাতে মাতৃত্বের সাথে,
থরথর মেদিনী কম্পিত মধুযামিনীর চিত্ত একি দেখছি আমি তোমার স্ত্রী না একি আমার ভীমরতি।

অপভ্রংশ সকল শিক্ষাদীক্ষা এ কোন পচা ডোবা জলে কোমর ভিজিয়ে করতে গিয়েছিলাম রৌদ্রদগ্ধ স্নান, লোপ পেয়েছে আজ আমার মানসিক শক্তি।
চোখের সামনে যখনি দেখি পুরুষ বলে উঠি শালা বাঞ্চত্ হয়েছি আজ আমি ভদ্রলোকের আঁধারি পোষাক ছেড়ে বস্তির ছোটলোক।
অনেক খুশী বদ্ধ ঘরের লৌহকপাট গেছে ভেঙ্গে আজ পেয়েছি সিঁদুরের চাপ থেকে মুক্তি।
সকলে বলে উঠে আমায় এই পাগলী এই পাগলী।

সমাজের ন্যাকামো সংসার সংসার ছেলেখেলা অক্ষমতার পাষাণপ্রস্তর চাপ ছিনিয়ে নিয়েছে বইখাতা, সামনে এসেছে হেঁশেল কড়াই খুন্তীর ছেলেখেলা, গলাধঃকরন গান্ডেপিন্ডে উদয়াস্ত খুঁটিনাটি প্রমোদ ত্যাগে চাকার অগ্রগমন।
আমি চলেছি দিনে রাতে, চলতে যে আমাকে হবে, আহা করে ঢঙ মেরে আলালী আর করোনা বদঅভ্যাস তোমার যন্ত্রনার বহিঃপ্রকাশ।
আর তোমাকে একদম মানায় না যতই হোক তুমি হয়েছো আজকে ছেলের মা।

অর্ধেক কপাল আমি অর্ধাঙ্গিনী তোমারো তো খুব সখ বউ হবার স্বীকৃতির সিঁদুর পেতে তুমি আগ্রহী।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনতিক্রম্য তোমার যাত্রা স্বর্গসুখ ক্ষনকালের স্পর্শে পরাগরেনুর উদগ্র তেজে নতুন নতুন পাত্রস্থ আমার ফুলশয্যা।
অধরা স্পর্শে অতৃপ্ত অশৌচ প্রেম যত্রতত্র বসন্তের প্রবেশ অবাধ খোলা তোমার দ্বারে আলিঙ্গন, আমি যেন আশিতীপর মাসীর ক্রয়বিক্রয়ের বিচক্ষণতায় বাজারের ভোগ্য মাল।
তবে কিসের অধিকারে গলা ফাটিয়ে ঘটা করো আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
সবার প্রথমে নারীত্বের স্বয়ংসিদ্ধা রূপে করো সমাজের উন্মুক্ত প্রেক্ষাপটে আত্মপ্রকাশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন