সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৯

সম্পাদকীয়: এক শিক্ষণীয় উপদেশ


এক শিক্ষণীয় রোমাঞ্চকর ঈশপের গল্প,,,,

(ঈশপের গল্পসমগ্র থেকে সংগৃহীত)



একটি লোকের একটি গাধা ছিল। গাধাটা সে বিক্রী করবার জন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছে, ---সঙ্গে ছিল তার ছেলে। কিছুদূর যাবার পর দেখা গেল কতগুলো ছেলে পথে দাঁড়িয়ে জটলা করছে। এ দুজনকে এমনি করে গাধা নিয়ে যেতে দেখে তাদের একজন অমনি বলে উঠল, আরে, আরে দেখছিস-- ‌ওরা কি বোকা, অনায়াসে এদের কেউ না কেউ গাধায় চরে যেতে পারে, তা না করে দুইজন‌ই গাধার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে।

চাষী ছেলেটির এই ব্যাঙ্গোক্তি শুনে লোকটি নিজের ছেলেকে গাধার পিঠে চড়িয়ে নিজে তাদের পিছন পিছন হেঁটে চললে।

কিছুদূর যাবার পর দেখা গেল কয়েকজন বৃদ্ধ পথের ধারে বসে কি নিয়ে বাদানুবাদ করছেন। তাঁদের একজন যখন দেখলেন চাষীর ছেলেটা দিব্যি আরামে গাধায় চড়ে যাচ্ছে আর তার বাপ যাচ্ছে পিছন পিছন হেঁটে, তখন অমনি বলে উঠলেন দেখ, দেখ আমি যা বলছিলাম, তা ঠিক কিনা: এ যুগের ছেলেরা তাদের বাপদের কোন সম্মান দেয় না, তাছাড়া তাদের উপর কোন মায়ামমতাও তাদের নেই, ন‌ইলে বাপকে হাঁটিয়ে ছেলে যায় গাধায় চড়ে? এ ছাড়া বৃদ্ধ চাষীর ছেলেটাকেও আচ্ছা করে বকলেন। --- লজ্জা করে না তোর বাপকে হাঁটিয়ে নিজে আরামে গাধায় চড়ে যেতে?

ছেলেটি এতে বিষম লজ্জা পেয়ে নিজে গাধা থেকে নেমে বাপকে তাতে চড়াল।

কিছুদূর যাবার পর তাদের সামনে পড়ল কয়েক জন স্ত্রীলোক,তারা তাদের এই অবস্থায় দেখে অমনি বলে উঠল, দেখেছিস,--মিন্সের কি আক্কেল, নিজে আরামে গাধার পিঠে বসে, আর ছেলেটাকে নিয়ে যাচ্ছে হাঁটিয়ে।

এবার চাষীর নিজের‌ই লজ্জা পাবার পালা। সে স্ত্রীলোকদের এই কথা শোনার পর ছেলেটাকেও গাধার পিঠে তুলে নিল।

বাপ বেটা দুজনেই এমনি গাধার পিঠে চড়ে কিছুদূর যাবার পর সামনে পড়ল তাদের আর একটি লোক। লোকটি ওদের এইভাবে যেতে দেখে চাষির দিকে বেশ একটু ক্রুর দৃষ্টিতে চেয়ে বললে, শোন, ভায়া শোন।
---কী?
----বলি ,এ গাধাটা কার?
----কেন? ‌এ তো আমার‌ই গাধা।
----দেখে ত তা মনে হচ্ছে না।
---কেন?
---তোমার গাধা হলে, এ অবলা জীবের উপর তোমার একটু মায়া-দয়া থাকত। এমন নিরীহ জীবের উপর তোমরা দুই জন চড়ে যাচ্ছ, এতে কষ্ট হয় না এর? যে কষ্ট তোমরা এতক্ষণ একে দিয়েছ তার জন্য তোমাদের উচিত এখন একেই কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া।

লোকটার কথায় বাপবেটা দুইজনেই গাধা থেকে নেমে একটা দড়ি দিয়ে গাধার পা বেঁধে, পায়ের ভিতর বাঁশ চালিয়ে দিয়ে দুইজনে তাকে কাঁধে করে নিয়ে চললো।

বাজারের কাছে ছিল একটা খাল। তার উপর একটা পুল। বাপবেটা গাধা কাঁধে করে ঐ পুলের উপর উঠলেই বাজারের বহু লোক তাদের এই কান্ড দেখে এমন হাসি ঠাট্টা হট্টগোল শুরু করলো,যে তা শুনে গাধাটা ভয় পেয়ে পা ছুঁড়তে যাওয়ায় পায়ের দড়িটা গেল ছিঁড়ে, সঙ্গে সঙ্গে সে জলে পড়ে মারা গেল।

চাষী এতে কিছুক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে র‌‌ইল। নিজেকে সামলে নেবার পর তার মুখ দিয়ে বেরুল, যে যা বলেছে তাই শুনে আমি তাকে সন্তুষ্ট করতে গেছি, কাউকে কিন্তু সন্তুষ্ট করতে পারলাম না, মাঝখান থেকে আমার গাধাটা গেল।


উপদেশ:

যে যা বলে তাই শুনে চলতে গেলে শেষে লোকের কি দশা হয় তাই এই গল্পে দেখানো হয়েছে।
সকলকে সন্তুষ্ট করতে গেলে কাউকেই সন্তুষ্ট করা যায় না।

তেমনি অনন্ত ও লিপিকার প্রণয় থেকে জিদের ধর্ণা আর তারপর পরিণয় ঘটে যাওয়াকে কেন্দ্র করে যত্রতত্র সোশাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্য এ বিভিন্ন চেনা অচেনা লোকের মুখের অজস্র ভিড়,,, উঁকি মেরে কৌতূহল সূচক তির্যক কিংবা পরিপূরক মন্তব্যের ঘর্ষণে অন্তর্দহন বা বিদগ্ধ হবার কিছুই নেই,,,,তাহলে পরিণামে সকলের কথা কানে নিয়ে সকলকে সন্তুষ্ট করার চক্করে ঐ গাধাটার মতন হতবুদ্ধিকর অবস্থায় অকালে প্রাণ দেবে,,,, যদি অনন্তর সিদ্ধান্ত এ এই পরিণয় আগামী দিনে সুখকর হয়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে তাহলে হয়ত প্রেমে ব্যর্থ হেমলক বিষ কন্ঠে ধারণ করা নীলকন্ঠ প্রেমিক আর হুতাশনে না পুড়ে,,, আত্মহননে না এগিয়ে গিয়ে তার প্রেয়সীকে নিজের করে কাছে পাবার চেষ্টায়,,,,আর বেঁচে থাকার চেষ্টায় ব্রতী হবে,,, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।।।।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন