চিত্রায়িত দৃশ্য দুন্দুভি নিনাদে
আঙরাখা ধরিত্রীর শিহরিত কম্পাঙ্ক বর্ণালী,,,,,
বিউগলের শব্দে
দেবাশিস বসু
বিউগলের শব্দে ঘুম ভাঙে
বিগ ড্রাম বেজে ওঠে দুন্দুভি নিনাদে
পতাকার শৃঙ্খল গাছে ল্যাম্পপোস্টে
পতাকা ওড়ে স্কুল কলেজ রাজভবনে
তুমিই তো প্রথম
পৃথিবীকে দিয়েছিলে দর্শন
জ্ঞান বিজ্ঞান আর ধর্মের উন্মুক্ত দুয়ার
ঐ সোনালী সময়ের আদর্শই এখনো ভাসে
আমাদের স্বপ্নে ভাবে কল্পনায়
যদি আবার আসি পৃথিবীতে
এই ভারতেই ঘুরে ফিরে আসবো
এই বহুত্ববাদের দেশে
আবার ভাঙবে ঘুম বিউগলের উচ্চনিনাদে
বাহাত্তরটা বছর পেরিয়ে গেছে
তবু কাপুরুষ চিত্ত-অবনত শিরে
শিক্ষাহীন জ্ঞানহীন বিপুল সমাজ
ছোট ছোট টুকরোয় বিভক্ত জাতিগোষ্ঠী
যুক্তির স্বচ্ছধারা
পথ হারিয়েছে মরুবালুকায়
আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় দুঃস্বপ্নে
ধ্বংসের তরবারি
ছিন্নভিন্ন করে মানুষের শরীর
তাদের গলিত অবয়ব
নিঃশব্দে ঘুমিয়ে থাকে ঐ আরবসাগরে
(১)
ফুটপাথ নদীপাড় সমুদ্রসৈকত
নবনির্মাণ বা পরিত্যক্ত কারখানায়
যখন শুনতে পাই
রক্তাক্ত সতীচ্ছদের আর্তনাদ
যখন ভাঙা বোতল
আর ধারালো লোহার রডে শুনতে পাই
কুমারী যোনির হাহাকার
ছিন্ন অন্তর্বাসে দেখতে পাই
এখনো লেগে থাকা যৌনগন্ধী ধূসর তরল
শরীরে অজস্র হায়নার নখের আলপনা
কিংবা মন্থনের নীলাভ বিষ সারাটা শরীরে
(২)
যখন কন্যাভ্রূণের ছিন্নভিন্ন অবয়ব
করাতের শাণিত দাঁতে-
দহন আগুনের চিতায়
জীবন্ত কবর চার ফুট জলের নীচে
বিসর্জন পবিত্র গঙ্গাজলে
নিজস্ব বিষ্ঠায় শ্বাসরুদ্ধ সদ্যোজাত
কাপড়ের পুঁটুলিতে-আবর্জনার স্তূপে
(৩)
যেখানে নারীর সৌন্দর্য পুরুষের প্রয়োজনে
সৌন্দর্য সহবাসে আর কুমারীত্বে
যৌতুক আর সঙ্গমে নারীকে খুঁজেছে
পুত্রলাভে-পুত্র সন্তান জমির শরিকিয়ানায়
যে জমিতে শায়িত রয়েছে
আগে জন্মানো দিদিদের ভ্রূণ
তাদের চোখের জলে সরস
তাদের হাড় মাস রক্তে উর্বর যে জমি
(৪)
যেখানে বিদ্যাসাগরের কর্তিত মস্তক
মাটিতে গড়ায় কবন্ধ কণিষ্কের মতো-
মহাবিদ্যালয়ে
এখনো হাজার আলোর অন্ধকারে
সার দিয়ে দাঁড়ায় মাতৃমূর্তি
নিরালোক ল্যাম্পপোস্টের ধার ঘেঁষে
পড়ে থাকে স্তূপাকার জন্মনিরোধ
(৫)
যে সীমাহীন দারিদ্র্যের কৃষ্ণগহ্বরে
গরীবের কান্না বিস্ফোরণে
বুকফাটা কন্ঠস্বর-'এক মুঠো ভাত'
জীবনের ধূসর ইতিহাস একটি বাক্যবন্ধে
যখন বিলাসে ডুবে থেকেছে
তামাম কুবেরের দল
তাদের হেলিপ্যাড জোড়া প্রাসাদ
দেখেছে অন্ধকারের শূন্যতা
(৬)
পাথুরে জমি চষে যে কৃষক অনাবৃষ্টিতে
শীর্ণ তার বুক পিঠ পাঁজর
যে গৃহবধূ বাঁধা পরে জোতদারের কাছে
ঋণের দায়ে আত্মঘাতী যে কৃষককুল
দাসত্বের শিকলে বাঁধা যে ভূমিহীন চাষী
শকুনের সাইরেনে
শুনতে পাই তাদের আর্তনাদ
(৭)
যখন কংক্রিটের জংগল
ছিঁড়ে খুঁড়ে খায় গাছের শবদেহ-
শ্বাসরুদ্ধ শিকড়ের শিরা উপশিরা
ধ্বংসের সুনামি দেখতে পাই
সমুদ্রে পুরু তেলের চাদরে
সাগরের বাদামী তলদেশ
সহস্র প্রাণীর সমাধিস্তূপে
কারখানার হলুদ প্রস্রাবে সীসার কণায়
শৈবাল মারা গেছে পর্বতগাত্রে
হিমবাহে শুকায় জলধারা
বিরলকেশ শিশুর শরীরে বয়স্ক ছাপ
কোঁচকানো চামড়ায় আর্সেনিক দহন
প্রবালেরা দিন গোনে মৃত্যুর প্রতীক্ষায়
এই স্বাধীনতার আগুনে জ্বলছি আমি-
ব্যর্থতায় মুহ্যমান-সংবিধান কেঁদেছে
বাহাত্তরটা বছর ধরে
নিঃসঙ্গ তারার মতো জ্বলতে জ্বলতে
হ্রদের নিস্তব্ধ জলে দেখি অঙ্গার অবয়ব
এমনই জ্বলতে জ্বলতে হয়তো একদিন
কোন সবুজাভ গ্রহ জন্ম নেবে
শিলাযুত ঝরে পড়বে
পাথরের ফাটল থেকে
ধ্বংসস্তূপ ফুঁড়ে
গোটা দুই পাতা মেলে
অঙ্কুরিত হবে হরিদ্রাভ বীজ
সেই স্বাধীন ভারতবর্ষে
থাকবো তুমি আমি ও সে
বিউগলের শব্দে বিগড্রামের দুন্দুভিনিনাদে
গাছ থেকে গাছে ঝোলা পতাকার শৃঙ্খলে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন