বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা-2



১. কবিতা

*যদি মেঘ হয়ে যাই*

পায়েল খাঁড়া।

আচ্ছা, যদি মেঘ হয়ে যাই কোনো আষাঢ়ের বিকেলে

আর এক পশলা বৃষ্টি নিয়ে হাজির হই

তোমার ওই দখিনমুখো ঝুল-বারান্দায়,

তুমি তখন দার্জিলিং চায়ের সুগন্ধী ধোঁয়ায়

একের পর এক শব্দ সাজাচ্ছো ঝরনা কলমের ঠোঁটে।

তোমার সদ্য একুশ বয়স,

এলোমেলো চুল আর আদুল বুক

আর সেই খামখেয়ালী বহেমিয়ান সুর—

জানি প্লাবন ডাকবে আমার অষ্টাদশী স্নায়ুতন্ত্রে।

কদমের গন্ধে ভেজা এক আঁচলা জল ছিটিয়ে দেবো গায়

চমকে তাকাবে তুমি

আলসেতে তখন বৃষ্টিফোঁটার কথাকলি,

মেঘলা হাওয়ায় ভাসছে ‘আসরের’ নামাজ।

শহরটা তখনও আগলাবে দৈনিক ক্লান্তি

টেলিগ্রাফের তারে একজোড়া পায়রা

মেখে নেবে অন্তিম লগ্নের কিছু একান্ত আপন উষ্ণতা;

তুমি হাত বাড়িয়ে দিও অন্তহীন শুন্যতায়

ছুঁয়ে দিও গলে পড়া মেঘ,

যদি অকারনেই একচিলতে হাসি ফোটে তোমার ঠোঁটের কোনে

তবে জেনো—

চুপুসাড়ে কখন যেন

বলে গেছি কানে কানে—ভালোবাসি!


২.কবিতা

*ইতি মনীষা*

প্রিয় অতনু,

নয় নয় ক’রে কাটল আবারও বছর খানেক

আছিস কেমন, তোর পরবাসী দিনযাপনে?

সে দেশে শুনেছি নাকি ঋতুর নেই ফের

দিন আসে দিন যায়—শীতের আওতায় একরঙা গ্রাফিতি

বৃষ্টি ভেজায়, পাতা ঝরায়, ছড়ায় দু-মুঠো রঙিন উত্তাপ বসন্তের

পারদের নিরুত্তাপ সমলেখ জ্যামিতি!

সবটাতেই কী ভীষন মাখামাখি

একটা যেন নিখুঁত ফাঁকি আর—

যাক্‌ গে, সে কথা ছাড়;

তোর ভালো থাকাটাই তো একান্ত প্রয়োজন।

জানিস, আমাদের শহরে ভরা শ্রাবণ এখন।

কাকভেজা শরীরে তার মন কেমনের গন্ধ

রাস্তারা বানভাসী, খানা-খন্দ টইটুম্বুর

জল ঠেঙিয়ে নিত্য যাতায়াত

করতে হবেই কাজ, জোটাতে হবে তো ভাত,

তবু গরম খিচুড়ি আর ইলিশের ভুরভুর গন্ধে

দুপুর-সংসারগুলো ঠিক মেতে ওঠে সেই চেনা ছন্দে।

ফুটপাতের ওই খাপরা ছাওয়া রোজনামচাগুলো

এবারও সঁপেছে নিজেদের অদৃষ্টের হেপাজতে

মনে মনে গোনে গথ—

ফুটো চাল আর ফাঁকা হাঁড়িতে এবারটাও কেটে যাক কোনোমতে।

আকাশের নীল পাঁজরে কৃষ্ণকলি মেঘ

ক্ষণে ক্ষণে মুদ্রা বদলায়

ধোঁয়ার ভেজাল আর বহুতলের কাটাকুটি খেলায়

মুষড়ে পড়ে সে বারবার; তবু বৃষ্টি ঝরায়

ভিজিয়ে যায়, এঁদো গলি থেকে বুক চেতানো রাজপথ।

দেখি আরেক প্রস্থ সবুজের শোভাযাত্রা

যান্ত্রিক শহরের পাথুরে পলেস্তরায়।

থমকে দাঁড়ায় ট্রাফিক—

এ বর্ষা’ই তো জিরেন দেয় তাকে—অনর্গল অজুহাত

একানে ছাতার নীচে কত প্রেম আর্দ্র উষ্ণতা মাখে!

আচ্ছা দেখি বল—মনে কি পড়ে তোর আর,

নামলেই অঝোর ধার—

জুড়তিস কেমন আমার কাছে গান শোনবার আবদার।

এখন আর গাওয়া হয় না রে তেমন ক’রে

গলায় খেলে না সুর, স্বরলিপিতেও জমেছে ধুলো

শ্রোতাই বা কই তোর মতো আজ আর এই মেঘলা শহরে!

বৃষ্টি নামলে তাই গিয়ে দাঁড়াই

খোলা বারান্দায় চোখ বুজে;

রেলিঙে ফোঁটার ভিড় তোর কথা বলে

ভেজে শরীর ভেজে চুল ভিজে ওঠে দৃষ্টি

নাছোড় বৃষ্টি—এ শহরে ভেজায় না শুধু কংক্রিট

ভিজিয়ে যায় অনুভূতি স্মৃতির কোলাহলে।

জানি তুইও ভিজিস;

তোর অচেনা আকাশের বাদলা মেটায় কি মনের তৃষা!

জানি’না—পারলে জবাব দিস

                      ইতি তোর মনীষা...



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন