বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৫



এক অন্য স্যাঁতসেতে বর্ষামঙ্গল।

অন্য বর্ষার ক্লেদাক্ত আকুলতা।

মানব রতন--

-- সৌগত রাণা কবিয়াল


ছেলেটার সুখ ছিল অনেক,

দুঃখও ছিল পাড়ার নেড়ি কুকুরটার মতো !

ভালোবাসা কদাচিৎ জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে

আবার ভিড়তো রংচটা বাড়ীটার স্যাঁতস্যাঁতে শরীর ঘেঁষে !

ছেলেটার কেও ছিল না,

পথের পাশে পড়ে থাকা বুড়োটার মতো,

শুধু ঐ একটুকু কৈশোরের স্মৃতি ছাড়া !

যে বয়সে লোকে আঁটকুড়ে অপবাদ পায়,

সেই বয়সে ছেলেটা শিশুর ঘ্রাণ পেয়েছিল নাকে,

সেই ক্ষয়ে যাওয়া বাড়ীটার উঠোন ঘেঁষে

পাড়ার ছেঁড়া কাপড়ের যুবতী পাগলিনী মেয়েটার বদৌলতে !

যৌবনের কিছু নেশা থাকে,

সেই নেশার বিষ হয়ে

মেয়েটার কাদামাখা সাদা উরুতে একদিন মন্দিরের সামনের পথটা লাল হয়েছিলো !

পাড়ার লোকে তখন ভীড় বাসে ট্রেনে অফিস ছুটছিলো !

কারো কিছু আসে যায়নি তাতে,

এমনকি মন্দিরের দেবতারও না !

ছেলেটা সেদিন মুখ লুকিয়ে মেয়েটার

রক্তে ভেজা নাড়ী স্পর্শ করেছিলো কেবল !

মানুষ কখনোই কারো জন্মের দায় নিয়ে চায় না,

পরের তো নয়ই !

মুখ থুবড়ে রাস্তার ধুলোবালিতে একাকার হয়ে

শিশুটি কেমন চিৎকার করে তার অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিল !

পকেটের দশ টাকার দুটো ময়লা নোটে

সেদিন ছেলেটার বুকে পুরুষের সাধ জেগেছিল !

পুরোনো সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক হিসেব নিকেশের পর,

ছেলেটা শিশুটির অধিকার পেয়েছিলো !

মেয়েটা এখনো সেই স্যাঁতসেঁতে বাড়ীটায় বাঁচে,

আজকাল গায়ে কাপড় থাকে না ঠিকমতো !

পাড়ার লোকেরাও এখন আর আগের মতো

আড়চোখে ওর শরীর দেখে না,

খোলা শরীরের পুরুষের নেশা ঠিক চড়েনা হয়তো !

ছেলেটা রোজ রবিবার করে

শেয়ালদহ যায়,

কিছু টুকরো খাবার আর লজেন্স নিয়ে !

এতিমখানার নোটবুকে বাবলুর স্বজন বলতে শুধু ছেলেটাই !

সারাদিন বাবলুকে নিয়ে কি ছটফট সময় কাটে সেদিন !

তারপর সপ্তাহের বাকি ছয়টা দিন

ছেলেটা পয়সা জমায়,

দশ টাকা,কুড়ি টাকার কিছু ময়লা কাগজ !

শুধুমাত্র একটা দিন বাঁচবে বলে,

ছেলেটা মুখ বুজে পাড়ার ধুলো ঝাড়ে হাসি হাসি মুখে !

ছেলেটার শুধুমাত্র ছুটির দিনটুকু ছাড়া

বলবার মতো আর কোন সুখ ছিলো না !

আর কোন সুখ ছিল না !

হয়তো আর কোন দুঃখও ছিল না,

শুধুমাত্র ছুটির দিনের সন্ধ্যাটায়

একা একা বাড়ী ফেরার সময়টুকু ছাড়া !

এছাড়া বলার মতো ছেলেটার আর কোন গল্প ছিল না,

কোন গল্প ছিল না !


1 টি মন্তব্য: