এক অন্য স্যাঁতসেতে বর্ষামঙ্গল।
অন্য বর্ষার ক্লেদাক্ত আকুলতা।
মানব রতন--
-- সৌগত রাণা কবিয়াল
ছেলেটার সুখ ছিল অনেক,
দুঃখও ছিল পাড়ার নেড়ি কুকুরটার মতো !
ভালোবাসা কদাচিৎ জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে
আবার ভিড়তো রংচটা বাড়ীটার স্যাঁতস্যাঁতে শরীর ঘেঁষে !
ছেলেটার কেও ছিল না,
পথের পাশে পড়ে থাকা বুড়োটার মতো,
শুধু ঐ একটুকু কৈশোরের স্মৃতি ছাড়া !
যে বয়সে লোকে আঁটকুড়ে অপবাদ পায়,
সেই বয়সে ছেলেটা শিশুর ঘ্রাণ পেয়েছিল নাকে,
সেই ক্ষয়ে যাওয়া বাড়ীটার উঠোন ঘেঁষে
পাড়ার ছেঁড়া কাপড়ের যুবতী পাগলিনী মেয়েটার বদৌলতে !
যৌবনের কিছু নেশা থাকে,
সেই নেশার বিষ হয়ে
মেয়েটার কাদামাখা সাদা উরুতে একদিন মন্দিরের সামনের পথটা লাল হয়েছিলো !
পাড়ার লোকে তখন ভীড় বাসে ট্রেনে অফিস ছুটছিলো !
কারো কিছু আসে যায়নি তাতে,
এমনকি মন্দিরের দেবতারও না !
ছেলেটা সেদিন মুখ লুকিয়ে মেয়েটার
রক্তে ভেজা নাড়ী স্পর্শ করেছিলো কেবল !
মানুষ কখনোই কারো জন্মের দায় নিয়ে চায় না,
পরের তো নয়ই !
মুখ থুবড়ে রাস্তার ধুলোবালিতে একাকার হয়ে
শিশুটি কেমন চিৎকার করে তার অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিল !
পকেটের দশ টাকার দুটো ময়লা নোটে
সেদিন ছেলেটার বুকে পুরুষের সাধ জেগেছিল !
পুরোনো সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক হিসেব নিকেশের পর,
ছেলেটা শিশুটির অধিকার পেয়েছিলো !
মেয়েটা এখনো সেই স্যাঁতসেঁতে বাড়ীটায় বাঁচে,
আজকাল গায়ে কাপড় থাকে না ঠিকমতো !
পাড়ার লোকেরাও এখন আর আগের মতো
আড়চোখে ওর শরীর দেখে না,
খোলা শরীরের পুরুষের নেশা ঠিক চড়েনা হয়তো !
ছেলেটা রোজ রবিবার করে
শেয়ালদহ যায়,
কিছু টুকরো খাবার আর লজেন্স নিয়ে !
এতিমখানার নোটবুকে বাবলুর স্বজন বলতে শুধু ছেলেটাই !
সারাদিন বাবলুকে নিয়ে কি ছটফট সময় কাটে সেদিন !
তারপর সপ্তাহের বাকি ছয়টা দিন
ছেলেটা পয়সা জমায়,
দশ টাকা,কুড়ি টাকার কিছু ময়লা কাগজ !
শুধুমাত্র একটা দিন বাঁচবে বলে,
ছেলেটা মুখ বুজে পাড়ার ধুলো ঝাড়ে হাসি হাসি মুখে !
ছেলেটার শুধুমাত্র ছুটির দিনটুকু ছাড়া
বলবার মতো আর কোন সুখ ছিলো না !
আর কোন সুখ ছিল না !
হয়তো আর কোন দুঃখও ছিল না,
শুধুমাত্র ছুটির দিনের সন্ধ্যাটায়
একা একা বাড়ী ফেরার সময়টুকু ছাড়া !
এছাড়া বলার মতো ছেলেটার আর কোন গল্প ছিল না,
কোন গল্প ছিল না !
ধন্যবাদ প্রিয়, শুভ কামনা রইলো
উত্তরমুছুন