রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮

আম্রমাধুরী সংখ্যা- ৭



১..

গরিব গরিব

---সবর্না চট্টোপাধ্যায়




শুকনো গাছের মুঠো হাত

চেয়ে আছে জ্যোৎস্নার দিকে...
করাতের মুখে বোবাদের আর্তনাদ
গরিবের পেটে খিদে।

পাতার ঘরে বন্ধ সালোকসংশ্লেষ
রেশনের চালে পোকাদের চড়ুইভাতি
দিনবোজা আলোয় পথে নামে
রামরমিহের অভাগী মা...

মিছিলে মিছিলে ঢেউ
থিকথিকে মাঠ...হাততালি
মিটিংয়ের পর একে একে বাড়ি ফিরে

যায় ভাতডাল খাওয়া হাওয়া।
শুধু কবেকার মত ট্রাফিক সিগনালে
দাঁড়ানো গাড়ির দিকে,
হাত বাড়িয়ে থাকে অভুক্ত ভারত।

রোজকার নিয়মে সন্ধ্যার চাঁদ মাখোমাখো
মুখে পেট টান....
মার্কাকারা হোটেলে লিপস্টিক চোষে আর
বুলবুলি নাচ দেখে
ফ্রিতে দিয়ে যায় কাঁচাগালি বেশ্যাকে...

বস্তির মানুষ না স্যানিটারি প্যাড?
কিচ্ছু এসে যায় না নোটবন্দী হলেও..
পাশাপাশি বেড়ে ওঠা খিদে
চিবোনোর লড়াই , দুমুঠো দুবেলায়
হাভাতের ঝাড় বিইয়ে চলেছে
জাতপাতহীণ গরিব বংশপরম্পরায়...


২....


বাগদীর সোহাগী বউ

---সবর্না চট্টোপাধ্যায়


পাথর শরীরে শ্রমের খোদাই
কালো মিশমিশে পেটাই পেটে মোটাচালের
ভাত কেটে কেটে
স্বরলিপি লিখছে বাগদী বউ।
কালো পিঠ ফেটে লালপাড় শাড়ি
উঁচুদুটো বুক ঢেকে তালপাতার উনুন জ্বালে।
কয়লা লেপতে লেপতে কড়াইয়ের তলা
ঘষছে কালোবেড়াল।
মরদের সারাগায়ে খোয়াইয়ের ঢেউ
মাথায় শালপাতার মুকুট...
তীর ধনুকের ছিলা টেনে শিকার করছে
হরিণীর তীক্ষ্ণ চোখ।
পাথরকাটা শরীরে ছেনি চালিয়ে দেওয়া খিদে
ফলিয়ে নেয় রোজকার জ্যোৎস্নার চাঁদ।
দুবেলা নিজে হাতে লাঙল চালিয়ে সংসার জ্বালে বাগদী বরবউ...
গাছতলা দুপুরে খোলা টিফিনক্যারিয়ারে
সুখের ডালরুটি তুলে দেয় দীনে বাগদীর নিটোল
সোহাগী বউ...



৩.....


এমনভাবে দেখোনা প্লিজ

---সবর্না চট্টোপাধ্যায়



এমনভাবে দেখছো যেন ব্লাউজের ফাঁকে লুকিয়ে রেখেছি একটা ব্রহ্মান্ড...
রহস্যের আড়াল থেকে এখুনি ছুটে বেরোবে একঝাঁক জোনাক..
বলিহারি তোমায় পুরুষ। সবেতেই ছড়িয়ে ফেলছ চটচটে নিঃশ্বাস।

আমার বয়স যখন চার,
বটগাছ পুঁতবে বলে পিসিরছেলে মাটি কুপিয়েছিল।
হাসি পায় জানো,  তুমি এখনও নিজেকে পুরুষ মনে করো?

আমার বুকে তো কোনও এভারেস্ট নেই...
যে দুহাত ছড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠবে বিজয়ীর মত...
কিংবা কোন নিশান গেঁথে দিয়ে বলবে, 'কেড়ে নিলাম সব অহংকার'।
অহংকার বুঝি তোমার শিশ্নে গাঁথা ধুতরোরফুল?

আমি আমি তোমার জন্মদাত্রী, তোমার স্ত্রী,
ভালোবাসতে পারি।

আবার, ছিঁড়ে নিতে পারি ঐ শিশ্নসর্বস্বঅহংকার।

তুমি যতই নিজেকে সাধু বলো না কেন, আমার আড়ালে কি একবারও চিরে দেখোনি ঘামে ভেজা পিঠ, কিংবা কোমরের ভাঁজ ?
তাকাওনি কি  উঁকি দেওয়া অন্তর্বাসে?
কিংবা ক্লিভেজের বেড়া ডিঙিয়ে গভীর গিরিখাতে...

তুমি যদি বিকিয়ে দিতে পারো সমস্ত পুরুষত্ব বীর্যের সস্তা বাজারে, তবে আর যাই হোক এবার থেকে নিজেকে পুরুষ বলো না আর.....

তবে যে কোন এক সময় ঘুমন্ত সন্তানের মুখও আঠালো খাবার মনে হবে...!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন