রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮

আম্রমাধুরী সংখ্যা- ৮



কবিতা: শ্রী।

-সুদীপ্ত ভট্টাচার্য্য


নিজেকে দেখতে বিচ্ছিরি ভেবে ছোটো চুল কাটেনি

মেয়েটি বিনুনী করতে ভালোবাসতো, অভিমানী,

নিজের নাকটা ভোঁতা ভেবে কষ্ট পেত মনে,

স্বামীর টিকালো নাকটা দেখিয়ে বলত,

ছেলের নাকটা তোমার মতোই যেন হয়,

তার গালটা ফোলা ফোলা ঠিক তার বাবার মত,

আয়নায় বাবার মুখটা ভেসে ওঠে,

কপালটা যে তার মায়ের মত,

স্বামীর মতের সাথে মেলেনা মতে।

দক্ষিনের খোলা জানলার ধারে ভাংগা কাঁচে

সিঁদুরের লাল টিপ পরে কপালের মাঝে,

দুপুরের রোদ শুধু বারান্দা অবধি আসে,

তবু মুখপানে চায় না,

পোয়াতি অবস্থায় যখন সে চলতে ফিরতে

হাঁপিয়ে যেত, মুখটা কেমন মলিন ঝাপ্সা দেখতে

লাগছিল, জঠরে সদ্য প্রস্ফুটিত ভ্রূন তার দেহে ছিল,

আয়নার ওপারে মুখটা আরো শুকনো মনে হয়,

দেহ নয়,

মুখটা তার শ্রীময়ী।




কবিতা: নেমন্তন্নের কার্ড।

-সুদীপ্ত ভট্টাচার্য্য


বিভাস বাবু যাচ্ছিলেন মেয়ের বিয়ের

নিমন্ত্রন করতে তাদেরই কুটুম বাড়ি।

বেশ প্রানবন্ত তার হাসি হেসেই বেড়িয়ে ছিলেন

জানলার ধারে সিট, মুর্শিদাবাদ যাবার গাড়ি।

বাসে বসে দেখছিলেন স্বপ্ন গুটিকতক,

সামনে তার মেয়ের শুভ পরিণয়,

ব্যাগে এক গুচ্ছ বিয়ের কার্ড,

অল্প তার আয়, তবু এ বিয়ে

তার বহু দিনের জমানো টাকায়,

অল্প অল্প করে গড়া গয়না গুলো

মেয়েকে বিয়েতে দেবে ভেবেছিলো।

এখন একটু তৃপ্ত

ধার দেনা করেইবা, বিয়েটা তো হচ্ছে,

খুব ভাল ছেলে দিপ্ত।

হঠাৎ, ছিটকে পড়লেন কাঁচে,

বাসটা উলটে যাচ্ছে, পুল টা ভেঙ্গে

লাগলো কাঁচে মাথা, পুলটা গেলো ধ্বসে,

বাসটা মিশে গেলো নিচের পাঁক জলের সঙ্গে,

পাঁক জলে ভেসে উঠলো চটি জোড়া

আর কিছু কার্ড, অপর্ণা ও দিপ্তের বিয়ের কার্ড।

ক্ষনিকেই রক্তে ভেসে গেল নালা,

লাল রঙে রাঙিয়ে মুর্শিদাবাদগামী বাস।

মোবাইল জলের তলায় হাবুডুবু খাচ্ছে,

রিং বাজবে না আর, ভেসে উঠছে কিছু লাশ

ঘন্টা খানেক এভাবেই আটকে সড়ক,  ভাঙা সেই পুল।

গ্রামের মানুষ ছুটে এলো মোবাইল নিয়ে

ভিডিও করতে হবে যে, মানুষ মরেছে।

এদিকে মেয়ে চিন্তায়, ফোনে রিং হচ্ছেনা

বাবাকে সে ফোনে পাচ্ছে না।

সকালের সেই হাসি মুখ ভেসে ওঠে চোখে

মেয়ে তো! চোখের কোনায় জল ছেপে ওঠে,

প্রেসের ভিড় জমেছে,

বাস ডুবেছে, পাশের ঘরে নিউজ হেডলাইন

ভেসে ওঠে, মৃতের সংখ্যা ঊনত্রিশ,

নালার জলে ভাসছে বিয়ের কার্ড।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন