7. মাশকারা,,,,
আমি সেই মেয়ে,,,,
সুপ্রীতি বর্মন
আমি সেই মেয়ে যাকে দিন প্রতিদিন কানে কামড়ে বোঝানো হয়েছিল
যে পড়াশোনা শেষ করে যেদিন অর্থ রোজগার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবি,,,
আত্মনির্ভর ঠিক সেদিন হতে পারবি,,,
রোজগার করতে থাকলাম যান্ত্রিকতার ঘূর্ণায়মান চক্রে
যেখানে স্থির হয়ে নিজের কথা নির্লিপ্ত ক্ষণে একটু ভাববো,,
তা হল শোচনীয় অপরাধ,,,
কারণ এইসব এখন শোভনীয় একদম নয়,,,,
সহায় সম্বলহীন আপনজনের ভার ও দায়িত্ব কর্তব্য কাঁধে তোলাই
একমাত্র বাঞ্ছনীয়,,,,
অন্যদিকে তখন কুমারী রোদ্দুর অপহরণের ভয়,,,
বুকের মধ্যে সবসময় ঢেঁকির পাড় ভাঙে কি হয় কি হয়,,,,
কারণ বসে আছে তখন পথে ঘাটে চায়ের ঠেকে আড্ডা মারা উচ্ছন্নে বিলাসী হাওয়ার কতিপয় চ্যাংড়ার দল,,,
পরম সুখে ইভটিজিং এ ডাকে,,,
"এ ছম্মকছল্লো ইধার দেখ যারে,,, উফ ক্যায় মস্ত চীজ হ্যায় য়্যার",,,
হিংস্র লোলুপ হায়না,,,
তোমাকে লুটেপুটে খেতে চায়,,,
আর তখনি প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর আরো শক্তপোক্ত ভাবে তোমার চারপাশে গজিয়ে ওঠে,,,
তোমাকে আড়ালে আবডালে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়
যে যত তোমারই স্বভাবদোষ,,,
কেন পুরুষের প্রলোভন বাড়াতে
পড়ো ছোট ছোট জামা,,,
যাক তাহলে এখানেও আত্মনির্ভর হয়ে উঠা আর হলোনা,,,,
তারপরেও সে আত্মনির্ভর হতে পারলো না,,, বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা দমচাপা কষ্ট,,, ক্ষোভেকাতর যন্ত্রণা,,,
সামাজিক চাপ,,,
অনেক তো বড় হলো এবার একটা হিল্লে হলে ভালো হয়,,,
না হলে বাবা মা গত হলে হবে কি,,,
তখন ইচ্ছে করে জেনে শুনে চারধার থেকে বাঁধলাম ভালো রাখার মরণপন প্রয়াসে
স্বামী পুত্র সংসারের একচ্ছত্র নাগপাশ,,, শুধুমাত্র আমার আমিকে ছেড়ে
এক প্রগাঢ় চাপের কেন্দ্রের আকর্ষণে টানে,,, তাই আর নিজের মতন করে সংসার ছেড়ে আমাকে কোনদিন তিষ্ঠতে দেয় না,,,
সর্বক্ষণ যেন কি হয় কি হচ্ছে সংসারে অস্থিরমতি পাগলপারা,,,,
এক আমিত্ববন্ধ্যা রমণী,,,,
তারপরেও বহু কষ্টে বুক বেঁধে আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টায় মেতে উঠেছিল মেয়েটি
আর ঠিক তখন মাতৃত্ব পোড়ামাটির স্বত্তা একরাশ চক্ষুলজ্জার আত্মগ্লানির চাপ নিয়ে,,,জাঁকিয়ে বসে মেয়েলী স্বত্তায়,,,
আর বলে ওঠে লোকে,,,
কি বলবে দেখো,,,,যতদোষ মায়ের,,, ছেলেকে মানুষের মতন মানুষ করতে এতটুকুও সময় দেয় না,,,,
তারপর,,, ইতি মৃণালিনী না না আরো কিছুটা রেশ এখনো বাকি,,,
যদি ছেলে বৌ না দেখে কেয়ার করে তখন আগাছা লতা আশ্রয় নেবে বৃদ্ধাশ্রমে
তখনো ভয়ে ভয়ে থাকে আর আত্মনির্ভর হতে বার্ধক্য এর কোঁচকানো চামড়া স্পর্ধা দেখাতে চায় না,,,
ভাবে আর কটা দিন বা বাঁচবো,,,
তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে,,,
এখন শান্তিতে দুচোখ বুজতে পারলেই বাঁচি,,,ঐটুকুতেই আমার আনন্দ এই শেষ বয়সে এসে,,,,,,
তাই আর বোধহয় উপসংহারে কুমারী রোদ্দুরে পড়ে অকাল যতি,,,
আমি সেই মেয়ে,,,
তাই আমার আর সখ করে আত্মনির্ভর
হয়ে ওঠা হলো না,,,,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন