অণুগল্প: অশোকচক্র
সুপ্রীতি বর্মন
(বঙ্গজন ও বঙ্গমন পত্রিকায় জন্মাষ্টমী সংখ্যায় প্রকাশিত)
অমিতাভ একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার আর দেশের জন্য আত্মবলিদানে জীবন উৎসর্গ করতে সদাপ্রস্তুত। বিউটি নিয়ে একটি ছোট সুখী সংসার তার,,,বিউটি অন্তঃসত্ত্বা আর একমাস বাকি মা হতে,,,,,
হঠাৎ এক রৌদ্রদগ্ধ দুপুরে দরজায় সজোরে ধাক্কা মারে কয়েকজন দুষ্কৃতি মুখে কালো কাপড় বাঁধা ও হাতে তাদের চাকু।তারপর দরজা খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাথায় মারে আর অমিতাভ প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে যায় আর কান দিয়ে তার রক্ত গড়াতে থাকে। তারপর তাকে পিছমোড়া করে পিলারে বাঁধে আর ছুটে যায় লেলিহান কামার্ত চোখে লালসার জিভ নিয়ে বিউটির দিকে।
বিউটি চীৎকার করতে থাকে,,,,তারা তীক্ষ্ণাগ্র ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি বিউটির শরীর কাটে আর খাবলে খুবলে তার অঙ্গ যেন গিলতে থাকে হাত দুটো চেপে ধরে রেখে মাটিতে। বিউটি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে,,, আর এই নৃশংস নগ্ন ধর্ষণের সাক্ষী তার স্বামী তখন নিজেকে কাপুরুষ বোধে লজ্জায় ঘৃণায় জ্বলতে থাকে,,,, তার অন্তরাত্মা কুঁকড়ে মাটির সাথে মিশে যেতে চায়।
তারপর এই দুষ্কৃতি উগ্রপন্থি তারা অমিতাভ এর কাছে এসে বলে,,, শালা তোর খুব চর্বি জমেছিল না আমাদের গুরু কে ধরিয়ে দিবি আমাদের পেটের ভাত মেরে নিজের ঘরে ভোগ মারাবি,,, দেখ তোর চোখের সামনে তোর স্ত্রী কে ভোগ করে তোকে উচিত শিক্ষা দিলাম,,, তারপর তাকে বেধড়কা মেরে হাড়গোড় গুড়িয়ে দে ছুট পগার পার,,,,
কিছুক্ষণ পর মিলিটারি ভ্যান এলো তারা আম্বুলেন্স করে স্বামী ও স্ত্রী উভয় কে হসপিটালাইজড করলো। কিছু মাস যেতেই অমিতাভ একটু সুস্থ হলো কিন্তু গোটা শরীরে কিছু কিছু ফ্রাকচার ছিল।
তাকে খবর দিল বিউটি মা হয়েছে আর তার কোল আলো করে এসেছে সৌর,,, পিতা হবার খুশী আর ধরে না,,,, চোখের কোল থেকে তার জল গড়িয়ে এল,,, আবার সুখে দুজনে ঘর সংসারে যখন ব্যস্ত হাসপাতাল থেকে ফিরে,,, তখন খবরের কাগজের পাতা ধরে গুম খেয়ে বসে আছে খাটে অমিতাভ,,, বিউটি আসতেই ভয়ে লজ্জায় তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে সে ছোট ছেলের মতন। বিউটি বলে তোমাকে এইরকম মানায় না বলো তোমার কি হয়েছে,,, তখন খবরের কাগজ দেখিয়ে বলে এই সেই দুষ্কৃতির দল আবার আক্রমণ করার খসড়া আঁটছে শত্রু শিবিরে,,,, বিউটি বলে এই সেই মোক্ষম সময়,,, তুমি কষে ধরো হাল যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত হও,,,কিন্তু,,, বলে চুপ করে গেল অমিতাভ,,,,
বোবা মুখে নিথর শূন্যতার চোখে বলে উঠে অমিতাভ আর তুমি,,, বিউটি বলে আমার জন্য প্রতিবেশী আছে তারা আমার খুব যত্ন নেয়,,, কিন্তু তুমি যাও,,,,, প্লীজ,,, আমার জন্য,,, আমার স্বামী এতো দূর্বল তোমাকে মানায় না,,,
অমিতাভ যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত,,,,,বিউটির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে আমার পাগলী ভালো থেকো আর সৌরকে একটু আগলে রেখো,,, তারপর চলে যায় যুদ্ধক্ষেত্রে।
ওদিকে শত্রুপক্ষের শিবির আর এদিকে দেশের সৈনিক শিবির,,, মাঝখানে কাঁটাতারের দেশ বিভাজন,,, যেন আগাছার গোত্রনির্ণয়,,, তারপর এলোপাথাড়ি গোলাগুলিবর্ষণ,,, "এ কে ৪৭,,,মেশিনগান",,, অমিতাভের দৃষ্টি নিবন্ধ বন্দুকের গর্তে লক্ষ্য একদম স্থির,,,,,,
হঠাৎ তার চোখের সামনে উদ্ভাসিত জননী জন্মভূমিশ্চ তার তেরাঙ্গার আঁচল লেহেরিয়ে,,, আর হঠাৎ দেখে সেই তেরাঙ্গার মাঝে অশোকচক্র,,,,,
আরো খানিকটা বর্ধিষ্ণু হয়ে চাকার তলায় পিষে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে শত্রুদ্বারা তার স্ত্রীধন,,, আর চারপাশে একহাত জিহ্বা সম্প্রসারণে অভুক্ত কামদগ্ধ লালায় যত হায়েনার দল,,, হিংস্র থাবা উঁচিয়ে আছে আক্রমণ করবে বলে।
তখন সিংহের গর্জনে মাটিতে পৌরুষ থাবা মেরে "না",,,, বলে অমিতাভ চীৎকার করে ঘুরে দাঁড়ালো আর গুলি ছোটাতে লাগল,,, সব উড়ে ফুঁড়ে একাকার তখন,,, সিঁদুরে লাল মেঘে গুমোট যন্ত্রণা,,,, হঠাৎ অতর্কিতে একটা গুলি তার বুক কে ঝাঁঝড়া করে বেরিয়ে গেল,,, অমিতাভ রক্তাক্ত বুকে গড়িয়ে পড়ল মাটিতে চেতনাশূন্য হয়ে কিন্তু পড়তে গিয়ে শক্ত করে হাতের মুঠোয় ধরে নিল তেড়াঙ্গা কে।
তারপর ক্ষতদগ্ধ পুরুষশাসিত বক্ষে মাথা রেখে তার বুকে কিসব আলগোছে আঙুলের সংলাপে ফিসফিস করে বলে,,, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।।।।
আমি চাই আমাদের সৌর বড় হয়ে ওর বাবার মতন পুলিস অফিসার হোক,,, সাহসী পরমবীরচক্রে,,,,
ঐ যে কি বেশ গানটা তোমার মনে আছে,,,,
নানহা নানহা রাহী হুঁ,,,,
দেশ কা সিপাহী হুঁ,,,
বলো মেরে সঙ্গ,,,,জয়হিন্দ,,, জয়হিন্দ ,,,, জয়হিন্দ,,, জয়হিন্দ,,,,,,জয়হিন্দ
বঙ্গজন বঙ্গমন ত্রৈমাসিক,,,
বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা,,,,
ছাতনী-খেড়ুর ,পূর্ব বর্ধমান থেকে প্রকাশিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন