শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

উজান উপাধ্যায়


প্রসূতি সদন

উজান উপাধ্যায়

বুকচেরা কাঠের গন্ধ নিয়ে বনবাংলোটা অন্ধকার চেটে খায়, সব ঘরে আলোর নাচানাচি থেমে গেছে ঠিক যখন মেয়েটি গর্ভবতী হয়। হাওয়া শনশন নদীপাড়ে ভিজে বালি মেখে আগন্তুক আততায়ী শুয়ে থাকে।

তুষারপাত হয়ে গেছে। দেখতে পায়নি মেয়ে।

রাস্তার ওপারে কিম্বা সমুদ্রের শেষ বলে যেখানে একটি দাগ জোর করে কেটে রাখা। একটি ফেরারি পাখি আশ্চর্য রিঙটোনে হাতছানি দেয়।

মেয়েটির ভিতরে পিঙ্ক ব্লু ধূসর বাদামী রঙের পুরুষ অন্তর্বাস উঁকিঝুঁকি দিয়ে
গৃহস্থালি উপড়ে তছনছ করে বাড়িয়ে নেয় ভ্রুক্ষেপহীন ভ্রূণের বেপরোয়া ছটফটানি।

মেয়েটি চেয়েছে প্রসব করবে এমন শরীর যেখানে দেবদারু ছায়ার মতন ভিতরে নড়াচড়া করবে শেষের কবিতায় সাজানো পরশমণির লোভনীয় আগুনের জিভ।

সকলেই বাবার জন্ম দিতে চায় বলে ওপথে যায়নি তরুণী। যা পায়নি প্রেমিকের ঠোঁটে চোখে চিবুকে ও বুকে-
নির্জন এই বাংলোটায় রোজ রাতে প্রিয় ঘোড়াটির কাছে সেসব ইচ্ছে জানিয়েছে, যেহেতু সেইসব রূপান্তরিত অশালীনতা সন্তানের সম্ভাব্য ইশারায় খুঁজে নিতে একটি অশ্বমেধ খুব প্রয়োজন।

প্রাচীন প্রাসাদের ভিতরে যা কিছু রাখা ছিল, একটি চিরবিষণ্ণ কুমারী মাতৃশরীরে লালিত দুঃখবোধ, শতাব্দীর সবটুকু মোহভঙ্গের বিবর্ণ সমলয়-

টুকরো টুকরো গুঁড়ো কাচে মেয়েটির স্তন থেকে অবিচ্ছিন্ন নদীস্রোত, শিলালিপি এবং মায়াবী শোক গলিত ধাতুর মতো স্খলিত পাপের মতো প্রেমের নিঃস্বতার মতো - এক জন্মে তিনটি স্থানিক গান
স্বরলিপি হয়ে যায়।

মেয়েদের খুব ঝোঁক ছিল এমন প্রবঞ্চক ঠোঁটে, তাই এই তরুণী ক্ষমায় ঝরে যায় হতভম্ব ঘড়িটির সবকটা কাঁটা।

প্রেমিকের জন্ম দিতে গিয়ে হয়তো জতুগৃহে ব্যূহ পেতে নিতে হয়।

তবুও রমণে নিশ্চিত এক শোক ভালোবাসার যৌন বিপর্যয়ের কাছে নত না হওয়ার মত স্পর্ধায় প্রতিরোধ করে নেয় দুর্বার অমরত্বের নিশ্চিত ক্ষয়।

মেয়েটির শরীরে সবুজ কালো হরিণীর মুখ সাজিয়েছে জন্মান্ধ বলয়।

মৃত্যুর আগে আগে এইভাবে সঙ্গমের সুর
প্রণয়ের গ্রহণ রচনায় বিশুদ্ধ দগ্ধতা নিয়ে আবির্ভূত হয়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন