কাজী নজরুল ইসলাম,,,,
বিদ্রোহী,,,,
বলো বীর,,,
বলো উন্নত মম শির!
নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির।
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
আমি ধুর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী - সুত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা
ইন্দ্রাণী-সুত, হাতে চাঁদ, ভালে সূর্য
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণ-তূর্য।
কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যাথা-বারিধির !
ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক,
যুবরাজ, মম রাজবেশে ম্লান গৈরিক!
বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ।
আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর!
বঞ্চিত ব্যাথা পরবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের।
আমি যৌবন ভীতু পল্লিবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়ে স্বর্গ-মর্ত্য করতলে,
বোরবাক আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে!
আমি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প!
ধরি বাসুকির ফণা জাপটি,
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি!
আমি দেব শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়ে ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
আমি বিষধর কাল-ফণী!
ছিন্নমস্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি।
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে
আমি উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।
আমি মহা বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেইদিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেইদিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে, এঁকে দেব পদ-চিহ্ন!
বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!
আমি চির বিদ্রোহী বীর
আমি বিশ্ব ছড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন