কাব্যগ্রন্থ: আহ্নিকগতির কালশিটে রং,,,,,
কবি: সুতনু হালদার,,,,,
কাব্যগ্রন্থের আলোচনা,,,,,
সুপ্রীতি বর্মন,,,,
ক্ষুদ্র সংসারে জাগতিক পৃথিবীর আহ্নিকগতির রোজনামচা বিবর্তন//
ঘূর্ণন আর ফেলে যাওয়া অনিচ্ছাকৃত সম্পর্কের কালশিটে ঝরা ঘাম রঙ//
যেন বাতায়নের নতুন হাওয়া -১৯ বহন করে নিয়ে এলো।।
"আহ্নিক গতির কালশিটে রং",,,,এই পুস্তকের কালজয়ী স্রোতে,,, কবি সুতনু হালদারের কলমের ডগায়।।
গ্রন্থস্বত্ত্ব ও প্রকাশক: বোধিসত্ত্ব পাবলিকেশন
প্রথম প্রকাশ,,,, শ্রীপঞ্চমী, ২০১৮,,,,
"আহ্নিকগতির কালশিটে রং",,,,,,
"একপশলা বৃষ্টিতে রংচটা রোদের সোঁদা গন্ধে
চাঁদের আলো সন্ন্যাসীর মতো হেঁটে আসে এই জীবনে। জীবন একসময় পঞ্চভূতে মিশে যায় কিন্তু কম্পাঙ্কের দীর্ঘশ্বাস বিচ্ছুরিত হয় আমাদের মজ্জায়।
ক্ষয়ে যাওয়া বীতরাগ সমস্ত রাগিণীতে ঝংকার তোলে,
জীবন্ত অভিস্রবণ তর্জনীতে হিমালয়ের ঔদ্ধত্য শিখে লিটমাসের মতো একাকীত্বকে ভুলে যেতে চায়।
রঙীন তপস্যা ঢুলঢুল চোখের মৌতাত খুঁটে খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
সেলফির আড়ালে মুখোশের বিক্ষুদ্ধ ক্যানভাসে ফুটে ওঠে আহ্নিকগতির কালশিটে রং".....
পঞ্চভূতে মিশে যাওয়া ভবিতব্যে এই হাড়কঙ্কাল মধ্যবর্তী জীবন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে গিয়ে রংচটা যৌবনের ক্ষয়াটে রোদে একপশলা বৃষ্টি পেলেও সেই সোঁদা গন্ধে আদুরে আহ্লাদী চাঁদের পাগল প্রলাপে উন্নাসিক প্রেমিক সন্ন্যাসীর মতন হয়ে যায়। তখন কম্পাঙ্কের দীর্ঘশ্বাসে গুমোট মজ্জায় ক্ষয়ে যাওয়া বীতরাগে সমস্ত রাগিণীতে ঝংকার তোলে।
তর্জনীতে হিমালয়ের ঔদ্ধত্য এর পাঠ শিখে স্বীয় অহংকারে মদমত্ত এই সন্ন্যাস জীবন তখন একাকীত্ব কে ভুলে রঙীন তপস্যায় ঢুলঢুল চোখের মৌতাতে সঞ্চিত রতি খুঁটে খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
কিন্তু এতসব আয়োজনের পরেও মননের প্রয়োজনে জীবন্ত অভিস্রবণে নিজেকে একটু ভালো রাখার তাগিদে মুখোশ সেলফির আড়ালে থেকে যায় মনমরা ব্যক্তিস্বত্তা। নির্লিপ্ত ক্ষণে বিক্ষুদ্ধ ক্যানভাসে ফুটে ওঠে শাশ্বত চিরন্তন ধ্রুবসত্য,,,, সেই আহ্নিকগতির কালশিটে রং।।
"জন্মদিন",,,,,
"ধুয়ে যায় ওতে লেগে থাকা যাবতীয় উজবুক স্বপ্নগুলো। মানুষের শেকড়গুলো জন্মদিনেই একটু একটু করে গভীরে যায়, প্রতিটা জন্মদিন আসলে অস্তরাগের গন্ধমাখা নির্বাণ প্রত্যাশী"....
জরায়ুর প্রস্ফুটিত অঙ্কুরোদ্গম হল জন্ম। জন্মদিন যা স্বভাবতই বিশেষ একটি দিন প্রতি মানুষের জীবনচক্রের আবর্তনে। শুধুমাত্র সেই দিন কবির চোখে লেগে থাকা যত উজবুক স্বপ্নগুলোকে,,,, মৃতকোষের মতন,,, অবাঞ্ছিত ধূলোর মতন,,,, বাস্তবতার প্রায়োগিক পাতিত জলে ধৌত করে দিতে চান। ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলতে চান একেবারে।
যাতে প্রাক্তন গুমোট অবসাদের কালো ধোঁয়ায় অস্বচ্ছ যেন না হয়ে ওঠতে পারে কার্ণিয়াটা।
হতাশার চৌকাঠে কালচক্রে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঠোকড় খেতে খেতে যখন কারোর পিঠ চরম অসহায়তায় যখন দেওয়ালে ঠেকে যায় তখন সে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
তখন স্বল্প মাথাচাড়া চারাগাছের সাথে বন্ধুত্বের উষ্ণ আলিঙ্গনে সাবলম্বী হয়ে ওঠে। ওদের শিকড়ে শিকড়ে নিজেকে জড়িয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায়।
কিন্তু কবির আক্ষেপ চির শূন্যতার এক আস্ফালন একটা যতিচিহ্নে বিসর্গ প্যাশনে আটকে দমবন্ধ হয়ে আসে এটা ভেবে যে বয়োবৃদ্ধ হতে হতে মানুষের শিকড়গুলো একটু একটু করে গভীরে যায়। যেটা আবার বিপ্রতীপ আলিঙ্গনে অভিজ্ঞতার সঞ্চার করে। তখন অভিজ্ঞ কবি মহার্ঘ মূল্যের মর্মকথায় বিশ্লেষণ করে জন্মদিন কে,,,যে জন্মদিন হল প্রকৃতপক্ষে "অস্তরাগের গন্ধমাখা নির্বাণ প্রত্যাশী",,,,,এই ছাইপাশ জীবন গোঁজামিল ছেড়ে শুধু মুক্তি পিয়াসী,,,,
"যাপন",,,,,,
"কিছু জীবাশ্ম আবেগের গন্ধ আমার প্রতিটা ভাতের দানার মাঝে লেগে থাকে, আমাদের থেকে আমরা-আলাদার সূত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝে নিতে নিতে কোথাও কি সুনামির মতো উত্তাল হইনি!
বিছানার ব্যকরণগুলো কয়েকটুকরো আর্তিতে ভেঙে যায়, তোমার ছ্যুৎমার্গ....টেবিলের ওপার থেকে এপারে বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দেয় যুবতির ঔদ্ধত্য"....
সাংসারিক কলকব্জা শরীরে মনোমালিন্য এর অতর্কিত বিকৃত ঢেকুরে কিছু জীবাশ্ম গন্ধ(আবেগের) ভাতের দানার মাঝে লেগে আছে। ইচ্ছার পবিত্র আঁচে ছুঁতে চেয়েছে তোমার শরীর কোন এক বৃষ্টিস্নাত দিনে। কিন্তু মর্মস্পর্শী আজ পরিণয় যেন কোন বিলুপ্ত ইতিহাস। তাই আমরা আলাদার সূত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝে নিতে গিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তার করালগ্রাসে তোমাকে হারিয়ে ফেলার কালবৈশাখীর ঝড়ে কোন এক সুনামির মতন উত্তাল হয়ে উঠি। প্রেমিক মনে তখন স্বামীর আত্মার বিষাদ-অগ্নির মোচড় তখন পরিলক্ষিত হয়।।
তোমার ছ্যুৎমার্গে প্রেমের করুণ আর্তিতে বিছানায় সম্পর্কের ব্যাকরণ গুলো ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যেতে চায়। কিন্তু প্রকান্ড প্রস্তরপ্রতিম প্রতিবন্ধকতা হিসাবে অগ্নির লকলকে ঈর্ষায় যুবতির ঔদ্ধত্য জেগে ওঠে। যাকে তখন ভিজিয়ে দিতে চায় পরাগ মিলনের খুনসুটির বৃষ্টিকণা কিন্তু আত্মচেতনার স্থবিরতায় তা মুহূর্ত এর জন্য থমকে থাকে আর কবির তখন আত্মউপলব্ধি জেগে ওঠে,,, সেটা বোধহয় কোন ভ্রম,,, কোন ভুল।।
তাই কবির সহ্য করা দগ্ধ যাতনার মাটির সমীকরণ পাল্টে খুঁজে পেতে চায় দুজনের মাঝে তখন বিন্দু বিন্দু পরকীয়ার প্রসবণ।।
"পুতুলখেলা",,,,,,,
"মিথোজীবীয় সন্ধ্যাগুলোর সন্ধিবিচ্ছেদ করতে গিয়ে মোবাইলের মেমোরি ফুল লোড।
রথের দড়ি টানের হিংস্র সমবায়ে দধীচির মতো আত্মত্যাগে কখনো শীতল শিরশিরানির ছোবল।
দিনগুলো ক্ষমাসুন্দর চাহনিতে নকশি কাঁথার মতো দীঘল চোখের সূর্য আড়চোখে দেখে পরাগমিলনের খুনসুটি......
পুতুলের খেলাঘরের নৈব্যক্তিক আচ্ছাদন খুব প্রিয় ছিল, পুতুলগুলোর ভাগ্যিস কোন মন থাকে না"......
বিরহযন্ত্রণায় ক্ষতদগ্ধ উষ্ণ ছোঁয়াচে ব্যধিক্রান্ত কোন প্রেমিক (ভ্রমর) সংসারের কড়িকাঠ ভেদ করে নির্জনে একাকীত্বে কাঁদে। মিথোজীবীয় সন্ধ্যাগুলোর সন্ধিবিচ্ছেদে স্মৃতির জেল্লায় আবছা প্রিয়ার মুখচ্ছবি মেমোরি লোড করতে থাকে আপন খেয়ালে।
নৈঃশব্দ্যে স্বপ্ন গুমড় ভাঙে আর বুকের নীচে ঘন হচ্ছে প্রিয়াকে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত এ কাছে পাবার, তাকে নিয়ে একাত্ম হয়ে যাবার। সেখানে অনিচ্ছাকৃত সম্পর্কের টানাপোড়েনের আঁচে যেন রথের টানা কোন কষাদড়ি একপ্রকার হিংস্র সমবায়। আর কবির প্রেমিক আঘ্রাণ ঠিক তখন রূপান্তরিত হয় দধীচির আত্মত্যাগে যেন কোন শীতল শিরশিরানির হিংস্র ছোবলে। চরকার আবর্তনের ক্ষিপ্ত ক্ষুধায় তখন বাক-ফসলের বীজ। না বলা কথাগুলো তখন চোখের সামনে আরো বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।কিন্তু কথাগুলো ভঙ্গুর তাই চিরকালই ওরা ভাঙে।।
সামঞ্জস্যের আচ্ছাদনে যৌবনের দামাল রক্তে (তরল যোগকলা) ঘনীভূত আস্কারায় তখন অবাধ্য প্রেম। সারাজীবন ধরে কবির নখদর্পণে জ্যামিতিক আকার অবাধ্য হয়নি বরং অনেকটাই তা সংযত, সংযমে স্থিরতায় চলন শূন্য তাপাঙ্ক,,,, ফ্লাজেলীয় চলন হয়ে থেকে গেছে।
কিন্তু তবুও প্রাক্তন সেই ঘুমন্ত দিনগুলি এখনও বিরহী প্রেমিকের ক্ষমাসুন্দর চাহনিতে নকশি কাঁথার মতো দীঘল চোখের সূর্য আড়চোখে দেখে পরাগমিলনের খুনসুটি।।
তাই এখন পাগলপারা সময় শুঁকে পড়ে থাকা মৃতবৎ প্রেমিকের অভিমানের কুরুশ কাঁটায় অপেক্ষার চাদরে প্রত্যক্ষ হয় যে অনেক আগের ঝাউবনে ঢাকা ছোটখাটো পুতুলের খেলাঘরের নৈব্যক্তিক আচ্ছাদন খুব প্রিয় ছিল তার কোন এক সময় সেই শৈশবে। তার কারণ হয়ত একটাই,,, সেটা আজ চলমানশীল বাস্তব প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট যে পুতুলগুলোর ভাগ্যিস কোন মন থাকে না। সেটাই জাগতিক সংবেদনশীলতার একমাত্র প্রেক্ষাগৃহ হয়ে ওঠে।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন