আশ্চর্য খোলস
সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
((চন্দ্রগ্রহণ পত্রিকায় প্রকাশিত))
চন্দ্রমুখী এক্সক্লুসিভ
((প্রকাশিত শ্রীময়ী দর্পণ))
শিরোনাম:
Poetry Inscription Soliloquy Intimacy
৫....সম্পূর্ণ বিষাদের ভোর, আষাঢ়ের গ্লানি নিয়ে জেগে উঠছে
ইলেকট্রিক তার থেকে নিভে নিভে ঝুলে পড়ছে বিদ্যুৎ
আর আমার অসুখের হাহাকার কিছুতেই কমছে না।।
অসুখ দেখতে এসো চেঁচিয়ে বলছি, ঘাসজমি চেয়ে আছে লাঙলের ফলায়।।
যমুনার ঢেউ পিঠে ধাক্কা মারছে
খুলি উপড়ে দিচ্ছে আর আর্তনাদে বিরক্ত হয়ে এইমাত্র ট্রামলাইন দুমড়ে মুচড়ে দিলো পাগল।।
কী উদাসীন হয়ে আছে,
কী অসহ্য ধৈর্য হয়ে আছে বৈশাখী ঝড়।।
কাক খুঁটে খাচ্ছে ময়লা, খুঁটে খাচ্ছে শরীর।।
আমি হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছি তাকে, যাকে দিয়ে যাবো আমার রান্নার খাতা, আমার বিনুনী বাঁধার ঢং।।
ত্বকের শ্যাওলা নিয়ে, জরুল ও মেচেতা নিয়ে আমার এই খোঁজ আর ফুরোচ্ছে না।।
সমস্ত উৎসব আগুন হয়ে আছে, পাঁজর তুলে রাখছি হিমঘরে।।
##বিশ্লেষণ
##(( কাকবন্ধ্যা শুষ্ক জমিন বিষাদাগ্নির ঝুলে পড়া বিদ্যুতে দুমড়ানো মুচড়ানো অস্তিত্বে লেগেছে অসুখের হাহাকার।।
অসহ্য ধৈর্য এর বৈশাখী ঝড়ের ঔদাসীন্য জরুল ও মেচেতার গহ্বরে ভারাক্রান্ত ত্বকের সংস্পর্শে আজ যেন উৎসব অনাসক্তির আগুন হয়ে জ্বলছে তবুও হাড় হিম করা অনিশ্চয়তার প্রহরে আমার খোঁজ ফুরোচ্ছে না কিছুতেই।।))
৬.....কয়েকশো কোটি ঈশ্বর নিয়ে বসে আছি মাথায়
চোখের পাতায় আর বুকের খাঁচায় সেলাই করছি পাখি
আর সে এক রাক্ষস এসে গুলিয়ে দিচ্ছে হিসেব-নিকেশ।।
নিজেকে হত্যা করবো বলে কুঠার উঠিয়েছি, দাবানল জুড়েছি বুকে, দাউদাউ অস্তাচল আর ঘোরের দুপুরগুলো খোলামেলা বিছিয়েছে লাশ।।
আমারই খিদে খিদে পাপ, রোজ রোজ চোরাবালি ঝাঁপ। অনন্ত প্রদীপ আমি জ্বালাতে পেরেছি মাঝরাতে????
আমার ঈশ্বরকণা নিয়ে সে রোজ খেলা করে, বাঁচায় ও মারে।।
মৃত্যু সাক্ষাতে কী ভীষণ দস্যিপনা করে আমার খোলসে সে তলোয়ার দেয়।।
শুধু অগ্নি জ্বলে থাকে নিভৃত আশায়, মাথা পুড়ে যায় আর মন পুড়ে যায়।।
##বিশ্লেষণ
##(( পরব্রহ্ম অন্তরসত্য ঈশ্বরকণায় অন্তর্লীন হয়ে থাকা অস্তিত্বের কোরক।।
সামঞ্জস্য এর সংগ্রামে টানাপোড়েনের হিসেব নিকেশ গুলিয়ে যায় দশচক্রে যখন চোরাবালির ঝাঁপে জীবন্ত লাশ দেহ কোনভাবে মৃত্যু এর সাক্ষাৎ পায়।।
তবুও প্রখর আস্তিকতায় অগ্নিরূপা আশা সদা তার জাজ্বল্যমান ক্ষুধায় ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে মাথায় নিয়ে স্বীকার করে যে সে আছে।। ))
৭....আমি কী ফুরিয়ে গেছি মুহূর্ত এর অসতর্কতায়, ভাঙন ধরেছে কড়িকাঠে।।
শুধু এক কাঙাল রাখাল পিলসুজে রেখেছে আলো, দুর্নিবার আত্মদহন।।
কিছু কিছু বজ্রপাত মুঠোয় বন্দি করে পালিয়েছি বেদম আকাশে।।
ভেসে যায় মহাকাল মাসে বন্যা বন্যা ঘোর, আমার দ্বাপর-কলি,প্রখর।।
আমি কী ফুরিয়ে যাই ভালোবাসাপুরে????
শহর রঙিন করে ভেল্কিবাজ হেঁটে যায় দূরে।।
পিছু পিছু আমিও স্যাঙাত।।
সুতো দিয়ে মন টেনে টেনে চাঁদে চাঁদে বেঁধে দেয় আজ।।
তেষ্টায় শান দেয়।।
পেরেক ডুবিয়ে দেয় ভূমির গভীরে।।
মাটি চুরি করে তার সংসার গড়ে
আমি কী ফুরিয়ে যাই তার এই বেঁচে থাকা নাভির দুপুরে????
তার এই বাতাসিয়া ভোরে????
##বিশ্লেষণ
##(( মুহূর্ত এর অসতর্কতার ভাঙনে যখন মুক্তি ফুরিয়ে যায় তখন প্রখর আত্মদহনে অস্তিত্ব পুড়তে থাকে কাঙাল রাখালের প্রেমের পিলসুজে।।
প্রেমিকার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ফুরিয়ে যাওয়া নাভিদগ্ধ নিঃসঙ্গ দুপুরে যখন কৌশলে চুরি হয়ে যায় তার অলক্ষ্যে সংসারের মাটি আর তার থেকে অপরের আখের গোছানোর নিত্যতার ভর সূত্র সংস্থাপিত হয় পেরেকের ডুবে যাওয়া যন্ত্রণা নিয়ে মাটির শরীরে।।
যদি সহ্য ও সহনশীলতার উর্ধ্বে হয় সেই অসম্ভব সমীকরণ প্রত্যাশার তখন সে সব চুলায় দিয়ে অপরিণামদর্শী বজ্রপাত কে কঠিন মুঠোয় আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চায় আপ্রাণ চেষ্টায় যাতে কঠোর ও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে পারে তার অস্তিত্ব।।
তবুও ছ্যাঁচড়ার মতন সে সুযোগ পেলেই সব ভুলে ছুটে চলে তার পিছু পিছু স্যাঙাতের মতন নিজেকে ফুরিয়ে দিতে সেই রঙিন নেশা বিক্রি করা ভেল্কিবাজের কাছে।।
সেখানেই রয়েছে তার উচ্ছন্নে চলে যাওয়ার ইচ্ছামৃত্যু বা মরণ।।
৮.....আঁচলে বেঁধেছি যত ঢেউ, যত দুঃখজল
গড়িয়ে পড়া কান্না থেকে তুলে নিয়েছি আলো, শহরের পর্যাপ্ত বিকেল।।
অসমাপ্ত দিনে আমাদেরও ক্লান্তিবোধ হয়।।
আমরাও আষাঢ়ের শেষে কোনারক মন্দিরে এলে, নামিয়ে আনি যক্ষ যক্ষ রাত।।
কীভাবে যে নেমে আসে ঠোঁটে ঠোঁট
কীভাবে যে টেনে ধরে বেণী
আমাদের গর্ভ গর্ভ খেলা
ছলছল ধুয়ে মুছে সাফসুতরো বেলা।।
দেওয়ালে আটকে আছি, পাথর চিতোনো
আর আছে শ্যাম-মোহ তার, বাঘনখ থেকে তার ঢের বেশি ধার
ছিঁড়ে যাচ্ছে সুর।।
আমি তার প্রখর দুপুর।।
##বিশ্লেষণ
##(( রমণীয় আঁচলে সংযমী প্রখর দুপুরের রৌদ্রদগ্ধ ঘাম উদ্বিগ্ন ঢেউ কঠোর হয়ে বেঁধে রেখেছে সে তবুও বার বার টেনে হিঁচড়ে চলতে থাকা যা হোক করে এই অসমাপ্ত শূন্যতার জীবনের কোনারক চক্রের গতিশীলতায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে তার অবসাদের ক্ষয়াটে পাঁজরের ক্লান্তিবোধ।।
তবুও সে সকল কিছু কে অগ্রাহ্য করে কোন অস্পৃশ্য যক্ষ রাত উজাগর থাকে তার আত্মস্থ ক্ষুধার অশরীরী কিংবা প্রেতযোনি।। তার গর্ভ গর্ভ খেলায় সে সর্বক্ষণ নিমগ্ন।।
তখন সঙ্গম শুদ্ধিস্নানের স্রোত আছড়ে পড়ে পাথর চিতোনো স্থবিরতায় সেই নিষ্প্রাণ পার্থিব শরীরে যার মগ্নচৈতন্যে শুধু থাকে শ্যাম মোহ ঘোর।। ))
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন