রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯

অজিত রায়


নারী কী আমি জানি না

অজিত রায়

.............................

সেক্স একটা অর্গানিক ট্রুথ।  আহার, নিদ্রা আর মলসাধনের মতই নিখাদ শরীরচর্চা।  কিন্তু কপুলেশন বা মৈথুন বা তসলিমার দি গ্রেট সরাফমামু যারে কয়েছেন 'ড্যাস-ড্যাস', সেটি ভদ্দরপুঞ্জে সহজ উচ্চারণ নয়।  কেননা এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অ্যাসটোনিশমেন্ট আর ভ্যাজাইনাল সেন্সিবিলিটি।  যে কারণে এত জরুরি একটা কাজ আমাদের অন্যান্য জৈবিক কারবার থেকে বেপোট হয়ে গ্যাছে।  এটা ওই ভদ্দরপুঞ্জের টুলোদের কারসাজি।  ওরাই সামাজিক ট্যাবু ম্যানুফ্যাকচার করেছে।  শ্লীল-অশ্লীলের মধ্যে ভিড়িয়ে দিয়েছে কোঁদল।  ওই কোঁদল আর তার অ্যাডহিরিং লুকোচাপার দরুন এদেশের ফিল্ম এবং সাহিত্যেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, যৌনতা দেখানো হয় পারভার্টেডলি।  বলতে পারো, যৌন বর্ণনা বা ছায়াকরণের ক্ষেত্রে মোটামুটি পর্নোগ্রাফিকেই উল্টো ছাঁদে সার্ভ করে আসছেন এ দেশের বেশি ভাগ রাইটার-ডিরেক্টররা।


আমার সমস্ত উপন্যাসেই 'নারী' পুরুষের ইন্টেলেক্ট থেকে আঁকা।  কিন্তু একজন বখাটে খানাখারাব হলে কি নারীদেহের মহার্ঘ পার্টসগুলোকে আমি অন্য চোখে দেখতাম?  হয়ত, একদমই না।  এ ব্যাপারে ভদ্দরলোক বলো, ছোটলোকই বলো, সব মিনসের এক রা।  মাথার শিরোজ থেকে গোড়ের পদরজ, একটা হোলদামড়ি নারীর কী-ই না ভাল্লাগতো কালিদাসের!  তবে আমার-মতো উনি কতখানি সাধুলোক ছিলেন, খটকা আছে।  সাধুমণ্ডলে নারীর অষ্টোত্তর শতনাম।  শঙ্খিনী, পদ্মিনী, চিত্রিণী, হস্তিনী ----- এসব তো মানুষের নিজস্ব এলেমে হয়নি, খোদ বিশ্বকর্তা নিজের হাতে গড়ে দিয়েছেন।  ফের এদের মধ্যে শঙ্খিনী আর পদ্মিনী হলো 'আইটেম' বিশেষ।  তেনার 'অন্তিমের মার'ও বলতে পারো।  একা তুমি কেন, বাইবেলেও বলেছে, নারীই বিধাতার শেষ সৃষ্টি।  'হে শুভদর্শনা', অশোক ফরেস্টে সীতাকে দেখে রাবণ কেলিয়ে গিয়ে বলছেন, 'আমার মনে হয় রূপকর্তা বিশ্বনির্মাতা তোমায় রচনা করেই নিবৃত্ত হয়েছেন, তাই তোমার রূপের আর উপমা নেই।'  অথবা, ঈভার প্রতি মিল্টন :  'ও ফেয়ারেস্ট অফ ক্রিয়েশন, লাস্ট অ্যান্ড বেস্ট / অফ অল গড'স ওয়র্কস'।


বাংলা সাহিত্যেও নারীর উপমা যে একেবারেই নেই, সেটা বললে বাওয়াল হবে।  তবে আমি আমার কথাই বলব।  আমি মৃণার বুকে কান পেতে শুনেছি সমুদ্রের কলকল।  নারী সমুদ্র ছাড়া আর কী, বলো!  হোক নোনা।  কিন্তু নোনা থেকেই লোনা।  লোনা থেকে লবণ।  লবণ থেকে লাবণ্য।  কত নুন খেয়েছো মৃণা!  সব নুন কি তোমার দেহে?  আর খেয়ো না।  এতে সৌন্দর্য হারায়।  অবিকগুলি খসে-খসে সহসা খোয়ায়।


সত্যি, এক বিশাল মহাযোনি পয়োধি এই নারী।  আর পুরুষ কেসটা হলো, অই উষ্ণু মাংসল অলীক পাথার-কিনারে বাল্বের ছেঁড়া ফিলামেন্টের মতো অধীর কাঁপুনি সহ দাঁড়িয়ে থাকা পৌনে ছ'ফুট লম্বা একটা হাইটেন্ডেড ও ব্যবায়ী পুরুষাঙ্গ মাত্র।  মাইরি একটা কথা কী জানো, খুব কৈশোর থেকে একজন পুরুষ তার যৌন-অহংকার  নিয়ে তিল-তিল করে গড়ে ওঠে, স্রেফ, একজন নারীকে জয় করবে  বলে।  কিন্তু সে কি সেই কাঙ্খিত নারীকে পায়!  পরিবর্তে যাকে পায়, তারও তল পায় না।  কী যে চায় মৃণা, মহা ধাঁধা।  একেক সময় মনে হয়, কী যেন খুঁজছে, অবিরত।  ওফ, টস করেও বোঝা দায় এই মেয়ে জাতটাকে।  একেক সময় খটকা জাগে,নারী এক হিংসাত্মক ও নাশকতামূলক শিল্প।  নারী মৃত্যুর বিজ্ঞান।  ডেথোলজি।  আচ্ছা, এ নারী কে?  এ দিনে এক, রাতে আরেক!  এ নারীকে সত্যিই আমি চিনি না।  পরিচিত দায়রার যথেচ্ছ-নারীর কাছে কোনোকালেই বিশেষ যাচনা ছিল না আমার।  আমি এমন নারী খুঁজিনি যে শুধু ঘুমোতে আগ্রহী বা গামলা-ভরা খাদ্যে।  নারীকে নারীর মুখ বা নারীর চোখ মাত্র আলাদা করে চাইনি, কেবলি।  চেয়েছি টরসো মূর্ধা সৃক্ক নোলা কল্লা সিনা রাং নিতম্ব পয়োধর নাভি যোনি নবদ্বার সম্বলিত একটি পূর্ণাবয়ব নারী, যাকে স্পর্শ মাত্রের লহমা থেকে শব্দের স্রোত ধেয়ে আসবে বেবাক এবং প্রতিরোধহীন।  স্ব-পরিচয়হীনা, জন্মহীনা, ইতিহাসহীনা, নিয়তিহীনা সেরকম কোনও নারী আজও আমার উপজ্ঞার বাইরে রয়ে গেছে।  দ্য বেস্ট রিলেশান বিটুইন আ ম্যান অ্যান্ড আ উওম্যান ইজ দ্যাট অফ দ্য মার্ডারার অ্যান্ড দ্য মার্ডারড।  দস্তয়ভস্কির কথাটাই কি তবে মোক্ষম?  নারী পুরুষকে হালাল করবে, তার আগেই নারী বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত-সব বাহারি শব্দঘোঁটের বিছেহার জোর করে লাথিয়ে ভেঙে ফেলা দরকার যদ্বারা উদ্ঘাটিত হবে নারীর মৌল স্বরূপ।


নাঃ।  নারীকে সঠিক ডিফাইন করতে পারছি না বলে নিজেকে ভীষণ ইরিট্যান্ট লাগছে।  কলমের মুখে খাপি এঁটে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।  এলইডি-প্লাবিত বিছানার ওপর 'আমার' নিজস্ব নারীর সযত্ন-রক্ষিত দুধে-আলতা ডালপালা।  একটা উদ্ভট চেতনা আমার অসংযত মানসিক স্টেটকে পরাভূত করে ক্ষণিকের জন্যে হলেও স্বপ্নে দেখা এক দুর্বোধ্য নারীর দিকে ছুড়ে দিল আমায়।  আমি দেখতে পেলাম রানী আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ---- রানী!  কমল ছুটে গেল।  ছুটছে।  কমল ছুটে যাচ্ছে, অই। .... তারপর অন্ধকারে, তীব্র অন্ধকারে, নিজের মুখ আড়াল করে, স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে, সে, ঢুকে গেল দুর্বোধ্যতর আরও এক নারীর স্বপ্নে।  ....


নারী কী, আমি জানি না।  এই যে আমি নারীকে লিখতে পারছি না, আমি বুঝি, শুধু একটি অপঠিত নারীর ঈপ্সিত অলঙ্কার ও তার নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষা কক্ষ থেকে কক্ষান্তরে, নিস্ফল শূন্য বিহার-সম, আমাকে ক্রমশ ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শায়িত, দীর্ঘ বৈচিত্র্যহীন, একঘেয়ে এক নারীর দিকে।


আমি যে লিখতে পারছি না, এ আমার অভিজ্ঞতার হাহাকার।  নারী বিষয়ে কোনো প্রিফিগারই তৈরি হয়নি আমার মনের স্লেটে।  এই মুহূর্তে আমার ধারেকাছে কেউ নেই, যে আমার সহায়।  কে এই শায়িত রমণী?  কী তার পরিচয়?  যে নারী আমার অন্বিষ্ঠ, যে আমার সোনার পাথরবাটি, সেই কি এ?


আমি যে লিখতে পারছি না, আমি জানি, এ আমার যৌন অতৃপ্তির প্রতিদান।  এক নিরন্তর পাপ ও তার জিন আমাকে অতৃপ্ত রেখেছে। ঐ জিনই আমাকে লিখতে দিচ্ছে না।  আমি লিখতে তখুনি পারবো যখন এই শায়িত ধূসরিত বহুধর্ষিত নারীটিকে আমি সমগ্রভাবে এবং ভরপুর পাবো।  শুধুমাত্র অভিজ্ঞান দিয়ে নারীকে গর্ভবতী করা সহজ কিংবা সমাজ-অনুমোদিত উপন্যাস।  অথচ যে-সৃষ্টি আমি দিতে চাইছি, যে নির্মাণ, তাতে স্রষ্টাকে সর্বাগ্রে হতে হয় হারমাফ্রডাইট, পক্ষান্তরে উভলিঙ্গ।


আমি নিজেকে নিজের প্রেক্ষিতে এবং তোমাকে তোমার অধিধ্যানে সুসম্পূর্ণ জেনে নিতে চাই মৃণা!  তুমিই কি সেই, যা আমার অন্তরাত্মার বহির্বাস?


মৃণা, তুমি আমাকে মাদারলি আদর করো।  এই আমি চোখ বুজলাম।

উজান উপাধ্যায়


আমার দুজন প্রাক্তন প্রেমিকা

উজান উপাধ্যায়


ঠাকুরদার সামনে ঘোমটা খসতোনা ঠাকুমার , সুখদাসুন্দরী -আমার সামনে খসে যেত ঠাকুমার গায়ের গন্ধ , রাত্রিতে এক বিছানায়-আমি তখন এক থেকে চোদ্দো গুনেছি -জানলায় উঁকি দিত জাম ও জামরুল গাছের পাতারা।

প্রায় অক্ষরজ্ঞানহীন রাতে ঠাকুমা গল্প বলতো বাবার ছোটবেলার , বাবার বটগাছ হয়ে ওঠার গল্প। ঠাকুরদা হাসতেন -তৃপ্তির ঢেঁকুরে এত খুশি , আমাদের বাড়িতে প্রতিটি ঋতুর ফুল , পাখি আর আত্মমগ্ন নদীরা আসতে , সারাবছর ওদের জমাটি আড্ডায় আমাকে ঠাকুমা চিনিয়ে দিত -নিশ্চুপ ঝাউপাতার ভিতরে কিভাবে প্রেম বাড়ে ছায়ার দৈর্ঘ্যের সাথে আবার ছোট ছোট খন্ডে ভেঙে ছড়িয়ে যায় তুলসীবেদিতে।

কবিরাজ ঠাকুরদার বিশল্যকরণী তৈরির মূল উপাদান ঠাকুমার চোখের ভিতরে রাখা ছিল , হামানদিস্তায় কিভাবে গুঁড়িয়ে যেত নৈঃশব্দ্যগহীন --প্রেমিকা কতটা নীরব হলে বাড়িতে আরোগ্য আসে বধূসাজের প্রসন্ন ঘেরাটোপে-কখনো কখনো জল খেয়ে রাতের ঘুমডাকা দিনগুলোতে দেখেছি ঝুলে থাকা অন্ধকারের স্তন --ওখানেই পাহাড় জন্মেছে -ওখানেই পিতামহ একদিন সাঁকো পার হতে চড়েছেন বৃত্তস্পর্শকের ছোঁয়াচ রক্তবাহে তুফানিয়া এনে।

স্বর্ণময়ী , আমার দিদা -গম্ভীর পন্ডিত সত্যরঞ্জন বাবু -আমার মাতামহের প্রবল ব্যক্তিত্বও যে কোমলতায় গৌন হয়ে গেছে। মায়ের ঠাকুমার কাছ থেকে পাওয়া সব কুসংস্কার , প্রবচনশিক্ষা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতো দিদা।

আয়তো সোনা -বলে ডাকলেই ছুটে গিয়ে আঙুল চাটতাম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাঁধুনিরা হিমশিম খেতো সেসব রান্না একবার চেখে নিলে।

আমার দুইপ্রেমিকা , দু দুটো পাখির চোখে ছায়া রেখে গেছে , আজও খুব দুঃখ পেলে নৌকা বেয়ে চলে যাই , যেখানে ওদের খুনসুটি , দুইবোনের হাতে উল কাঁটা , বুনে চলা অগুনতি শোয়েটার --আমার জন্য --

দুজনের চিতায় আমার সহমরণ হয়েছে দু দুবার , এখন যে ধোঁয়া ধুলো , আত্মজাকে নিয়ে হেঁটে চলা , আকাশের কার্নিশে রোজ ওদের চুম্বনেই অন্তরমহলেবেড়ে ওঠে কাঁধে রাখা মাটির শিকড় -গভীরের কলঘরে , শীতলক্ষ্যার নাভির ভিতর।

আমার ফেলে আসা ঠিকানায় রোজ রোজ ওদের চিঠি আসে --অন্ধকার গভীরে না গড়ালে সে সব প্রেমের অক্ষরে বৃষ্টি আসেনা।

তাঁবু মই আর লবনাক্ত দৌড়ে ক্রমাগত ভিজে ওঠা দু জোড়া ঠোঁটে আমার বার্ধক্যের অপেক্ষা।

আমার প্রাক্তন প্রেমিকারা , আরও যারা যারা , এই দুই বুকেই পরিপূর্ণ হয় , যথাযথ লাবন্য কুড়িয়ে পেলে। জাহাজ ভর্তি শোয়েটার আর নারকেল চিংড়ি , পটলপোস্ত রান্না হয় নন্দনের পারিজাত ঠাসা উনুনে উনুনে।

পঙ্কজ কুমার সরকার


উজাগরী // পঙ্কজ কুমার সরকার

কালো বেড়ালের হলুদ মণিতে যতটা ভয়,
সাপের লেজ ততটা দীর্ঘ নয়,
ততটা গভীর নয় তার বিষ থলি  ;

ক'জন বোঝে কেন এ সব কথা  বলি !

ক'জন বোঝে
ক্ষমা ঠিক কতদূর দুর্বলতা ?
ক'জনই বা  বোঝে--
আত্মগোপনে  থাকা কতটা উচিৎ ;
কিম্বা, কতটা  খুঁড়লে গর্ত,
                 শক্ত হয় বাড়ির ভিত ...

তুমি হয়ত ভাবছো --
কী লাভ এ সব তত্ত্বকথা বুঝে ?
আমি কি বানাব বাড়ি !
না কি আমার কখনও
          প্রয়োজন হবে ক্ষমার  !

একান্তে বলে রাখি ---
তোমার এ ভাবনাও অমূলক নয় হয়ত ;
তবু, গোলাপকে যারা প্রেম বলে জানে ,
অথচ তার কাঁটাকে ভাবে অবান্তর,
তারাও একদিন বুঝবে --
পাপড়ির সাথে গোলাপের
কাঁটাটাও কতটা সংগত...

তারাও বুঝবে -- ভালোবাসা গভীর হলে --
প্রতীক্ষাও কিভাবে মধুর হয়ে ওঠে ;
বুঝবে, কতটা প্রযত্ন পেলে --
কাঙ্ক্ষিত বর্ণ গন্ধ ফুল হয়ে ফোটে !

বুঝবে,
 আমাদের যে অর্জিত স্বাধীনতা
             তাও কোন বিমূর্ত বিষয় নয় ।
গোলাপের মতো সেও এক মূর্ত বিস্ময় !
উপরে উপরে তার পতাকার  ঘটা ;
অথচ বেদিমূলে লুকোনো রয়েছে
শত শহীদের রক্ত আর
               দেশ ভাগের উদ্বাস্তু কাঁটা !

বুঝবে , আমাদের  স্বাধীন দেশের মেয়রা
এখনও কতটা  শিকড়হীন,
এখনও তাদের  মন নয়
শরীর নিয়েই কথা হয় !

ভালো মেয়ে হয়ে ওঠার সস্তা মোড়কে ঢুকে
তারা অতি অনায়াসে
অহল্যা সীতা-পাঞ্চালী হয়ে যায় ;
খোলসটা কিছুতেই এড়াতে পারে না !

তাই তো মেয়ের জন্ম মানেই
বাবার কপালে অজস্র ভাঁজ,
সংসারে নেমে আসে  সমূহ বিপদ -লাজ ,

এখনও তারা যেন
আনমনা কোনো কিশোরীর
আপন খেয়ালে গাঁথা বুনো ফুলের মালা ;
কোন পুজোয় লাগে না ,
অথচ বুকে করে বয়ে বেড়ায়
সূঁচের আঘাত,  সুতোর যন্ত্রণা...

কিম্বা তারা যেন
কোন এক পোড়ো বাড়ির বেড়ার ধারে
                     আপনি গজিয়ে ওঠা লতা ,
মধু খেয়ে যায় মৌ মাছি,
ফল খেয়ে যায় -- বউকথাকও
অথচ মনে মধ্যে লুকিয়ে রাখে
 অযথা প্রচুর অশ্রু বিধুর আত্ম যাপন কথা...

আমাদের এদেশের মেয়েরা
জন্ম থেকেই জানে ---
পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহি পরমংতপঃ
অথচ সেই পিতাও
তাদের মন বুঝতে চাননি কখনও,
যদি চাইতেন  তারাও এই জীবনেই
সুপ্রীতি বর্মন কিম্বা মেরি কম হতে পারত. ..

কিন্তু হয় না,
হয় না বলেই প্রতিটা মেয়েই একদিন
আত্ম কেন্দ্রের সন্ধানে স্বপ্নের দরজায় --
কাসার থালায় দুধ পুকুরে আলতা ধুয়ে --
প্রবেশ করে এক নতুন ঠিকানায় ,
সেখানে এসে তারা ভাবে --
এখানেই  শিকড় ছাড়ব আচ্ছা রকম,
এখানেই ভাগ ভাগ করে নেব
সদ্য আপন কারো  বিছানা বালিশ ,

অথচ দু'দিন যেতে না যেতেই
সে বাড়িটাও  তাদের বুকে জমিয়ে তোলে
হাজারো নালিশ,
মধ্যে  পড়ে বর্ণ হারায়
ও বাড়ির তত্ত্বে পাঠানো নেল পালিশ...

বুঝতে পারে, তাদের শীতার্ত সিঁথিতে
বসন্ত বাহার হয়ে ফুটেছে যে সিঁদুর গোলাপ
তারই নীচে লুকিয়ে রয়েছে
 হাজার নিষেধের  কাঁটার প্রলাপ !  

সেই সব কাঁটায় কাঁটায় ভয়
ভয়ে ভয়ে অব্যক্ত যন্ত্রণা ;
স্বপ্ন আহ্লাদ  দু' দিনেই  উধাও !
কোথাও মেলে না মুক্তির মন্ত্রণা ....

দেখে  ; তাকে সন্তানবতী করেছে যে পুরুষ,
সেও মনে মনে বিকিয়ে আছে অন্য কাথাও  ।

কাঁটার আগল  ভেঙে বেরোতেও
মেলে না  সামান্য প্রশ্রয় !

ঘরে-বাইরে সন্দেহ তিরে
কেবলই বিদ্ধ হতে  হয়, দ্বিগুণ ব্যথায় ।

যে বাড়ির মাঙ্গল্যে তারা ব্রত রাখে
নির্জলা উপোস করে, দুধ কলা দেয়,
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালে তুলসি তলায়...
সে বাড়িও ক্রমে ক্রমে
তাদেরই বুকে  জমিয়ে তোলে
অবিশ্বাসের অন্ধকার !

অথচ
সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ,
সংসারের ছেঁড়া বোতাম গুলোকে
তারা সেলাই করতে বসে,

ঘুম ঘুম চোখে
আঙুলে সূচের খোচা খেয়ে ;
আৎকে উঠে  শুনতে পায়,
হৃদপিণ্ডের অলিন্দে ব'সে ব'সে
কারা যেন, আজীবনের অব্যক্ত --
ব্যথার উপর হাত রেখে বলছে -- ইস্ !

ঠিক তখনই তাদের বুকের খু-ব গভীরে,
জেগে ওঠে এক অমোঘ উচ্চারণ ---মা...

আজীবন সঞ্জাত ব্যথার  মধ্যে তারা যেন
হঠাৎই শুনতে পায়
এক জলদ গম্ভীর মাতৃ বন্দনা .....

মনে হয় , বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠ বেয়ে
নেমে আসছে এক অলীক ভোর....

সেই বন্দনার মধ্যে
অপরিচিত এক প্রাচীন রমণী
অতি মৃদু কণ্ঠে  বলে চলেছে --
ও মেয়ে ভয় পেওনা ,
আশারা এখনও মরেনি --
সত্ত্বারা  জেগে আছে...

               ----------------------

সন্দীপ পিপলাই


#বেশ্যার_প্রদীপ:-

           #সন্দীপ_পিপলাই


      কুকুরের গ্রীবা....
  আঙ্গুলের নখে ব্যাবিলনী হিংসা
       কচি শরীর ঘিরে জিভ লকলক
            ফুটো ছাদে মেহগনি লিপ্সা
                    উঁচা হয়ে স্তনের বোঁটা
     চোষ দেখ সমাজ এক বঞ্চিত ছিবা।

 লিঙ্গের আগুনে গুঁজে দে বোধের মুখ
               সবটাই কামনার কায়া
         যুগান্তর ধংসের পোষা মাগী...
   তুই আমি অলিখিত কুঞ্চিত ছাগ।
       বলির রক্তে গৌরবের চিতা
      নিষ্প্রাণ গতিশীল অবাক বিস্ময় !
     কি মজা মানব আমি
   পরাধীন হাতের নিচে স্বাধীন ঝান্ডা,
          গণতান্ত্রিক চার অক্ষর।

  ভোগের বাটিতে চর্চিত নেশা
       দিবসের আড়ালে কুপিত শূকর...
   পর্দা খসা সতীত্বের উরুর ফাঁকে, সামাজিক স্থাবর।
   বিষ দাও অমৃত পচা লেবুর ছত্রাক...
       সাপের দাঁতে সবুজ পরাগ ,
             গরল সমুদ্রে পৃথিবী আবৃত। সাজানো প্লেটে রঙ্গিন জীবন,
      অংক কষে শিখর ছোঁয়া ---
    শুকনো বীর্য ফেলে প্রতিপালন
       জনগণের গ্রাফ বেশ্যার প্রদীপ ...

সন্দীপ পিপলাই


#নগ্ন_মানচিত্র

      #সন্দীপ_পিপলাই

ফেলে এসেছি লাবণ্য পূর্ণ মরীচিকা ...
     কুয়াশা আবৃত ইতিকথা পুড়িয়েছি স্লোগানে দেওয়া মিথ্যের আগুনে !
   আরাম কেদারা উপড়ে ফেলে হেঁটেছি গুণিতক মৌনতায় --
 মুখোশ পড়ে রোজ খেলি পাশা ,
           হারি , জিতি কাগুজে উষ্ণতা
     বান্ডিল ট্যাঁকে আঁকি সফলতার সিঁড়ি !

          বিক্রি হয় সত্তা , শরীর , বিবেক ....
  পুঁজিপতি কারখানায় ভক্ষকের রক্তবীজ---
          শোষণে গেলে জীবনের উষ্মা , পড়ে থাকে সাধারণ জীব ....
       পেটের মখমলে ক্যাকটাস গুঁজে রোজ পথ চলে আপামর  !
    বিছানা বদলায় সতীত্বের গর্ভ ...
   মাংসের দামে লেখা হয় ক্ষুদার গদ্য ,
           উচ্চবিত্ত গুলশানে রোজ আতর স্নানে সেজে ওঠে বিকাশের চালচিত্র !

     সভ্যতা !
     অক্ষরের আড়ালে থাকা চিৎকার ,  অবলুপ্ত , অদৃশ্য , বহিষ্কৃত সত্য !
    নগ্ন সমাজ , নাঙ্গা নীতি , তোষণ মেনে সমাজনীতি ---
        অর্থের পাল্লাতে মাপা জীবন !
রাজার নীতি চিবিয়ে খায় গণতন্ত্রের দালাল
         উচ্ছিষ্ট লেহনে গর্বিত জনগণ , রাতের গভীরে খুঁজে নেয় বন্দা প্রেম ।
        মালতী বুকে ঢেকে রাখে সহস্র বিপ্লব , বীর্যের বাঁধভাঙা স্রোত ....
       কতদিন নরম খাঁজে , উষ্ণ আছে খুঁজিনি বুকের অনুভব --এসো মোর প্রিয়া !

   আগামী খোঁজে তার ইতিহাস...
       খাবলানো শরীর জুড়ে ভোগের নেশায় মাতোয়ারা শাসক !
               চিতার আগুনে পড়ে রয় মনুষ্যত্বের নগ্ন মানচিত্র ...

আবদুস সালাম


প্রেম

আবদুস সালাম
 

স্রোতের টানে নিরন্তর  ভেসে যাওয়া

 অন্ধকারের ভিড়ে নিমন্ত্রিত যুদ্ধ ক্ষেত্র
 পাড় ভেঙে যায়
 বিনম্র অন্ধকার হাতড়ে জাপটে ধরি দাঁড় ভাঙা নৌকা

 বালুচর ডিঙিয়ে রাত ভোর হয়
 হাবুডুবু খায় রক্ত মাখা ভোরের নিশান
 চিৎকারে কেঁপে ওঠে অমোঘ বধ‍্যভূমি

 বিরুদ্ধতার নিশান ঝুলছে সংসারে
 সবুজ ঘাসে ঝলসে উঠেছে বিষন্ন মশাল
 সময়ে অসময়ে ছুঁড়ে ফেলি চিত্তশুদ্ধির আরক

দায়িত্বহীন  সেতার তোলে ঝংকার
 হাততালির সংলাপে পান্ডুলিপি ভরে যায়
নিমন্ত্রিত সংসারে অনিমন্ত্রণ ঢুকে পড়ে

অসময়ের বুকে প্লাবন ঢুকে পড়ুক সমৃদ্ধির
 স্নিগ্ধ সকালে পার হয়ে যাবো উৎকন্ঠার উপকূল


ফ‍্যাশন
আবদুস সালাম


আদিম পৃথিবীর দরজায় সাঁটা ছিলো না বিজ্ঞাপন ।কি জানি সে সময় ধর্ষণ নিয়ে সভা বসতো কিনা বিচার সভায় ।নুহুনবী,মূসনবী,ঈষানবী ,কৃষ্ণ যুগটা কেমন ছিল?
 প্রেমের পাঠশালায় ক্রিয়া পদগুলি বিষাদ ও চাঞ্চল্য ছড়ায় ।ইতিহাসের স্তব্ধ পাতায় আঁকা ইঁদুরের স্বপ্ন ।
 আদিম গুহায় তাদের অবাধ প্রবেশ।মহিলা পুরুষ ভরহীন শূন্যতায় উড়ে চলে।প্রশ্ন জাগে তারাও কি প্রেমের গান গাইতো? ভাষার ব‍্যাকরণ উল্টে দেখি পরাবাস্তব শূন্যতা।এখন শুধু মনে জাগে অভিশাপ গ্রস্থ প্রেম তখনও কি ছিলো না আজকের দিনে নতুন আমদানি।

মলিন উঠোনে নেমে আসুক সূর্য

অমিত লৌহ


বিধবা

      অমিত লৌহ


মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো চিল
কাকগুলো সারা পাড়া মহল্লায় চিৎকার করে  তোলপাড় করছে ।

ভেসে আসছে অদ্ভুত এক গন্ধ !

শয়ে শয়ে লোক ঘিরে রেখেছে একটি মৃত দেহ
শরীর ক্রমশ অসাড় হচ্ছে ।

পোয়াতি মেয়েটা আজ অনাহারে রয়েছে
পৃথিবীর সমস্ত আলো , অন্ধকার টেনে নিচ্ছে
মেয়েটা'র গর্ভ !
হঠাৎ কাঁটা লেগে বেরিয়ে আসে অর্ধ আবরণ বুক ,
চেয়ে থাকে কিছু লোলুপ দৃষ্টি!

আধো অন্ধকার তবুও চোখ টাটায় পুরনো সিঁদুরে লেপ্টে থাকা  সিঁথি ,

আজ উনুনে পরেনি প্রলেপ ।
দূরে ভিক্ষুক আজ খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে ।

অনতিদূরে ভেসে আসে একটি কথা "মেয়েটা বিধবা" ....


আজ আর কোন কবিতা নয় জন্ম-মৃত্যু বিধির শেষ শব্দ নারী

ক্ষয়াটে ললাটের শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ দগদগে ।

শূন্য গর্ভে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি খেলতে খেলতে জায়গা পেল নাম না জানা নরম পালঙ্কে
 আজ খিদে নেই , আগের রাতে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে তাই খিদে নেই ।
আজ নারী দিবস ,কেউ খাবার দেবে না !

মেয়েটা পোয়াতি
আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে জানা যায় ...
গর্ভে যদি থাকে পুরুষ
জুটবে তবে মাথার সিঁদুর ।

আজ নারী দিবস
মিথ্যার আরো এক নাম নারী স্বাধীনতা

সভ্যতার শেষ লগ্নে জন্ম নিচ্ছে হাজার অশরীরী নারী !
প্রতিটি দৈর্ঘ্যের নারীর অধিকার কাল্পনিক
সন্মানিত নারী নৈব চ ..

রাণা চ্যাটার্জী


কামুক দৈনন্দিনতা

              রাণা চ্যাটার্জী

তোমার তর্জনী কখন আমার অনামিকা ছুঁয়ে দিব্যি ভাব জমিয়েছে ভিড় বাসে খেয়ালই করিনি ,
সম্বিত এলো হেড়ে গলার কন্ডাক্টরের গুঁতোয় ।
এক রাশ দম বন্ধ করা ঠাসা  ধর্মতলা মিনি তখন,               ওভার টেকের খেলায় আপন খেয়ালে ।

পেছনের চাপে অনুভবের আঁশটে গন্ধ আমার চোয়াল শক্ত করে তুলেছে, হাঁফিয়ে উঠছি আমি ,এ কোন সমতার বিচরণ ভূমি,
  মানুষ রূপি চারপেয়ের আচরণ ততক্ষনে আঙ্গুল ছোঁয়ায় আমার নিতম্বের মাপ নিতে উদগ্রীব ।
নীরবে কাজ সারার অন্যমনস্ক ভাবলেশহীন  চাহনি,তাকে গিরিখাদ , উপত্যকায় অবগাহন খেলায় মাতিয়ে রেখেছে হেড ফোনের  সুরে ।

বিষাক্ত আচমকা  ছোবল , ঘৃণার  মিছিল ছড়িয়েছে আমার শরীরের শাখা প্রশাখায়!
তবু বড়ো বিধস্ত আমি আজ ,সৃষ্টি কর্তা কেড়ে  নিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা টুকুও !
পিজি হাসপাতালের বেডে ছটফট করা মা কে
দেখতে আসা আমি মফস্বলের শান্ত নিরীহ তন্বী ,
পাশে দাঁড়ানো  বটবৃক্ষ  বাবার বয়স যেন  বেড়ে গেছে এক লহমায় !
বাবাকে  শক্ত করে চেপে ধরা হাত আর অন্যদিকে পাশবিক লোমশতা সঙ্গী করে ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে ছুটে চলি কিশোরী মনের স্বপ্ন দলানো আমি স্বত্তা!

ভালো থেকো তিলোত্তমা , পাশবিকতায় নয় ,  মনুষ্যত্বে বাঁচো ,স্নেহ ,শ্রদ্ধা ,ভালোবাসার
                            অবগাহনে পথ দেখাও ।

শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯

পার্থ চট্টোপাধ্যায়

#নগর_কীর্তন

পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

ঘুমেরও ঘুম আছে পৈতৃক দখলে
স্রোতবহা কল্লোলিনীর শান্ত অথচ অগভীর
অববাহিকার আড়ালে
যে পুরুষালী স্বর ভেসে ওঠে দু-একবার
তার শরবিদ্ধ জঠোরায় আকাশবাণী ঘনিয়ে আসে,
উঁচু উঁচু আধখোলা জানালার
ভেতরের গল্পগুলোকে জানতে হলে
এক তৃষ্ণার্ত সাহারা মরুভূমি তোমায় পড়তে হবে।
সূর্যাস্তের রোদ যতটা ম্লান হয়-
তার আত্মপরিচয় তার থেকেও কিছুটা ম্লানতর,
রাস্তায় তাকে পাশ কাটিয়ে যায় বিষস্পর্শী চক্ষু
আসন্ন সীমারেখার ধারে যে ব্যারিকেড লাগানো হয়
সেখানে প্রেম পদাবলী লেখা হয় না তাদের।
প্রজন্মের সূত্র দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়-
এই লাবণ্যে কি জ্যোৎস্নার রূপ দেওয়া যায় ?
বানভাসি হয়ে আমি বলি-
এ জন্মে যে শুয়োঁপোকা টা মারা গেল
তার পরজন্মে সে প্রজাপতি হয়ে উড়বে ঠিক।


রাজেশ কান্তি দাশ


মিটমিটে উপল

রাজেশ কান্তি দাশ

শ্যামলিমা প্রান্তরে স্নিগ্ধ আকাশ
সুজলা সুফলা বাংলার ফসলের মাঠে বাসন্তী ঢেউয়ের দোলা।
ক্ষুধার্ত দিনমজুরের অনাহারী চোখ দূরে চেয়ে দেখে শকুনের মাতব্বরি ;
সমুদ্র নদীকে করছে অবহেলা।
প্রেমের সাথে যুদ্ধের বর্জিত খেলা
দ্বন্দ্ব- সংঘাতেে মচকায় নোঙর
বাউরি বাতাসে ঝরে গাছের পাতা, সজীবতা হারায় জনপদ
কে বা কারা যেন হয়েছে হাঙর,
প্রতিরোধের অপেক্ষা ক'রে নির্যাতিত আত্মা,
গর্জে উঠে কবোষ্ণ প্রতিবাদ
ক্ষয়িষ্ণু মেরুদণ্ড জড়িয়ে ধরে শকুনের গলা।
বিস্ময়ে শুনা যায় কান্নার ম্রিয়মান বুদবুদ, শকুনের খোঁয়াড়ে ঝরাপাতার আর্তনাদ ;
সৈকতের পারে মাটির ভাঁজ, অপ-তেজ-ব্যোম সবই সাক্ষী গোপাল
মিটমিটে উপলে নীলকমলের বাতাসী ছন্দ
নিপীড়িত আত্মা প্রতিরোধের স্পৃহায় জন্ম নেয় সূর্যের জঠরে ;
অমানিশার কালিমা ভেদ ক'রে উদিত হয় প্রথম সকাল।
দিগন্তের কোনো শহরে জ্বলে উঠে দীপাবলী
সাঁঝবাতি জ্বালায় কম্বুকণ্ঠী গ্রামের বধূ...
পাখির কলরবে কলম শানিত হয়ে লিখতে শুরু ক'রে সবুজের পদাবলী।

অভিজিৎ দত্ত


ক্ষুধার্ত

অভিজিৎ_দত্ত


একটা মিছিল এগিয়ে আসছে।
বুনো পলাশের ঝোপের পাশ দিয়ে
খুরুশপুরের পাহাড়ি ঝর্ণার গা বেয়ে
আর হরতকি রঙা মেছুনি বস্তির ঝুপড়িটার থেকে।

আসলে মিছিলটা বোধহয় কাক চিল শকুনদের মিটিঙ
তাদের প্রত্যেকের ডানায় একটা করে মোমবাতি
আজকাল ধর্ষিতা হতে কারুর বাঁধা নেই যে।

মিছিলের স্লোগানের শব্দগুলো কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে ।

চতুর্ভুজ শব্দগুলো --- ঠিক ওই মেয়েটির,
বুকের ক্লিভেজের মত ত্রিমাত্রিক ছন্দে
ত্রিভুজে রূপান্তরিত হতে হতে হয়ে পড়ে অষ্টাঙ্গ
ব্রেসিয়ারের কেরামতিতে।

কখনও বা ষড়ভুজা ষোড়শী আর
কখনও বা দশভুজা দশপ্রহরীণী আর কখনও বা
রম্বাস আকৃতির বেলাইনের মেয়েগুলোর মত।

ভাববাচ্যেই  রয়ে গেলাম অপব্যয়ের রূপ ধরে।
ধুসস্  শালা বাঞ্চোৎ।
কাল রাতে বেশি করে মাল টেনে আজ ফের বাতেল্লা ?
কি করি বল দোস্ত ।
পেটের খিদা ভুলতে বুকের জ্বালাটা
বাড়িয়ে নিতে হয় যে।

সোনালী মন্ডল আইচ


আচার শেষে

সোনালী মন্ডল আইচ


এ তুমি কেমন তুমি
এতো নির্বাক এতো নির্লিপ্ত
ক্লেদ গ্লানি অটুট রেখে
 দুটো সমান্তরাল রেখার মিলন বিন্দু আঁকো

 বুজে আসে শেষ বিকেল
নাম ধরে ডেকে যায়
সত্যবাদী সরল সাহসী গলা জানতে চায়
দুধ দই-এর যে গঙ্গা বইয়ে দিলে

শুকনো মুখ শিশুটিকে পড়ল মনে ?
নিদেন পক্ষে বিড়াল কুকুর বা অসুস্থ কেউ--

না-না এসবে কী পুণ্যি  জোটে-----

সম্পূর্ণ উলঙ্গ গোধূলি ধীরে পরে রাতপোশাক
 লজ্জা খসে পড়ুক কে বা চায়
চোখ বন্ধ হয়ে আসে চিকচিক জলে
এখন পাতাল প্রবেশ নেই
কারণ আর সীতা জন্মাবে না

 খাদ্যের অপচয়, শক্তির অপব্যবহার
এসব খুব দুঃখের,এখানেই বারবার হার
অনাথপিন্ডদসুতা সুপ্রিয়ার কাছে ...

শুভ্রাশ্রী মাইতি


চাঁদজোছনার কাহিনী

শুভ্রাশ্রী মাইতি।


কোজাগরী জোছনামাখা একথালা আলোচালের ভাত
পেটপুরে রোজ খাবে বলে ঘর ছেড়েছিল বিধবা সাবিত্রী।
ঈদের একফালি চাঁদ হাসিতে ভরপেটে রমজান ভাঙার আশায়
চটকলের কাজটা হাতছাড়া করেনি আমিনা।
সাবিত্রীর ঘরে এখন রোজ রাতে আলো ঠিকরায়
কোজাগরী চাঁদজোছনায় নয়---
খালি হওয়া মদের বোতল,টাকার পালিশ আর কামনার লাল আলোয়।
আমিনার রমজান ভাঙা খাওয়ার থালায় এখন খুশির ঈদ উপচে পড়ে
একফালি চাঁদের পবিত্র হাসিতে নয়---
চটকল মালিকের চটচটে লোভের উদার বদান্যতায়।
তবু ফি বছর নামে ঝিমধরা কোজাগরীর মায়াবী রাত।
তবু ফি বছর আকাশে ভাসে খুশির ঈদের চওড়া হাসি।
সাবিত্রীরা গোপনে শাঁখ বাজায়,প্রদীপ জ্বালে লক্ষ্মী আসনে।
আমিনারা আয়াতের ফিসফিস সুরে কথা বলে নামাজ আসনে।
চাঁদজোছনায় সাবিত্রী আর আমিনার আর্তি মিলেমিশে এক হয়ে যায়---
যাতে আর কোন চাঁদ আলোয়
এমন নির্মম হৃদয়হীনতায় আর না নগ্ন হয়
অন্য কোন সাবিত্রী,অন্য কোন আমিনার
চাঁদ জোছনা মাখা একগ্রাস ভাত খাওয়ার অনন্ত আকুতি।



আমার বাইশে শ্রাবণ

শুভ্রাশ্রী মাইতি।


ঘুম ভাঙা ভোরে প্রকৃতির থমথমে নিস্তব্ধতায়
বৃষ্টিভেজা পাতায় টুপটাপ ঝরে পড়ে বাইশে শ্রাবণ।
বুকের ভেতর প্রসারিত নিঃসঙ্গ মাঠে ধু-ধু হাওয়া একলা অভিমানী।
আমার পনের বছরের শিকলপরা শ্বশুরবাড়ীতে
বাইশে শ্রাবণ নেই ক্যালেন্ডারের পাতায়।
রোজকার কেজো ব্যস্ততায়,হাতা খুন্তির লড়াইতে
অফিস-স্কুলের ভাত-টিফিনের রকমারিত্বে,
শাশুড়ীর বাতের ব্যথার চিৎকার আর কাজের লোকের তদারকিতে---
নিসঙ্গতার সোনার খাঁচায় ঝিমোয় বোধের ডানা ছেঁড়া পাখি।

একলা দুপুরে মেঘে মেঘে ঘনায় আকুল শ্রাবণ।
লুকানো গীতবিতান আর সঞ্চয়িতার খোলা পাতায় পাতায়
গুণগুণ গান আর কবিতার ডুব-সুরে
মন ভিজতে থাকে খোলা জানালায়।

ভিজতে ভিজতে কখন ছুটে আসে বেণী দোলানো শৈশব।
আকুল স্বরে ডাকে---যাবি? আমার সাথে যাবি?
ভিজবি একবার গান-কবিতার শ্রাবণধারায়?
যেমন ভিজতিস আগে চুপচুপে হয়ে----

টেবিলের ওপর রাখা ছবিটায় তোমার প্রসন্ন সহাস্য মুখ।
মনটা ছটফট করে ওঠে গরাদ ভেঙে বেরোনোর অদম্য ইচ্ছায়--
‘তোমার অভিসারে যাব অগম পারে.....’
হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে বলি--- নিয়ে চল্,নিয়ে চল্ আমাকে---
ঐ শ্যামলী নদীর ধার ধরে হারিয়ে যাব তাসের দেশ আর শাল পিয়ালের বনে.......।

দরজার কলিংবেলটা তীক্ষ্ণ স্বরে বেজে ওঠে।বাইরে ঝিমধরা শ্রাবণের মায়াময় আলো ম্লান হয়েছে কখন
বুঝতে পারিনি কিছুই----
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমঝিম বাইশে শ্রাবণে একাই ভিজতে যাচ্ছে আমার দুবেণীর কিশোরীবেলা।তোমার প্রশান্ত মুখ তখনও গভীর ভালোবাসার আলোয় মায়াময়।
পাশের বাড়ীতে বাজছে---- কাঁদালে তুমি মোরে ভালবাসারই ঘায়ে......।