মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--১২



  "মহিষাসুরমর্দিনী ধরায় রক্তাক্ত ধর্ষিত সামাজিক অবরোধে বিপর্যস্ত ছাপোষা মানুষ শুধু শারদীয়ার জৌলুসে চারদিনের উৎসবের ঘোর",,,,,,,,,


 কবিতা: ১ " সেরা তকমা "
   
 রাণা চ্যাটার্জী


জগত সভায় এবার অন্যভাবে ভারত সবার সেরা,

বিপজ্জনক দেশ আমাদের, নিরাপদ নয় নীরা।


ট্রেনে বাসে পড়ছে সবাই হেড লাইন নিউজ ।

কেউ হাসে বাঁকা চোখে,কেউ লজ্জায় ফিউজ।


মন্দ কি আর গর্ব করো , এমন ভালো খবর

পুরুষরূপী জন্তু গুলো খুঁড়ছে দেশের কবর ।


যে দেশে হয় গৃহ হিংসা, মজার খোরাক নারী

সে দেশ মাতা কলঙ্কিত,এ আমাদের বাহাদুরি!


অ্যাসিড অ্যাটাক ,পাথর ছোড়া, কত কুৎসা বলি,

বিজ্ঞ চোখে খবর পড়ি ,বাড়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি।


মনে কি পড়ে দু-হাজার বারো, নির্ভয়া গণ ধর্ষণ,

মিডিয়া ,পেপার মন্ত্রী সান্ত্রী কতো কথার বর্ষণ ।


কি দেখলাম প্রতিবাদী ঝড়, মোমবাতির মিছিল,

শত শত অভিযোগ আজও,ফাইল গড়ছে পাঁচিল।


এদেশে আছে অনেক আইন,বাঁচার অনেক পথ,

কামুকতা আড়ালে ছিল,এখন প্রকাশ্যে বিজয়রথ।


নারীরা আছে সে তিমিরেই,দিকে দিকে লোলুপতা

রাস্তাঘাটে কি ভিড়েতে কনুই,অদৃশ্য হাতের গুঁতা ।


এখন দোসর ফ্রি জিও ডাটা,এ দেশে আটা দামী ,

বেশ করেছি,স্বাধীন দেশ,প্রকাশ্যেই  খাবো হামি।


বাড়ির বৌ কেনা দাসি বাঁদি ,যা খুশি পারি বলতে

স্বামী,ভাসুর,শ্বশুরও পটু পণ নিয়ে খোঁটা ডলতে।


কত রকমের প্রকল্প আছে,সামাজিক সুরক্ষা

নারীপাচার,যৌনতা ভীতি,কে করবে শুনি রক্ষা।


মেয়ে হলো ঘরের লক্ষী,নয়কো সে ভোগ্য পণ্য!

'থমসন'রিপোর্টে মুখপুড়লো,ভারত হলো ঘৃণ্য।


দ্য থমসন রয়টার ফাউন্ডেশন এর রিপোর্টে অনুসারে,(যে নারী রা সেফ নয় ভারতে)



কবিতা -২

  পরকীয়া

   রাণা চ্যাটার্জী

পেপার খুলে চমকে দেখি পরকীয়া নয় অপরাধ বাতিল সেই মান্ধাতা আইন প্রেমে মঞ্জুরি অবাধ।
৪৯৭ ধারা অবৈধ হলো,পরকীয়ায় আর নয় ভয়।আমার ভারত প্রগতির দেশ , নারী প্রগতির জয়।

দেশ চলেছে সমুখ পানে উন্নয়নের আকর্ষণে,
প্রেমে বাধা থাকছে না ,খুশি হও প্রেমের টানে। পরকীয়া নো ম্যাটার,প্রেম তুফানে বাজুক গিটার
প্রেমপর্বে ঘাটতি কেন,বাড়তে দাও প্রেমের মিটার।
প্রেমের বীজ হলে বপন,কি হবে রেখে তা গোপন এসব নিয়েই দৃষ্টি ঘুরুক,মুদ্রাস্ফীতি যখন তখন।

অসুখী দাম্পত্যে নাকি পরকীয়া  খোলা হাওয়া, ধর্ষণ কি কমবে এতে ভালোবাসার গান গাওয়া!
স্ত্রীর ওপর খবরদারি ,নয়কো পুরুষ এ বাহাদুরি
স্ত্রীও তো স্বাধীন মানুষ,কমুক এবার নজরদারি।



কবিতা: ৩

বনধ-অবরোধ

                      রাণা চ্যাটার্জী


রাজনীতিতে ঘেন্না,বীতশ্রদ্ধ আমি,

এসবের শেষ কই,শুধুই দেখি নোংরামি।

রাজনীতি আর দুর্নীতি যেন যমজ ভাই,

রোজ হুমকি,নেতার ধমকি,মানুষ অসহায়।


উৎসবে কোলাকুলি, নামাবলী সম্প্রীতি

দিন ভোর রাজনীতি যার নেই কোন ইতি ।

ছোট বড় কত দাদা,রোয়াবেতে লাগে ধাঁধা,

শক্তি প্রদর্শনে মাঠে,খেয়ে নামে জল আদা।


জনসভা,পথ অবরোধ ,মিটিং একগাদা

মিথ্যার প্রতিশ্রুতি,ছোঁড়াছুঁড়ি শুধু কাদা।

এই নিয়ে বসবাস, রাজনীতির সহবাস

অশান্তি বুকে নিয়ে সুখে থাকা বারোমাস।


চারিদিকে রব হৈ হৈ, নেপোয় মারে দই

নেতাদের মুখে বুলি,মুখেতে ফোটে খই।

তবু বলি আছি বেশ,অশান্তির হোক শেষ,

নেট দুনিয়ায় ভাসো,অবক্ষয়ের নোনা রেশ।




কবিতা-৪

       দোষারোপ

               রাণা চ্যাটার্জী


তকমা দেওয়া ভীষণ সহজ

  পুরুষগুলোর ভাবখানায়,

পাড়ার মোড়ে ক্লাবের ঘরে

সমালোচনার কারখানা।


নারী কেন বাইরে একা ,

কার সাথে সে ঘোরে,

মুচকি হাসি কাকে দেখে

সে চর্চাও রাস্তার মোড়ে।


কোন অফিসে কি কাজ

  ফিরছে কটায় বাড়ি!

ওরে পুরুষ কাজ কি নেই

কেবল নারীর খবরদারি?


নারী হল মায়ের জাত,

   অসুর নাশিনী।

যুগে যুগে পুরুষ শাসন

কবে বন্ধ হবে শুনি ?


মিডিয়া পেপার যতই বলে

"নারী পুরুষ" একই .

বিভেদের এই আঁতুড়ঘর

  সহজে বন্ধ হবে কি!



উমা পর্ব--১১



কবিতাগুচ্ছ

রাজিত কুমার বন্দোপাধ্যায়


১.

রক্তাক্ত যোনি ব্যথায় দীর্ণ  
তবু সে এসেছে মধুর হেসে --  
আসার পথের রক্ত লেখা ,  
যৌবন মদে পুরুষত্ব মাখা !  
তোমার উমা ফিরেছে ঘরে  
রক্ত যোনির ধারায় ধুয়ে --  
একি শুদ্ধতা মাখা তোমার পৃথিবী    
উন্মাদেরা আছে উল্লাসে মেতে !  
এখানে শান্তি , এখানে বৈভব    
এখানে এখন মা যশোরেশ !  
তোমার উমা ছিন্নভিন্ন --  
থাকুক না মা আগের মলিন বেশ ।  
তোমার ঘরের উমার দেখো  
সে কী হর্ষ , সে কী যৌবনের বেশ --    
পূজোর গন্ধে ধূপ আর ধূনোয়    
নেই পতিতার মাটির ক্লেশ !!

                  ***  

              ২.      

কে এলি মা ঘরেতে মোর  
উমা নাকি এতো মলিন মুখ !  
সে আসেনি সঙ্গে বলে --    
তোর অন্তরে নেই কি সুখ ?  
সে কি আছে মা তোর সদাশিব  
পকেটে তাঁর উচ্চ ন্যায়ালয়ের 'স্লিপ'!

তাই নিয়ে সে ফিরছে যে হায় --  
দুনিয়াটা যেন তাঁর পিঙ্গল ছায় ।  
এখন তো আর নেইকো দায় ,  
ব্যভিচারে আর নেই কো ভয় ।  
জগৎ জুড়ে নারী পুরুষ --  
নেইকো আর উঁচু - নীচুর জয় ;  
সব ভুলে এই শারদ উৎসবে    
গাও উচ্চে জয় ন্যায়ালয়ের জয় !  

                    ***

                      ৩.    

তুষার ধবল অমল আলোয়    
বেজার মুখ উমা আসছে ঘরে ;  
জগৎবাসী তক্তপোষী --  
মা উৎকন্ঠায় দিন গোনে প্রহরে !  
বাজারের দাম দাবানল যেন ,  
কাজের পকেট ফাঁকার ঘোরে --  
বেরোজগারী অঙ্গের ভূষণ মা    
তোর মলিন বেশও হারে !  
তোর সাথে মা ফারাক কোথায়
কে জানে তা কোনখানে --  
সঙ্গে আবার পতির পরকীয়া ছাড়ে  
এবার পূজো মা উচ্চ চালে !!  

                  ***

                   ৪.      

শারদ উৎসবে আজ বেপরোয়া ভাব ,  
জীবনের মানে যে বদলেছে !  
তোমার উমা ছেড়ে আজ মান্ধাতা সাজ --  
আমার আধুনিক রসে মজেছে ।  
রক্ত আলেখ যোনি যদিও বারবার --  
তবু উগ্র যৌনতা ভালোবেসেছে ;  
শিবের ত্রিশূল পুরোনো সে আজ ,  
কনডোম ঢাকা পুরুষত্বের খোঁজে --  
পুঁই - পিচ্ছিল পথে চলেছে !  
তোমাদের গড়া সমাজের কড়া  
ছিন্নভিন্ন আধো সে ন্যায় --  
নতুন দিনের নতুন উৎসবে তাই  
হিন্দুত্ব হলো বরাবর ব্যায় !  
নারী অধিকার শুধু পুরুষের বরাবরে --  
জীবনের মাটি আঁকড়ায় না আজ ,
জীবন এখন জীবন শুধু --  
পুরানোতে বেঁচে আর নেই কাজ !!

                      ***    

* শারদোৎসবের এক অঙ্গ হল তার আগমনী গান । যা মা উমার ও তাঁর জগৎবাসীর সুখ দুঃখ বয়ান করে । সেই আগমনী গীত ও কবিতা মিশিয়ে আজকের আটপৌড়ে জীবনের সুখ দুঃখ , কিছুটা বিদ্রুপ আর কিছুটা দুঃখের উত্তাপ রচনার চেষ্টা করেছি । পাঠকেরা নিলে সার্থক নচেৎ কুঁড়োদানে ।      ~ রাজিত

       

               


উমা পর্ব--১০



"উমার মর্ত্যলোকে জীবনযাত্রার পঞ্জিকা"
মানুষের ঠেলা গোঁজা ভারাক্রান্ত দায়ভার সংসার।"


১. কবিতা: উত্তরাধুনিক

তুলসী কর্মকার

************

আর কোনদিন চিঠি খামে প্রেম

লালচে বিকেলে কিতকিত

লণ্ঠনের আলোতে মুখ

রাজার পুকুরে রাজা নামবে না


অভিযোজন সরণী ধরে হাঁটছি

ক্রমশ ছাল মাংস অস্থি নরম হচ্ছে

হাতে হাইস্পীড নেট

দিকে দিকে যোগাযোগ পাতা

ইচ্ছে হলে বাথরুম থেকে জীবন্ত চুমু ছুড়ি

অনলাইন যৌনতা কুড়িয়ে চলি

রাত লুকিয়ে এল ই ডি জ্বালাই

ত্যাগ নয় ভোগ চলে

স্বাধীন ব্যভিচারী সাজে স্ত্রী উপেক্ষা করি

কাম আর টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত সভ্যতা আঁকি



২. কবিতা: পার্থক্য

তুলসী কর্মকার

********

তুমি বললে মানুষ গঠিত হয় মান আর হুঁশ দ্বারা

তলিয়ে দেখলে না পাড়ার নেড়িটার মান আছে

ডাণ্ডা দেখে চুপসে যায়, আদরের সুরে লেজ নাড়ে

বিড়াল বেহুঁশ হয়ে কেরোসিনে মুখ দেয় না


কাঁকড়ার গর্তে চলে শিয়ালের ছলনা

কোকিল ডিম কাকবাসাতে রেখে প্রতারণা করে

ময়না কথা অনুকরণ করে

জাল বুনে চলে মাকড়সা


ছাগল নিজের বাচ্চাকে চিনে

রাতচোরা বাসা খুঁজে পায়

আপনজন হারিয়ে গরু দুঃখী হয়

হাতি সঙ্গমের আগে প্রেম করে


শক্তিশালী গিরগিটি এলাকা দখল রাখে

মাটির ব্যবহার জানে উই

অনেক মদ্দাকুকুর দ্বারা রেপ হয় মাদি

পশুরা ক্ষমতার রাজনীতি জানে


এ সবই আমাদের বৈশিষ্ট্য, তুমি গর্জে উঠলে


শোন তবে, মানুষের আছে পশুর সমস্ত গুণ


পার্থক্যটুকু টাকার ব্যবহার, গড়তে পারে আগুন


ঘুস নিতে পারে, অনুকরণ মডেল তৈরি করে


নিজ জাতির কাছে একবার পরাজিত হলে

পুনরায় খুঁজে চলে জয়, চাকরি করতে চায়

ঈশ্বর আঁকে, ধর্ম্ম ও সরকার গড়তে পারে....



৩. কবিতা: প্রেম

তুলসী কর্মকার

*****

একটি বিকেল দাঁড়িয়ে আছে

জানালার ফাঁকে আলো হাওয়া টুকরো দৃশ্য পারাপার হয়

মেঘ ছুটাছুটি করে, বৃষ্টি নামবে


ভবিষ্যৎ খুঁজে চলেছি


রঙ করা দেওয়ালে তিনটি পেপার কাটিং প্রজাপতি দুটি মঙ্গল ঘট কয়েকটি কাগজের গোলাপ লাগানো আছে

চ্যাটচ্যাটে ময়লা দেখে উপড়ে ফেলেছি

সাফাই করেছি দেওয়াল

উদাস হল প্রেম, তোমার চোখে জল

ছেড়ে যাওয়া বেলা বড় অদ্ভুত

কখনো জানতে চাইনি

তুমিও বলনি কোথায় স্মৃতি লুকিয়ে আছে

বর্তমান সুন্দর করতে অতীতের ঘাড়ে কোপ

ক্ষমাপ্রার্থনা, এড়িয়ে যেওনা

আমাকে চিনিয়ে দাও তোমার সাজানো পৃথিবী

বুঝছি

প্রেম কুড়োতে চাইলে স্মৃতির মূল্য দিতে হয়



৪. কবিতা: ঘূর্ণন

তুলসী কর্মকার

*****

পাখার সুইচ অন করা হলে

কিছুটা ত্বরণ পেরিয়ে সাম্যে থেকে হাওয়া ছোড়ে

বিদ্যুৎ বিভবের তারতম্যে গতির হেরফের হয়

অকস্মাৎ কয়েল পুড়ে গেলে, মন্দন হারে ঘূর্ণন থেমে যায়

বেয়ারিং খারাপ হলে ক্ষতের কর্কশ শব্দ বের হয়

কন্ডেনসার নষ্ট হলে ভারসাম্য হারায়

ঘূর্ণনের কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নাই

হাওয়া দিতে থাকে নির্দিষ্ট এরিয়া ঘিরে, জাতি বর্ণ নির্বিশেষে

ঘাম শুকিয়ে চলে বা নাকে কাঁচাজল বের করে

কোন গোলযোগে পাখা সম্পূর্ণ থামতে সময় লাগে

এই ঘুরে চলা অভ্যাস লেগে থাকে স্বভাবে..........


জীবনটি পাখার মতো


একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়

দুধ পানে শক্তি সঞ্চয় করে

সূচনা হয় জীবন চাকার ঘূর্ণন

চলন গমন সক্ষমতার পরিচয় জাহির করে

হঠাৎ একদিন মায়ের উনুনে কাঠ ঠেলে দেয়

অফিস টাইমে দরকারি ব্যাগ বাবার হাতে দেয়

আরম্ভ হয় দায়িত্ববোধ শুরু হয় কর্ম জীবন

স্বভাবগত স্বস্তি বয়ে চলে বন্ধু শত্রু উপকৃত হয়

জীবন চাকা থেমে গেলেও কাজের বায়াস মৃত রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রসংগীতে কনভার্ট করে

যার জীবন্ত সুর মুখে মুখে বাতাসে ভেসে চলে.....



উমা পর্ব--৯



"পূজোর উড়ো উড়ো মন প্রেম অনু তোমায় একপশলা উজানি স্রোত মাঝির নোঙর সামলে,ধরো তোমার আঁচল,,,,"


কবিতাগুচ্ছ: "অনুকে-১"

ময় শুকিয়ে এসেছে অনু
আঁচল ঢেকে নাও শরীরে।

গ্রহদের দ্বারে বৃষ্টি নামে।
দু-একটা বরফ ডেলাও প'ড়ে।
কাঁধের জামা ঠিক করো অনু।

ঝড় উঠতে পারে বুকে।

পিঁপড়েগুলো মাটি খাচ্ছে শুঁকে।

সময় নিরাশ প্রকৃতিকে
একলা আঁধারে ফেলে যায়

গোধূলি সন্ধ্যা কালে
কথা চলে মিলনের সুখে।

পাতাবাহার বসন্ত মেখে নেয়
শ্যাওলায় আক্ষেপ রক্ষা পায়
তর্ক চলে পরস্পরের মুখে মুখে।

অভিমান জমে লিপস্টিকে
আমিও ঠোঁটের পার ভালোবাসি
রক্ত আদর জমে প্রভৃতি বুকে।

আমরা দুজনে আবারও
 ভুলে ফিরে আসি. . .


#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)


"অনুকে-২"

শরীরটাকে গুটিয়ে নিচ্ছো সুখে
পরিণতির উত্তরে থমকে হৃদয়।

প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ জাফরান ঠোঁটে।
অন্তরে জন্মে ওঠে চাপা সংশয়

বুকের ভাঁজে লেগে থাকে
ঐতিহাসিক শাহাজাহান সুখী
মমতাজ যন্ত্রণা।ক্রমশ প্রকাশ্য ।

ওঠো অনু দিন যে নাভির মুখে
অন্তর দ্বন্দ্বে একের পর এক
কাটাকুটির দান দিয়ে চলেছে

রূপের বয়স হয়নি এখনও
তোমার।থমকেছে প্রত্যয়।
যা কিছু মেলে দিয়েছো ভোরে
রবির উদয় রক্ত শুষে খায়।

বিছানায় পরে রয়েছে স্মৃতি
অভিমান রেখে দেয় শুকনো পাতা।

স্বপ্ন প্রেমে আকাশকুসুম
ভেবে উঠি।দিনের আলোয়
ক্রমশ মুছে যায়।।

#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)



"অনুকে-৩"

তখনও বীর্য চুইয়ে পড়ছে
শরীরে।কতটা ঘনিষ্ট আমি।
তোমার ঠোঁটের সময় খুঁজি।

নোঙর খানা সজাগ করো
তবে।তোমার হাতের ছোঁয়ায়
নিজের শরীর টুকুই মুছি।
আলগা কাপড় আগলে ধরো।

কথা ছলে বেঁধে রেখেছি
তোমায়।যদিও রাত্রি গভীর হতো।
আঁচল যদি আবার পড়ে যেতো!

অনেক সাগর পার করে
তোমার কাছে যেতাম।
নেহাত ক্ষতের ঘায়ে মিশে. .

কাম সুখ সজাগ করেছে
হৃদয়ে তখনও সংশয় ।
এবার তবে মেলে দাও শরীর
আমি রক্ত নেবো চুষে।।

#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)


"অনুকে-৪"

তোর সুখে ভিজেছি আমি,
উদ্দীপনা মেখে নিয়েছি ঠোঁটে,
মেলেছিস স্তনে রসপ্রাপ্তি অসুখ।

আমার শতকোটি বসন্তে
রেখে যাস শুকনো গোলাপ।
ফাগুন এসে চেটে নেবে শরীর।
মুছে দেবে অনন্ত অতীত।

ঘাসের ওপর শুয়ে আছিস
নগরের নগ্ন উর্বশী তুই
রোজ বসন্ত ফোটে বুকে।
পাতাঝড়া সুখে আমিও হারাই।।

অনু আজ মেখে নি তোকে
স্মৃতিগুলো হোক পাথুরে।চটচটে।

সময় নিরাশ গণিতের চোখে
মিশে গেছে অজানা অন্ধ-ক্ষতে

উড়ে গেছে পাহাড়ি খুশি বসন্ত রেখে।

#আরিয়ান প্রিয়স(পাল)

উমা পর্ব--৮



পরীকাহিনী
..................

ফিরোজ আখতার


| ১ |
রাত বারোটার পরপর-ই স্বরবর্ণের স্টপেজে এসে
ভিড় করে পরীদের দল । হলদেটে আলো-আঁধারি'তে
তাদের খিলখিল হাসি'র সাথে মিশে যায় পীতনগরী'র
নেকড়ের দল, মেরুদন্ডী সভ্যতার ছদ্মবেশে ৷

| ২ |
শুরু হয় নগ্নতা'র কেনাবেচা ও দরদাম
প্রবৃত্তি'র বহুমাত্রিক জ্যামিতিক স্বার্থের ধারালো কোণে
হোঁচট খেয়ে ফিরে আসে বিবেক...
সেখানে শুধু পচা নারীমাংসের ইরোটিক গন্ধ ৷

| ৩ |
মোম লাগানো দড়ি'র শক্ত ও মসৃণ গেরো'র মতো
ছল ও ছলনা জমাট বাঁধে পরীদের স্তনবৃন্তে
কামনা'র গলিত ম্যাগমা তাদের বুকের উপত্যকায়
ক্ষুন্নবৃত্তি'র ছদ্মবেশে আন্দোলিত হয় ৷

| ৪ |
হঠাৎ-ই ঝিলিক দিয়ে ওঠে পরীদের শ্বদন্ত
বিকৃত ডানাগুলি ঝলমল করে ওঠে
বিপথগামী নেকড়েদের দাঁত-নখ হারিয়ে আসে
আইভরি রশ্মি'র শিরায় শিরায় ৷ পরীরা বলে ওঠে তথাস্তু !

উমা পর্ব--৭



নবমী
সুতনু হালদার


একটা শব্দের মতো অস্থির অথচ বাক্যের মতো দাম্ভিক, ভালোবাসার মতো দুরন্ত কিন্তু রোদের মতো কামার্ত শিরশিরানিগুলো পলেস্তারার নিত্যবৃত্ত অতীত

আমাদের ঘটমান বর্তমানে মিশে থাকে উমার নৈব্যক্তিক দীর্ঘশ্বাসের নির্যাস! পাশবালিশের মধ্যে জমিয়ে রাখা ক্রোধকে বহন করতে করতে একদিন অমাবস্যার হুক খুলে জানা যাবে স্তনাগ্রের খিদে...

রাস্তার বদল হয়! কৈলাস হেঁটে আসে জরায়ুর মুখে

ভালোবাসার শিউলি ঝরে গিয়ে আড়মোড়া ভাঙে নদীর স্রোতে, প্রতিরাত ধর্ষিত হতে থাকে - বৈদ্যুতিন বায়বীয় উচ্ছ্বাস; গতিজাড্যের যোজ্যতা মিশে থাকে মেয়েলি  ঊরুসন্ধির নিঝুম প্রান্তরে...

যদিও অভিযোজনের জবানবন্দি দ্বিপাক্ষিক সমীকরণ হতে হতে শেষমেশ হয়ে যায় জ্যা উন্মুক্ত সুন্নত...

প্রতিটা অন্ধকারের আঁচলে লেগে থাকে উমার গন্ধ,
প্রতিটা কাশফুলের চুমুর জ্যামিতিক বিয়োজন রক্তের শ্রমিক সত্তাকে মনে করিয়ে দ্যায় বদলহীনতা!

ঘরে ফেরার থেকেও ঘরের মশারীতে ছোপছোপ দাগের প্রতিসরাঙ্ক রোদের প্রেমিক সত্তাকে ইশারায় ভালোবেসে ফেলে। উমারা ঘরে ফেরে, অথচ কোথাও কোথাও  রক্তের কণিকারা উমা হয়ে থেকে যায় জৈবিক উপশিরার প্রান্তিক মুদ্রাদোষে, সূর্যের হীনবীর্য তেজস্ক্রিয় আলো প্রতিটা সংসারেই পরকীয়ার মতো চুমু খায়...

ফিবছর প্রতিটা নবমী নিশি রজঃস্বলা হয়ে পড়ে

উমা পর্ব -- ৬



১. কবিতা:

___উমা এলো ঘরে

           সুনন্দ মন্ডল


     লাল আলোর সংকেত,

     ভাঙা চালায় খেজুড়ে আলাপ

     ‎মিষ্টতা কাশ ফুলের নাকছাবিতে


    সুগন্ধ ওই কোণের শ্যাওলা ভেঙে

    ‎মহল্লায় সুর বেঁধেছে কানা মুনি

    ‎গলির বুকে আল্পনা

    ‎মহালয়ার ভোর



    উমা নাকি এলো ঘরে

    ‎মাটির প্রদীপে জ্বলবে আলো

    ‎নাকি জ্বলবে মাটির বুক

    ‎          -----------


২. কবিতা:

_____পক্ষকাল

                সুনন্দ মন্ডল


বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সাজঘরে সেজেছেন

কন্ঠের তালিম শুরু হয়ে গেছে বাংলার আপনজনের

নাচের তালে সুরেলা গানের কলি


শরৎ যৌবনে পূর্ণ চাঁদের লহমা

বিল্বপত্রের কানাকানিতে ফুটেছে

ভোরের বোধনে দেবীর পক্ষকাল


জিতুয়া উৎসবে দেবী সেজেছিল

নয়া আদলে প্রাণের বিষণ্ণতা ভুলে


আজ নাকি মহালয়ার পুণ্য প্রভাত

কাঙাল পেতেছে চট প্রাসাদের শিরদাঁড়ায়

নগ্ন সমাজের পেটে লাথি

পূর্ণ ঘটে নীরব মানবিকতা

             -------------




৩. কবিতা:

_____নারীই দুর্গা

              সুনন্দ মন্ডল


লাল শাড়িতে তোমার শরীর

    জড়ানো প্রেম অল্প আবেশ।

কানের দুল, ঝাপড়ানো চুল

    মনের গলিতে দুরন্ত মেস।


রাতের আলোয় তোমার চোখ

     নতুন মহড়া ক্লান্তি মেটায়।

স্বপ্ন লেপা হৃদয় চাতাল

     সুর মিশেছে অজানা নেশায়।


সুডোল হাত নিটোল গাল

     জমানো ক্ষীর পেটের পাশ

নাভির খাতা খোলা যখন

     টানব ভাবি কলমে রাশ।


আর কিছুটা এগিয়ে গেলেই

     যৌনকাম চরিত্রে জাগে

নিন্দাবাদী নিন্দা ছড়াক

      ছুটব আমি নিজের বাগে।


দুর্গা জাগে দেবীপক্ষে

      আমরা জাগি তোমায় দেখে

যখন দুর্গা নারী, নারীই দুর্গা

      শাড়ির আঁচলে আদর মাখে।

      ‎       -------------


৪. কবিতা:

_____চোখ

              সুনন্দ মন্ডল


অঞ্জলিতে পাঞ্জাবি বেস্ট

   ধুতির কাছাও টাইট হবে।

তোমার হলুদ পাট্টা শাড়ি

    গোড়ালি ঢাকা মাটি ছোঁবে।


ব্লাউজ সটান পিঠের ওপর

    একটি রেখার মতোই যেন।

কোমল ত্বক থাকবে জেগে

    মত্ত গ্লাসের যুবক মানো।


বুকের ওপর ছড়িয়ে মেঘ

    বৃষ্টি নামুক শরৎ ঘাসে।

আকাশ একটু হিংসে করুক

     বর্ণ গাথা পুজোর মাসে।

 

ঠোঁটের আবির নামটা জানি

     লিপস্টিক হয়তো বলে।

কথারা ক্লিপে আটকে যেন

     মাথার ওই ঘন চুলে।


মন্ত্র পরে পুরুত মশাই

      অঞ্জলি দিই ঠাকুর মা'কে।

তুমিও দেখ আমার পাশে

     চেয়েই থাকি মায়ের চোখে।

      ‎        ------------




শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮

উমা পর্ব--৫



কবিতা--১
           #বস্ত্র_হরণ।।
             ---#অভিজিৎ_দত্ত।।

চারদিন ধরে মহা ধুমধাম  জৌলুস কতো বেশি
নাকছাবিটা হীরের এবং মুক্তো খচিত আরশি।
কেউবা মাকে দিয়েছিলেন কোটি টাকার সোনার শাড়ি
কোথাও বা মা পেয়ে গেলেন দামি দামি গয়না ভারি ।

এসব নিয়ে দুগ্গামাতা রওনা দিলেন কৈলাসেতে
পাড়া কমিটির দাদা বলেন দুচার মিনিট  দাঁড়িয়ে যেতে।
দিদি বলেন নানান সাজে দেখতে তোমায় চাই
মাতাশ্রী খেতাব তোমার রিজার্ভ করেছি তাই।

রেড রোড তো জনারণ্য  তিল ধারণের নেইকো ঠাঁই
সবাই বলে পার্বতী মার মিছিল দেখব ভাই।
তারপরে সেই ট্রাকগুলো যেই পৌঁছে গঙ্গাঘাটে
ছিনতাইবাজ হুমড়ি খেয়ে গয়না লুটতে ছোটে।

কোটি টাকার সোনার শাড়ি পড়িয়েছিলেন যারা
তারাও বলে 'ও দুগ্গা মা একটুখানি দাঁড়া ।
এত দামী শাড়ি পড়ে কৈলাসেতে গেলে
মহিষাসুর পথেই আছে কাপড় নেবে খুলে'।

তার চেয়ে মা মর্ত্যবাসী পুজো যারা করে,
তাদের হাতেই দাও খুলে আজ সোনার শাড়ি ছেড়ে ।
হাপুস নয়নে কেন্দে মাতা বলেন 'শাড়ি ছাড়া
কৈলাসেতে  ঢুকলে মোরে,
করবে বাবা তাড়া।'

সন্তানদল শুনতে নারাজ  মায়ের  এসব আর্জি
বলে তোমায়  নাইটি দেব  আনছি ডেকে দর্জি ।
এর মাঝেতেই বস্ত্রহরণ  হয়ে গেল শুরু
পাড়ার দাদা বলে ওদের  'জলদি করনা গুরু।'

লজ্জা পেয়ে মাতা নিজেই  দিলেন জলে ঝাঁপ
ঝন্টু বলে সোনার শাড়ি  কেড়ে নিলাম বাপ।
মাদুগ্গার বস্ত্রহরণ করিয়া সম্পন্ন
পাড়ার দাদা বাড়ি ফিরলেন  কাজ আছে তার অন্য ।
                               ******




কবিতা--২

          ।। #অস্তরাগের_গান।।
                          ------#অভিজিৎ_দত্ত ।।

পূজামণ্ডপে আয়তনয়না নারীদের ভিড়
দেবী দুর্গার বন্দনাতে চলে শুদ্ধাচারের স্নান
মণ্ডপের পাশেই একটি বস্তি,
সেখানে আলো আঁধারির চিতায় পোড়ে
অস্তরাগের গান।  

মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে আজও
আর তার অপেক্ষার স্পন্দনে শোনা যায়
নাতিদীর্ঘ দীর্ঘশ্বাসের বিস্ফোরণ
কখন বা সময় হবে পাত পেড়ে খেতে বসার ?

সাড়ে চার কোটি টাকা চাঁদা উঠেছে মোট
জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে
কখনও বা নারীমুক্তির শ্লোগান শুনিয়ে।
কিছু যাবে মায়ের  ভোগে কিছু যাবে রাহা খরচা
দেবদেবী তথা প্রহরীকুলের
তাও বাঁচবে কোটি দেড়েক, আর এটা শুধু তাঁর সন্তানদলের।

তোমার দূর্গার পদতলে শোভে মহাভোগের পরমান্ন
আমার দুর্গা জ্বরেতে বেহুঁশ, জোটেনি ক্ষুধার অন্ন।
তোমার দুর্গা বরবর্ণিনী, বন্দিতা তিনি প্রতি ঘরে
আমার দুর্গা বারবিলাসিনী, পেটভাতা পায় গলির আঁধারে।

চাঁদ হাসতে হাসতে চলে যায় অস্তাচলের দিশায়
জোয়ারজলে একা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে
মদ্যপ নীল জ্যোৎস্না আর একরাশ ভয়।

যতক্ষণ না পোশাক টেনে হাঁটু ছাড়িয়ে গোড়ালি পৌঁছলো
যতক্ষণ না পুরুষের জন্য করলাম ব্রতের উপোস
যতক্ষণ না মানলাম আমরা নারী--  পুরুষের সেবাদাসী,
যতক্ষণ না অক্ষিকোটরে ঢাললাম গলিত সীসার মতো
একটুকরো ভয়।

                             ******



উমা পর্ব--৪



কবিতা-- জগজ্জননী
সৌরভ ঘোষ

"দেহি সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি পরং সুখং
রূপম দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো দেহি
বিদেহি দেবী কল্যাণাং বিদেহি বিপুলাং শ্রিয়ম
রূপম দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো দেহি"

মেয়েটা আগের বছর জগজ্জননী সেজেছিল,পাড়ার নাটকে
লাল পাড় সাদা পাটের শাড়ি, আলতা মাখা পা,
একটা হাতের চেটো আশীর্বাদের জন্য তুলে ধরেছিল
আর একটা ছিল মাটির দিকে,সৌভাগ্য ঝরছিল
চোখে  অপার মায়া,হাসিতে বিশ্বশান্তির কুসুম ছায়া

মেয়েটা দশম শ্রেনী
মেয়েটা রোজ ভোরে ওঠে,
বাবার জন্যে শাক তোলে
কাঠ কুড়িয়ে রান্না করে,
তারপর স্কুল,এক মাইল দূরে...
দশভূজার মত একা হাতে সবদিক সামলায়
মদ্যপ বাবা রোজ টলতে টলতে ফেরে,
মা, আগেই মায়াডোর ছিন্ন করেছে
এখন পুব আকাশে সুতিশুভ্র শুকতারার বেশে

প্রতিদিন ভাত না জুটলেও, মার ঠিকই জোটে,
সব কিছুর মতই রপ্ত হয়ে গেছে
ক্লাস সিক্স থেকে...
ভয় হয়, দরজার পাশে চ্যালাকাঠটা দেখে
পিঠের থেকেও বেশি আঁচড় জর বস্তুর গায়ে,
কি ভেবে যেন তুলে রেখেছে।

বাবার মার তবুও সহ্য করা যায়
রাস্তার মোড়ের বেহায়া ছেলেগুলো বড্ড জ্বালায়,
টোন করে "এই মাতালের মেয়ে"
ষোড়শী, ঠোঁটে ওড়না চেপে পা চালিয়ে হাঁটে
কালা হলে ভালো হত,এত অপমান!
যেদিন নিলু গায়ে হাত দিল বন্ধুত্বের অজুহাতে
চর কষিয়ে ছিল জোরে
নিলুও বলে গেছে" বদলা নেবে"
"কেন মেয়ে হলাম?তুমি কি অন্ধ, দেখেও দেখো না?
আমি তো  প্রতিদিন সন্ধ্যেয় ধূপ জ্বালাই,
তাহলে তুমি কাদের ডাকে সাড়া দাও?"
নিঃসাড় ঈশ্বর,দুর্বলদের ডাকে সাড়া দেয় না,
মেয়েটা এখনও জানে না।
ঘরে বাইরে লড়তে লড়তে ক্লান্ত মেয়ে...
রমেশ দাদু ও'কে জগজ্জননী বলেই ডাকে।




দশমীর রাত,
আশ্বিনের ঝড় আছড়ে পড়েছিল মেয়েটির জীর্ণ কাঠামোয়।
সে'রাতে বাবা মদ খেয়েছিল অনেকটা,বিলিতি মনেহয়
বন্ধুর কাঁধ ভর দিয়ে টলতে টলতে
একচালার ঘরে,খোলার চাল মাটির দোর,
বাইরে চাঁদ , ঘরময় কুৎসিত গন্ধ আর ঘোর অন্ধকার...
বন্ধুবেশী শয়তান
নিদ্রিত শিশুর মত মাথায় হাত বুলিয়ে
উপদেশ দেয় সদ্য যৌবনাকে
সুযোগে হাত চলে যায় মেয়েটির পেলব বুকে
বন্ধুবেশী হায়না জানে ফূর্তি কি,পিপাসার মানে
প্রবল বাহু দুর্বলাকে জোর করে টানে...
মেয়েটি তখন দৌড়বাজ
রক্তশূণ্য দেহে আকস্মিক বজ্রপাত,
বিষাক্ত কামড় বসায় হায়নার থাবায়
বাবা তখনও অচেতন,বন্ধু ঝাঁপিয়ে পড়ে-
নখের আঁচড়ে ফালা ফালা করে দিতে চায় পৃথিবী,সৃষ্টি
অভুক্ত মেয়েটি ছিটকে আসে ,চাঁদের নীচে...

বাবার বয়সী লোক,"ছিঃ"
এরাও মানুষ!
মেয়েটি,সেইরাতে প্রথম বুঝল পুরুষ মানে ভয়,
প্রথম বুঝল অন্ধকার কতটা নির্দয়।
শুকতারা তখনো মাঝ আকাশ
লোভী নেকড়ের জিভের গরল অন্ধকারেও চকচক করে
জান্তব ইশারায় কাছে ডাকে,যুগের সভ্যতাকে...

বারোয়ারিতলায় ঢাকের আওয়াজ তখনও থামেনি,
মনে হয়,'মা' জলে পড়ার সময় হলো ,
তবে কি নিজেও...
নিচুগলায় বিবেক গর্জে ওঠে "কক্ষনো না,
মা বলেছিল -"লড়তে হবে,
মেয়েদের প্রতি মুহূর্তে লড়তে হয়,
এটাই সমাজের নিয়ম..."

নক্ষত্রের অভাবে মেয়েটি নিজেই জ্বলে ওঠে
কোমড়ে ওড়না বাঁধে, হাতে নেয় চ্যালাকাঠ
আয়তনেত্র থেকে বেরিয়ে আসে দুরাধ্যয় তেজ
যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবে বাঁচার মন্ত্র
খোলা চুল থেকে বিকরিত হয় হাজার সূর্য সমষ্টির আলো,
এলোকেশী রণমূর্তি ধারন করে...
দূর থেকে ভেসে আসে শেয়ালের ডাক, ঘণ্টাধ্বনি,
অসংখ্য শাঁখের আওয়াজ,মহামন্ত্র
"চন্ডীকে সততং যুদ্ধে জয়ন্তী পাপনাশিনী
অচিন্ত্যরূপ চরিতে সর্বশত্রু বিনাশিনী..."
ঢাকের বিসর্জন বোল আর এক দেবীর আবাহনে মেতে উঠে...

এই মেয়েটি সেই মেয়ে
যে আগের বছর জগজ্জননী সেজেছিল পাড়ার নাটকে
এই মেয়েটি সেই মেয়ে
যে মুখ বুজে সব সহ্য করত ঘরে-বাইরে,হাটে-বাজারে
এই মেয়েটিই সেই মেয়ে
যে ভাগ্যের সাথে আপোষ করেনি,স্বেচ্ছায় অস্ত্র ধরেছে হাতে
এই মেয়েটিই সেই মেয়ে
যে সাহসে আছে, মানসে আছে
এই মেয়েটিই সেই মেয়ে
যে তোমাদের পাশের বাড়িতে থাকে
এই মেয়েটাই সেই মেয়ে
যে তোমাদের মা,তোমাদের বোন,তোমাদেরই মেয়ে
এই মেয়েরাই সেই মেয়ে...তোমরাই সেই মেয়ে
তোমরাই জগজ্জননী...  




উমা পর্ব--৩



কবিতা--সেইসব শরতেরা।


নাম--নিলয় নন্দী।


ট্রেডমার্ক শিউলি বা কাশ। বাকিটা অহেতুক...


এভাবেই নজরে পড়ে না খসা পলেস্তারা

নজরে পড়ে না রুক্ষ চুল, ছেঁড়া শাড়ি

অস্থির বারোমাস....


আটচালা জুড়ে পড়ে আছে কবেকার কাঠামো।

স্মৃতিপট মাটি ছানে কলির কুমোর

রঙ চড়ায় বয়সের বলিরেখায়...


প্রাচীন জনপদে পা রাখে শহুরে আশ্বিন

অনলাইনে বিকোয় নিটোল কারুকা

দ্রাঘিমা সংলাপ, শ্রাবণের খোলাচিঠি।


কান্না মনে রাখে না কেউ

কিশোরের কাঁধে মাথা রাখে সমকাম স্রোত

বৌদির হাত ধরে অপটু দেওর...


কবেকার অকালবোধন পূর্ণ মনস্কাম

শীর্ণকায়া শরৎ, প্রাগৈতিহাসিক।


উমা পর্ব--২



কবিতা--১

নিস্তব্ধ উঠোন  --আবদুস সালাম

  অসহায় ঝরে পড়ে পাড়া মহল্লায়
কিশোরী আত্মহত্যার মড়ক  খবরের শিরোনামে

সকালের  মনখারাপ বদলে দেয় রাতের ঘুম
ছন্নছাড়ার উঠোনে মরে যায় কল্পনা
বিন্দু বিন্দু অবিশ্বাস ঝরে সকালের রোদে
 

মনখারাপের আগুনে পুড়ে মরে সভ‍্যতা
পুড়ে ম‍রে শরতের অবিশ্বাস্য দলিল

অন্ধকার হাঁতড়ে মরে প্রজন্ম

কিশোরী প্রজন্ম ডুবে যায় অতলে,
বিধ্বস্ত নারী- প্রজন্ম নবীকরণ হয়
সর্বনাশের তাঁবুতে মিলে অবৈতনিক চাকুরী
বন্দী -শিবিরে  প্রতিধ্বনিত হয় বিনিদ্র- চিৎকার আর আর্তনাদ
রিংমাস্টার ছড়ি হাতে  নিঃশব্দ শাসনে মগ্ন

নিস্তব্ধ উঠোনে ঝরে  হতাশার আগুন
পুড়ে  যায় প্রজাপতি

@@@


কবিতা--২

নির্বোধ ---আবদুস সালাম

আদি মানবের রক্তে লেখা কামইন্দ্রিয়ের কবিতা
  এই ভাষাগুলোকেই  লোকে ভালোবাসা বলে
ভালোবাসা নিংড়ানো রসে হাবুডুবু খায় কামগন্ধ ব‍্যাকরণ

নির্বোধ অমাবস্যায় উপোস করে সূর্য
হৃদয় খুঁড়ে তুলে আনে সর্বনাশ

প্রেমের সমুদ্র উথালপাথাল হলে মানুষ বোকা বনে যায়
হারিয়ে ফ্যালে ঠিকানা
উত্তাল সমুদ্রে  হাবুডুবু  খায় পুনর্জন্ম

বিষন্নছাতার তলে ঢুকে পড়ে  কাম আর আর্তনাদ
@@@



কবিতা--৩

অনাহুত   ---আবদুস সালাম

  আয়োজন লেখা আছে প্রকৃতি জুড়ে
এক একটা সময় চেনা পথ ও অচেনা হয়
অব‍্যক্ত কথা আঁকা হয় অমসৃণ দেওয়ালে

লাল সংকেত ভেঙে প্রেম  ডানা মেলে
নিপুণ হাতের ছবিও বুঝে গ‍্যাছে সময়ের ব‍্যবধান
ভাদরের ভরা গাঙে নিশ্চুপ গল্পেরা সাজায়
অক্ষর
  আর ঝরা পাতাদের আয়ু দিয়ে যুবতি সাজায়  অনাহুত জলসা ঘর 

অনাদরে জাদুঘর জুড়ে অসংলগ্ন ঘুম
দ্রুত অক্সিজেন কমে আসে
হয়তো  বা পৃথিবীর আয়ু  কমে আসছে 

অসতর্ক মুহূর্তে উড়ে আসে বিচ্ছেদ
ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ে বিশ্বাসের সেতু
@@@


কবিতা--৪

    অপরিচয় লিপি ---আবদুস সালাম

শুঁয়োপোকার ইতিহাসে রূপান্তরের ঘনঘটা
প্রাগৈতিহাসিক জীবনে শুধুই অপরিচয়
ভালোবাসার রূপান্তর মেখে ক্লান্ত হয় সময়


দিনবদলের সংবিধানে শুধুই মমির দীর্ঘশ্বাস
মেঘের মতো ঝরে পড়ে অপরিচয়
বুকে জড়িয়ে নিয়েছি ম‍্যাজিক পৃথিবী
দুঃসময়ের উপত্যকা জুড়ে বাস করছে ভূতগ্রস্ত ভালোবাসা


ঘরকন্না মিলে জড়ো হয় আর্তনাদ
দরজায় টাঙানো আছে সুন্দরের ভায়োলেন্স আর বিচ্ছিন্ন একক

ভালোবাসার তাঁবুতে জড়ো হয়ে আছে বিচ্ছিন্নতার মেঘ
ঝরে পড়ছে হাড়রঙা স্বপ্ন বৃষ্টি 
@@@@

উমা পর্ব---১



কবিতা --১

               সোহাগ

         নাসির ওয়াদেন

কুয়াশার হিমে ভেজা
রূপালি বিছানায়
নিস্তব্ধ বাতাস গিলে ফেলে
হিংসার বীজ ----

যুবতির স্মৃতি আমি,
নিত্যদিন
হ্যারিকেন হয়ে জ্বলি

মেহেদী পাতার গন্ধমাখা
ধোঁয়া
জোছনার আলো হয়ে
ঝরে ধর্ষিত শরীরে••••

এবার বর্ষণের দিনে দেখি তুমি
কতটা সোহাগ ধরে রাখো

     
   কবিতা--২

 প্রদীপ
              নাসির ওয়াদেন

কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা শোনেনি
তথাপি প্রদীপ আলো ঢেলেই যাচ্ছে

কী বীভৎসতা ! মাথার ছাদে রজনী হাঁটে,
বুকে দুধে দুরন্ত আবেগী জোছনাঢেউ ,,,,

' মা ' বলে একবার, শুধু একবার ডেকেছিল ভোরের কুয়াশা
বাকি মিথ্যে, সব কাল্পনিক, মায়া,  সত্য শুধু
ঝুলে থাকা দুরন্ত ভালোলাগার বাসনা

বৃষ্টিচ্ছায়া,  গোপন অঙ্গ ছুঁয়ে দেখো
সত্যিই তুমি সতী আছো তো
নাকি অ-সতী,  তৃতীয় পুরুষ,,,,,

প্রদীপ তবুও জ্বলতে থাকবে অন্ধকার পোড়াতে
বিকল্প স্বপ্নের ভেতর বেঁচে থাকে মানুষের জীবন
                             --------


কবিতা --৩

              পরিবার 

         নাসির ওয়াদেন 

স্বপ্নে ভরতি শিউলি ভেজা রাত 
বি-নির্মাণে ভরে দেবে 
অনন্ত পুরুষ ---

পাহাড়ের বুকে রোপন করেছে 
অদ্ভুত আঁধার রাত 
শুধু ভাতের হাঁড়ি 
টানাটানি 
কখনও কখনও লাল হয়ে জ্বলা 
মাটির কুপির আলো 

বাড়ন্ত ভাত, শরীরে আগুনের ছ্যাঁক 
আমাদের পূর্ব পুরুষের গায়ে 

পরিবার •••জ্ঞাতি কুটুম্ব ••••সহোদরা 
অন্নপূর্ণা ফেরার অপেক্ষা----


কবিতা--৪

             উদীক্ষণ

                    নাসির ওয়াদেন 

সব সত্যিই মিথ্যে হয়ে যায় না, সরলতা 
চোখের আড়ালে ছায়া ছায়া খেলা নিত্য 
কীসের আওয়াজ ভরে আ-ফলা মাটির বুক ?
না, সেভাবে দেখেনি সর্বনাশ, আশঙ্কা,,,, 
স্নায়ু শিহরিত মুহূর্ত আচমকা নির্জন হয়ে যায় 
বুকে বুক রেখে শপথ করো-- প্রতিরোধ হোক ---

অভিমানের কোন শেষ আছে ? শেষটুকু সহিষ্ণুতার
হিসেবনিকেশ চুকে যাক কদমতলার নির্জন মুহূর্তে
তোমার কনফিডেন্সিয়াল ফাইলে চোখ বুলায় আর
ভাবি, স্মৃতির পেয়ালা কীভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে আছে 
গভীরে,গর্তে 



শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮

"পদ্মজা সংগ্রহ"-সুপ্রীতি বর্মন।



"মৃন্ময়ী নাভির প্রস্ফুটিত ১০৮ কোকনদে আমার চূড়ান্ত প্রেমাঞ্জলী প্রিয় কবিতাগুচ্ছের রৈখিক আলাপনে,,,,,,,,,,,
পদ্মজা সংগ্রহ।
সম্পাদক সুপ্রীতি বর্মন।"