রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৮

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ২০



১. তুমি এসো //


অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়


খরস্রতে এসো ব্যাস্ত দিনের ভিড়ের মতোই,চুল শুকিয়ে ভিজতে রাজি আমার বায়না ওড়না যত।

গ্রন্থিরা সব শুকিয়ে আছে, উপকাব্যের রঙ্গ রসে।ঝরুক তারা অশ্রু হয়ে মরুদান্যের কক্ষ তলে।এমনি তোমায় পাই না ছুঁতে, আবেগ গুলো বন্দি যত তোমার প্রানেই মুক্তি তত।



২. শ্রাবণ ধারায়//


অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়


অবিরল শান্ত বারি, আমার নিভৃত কোনে মিশ্রিত সিক্ত আবেগ।

বিন্দু বিন্দু ফোটার বুকে অভিমানিনী স্তুপের ধ্বংসাবেশ।ঘনঘোর শব্দ সাঁতরে বেড়াই গভীর অতলান্তে চুম্বী চিত্রপট।

বজ্র সন্ধিস্থলে নিশ্চুপ,বিরহ  কনফারেন্স।


৩. বর্ষা//


অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়


শিহরণ শীতল গর্ভে সিক্ত, একটি ফোটার বিন্দু।নব্য রূপে জাগরিত বর্ষা, মাতাল প্রেমে অনুরাগী। বাহানা করে স্পর্শ তোমার হৃদয় কম্পমান,

রঙ ঢেলেছ স্মৃতির পাতাই, সমাসক্তি চেতন স্থলে।





বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৯



বর্ষাকন্যা ও মৃত্যু-শিঙা'র সুর
..........................................

কয়েক'টি বাকল পড়া পুরাধুনিক মানুষ ঘিরে ধরেছে বর্ষাকন্যা'কে
হাতে তাদের মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্রশস্ত্র -
পুরাধুনিক না আদিম ?

বৃষ্টি'র ফোঁটা'রা কন্যা'র দেহ স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হচ্ছে
অ্যাসিডবাষ্পে ৷ আর তার দেহের তলায় লিটমাস কাগজের মতো
শুয়ে আছে বনদেবী ।

ওদিকে, আদমসন্তানেরা মৃতের স্তূপের উপর বসে বাঁশি বাজিয়েই
চলেছে ৷ সে সুর ধ্বংসের ৷

সে সুর মৃত্যু-শিঙা'র ৷


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৮



১. কবিতা:

#চা_বাগানের_মেয়ে ।।
                 -----#অভিজিৎ দত্ত ।।

ছোটর থেকে বায়না যে তার রঙবেরঙের চুড়ি
বয়স বাড়ার সাথেতে চাই গয়না এবং শাড়ি ।
চা বাগানের রমলু মাঝির তিন লম্বর বিটি,
দেমাকী তার রূপের বাহার, পড়ছে যেন ফাটি।

এলেন হেথায় কুলকাত্তার, ছোকরা ম্যানেজার
কহেন তিনি পালাইকে চল, শাদী করি এইবার ।
রঙের আশায় রক্তে মাদল, নেশা জোগায় প্রাণে
কুলকাত্তায় ছুটল দুজন, বাবুর আমবাগানে ।

সেই বাগানে ছিল অনেক পলাশ বকুল ছায়া
এবং সেথা পড়েছিল এক নারী শীর্ণকায়া।
ঠোঁটের কষের দুপাশ বেয়ে ঝড়ছে লালার স্রোত
পিঁপড়ের দল সারি পেতেছে, জমিয়ে চলছে ভোজ।

বিদ্যুৎ হেথা ঝিলিক মারে, ওই মেয়েটির দেহে,
মধু যেটুকু বাকি ছিল, সবটা শুষে নিয়ে ।
ও অভাগী কেন রে তুই এসেছিলি হেথা
জীবন দিয়ে টের পেলি তো,
 কেমন শহর কুলকাত্তা ।


   
২. কবিতা:

 #বৃষ্টির_খোঁজে।
                           -----#অভিজিৎ_দত্ত ।।

বৃষ্টি তোমায় ডাকছি কতোই কেন যে ভাই আসছ না
সূয্যিমামা ঘষছে ঝামা, তোমার নাকে বুঝছ না ?
বৃষ্টি বৃষ্টি করছি সবাই বৃষ্টি তো ভাই  আসছে না
কান্নাকাটি করেও যে তার, মন ভেজাতে পারছি না।
মোমবাতি হাতে নিয়ে মানত দিলাম পীর মাজারে
যদি উনি আনতে পারেন সূয্যিমামার রথটা কেড়ে ;
সঙ্গে যদি হাজার গ্যালন জলটা উনি আনেন ভরে
দিব্যি দিচ্ছি হ্যাজাক বাতি জ্বালিয়ে দেব ওঁর মাজারে।

শিবঠাকুরের কাছেও আমি হত্যে দিলাম মন্দিরেতে
বরুণদেব কে ডাকছি সাথে, আসুন না ভাই বজ্র হাতে;
মাথাতে জল ঢালতে শিবের ছুট্টে গেলাম তালপুকুরে
সেটাও যে আজ বেহাল হলো ঘটিটাও তো ডুবছে নারে।
গাছ কেটে মোর ঘাট হয়েছে আর কোনও গাছ কাটব না
প্লাবন এসে ভাসিয়ে দিলেও কিচ্ছুটি আর বলবো না।
চারদিকে  আজ উড়ছে ধুলো দেশটা মোদের যাচ্ছে ভরে
কি করি আর পাই না ভেবে ডাকছি জোরে আল্লাহ রে ।

করছি কতোই আচ্চা মানত খাচ্ছি কতোই শপথ যে
বৃষ্টি তবু মামার বাড়ি মোদের পানে তাকায় না সে।
বৃষ্টি যখন আসবে তেড়ে ভাসবে শহর কোলকাতা
বৃষ্টির নাম ধরেই না হয় গড়িয়াহাটেই কিনব ছাতা।
এতো করে বলছি তবু বৃষ্টি পড়ার নামটি নেই
পণবন্দী করব এবার মেঘ দেখলে আকাশেতেই।
তখন কিন্তু ছাড়ব না আর প্রলয় কাণ্ড ঘটবে যে
সেই প্রলয়ে ছেঁড়া কাঁথায় থাকব শুয়ে  শান্তিতে।।
               

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৭



১.

প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা আসলে

শুভঙ্কর দাস


আকাশ আর মাটির মাঝখানে যে দূরত্ব

তা একমাত্র নারীবুকব্যাকুলতা বলে পারাপার

হয়ে ওঠে,জন্মকালের প্রথমদিন থেকে।

আকাশ কামনায় ঘনকালো,আবেগে বজ্রবিদ্যুৎ

তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে,

তৃষাতুর জলবিন্দু

চিতার বুকের মতো মাটিতে খুঁজে নেয় বীজধানের শ্বাস

প্রতিটি বৃক্ষের সূচনা,সিদ্ধি,সালংকরাময়

এমন জগৎ

যা একমাত্র কোনো প্রেমিকা হৃদয়াভিযানে

মাতৃমধুর হয়ে ওঠে,সহজিয়া সাধনায়!


সুউচ্চ পতন কি!না,এ তো পতন নয়

এ এক আশ্চর্য উড়ান,জন্মের,অমরত্বের

তা শুধু বারিধারা জানে


আসলে প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায় নারীমুখ আঁকা আছে,নারীগর্ভও।

--------------++++++++++-----------+++++++


২.

রূপগাছি

শুভঙ্কর দাস

শরীর কি যেতে পারে শরীরের অতলে?


মেয়েটি রাস্তার জলে দাঁড়িয়ে আছে, না জল দাঁড়িয়ে গেছে রাস্তার মতো মেয়েটির


বুকে,নাভিতে,নরম প্রবেশরেখায়


সংযম,সাধনা,কামনা এবং প্রেম চারযুবা

শুরু করেছিল দৌড় দিগন্ত ছুঁয়ে


সব ধুয়ে

নিয়ে গেছে রূপকথার সত্যি রাক্ষস, প্রথম শ্বদন্ত দেখায়!


ফিরে গেছে জলে

নারী হলে স্তন্যাকার মেঘ ,আর পুরুষ হলে ফুটিফাটা গরম মাটি


প্রথম বৃষ্টির আয়নায়  চিনতে পারেনি বলে!

--------------------------+++++++--+-++++----




বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৬



১.

বর্ষা সকাল-২
অভিজিৎ দাসকর্মকার।

মেঘমল্লার থেকে তানসেন
নামায় ক্রন্দসী জলরাশি
শ্রুতিমধুর জল-তরঙ্গে
সুগন্ধি মেঠো পথ

হে 'অকূলের কূল'
প্রতিটি তানপুরা মেঘমিলনের তৃপ্তি জল খায়
শরীর ময় মঙ্গল মঙ্গল গন্ধ
ধুনোর সাথে মিশে যায়
পায়ের ছাপের কাদা

খেলে চলেছে কালো মেঘ
আর সমাজের কৃষক জীবনীর
জলজ সংসার
হুক খোলা খড়-চালা
পেট ভর্তি শ্যাওলা জমে
খিদে নেই বৃষ্টি নামের মেয়েটির।



২.

বর্ষা সকাল
অভিজিৎ দাসকর্মকার

আপেক্ষিক তাপের কম্পাঙ্ক  নিয়ে মালভূমি সংখ্যা
     জল লীনতাপ ছাড়ে শাড়ীর কোলাজ-কুচিতে
বিশ্বাস করা শব্দফেনায়
বাস্তব মাটি সত্যসময় গুলি কুড়িয়ে রাখে নিউটনের টেনে রাখা শক্তি

      মা তোমার শোলোক বলা মেয়েটি আজ বড়ো হয়েছে বাঁশবাগানের জোৎস্না-ছায়ায়
পাঁজরের ফাঁকে ক্যাটফিস ছোটে
অ্যাকুয়াফিনার জলে

            টোরিভোরের বিছানায় আড়মোড়া ভাঙে পর্ণমোচী আর্কিমিডিস
            বিসমিল্লাহর সানাই-এ অপসৃত জলমাটিতে অম্বুবাচীর বর্ষা-সকাল...


৩.

হয়তো জিরো
অভিজিৎ দাসকর্মকার।

শ্যাওলার ভিতরে যে শিকড় জল বুদবুদ খোঁজে
তার গায়ে পরিযায়ী পাখির ইচ্ছে ডানা
শান্ত বিকেলময় পটদীপের গোধূলী সা-পা ধরে
মেঘ বেহাগ ছায়ানটের সকাল
গরম চা আর খবর কাগজ পড়ে
জানালার পাশে রাতের লিপস্টিকের কান্না ছায়া
এস্রাজি শাড়িতে যোনপুরি পথ দেখায়
শরীরের রেয়ন কাপড়ে বাইকে চড়া
দক্ষিণ-বনলতা
পিছনে বসা সময়টির প্রাচীর ভাঙা দৃষ্টিদর্শন
'অখ্যাতনামায়' সাতটি তারার তিমির
হাতে 'ফিরে এসো চাকা...'



Butterscotch 2



১. রাজবৈদ্য
       সুখবিন্দর সরকার


তুমি রাজবৈদ্য
রাজার অসুক সারায়  তোমার
ঝাড়ফুঁক

তোমার ভীতি প্রদর্শন  তাণ্ডব
কঙ্কালের খুলি হাতের মুঠোয়

বেহিসাবি ইচ্ছেধারি স্বপ্নরাজ্য

তোমার নেই অরুচি অক্ষমতা
 মৃতার সহবাসে

আয়না তোমার ধুলজমানো
চশমাহীন  দুটো চোখ
ছানি জমানো

দিনে তোমার উপবাস আর
রাতের খাওয়ায় রক্তমেশানো

শ্মশানের জলন্ত আগুনে তুমি
ভাত রেধে খাও
কবরের নিচে তোমার ফুলশয্যার
খাট বিছানো



২. জবরদখল
       সুখবিন্দর সরকার
তাং- ০৩/০৫/২০১৮



মরুভূমী পথ ক্লান্তি সুখ
এক পশলা বৃষ্টি

হাত ছুঁয়ে থাকো অমর শহীদ
স্মৃতির দুয়ারে সব ইতিহাস

কালেব গৌরব সিংহরাজ

জবর দখল অন্ধকারে রাজমুকুট

আয়নায় মুখ ঢাকা যমজ ভাইয়ের
পুতুল নাচের ইতিকথা

সব নয়ছয় হিসেবে পোকাধরা চাল

ভূত ভবিষ্যৎ অকাল বোধন বর্তমান
ভরাট সুখ শূন্যস্থান



৩. কাল
       সুখবিন্দর সরকার
তাং- ২১/০৬/২০১৮


নদীর পাড়ের প্রেম শুধু
দূর্বা ঘাসের অনিশ্চিৎকাল ধর্মঘট

পুজোর ফুলে লুকোনো বিষাক্ত
ভ্রমরের হুল

চাঁদ অাছে রাত নেই

এক হাড়ি ফুটন্ত চোখের জলে
সত্যিকারের ঘোড়ার ডিম

ধূপের ধোঁয়ায় স্বর্গের সিঁড়ি বাজিমাৎ

চেনা চোখে গভীর প্রেমরোগ মলমহীন গোপন বুকে ধারালো নখের আঁচড়

আগাছায় ভরাট কুরুক্ষেত্রের মাঠ

ক্ষুধার্ত কৃষ্ণ আহারের প্রতীক্ষায়
বিবস্ত্রা দ্রৌপদীর আর্ত চিৎকার

Butterscotch 1



১.

........ # এমনই দিনে তারে বলা যায় #..........
                       *অরিজিৎ রায় *

চিলেকোঠার দেওয়াল ঘেঁষে ওঠা তুলসী-টা
আজ ও সাক্ষী -
হঠাৎ ই বইয়ের ভাঁজে রাখা শুকনো পাপড়িগুলো
ফিরে গেছে একুশের প্রথম আলোয়!
সদ্য ফোটা সর্ষে দানা দস্যি মেয়েটা, কখন যে
হলুদ বসন্ত হোল- কি জানি ছাদের কোন্ ,
বোধহয় বুঝে নিয়েছিল !
নখে নখ যখন জড়িয়ে, ভ্রু-পল্লবের "দাবীরা" -
দখলদারি তকমা সেঁটে এক্কেবারে বুকের কলজে
জুড়ে সাঁতার দিয়েছে - বালিহাঁস হয়ে ,
হ্যাঁ, মন ঠিক ধরা দিয়েছিল - চন্দ্রভূক অমাবস্যায়।

রাত্রিরা সেদিন নির্ঘুম হয়েছিল উশখুশ দোটানায়,
টেবিল ল্যাম্পের আলোয় খাতার পাতারা-
ভিজেছিল- অপরাধ বোধ, না কি ভালোবাসায় !
সিঁড়ির প্রতিটা ধাপ জুড়ে ছিল তোমার গায়ের গন্ধ,
চৌকাঠে নামানো চোখটা, চিবুক ধরে সন্তর্পণে
তুলে ধরেছিলাম আমার চোখের উপর -
যেমন করে ঝড়ের রাতে মা-পাখির ডানায় আশ্রয়
পায় ছানারা - আমার ঠোঁট ভরসা মেখেছিল
তোমার উষ্ণ ঠোঁটের প্রথম আলুথালু যতনে ,
বাকীটা ইতিহাস - তোমার মানবী হয়ে ওঠার
প্রথম অভিসার ।
সেদিন কোনো গোলাপ ছিলনা -আড়ম্বর ছিলনা,
 শুধু চিলেকোঠার "বনতুলসীটা" আমাদের দিকে
চেয়ে একটু  মুচকি হেসেছিল।



২.

....... # এ পথে আলপিন #.........
              * অরিজিৎ রায়*

সেফটি-পিনটা ঠিক একই জায়গায় বন্দী -
কতবার বলেছি - আমার জন্য না হোক,
তোমার নিজের জন্য - "হ্যাঁ খুলে রাখো" ।
ওলোট পালট সময় এখন, ভরা বুকে -
ভালোবাসারা শরীরী হয়, ভোর রাতে।

কাল রাত ভোর বৃষ্টি হয়েছে,
কবিতার খাতা সেই শূন্য রয়ে গেছে ,
খুনসুটি, কলম বেয়ে শরীরী হয়নি !
নিষ্পাপ প্রেম কতটা পথ হাঁটলে -
সেফটি-পিনটার প্রয়োজন ফুরায় ?
অনুভব কথা কয়-মন থেকে শরীর -
অবয়ব থেকে প্রকৃতি - একাত্ম হয়।

আজ আর প্রেম লিখতে পারছি না
এসময় চারিদিকে পিন ফোটা যন্ত্রণা,
চাপা লোকলজ্জা পুড়ছে - মিডিয়া টিআরপি!
সেফটিপিনের সেফ্ - ক্যাপটা খুলে গেছে,
নারকোটিক ভাবনায় বুঁদ - পিন ফুটছে শৈশবে!

তবুও টেনে পিনটা ছিঁড়ে নাও বুক থেকে
খোলা বুকে মুখ রেখে একটু কাঁদতে দাও
শিশু মুখ যেভাবে চুষে নেয় স্তনবৃন্ত
নির্ভরতা মেখে নেয় - মায়ের দেহ থেকে- মনে,
ঠিক সেই ভাবে আদর কর, চুমু দাও -
আজ খুব জ্বর - জলে ওডি কোলন মিশিয়ে
আরো একবার জলপট্টি দাও -  "মাথা-দের" !


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৫



এক অন্য স্যাঁতসেতে বর্ষামঙ্গল।

অন্য বর্ষার ক্লেদাক্ত আকুলতা।

মানব রতন--

-- সৌগত রাণা কবিয়াল


ছেলেটার সুখ ছিল অনেক,

দুঃখও ছিল পাড়ার নেড়ি কুকুরটার মতো !

ভালোবাসা কদাচিৎ জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে

আবার ভিড়তো রংচটা বাড়ীটার স্যাঁতস্যাঁতে শরীর ঘেঁষে !

ছেলেটার কেও ছিল না,

পথের পাশে পড়ে থাকা বুড়োটার মতো,

শুধু ঐ একটুকু কৈশোরের স্মৃতি ছাড়া !

যে বয়সে লোকে আঁটকুড়ে অপবাদ পায়,

সেই বয়সে ছেলেটা শিশুর ঘ্রাণ পেয়েছিল নাকে,

সেই ক্ষয়ে যাওয়া বাড়ীটার উঠোন ঘেঁষে

পাড়ার ছেঁড়া কাপড়ের যুবতী পাগলিনী মেয়েটার বদৌলতে !

যৌবনের কিছু নেশা থাকে,

সেই নেশার বিষ হয়ে

মেয়েটার কাদামাখা সাদা উরুতে একদিন মন্দিরের সামনের পথটা লাল হয়েছিলো !

পাড়ার লোকে তখন ভীড় বাসে ট্রেনে অফিস ছুটছিলো !

কারো কিছু আসে যায়নি তাতে,

এমনকি মন্দিরের দেবতারও না !

ছেলেটা সেদিন মুখ লুকিয়ে মেয়েটার

রক্তে ভেজা নাড়ী স্পর্শ করেছিলো কেবল !

মানুষ কখনোই কারো জন্মের দায় নিয়ে চায় না,

পরের তো নয়ই !

মুখ থুবড়ে রাস্তার ধুলোবালিতে একাকার হয়ে

শিশুটি কেমন চিৎকার করে তার অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিল !

পকেটের দশ টাকার দুটো ময়লা নোটে

সেদিন ছেলেটার বুকে পুরুষের সাধ জেগেছিল !

পুরোনো সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক হিসেব নিকেশের পর,

ছেলেটা শিশুটির অধিকার পেয়েছিলো !

মেয়েটা এখনো সেই স্যাঁতসেঁতে বাড়ীটায় বাঁচে,

আজকাল গায়ে কাপড় থাকে না ঠিকমতো !

পাড়ার লোকেরাও এখন আর আগের মতো

আড়চোখে ওর শরীর দেখে না,

খোলা শরীরের পুরুষের নেশা ঠিক চড়েনা হয়তো !

ছেলেটা রোজ রবিবার করে

শেয়ালদহ যায়,

কিছু টুকরো খাবার আর লজেন্স নিয়ে !

এতিমখানার নোটবুকে বাবলুর স্বজন বলতে শুধু ছেলেটাই !

সারাদিন বাবলুকে নিয়ে কি ছটফট সময় কাটে সেদিন !

তারপর সপ্তাহের বাকি ছয়টা দিন

ছেলেটা পয়সা জমায়,

দশ টাকা,কুড়ি টাকার কিছু ময়লা কাগজ !

শুধুমাত্র একটা দিন বাঁচবে বলে,

ছেলেটা মুখ বুজে পাড়ার ধুলো ঝাড়ে হাসি হাসি মুখে !

ছেলেটার শুধুমাত্র ছুটির দিনটুকু ছাড়া

বলবার মতো আর কোন সুখ ছিলো না !

আর কোন সুখ ছিল না !

হয়তো আর কোন দুঃখও ছিল না,

শুধুমাত্র ছুটির দিনের সন্ধ্যাটায়

একা একা বাড়ী ফেরার সময়টুকু ছাড়া !

এছাড়া বলার মতো ছেলেটার আর কোন গল্প ছিল না,

কোন গল্প ছিল না !


রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৪



বিষাদ
   সন্দীপ ভট্টাচার্য

সেদিন মাঝদুপুরে অভিযোগহীন সূর্য ডুবেছিল
দিন ঢেকেছিলো মেঘের মেখলায় ।
রাতের আসার মতো প্রথাগত না,
সে অন্ধকার ছিলো সূর্যের থেকেও উজ্বল

কামার্ত ষোড়শীর বুকে ,মুখের লালার মতো
ধুলোর উপর খেলা করে বৃষ্টির ফোঁটারা
কলাবতী শরীর জুড়ে সোহাগী পেলবতা

তারপর অন্ধকার আরও গাঢ় হলে
দৃশ্যের শব্দরা ছড়ায় কণা থেকে কণান্তরে
গাছের ভেজা গন্ধ তখন
কিশোরী শরীরে ক্লোরোফিল হয়ে যায়
আর মন ছোঁয়া জল উষ্ণতা খোঁজে

এরপর মাঝরাতে ব্যাঙ ডাকা জ্যোৎস্নায়
মেঘেরা বিরাম পেলে
অভিসারী মন জুড়ে বৈরাগী বাতাস
একাকী হৃদয় জাগে ঘুমহীন রাত
মোমবাতি গন্ধ জুড়ে
বেঁচে থাকে কিছু মনকেমনি বিষাদ।

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১৩



১. কবিতা-- শ্রাবণ বেলা
সৌরভ ঘোষ


প্রসূতি মেঘের বেদনার আড়ালে-
সূর্য কেতুর সাথে মেতে।
প্রথমে একফোঁটা-
তারপর কয়েক ফোঁটা-
তারপর ঝমঝমিয়ে,ভাঙা মেঘ...
বীজতলায় ধান চারার উল্লাসে মাথা নাড়া।

রক্তচোষা জোঁকের সাথে আগাছার সহবাস ,
অবলা দাঁড়িয়ে ভেজে...
সরকার দের ছাদে একটা লাল জামা,হাত নাড়ে
কয়েকটা দুলে ছেলে ঘুনি বসায় নালার মুখে
কালিতলার চাতালে আজও ছেলেগুলো তাস পিটছে
শালুক পাতা আহ্লাদে গদগদ,
স্থল শামুকের অনন্ত গতি,বেহিসাবি...

নোনা বাষ্পে কামিনী ফুলের গন্ধ,
বৃষ্টিধারার ভালোবাসায়  ইজ্জত স্খলন,
মাটিতে পাপড়ি চাদরের নন্দিত আস্তরণ...

উভচরের কামুক ডাক,প্রজননে মত্ত...
কাক ভেজা পায়রাগুলো গম্বুজের আড়ালে।
শত্রুর উঠোনের সরু জলধারা হাত ধরে-
সমান্তরাল পথে...
শালি মাঠ,উর্বর দোঁয়াশের সাদর অভ্যর্থনা,
আলিঙ্গন,মিলনোৎসব...
জীর্ণ কুঁড়ের স্থবির দৃষ্টি আকাশপটে আটকে...


২. কবিতা -- নৌকা বিহার
সৌরভ ঘোষ

তন্দ্রালু সন্ধ্যা।
প্রতিফলিত স্ট্রীট ল্যাম্পের কাঁপা কাঁপা ছায়াছবি বেয়ে,
নৌকার ছইয়ে সেঁধিয়ে যাই।
তোমার বুকে নিঃস্বার্থ মাথা রাখি
মেঘের গর্জনের অনুরনন ঢেউ হয়ে উপচায়
পাটাতন বারবার ভিজে যায় শরীরের মতন।

বাইরে বৃষ্টি আর নদীর শব্দ সঙ্গম
ছাউনির ভেতর আবেশ লোভী শ্রাবণ,
অন্তরের লেহন থরে থরে টের পাই,
ক্রমশ ডুবে যাই অথৈ শব্দ নক্সায়,

শেষ চক্ররেল চলে যাবার পর
আসকারার পর্দা ঠেলে বেরিয়ে দেখি-
তারাদের আড্ডা, মাঝির একগাল হাসি।
কূলের শীতল আবহে -
নাছোড়বান্দা সুরেলা প্রতিশ্রুতি,
'ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি... '


অন্যরকম বর্ষা:


৩. কবিতা-- বৃষ্টিপ্রেমী
সৌরভ ঘোষ

অবাধ্য মরা মাঝির গায়ে আঁশটে গন্ধ
পাঁচমাথায় কথার জোট,বাংলা প্রোটিন
অচল রেডিও বাক্সে ইলেকট্রিক বিল।
তেল শেষ,সেঁকা পাঁপড়ের গন্ধ গমগম।
অবিশ্রান্ত শ্রাবণ টিপটিপ থেকে ঝমঝম...
বাদল পোকার সুড়সুড়ি আর সৌম্য ঝাপটা।
চার্জার আলোর সঙ্গী ইস্কাবনের টেক্কা...
#
বান উপেক্ষিত,
মাঝির ছেলের নৌকা নিয়ে সাগর পাড়ি ...


৪. কবিতা-- ফোঁস
সৌরভ ঘোষ

বুনো কাশ আর কিউমুলাসের প্রত্নতাত্ত্বিক বন্ধুত্ব
বাঁধানো ঘাটে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি,পচা পাতার গন্ধ
মেঠো ঘাসে মেটুলির চুম
মোড়ে মোড়ে ত্রিফলা বাতির  রোশনি।
#
বাস স্টপেজ থেকে তিন কিমি হাঁটা প্রতিদিন
প্রথম বর্ষের ছাত্রী,ছাপনার- 'রোশনি সারমিন'।
গন্ধগ্রামের কাঠের গুদামে মাতাল গন্ধগোকুল
ওৎ পাতা জরিপের স্কেলার মাপ প্রতিকূল।
#
রোশনির গায়ে আলোর ছটা।অসুরদলনী।
ঘুড়ে দাঁড়াতেই-
বেসুরো মতালের ছুটোছুটি,পাগলামি...


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১২



১. বর্ষামঙ্গল

---সবর্না চট্টোপাধ্যায়

মেঘের পেট চিরে দাঁড়িয়ে আছো মাকালীর মতো
দুপাশের গাল বেয়ে ঘন আকাশ
শ্রাবণের কারুকাজে আশ্বিনের
ঘোর কেটে বৃষ্টি নেমেছে বাদামী উপত্যকায় বর্ষার ঘ্রাণে ভেজা নিটোল স্তন.....
ফুটে আছে পদ্মের ঢঙে...
বিদ্যুত চেরা লকলকে জিভ দিয়ে
চেটে খাওয়া বেশ্যারাত,
যোনিসিক্ত
উপচে আসা ঢেউ,
বইতে বইতে....
নাভি ছুঁয়ে
ফাঁক হয়ে আসে তার ঠোঁট...
আর ক্রমশ ছোট হতে হতে
চকলেটের মন্ড
মিশে লীন উদ্দাম আকাশের বুকে।
চাপা পড়া লতাপাতা সরিয়ে সরিয়ে
রামধনু গেঁথে দেয় কাদারজঙ্গলে...
শ্রাবণের শৃঙ্গে তখন দারুণ গর্জন!
বাঁধ ভাঙা জলে ডুবে যাচ্ছে দুটো
হিসহিসে শরীর।
অবিশ্রান্ত ধারাবিবরণীর ঝাপসা রাত্রি বিছিয়ে
চাবুকপ্রেমিক এঁকে চলেছে বৃষ্টির গতিপথ..
ক্রমে, শান্ত হতে হতে,
আগুনের পাখি
মিলিয়ে যাচ্ছে ক্ষীণ, ঘনমেঘে।
সারা আকাশের বুকে
বেজে চলেছে...
মিয়ামল্লারে বর্ষার সন্তুর।


২. সুনতালেখোলার পথে

-----সবর্না চট্টোপাধ্যায়।

মেঘের সিঁড়ি ভেঙে
নেমে আসা আকাশ মস্করা করে
বেয়াদপ হাওয়ায়
গোলাপের ছবিঘরে রাখা ভালোবাসার ব্যথারা

ঘুম ছেড়ে ওঠে,
গা ঝাড়া দেয় ধুলো জমা বাদ্যযন্ত্র
কোন এক যান্ত্রিক অসাড়তায় ঝিমধরানো মধুকর প্রলাপ বকছে শরীরের ঘামে…
নাভিমূল খসে পড়া গোলাপের মতো ঠোঁট
ছুঁয়ে আছে পাথরের স্তনে ঝরনার জল হয়ে।
আমি তাকে চিনি।
বহুকাল আগে ফেলে আসা শীতের আঁচলে ঢাকা তার মুখ
কাঞ্চনজঙ্ঘায় বরফ গললে
তার বুক উপচে আসে দুধে
হাওয়াদের আদিখ্যেতায় সে লাস্যময়ী আলো ছড়িয়ে হাসে, কপালে লাল রডোডেনড্রন
আকাশ তাকে উড়িয়েছে খইয়ের হাওয়ায় পাহাড় থেকে পাদদেশে..
কমলালেবুর শাখায় তখন ভোরের আলাপ
সবুজ দিগন্ত জুড়ে ফুটে আছে
থোকাথোকা নীল মেঘ..
পাইনের জঙ্গল মারিয়ে শ-শ ঝিঁঝি
পাহাড় নামিয়ে এনেছে তরাইয়ের উঠোনে
আমার পা ছুঁয়ে সে পাগল ভালোবাসা
বিছিয়ে দেয়…
শরীর কাঁপতে থাকে আকস্মিক সঙ্গমে
নির্জনতায় ডুবতে ডুবতে আচমকা লাফিয়ে
দেখি, চারদিকে ভরে আছে মূর্তির ডাক আর একঝাঁক গোলাপি কৃষ্ণচূড়া…


বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১১



চ-র্-ম-জ প্রেম
         ও
 কলিঙ্গে সঞ্চয়
---------------------------
পলাশ চৌধুরী
---------------------------
দেবাতুর বর্ষার বর্ষাতি হারিয়ে
একটা ন্যাংটা জামার বোতামে
ক্যাসুয়াল বীর্যাতিক্রম দেখলাম।

নিঙড়ে নিচ্ছে যশ, ভার্জিন কোমোট,
স্নানে আতর দিয়ে দেখিয়ে গেল, কলিঙ্গে সঞ্চয়।

একঘর বিকল্পে একটাই কেজো কোমর
পশ্চাতঙ্গে আকাশী মদ, শূন্য ঢেকেছে,
সেমিকোলন গুনেও তার কাছে নিষ্কাম আসি না!
ড্রাগ-আউটের শেষ বিন্দুতে দুন্দুভি দুলিয়ে
শেষ রাতে বৃষ্টি আসে।
বৃষ্ যোগে তি এর বিয়োজন হয়।

হাঃ শয্যা! তেলেগু নৃত্যে মেতে ওঠে নাভির্ধ্ব স্তন,
গ্যারেজ মুখী গাড়ির সুর তুলেছে নিম্নাঙ্গের বন্যা
কয়েকশো ক্রোশ জুড়ে অবিরাম স্কিপিং, স্লিমিং।

ডেস্টিনেশনও একটা বৃহদায়তন ক্লান্তি আনে,
অতএব বৃষ্টি শেষে বাউটা তুলে কৈলাস ঘুরে আসি,
একটা সবুজ ক্লান্তি মুছায়, নিরুপদ্রব চুম্বনে।

বর্ষামঙ্গল সংখ্যা- ১০



বৃষ্টির মাঝে তুমি
মৈনাক চক্রবর্ত্তী

সরাদিনের টিপটিপ শব্দে বৃষ্টির কড়া নাড়া।
যেন এক অবাঞ্চিত আগন্তুক
হঠাৎ-ই ঘরে ঢোকার আবদার জুড়েছে।
পাশে একটা তন্বী নদী বয়ে চলে।
বৃষ্টির ঔরসে তার শরীর জুড়ে যৌবনের প্লাবন।
এক যুবতীর উত্তাপ
সংক্রামিত হয় দেহের লোমকূপে।
তার সহস্র চুম্বনের লোভে,
ভোলা যায় পৃথিবীর দুর্গম রহস্য।


বৃষ্টিভেজা উপত্যকায় একদিন
মৈনাক চক্রবর্ত্তী

সবুজ ঘাসের জীর্ণ উপত্যকায়
সীমান্তের কাঁটাতারের সূচালো জট
নীল নভঃ অলিন্দে কালো মেঘের জাল
বৃষ্টির স্নিগ্ধতা মাখে শরীরের রোমকূপ।

সেই বৃষ্টির ধূষর উপত্যকাতে
বৃষ্টিভেজা নরীর উষ্ণ আলিঙ্গনে শ্বাস
ভেজা চুল, কাঁপা ঠোঁট, সিক্ত শরীর
ওষ্ঠ ভেজা জল, বুনে যায় শ্রাবনের যৌনতা।