১. কবিতা: যমুনা দের বারান্দা
রাখী সরদার
যমুনাদের বারান্দায় ভিড় উপচে পড়ছে
রেখা মার্কা চেহারা নিয়ে
যমুনা এসেছে ফিরে ।
পাড়ার আশি পার হওয়া কাশী বুড়োও
এসেছে ,বুড়ো শালা দুদিন পরে চিতাকাঠে ঝুলবে
তাও দেখো লুবলুব করে দেখছে যমুনাকে।
রেমো মস্তান পান চিবোতে চিবোতে বলে---
এ মৌসি ই-ই তুমহার লেড়কিকে ফিরে যেতে বলো
এটা ভদ্দর লোকের পাড়া।
জনার্দন মিস্ত্রী ভুঁড়ি নাচাতে নাচাতে চিল্লায়--
আমাদের ঘরের ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে আছে
এখানে এসব চলবে না...
হারু নাপিতের বউ সব্বাইকে ঠেলে
বারান্দায় উঠে পড়ে--জেঠিমা তোমার মেয়েকে
চলে যেতে বলো,বেশ্যা মাগির কোন লাজ নেই।
যমুনা এতক্ষণ অসুস্থ মায়ের মাথার ধারে
চুপটি করে বসে ছিল।
এবার ভিড়ের মুখে সুরসা সাপিনী হয়ে ওঠে
লাউডগা শরীর ঝাপটা দিয়ে ফণা তোলে।
এই যে সতী লক্ষ্মী নাপিতিনী তোমাকে বলছি-
প্রতি শনিবার তোমার নাপিত চুল কেটে
ফেরার সময় আমার ওখানের গুলো ও পরিস্কার করে আসে।
আঙুলে রস লাগলে জিভ দিয়ে চেটে বাড়ি ফেরে আর সেই জিভ তোকে বেড় দিয়ে আদর করে।
এই যে শালা রেমো ,আমি রেণ্ডী হলে তুই কি?
মাতাল হয়ে আমার বুকের ঘামের কুচি না
চাটলে তো তোর ঘুম হয়না। তুই তো বে যমের অধম।
কোথায় পালাচ্ছো বাবা জনার্দন?
ভুঁড়ি নিয়ে তো উপরে উঠতেই পারিসনা
আমাকেই তো ঠাপ মারতে হয়।
দেখো মা দেখো সব রেণ্ডীদের সুপুত্তুরা লেজ
গুটিয়ে পালাচ্ছে
শোন্ কুত্তার দল এই যমুনা কে কে নিয়ে গেছিল
ওই সোনাগাছি তে?
আসুন স্যার ,এই দেখুন বাজে মেয়েছেলে টা
এখানে ফিরে এসেছে,কোথায় এইডস..
পুলিশ অফিসার রমাকান্ত যমুনার চোখে চোখ রাখে
কে নিয়ে গেছিল জানিস সোনাগাছিতে?
তোদের পাড়ার প্রফেসর রবীন।পেরেম করেছিল পেরেম।
বউ জানতে পারবে সেই ভয়ে আমাকে
অন্য জায়গায় নিয়ে রাখার নাম করে বেচে দিয়েছিল।
যমুনা ককিয়ে ওঠে-"আমার পেটে ওই শয়তানের
বীজধান ছিল তিনমাসের"
তাকে এই এই আমার নিজে হাতে খুন করিছি।
দ্যাখ নাপিত বউ এখনো হাতে রক্ত লেগে।
শোন্ কাপুরুষের দল ,তোদের ওই নোংরা লাঠি তে
প্রতিদিন একদলা থুতু ফেলি।
নরম বোঁটায় তোদের বিষ দাঁতের ছোবলে
ঘা হয়েছে ঘা।যন্ত্রণায় ঘুম নেই কতদিন।
তোদের সাধ মেটানোর জন্য যোনি পদ্ম ফেটে রক্তাক্ত হয়েছি কত রাত।
সেই রক্তাক্ত টাকায় আমার মা বেঁচে।
দেখেছিলিস?যে ছমাস আমি নিপাত্তা ছিলাম আমার মা না খেতে পেয়ে মরতে বসেছিল।
এইডস?এইডস তোদের ঘরে ঘরে।
মৃত্যু তোদের অন্তরে অন্তরে।
কি রমাকান্ত বাবু আর কিছু বলবো?রাতে
আপনিও...
হারু নাপিতিনী বলে ওঠে...ব্যাটাছেলের মুয়ে মারি
ঝাঁটা,যমুনার জলে এ পাড়া পবিত্র হলোগো
পবিত্র।
যমুনার বারান্দা ভেসে যায় শত চোখের নোনা জলে।
------*------
২. কবিতা: নচ্ছার রোগ
নন্দিনী
আর সাহস পাইনা স্বামী ভাবার
বারণ করেছো ...
চার বছর চল্লিশ ঘণ্টার প্রেম ফুড়ুৎ।
যখনই বুকের পলিমাটি খুঁড়তে চেয়েছো
টুকরো করে এগিয়ে দিয়েছি
প্রায়ই সায়ার লেশ
দাঁতে জড়িয়ে গর্জে উঠেছো ।
তুমি এখন শুদ্ধাচারে ব্যস্ত
অথচ আমাকে নিয়ে ছজন বিবাহিতা
নারীর ওম টেনেছো জোঁকের মতো
গলা উঁচিয়ে বলেছো
তোমার মতো ওরাও মনের মানুষ,
কতবার বলেছি
আমি কিন্তু অন্য পাঁচজনের মতো নই
তাও নগ্ন হয়ে প্রমাণ দেওয়া
যেখানে যত কুচো তিল ছিল একটা একটা
করে গুণে নিয়েছো
এখন থিয়েটারের লাস্ট বেল পড়ার মতো
মহামারি মৈথুন শেষ
কাহিনী ও শেষ ।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বেবুশ্যে
কিছু রাত আর হতচ্ছাড়া
যৌনরোগ
পালালে কি হবে এইডস মোমবাতি
জ্বেলে ঠিক খুঁজে নেবে...
----------*---------
৩. কবিতা: যাকে পাবি তাকে ছোঁ
রাখী সরদার
কাশের বনে গা ধুয়ে উঠে আসছে শারদ ভোর।
চারদিক শিউলির ঘ্রাণ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে
পড়ছে।দুদিন পরেই উমা বাপের বাড়ি আসবে ছেলেপুলে নিয়ে। তারই তোড়জোড় রমরমিয়ে
চলছে।হিমালয় নন্দিনী আলোর মালায় নতুন বস্ত্রে সেজে উঠবে।গহনার চমকে ভক্তরা চোখ ফেরাতে পারবেনা। এতো ক্ষীরগন্ধী আনন্দের মাঝেও চারদিক কালোঘোড়ার দাপাদাপি ।ঐশ্বর্য ময় আলোর ফোকর দিয়ে দেখা যায় আর এক আয়নাজীবন ...
বিরাট আকাশ থাকতেও সাপের মতো পেঁচানো গলি থেকে একটুকরো ধবধবে শরত আকাশ দেখা যায়না।মাছির ভন ভন শব্দ ,নর্দমার পচা জলের গন্ধ,টিনের চালা ,খুপচি ঘরের জানালায় রঙচটা ওড়না ছেঁড়ায় মাঝেমধ্যে দখিনা বাতাস উতলে ওঠে।
উদ্বাস্তু বস্তি ঘরে সকাল থেকেই রামলীলা।ভোররাতেই সিঁথি ঘষে গোপন পথ কেটে রাখে এখানের উমারা।খদ্দেরদের সিঁদুরে অ্যালার্জি।ক্ষুদে রুগ্ন শিশুকে বুক নিংড়ানো শেষ দুধ ফোঁটাকে
চুষতে না দিয়ে বাইরের কাদাঘাঁটা জায়গায় ছেড়ে দিতে হয়।সবটুকু নির্যাস খেয়ে নিলে শুকনো স্তনে
শ্বাপদদের মন ভরেনা।
অগোছালো সংসারে মদ্যপ পতিদেব প্রায়ই সব কিছু ভেঙে ফেলে।ভাঙা সানকি র কোন ছোঁয়া
শাকান্ন ন্যাংটো ঈশ্বরের মুখ থেকে সরিয়ে টান মেরে ফেলে দেয়।লাল পানি যোগানোর অর্থ তার চাই।বেহায়া পুরুষ শুধু টাকার অঙ্ক বোঝে।ঘরের লক্ষ্মীকে যে এর জন্য প্রতি দগ দগে রাতে কত পুরুষের অঙ্কশায়িনী হতে হয় তার খবর রাখেনা।
একদিকে দশভূজার আরতি দেখতে মানুষের ঢল নামে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে অন্য দিকে প্রতি বিষণ্ণ রাতের তুলনায় বেশি বেশি খদ্দেরের আরতি চলে
তালগোল পাকানো বিছানায়।
শিকারি পুরুষ বাদুড়চোষা করে শুকনো খটখটে শরীর।লিপস্টিক ঘাঁটা ঠোঁটের কোণায় রক্ত জমাট বাঁধে।চিটচিটে বালিশ গোপন চোখের জলে আরো
স্যাঁতসেঁতে।তবুওউদরের হাঁ মুখ মেটাতে যোনিক্ষেতে লালসার কর্ষণ নিয়মিত সহ্য করে।
ছোটবেলার কানামাছি ভোঁ ভোঁ ,যাকে পাবি তাকে ছোঁ খেলাটির সংস্করণ ঘটে অন্য ভাবে।স্তনে অনেক ঝলসানো ঘা ছাই হয়ে গেছে,তবুও বিচিত্র ফুলকি তুলে গভীর বুকের খাঁজ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।কে এইডসের রোগ পুষেছে।কে গনোরিয়া এসবের খোঁজ রাখার দরকার নেই।যাকে পাবি তাকে ছোঁ এর খেলায় খেলতে নামা খেলোয়াড়দের এসব ভাবলে মুখে কি অন্ন জুটবে?
উমা তুমি অসুর মেরে করো অন্ধকার দূর
আমরা অসুরের বুকে মাথা রেখে গাই অন্য সুর
রূপোলি রাত আজীবন যাতনার শিকার
বড় একা...কাকে জানাবো ধিক্কার?
-----------*----------
৪. কবিতা: সূর্পণখা
রাখী সরদার
সূর্পণখা
তুমি না লঙ্কেশ্বরের বোন,তাও এত
বড় ভুল করলে?
স্বাধীনচেতা নারী হয়ে ভুল!
কি দরকার ছিলো আর্যপুরুষকে প্রেম জানানোর
শুনেছি অনেক বীর শ্রেষ্ঠ অনার্য পুরুষ ও
তখন ছিলেন।
সূর্পণখা তুমি সত্যিই বোকা
নারী হয়ে পুরুষকে কামনা করেছো
তাও একজন অনার্যা,রাক্ষসী ,কুরুপা নারী।
বলেছিলে ঠিক আছে মানা গেল
কিন্তু পঞ্চবটীর কোন নিরালা
জায়গায় তো বলতে পারতে
একেবারে শ্রীরামচন্দ্রের সতীসাধ্বী স্ত্রীর সামনে!!
এ কারণেই বলে রাক্ষসী বুদ্ধি।
কেন বোঝোনা পুরুষ শত নারীকে কামনা
করতে পারে,কিন্তু নারী পারেনা
আর তুমিতো রীতিমতো উত্যক্ত করেছো
যা পুরুষের জন্মগত অধিকার
এত বড় বংশের মেয়ে হয়ে
পুরুষদের কাম ইচ্ছায় বাধা দিলেও বিপদ
আবার কামইচ্ছে জানালেও বিপদ।
বলিহারি ভাই লক্ষ্মণ
ভাতৃপ্রেমে সত্যিই তুমি শ্রেষ্ঠ
অমর রহে ভাতৃপ্রেম
অমর রহে লক্ষ্মণজী
আহা -যুগে যুগে এমন আরো শত শত
ভাই যদি পাওয়া যেত ।
দাদা বললেন আর তুমি কচ করে
নাক কান কেটে ফেললে!
ভাগ্যিস ও সময়ে আ্যাসিড বাল্ব ছিলোনা
নাহলে সূর্পণখার তো নাক কান কেন গোটা
মুখটাই তো গলে যেত।
রঘুপতি
তুমি নাকি সীতা মা ছাড়া অন্য
নারীর দিকে ফিরেও তাকাওনি
তুমি ধর্মপ্রাণ পুরুষ
সেই তুমি সূর্পণখার সাথে পরিহাস করেছিলে -
"রাক্ষসীর সহিত করিব পরিহাস।"
কেন?অনার্যা বলে?রাক্ষসী বলে?
নাকি কুরুপা নারী বলে?
সূর্পণখার তোমাকে ভালো লাগতেই পারে
তাবলে ভাইকে দিয়ে চরম অপমান করানো!
সূর্পণখার নাক,কান কেটে ফেলার
ইঙ্গিত দেওয়া?
হায়রে নারী
কত কাব্য মহাকাব্য যুগে যুগে কবি
করেছেন রচনা
কত শত বীর পুরুষের বীরগাথা
কিন্তু নারীর অধিকার সেই একই
জায়গায় ক্রমাগত পাক খায় ।
সূর্পণখা
তোমার আলুথালু বুকেতে সেদিন
কি উল্কাপাত ঘটেছিল
সেদিন কি নিবিড় অভিমানে,অপমানে
ফিরে গিয়েছিলে কেউ বোঝেনি
তবুও তো তোমার কারণেই
রাম রাবণের যুদ্ধ ,
তোমার কারণেই রামায়ণ মহাকাব্যের শরীর পেয়েছে।
-----------*----------